সালাহ উদ্দিন মাহমুদঃ
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি’- গান গাইতে গাইতে বহুদূর পথ খালি পায়ে হেটে ছোট বেলায় শহীদ মিনাওে ফুল দিতে যেতাম। আমাদেও এলাকায় ঐ একটাই শহীদ মিনার হতো। তাও আবার কলা গাছ দিয়ে বানানো। এমন দৃম্য মুধু আমার এলাকাই নয়। পুরো উপজেলারও একই দৃম্য। যদিও স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাসহ মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ মাত্র ১৮টি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শহীদ মিনার। বাকী ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানেই নির্মাণ করা হয়নি। এমনকি শহীদ মিনার নেই এমন অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী এ মহান দিবসটি পালন থেকে বঞ্চিত হয়।
শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, কালকিনি উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৫টি, রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩২টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮টি, বালক উচ্চ বিদ্যালয় ৩৮টি, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৪টি, কলেজ ৬টি, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ৬১টি, দাখিল মাদ্রাসা ১৭টি, আলিম মাদ্রাসা ২টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৮টি, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ১৩টি, কওমি মাদ্রাসা ৪টি, কিন্ডার গার্টেন ৮টি ও স্বল্পব্যয়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭টিসহ মোট চারশ’ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যাপন না করে সাধারণ ছুটির দিনের ন্যায় দিনগুলো কাটিয়ে দেয়। ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর অতিবাহিত হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীরা শহীদ মিনারের অভাবে বীর শহীদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না।
অথচ ২০১০সালের ২৫আগষ্ট বিজ্ঞ আদালত মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষায় সরকারের প্রতি ৮টি নির্দেশনা প্রদান করেন। যার পঞ্চম নির্দেশনায় ছিল- ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।’ জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই রায় দিয়েছিল। আদালতের এই রায় অনুসারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে ঐ বছরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক’ করে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই নির্দেশ আজো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
শহীদ মিনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে না পারলে ভাষার ইতিহাস জানতে পারবে না। যে কোন মূল্যে আনুষ্ঠানিক উদ্যাপনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিটু চ্যাটার্জী বলছেন, শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন অন্য কথা। তিনি বলেন, আমরা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করি তাতে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য কোন নির্দেশনা থাকে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে নির্মাণ করতে হয়। আগামীতে বিভাগীয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
আগামী প্রজন্ম যেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ভুলে না যায়। তার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এখনি। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে চির জাগরুক করে রাখতে শহীদ মিনারের বিকল্প নেই। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত শহীদ মিনার সামান্য কারণে অবহেলিত হতে পারেনা। খুব শীগ্রই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নির্মিত হোক স্মৃতির মিনার।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী
০১৭২৫৪৩০৭৬৩
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি’- গান গাইতে গাইতে বহুদূর পথ খালি পায়ে হেটে ছোট বেলায় শহীদ মিনাওে ফুল দিতে যেতাম। আমাদেও এলাকায় ঐ একটাই শহীদ মিনার হতো। তাও আবার কলা গাছ দিয়ে বানানো। এমন দৃম্য মুধু আমার এলাকাই নয়। পুরো উপজেলারও একই দৃম্য। যদিও স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাসহ মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ মাত্র ১৮টি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শহীদ মিনার। বাকী ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানেই নির্মাণ করা হয়নি। এমনকি শহীদ মিনার নেই এমন অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী এ মহান দিবসটি পালন থেকে বঞ্চিত হয়।
শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, কালকিনি উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৫টি, রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩২টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮টি, বালক উচ্চ বিদ্যালয় ৩৮টি, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৪টি, কলেজ ৬টি, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ৬১টি, দাখিল মাদ্রাসা ১৭টি, আলিম মাদ্রাসা ২টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৮টি, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ১৩টি, কওমি মাদ্রাসা ৪টি, কিন্ডার গার্টেন ৮টি ও স্বল্পব্যয়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭টিসহ মোট চারশ’ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যাপন না করে সাধারণ ছুটির দিনের ন্যায় দিনগুলো কাটিয়ে দেয়। ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর অতিবাহিত হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীরা শহীদ মিনারের অভাবে বীর শহীদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না।
অথচ ২০১০সালের ২৫আগষ্ট বিজ্ঞ আদালত মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষায় সরকারের প্রতি ৮টি নির্দেশনা প্রদান করেন। যার পঞ্চম নির্দেশনায় ছিল- ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।’ জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই রায় দিয়েছিল। আদালতের এই রায় অনুসারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে ঐ বছরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক’ করে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই নির্দেশ আজো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
শহীদ মিনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে না পারলে ভাষার ইতিহাস জানতে পারবে না। যে কোন মূল্যে আনুষ্ঠানিক উদ্যাপনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিটু চ্যাটার্জী বলছেন, শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন অন্য কথা। তিনি বলেন, আমরা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করি তাতে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য কোন নির্দেশনা থাকে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে নির্মাণ করতে হয়। আগামীতে বিভাগীয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
আগামী প্রজন্ম যেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ভুলে না যায়। তার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এখনি। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে চির জাগরুক করে রাখতে শহীদ মিনারের বিকল্প নেই। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত শহীদ মিনার সামান্য কারণে অবহেলিত হতে পারেনা। খুব শীগ্রই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নির্মিত হোক স্মৃতির মিনার।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী
০১৭২৫৪৩০৭৬৩