সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
বাদশাহ আলমগীর তাঁর ছেলেকে বিদ্যা অর্জনের জন্য দিল্লীর এক শিক্ষকের কাছে দিয়েছিলেন। একদিন সকাল বেলা তিনি ছেলেকে দেখতে শিক্ষকের বাড়ি গেলেন। গিয়ে দেখলেন তাঁর ছেলে শিক্ষকের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে আর শিক্ষক নিজ হাতে পা ধুয়ে নিচ্ছেন। এটা দেখে তিনি কিছু না বলে চলে এলেন। পরে শিক্ষককে ডাকলেন। বললেন, আপনি কাজটি ঠিক করেন নি। এ কথায় শিক্ষক ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি ভাবলেন, বাদশাহর ছেলেকে দিয়ে কাজ করিয়েছি। নিশ্চয়ই মহা অন্যায় হয়ে গেছে। তিনি তার অপরাধ জানতে চাইলেন। বাদশাহ আলমগীর তখন বললেন, আপনি আমার ছেলেকে আদব-কায়দা কিছুই শেখান নি। আমার ছেলে শুধু আপনার পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছিল। তার তো উচিৎ ছিল নিজ হাতে আপনার পা ধুইয়ে দেওয়া।
এতো অনেক আগের কথা। গল্পের মতো মনে হয়। আমরা কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতায় এ ঘটনা জেনেছি। ইতিহাসও সাক্ষী। এখন বাদশাহ আলমগীরের যুগ নেই। তাই বলে কি শিক্ষকদের মর্যাদাও নেই। ইতিহাস আজ ভিন্নভাবে লিখতে হয়। সে ইতিহাস শিক্ষকদের অবহেলার ইতিহাস। লাঞ্ছনা আর নির্যাতনের ইতিহাস। আমরা অতীত ভুলে যাচ্ছি। সরকার বাহাদুরই শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে জানেন না। তার পোষা সন্তানেরা কীভাবে শিক্ষকের মর্যাদা দিবে। তা নাহলে গত চার অক্টোবর সরকার বাহাদুরের পোষা পেটোয়া পুলিশ সন্তানেরা কীভাবে শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলে। এ কথা লিখতে গিয়ে যেখানে আমাদের হাত কেঁপে উঠছে। সেখানে তাদের বুক এতটুকুও কাঁপলো না।
নিয়তির নির্মম পরিহাস! যে পুলিশের হাতে আজ শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছে, তারা কোন না কোন শিক্ষকের ছাত্র ছিল। তাদের মানুষ করার দায়িত্ব ঐ শিক্ষকরাই নিয়েছিল। আজ প্রাক্তন ছাত্রদের ছোড়া কাদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও লাঠিপেটার যন্ত্রণা নিয়ে পরদিন চোখের জলে পালন করতে হলো বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকরা দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তাঁরা হয়ত তাঁদের বেয়াদব ছাত্রদের বরাবরই ক্ষমা করে দেন। কিন্তু বিবেকবান মানুষ এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের যথাযোগ্য শাস্তি কামনা করেন। বাকিটা নির্ভর করে সরকার বাহাদুরের ওপর। কারণ এ ব্যর্থতা তার এবং এমন আচরণের দায়ভারও তার। জাতির এমন কলঙ্কজনক অধ্যায়ের যেন আর পুণরাবৃত্তি না ঘটে- এ প্রত্যাশা সকলের।
‘যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত’-কথাটাকে আজ উল্টে বলার সময় চলে এসেছে। তাই অতীব দুঃখের সাথে বলতে হয়-‘যে জাতি যত বেশি শিক্ষকদের পেটায় সে জাতি তত বর্বর।’ এটাই আজ নির্মম বাস্তব সত্য। এটা অস্বীকার করার কোন পথ বা উপায় নেই।
সরকার বাহাদুর আইন করে শিক্ষকদের হাত থেকে বেত বা লাঠি কেড়ে নিয়েছেন। সে লাঠি আজ তাদের পিঠেই। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়-‘বাহ! কী চমৎকার দেখা গেল।’ শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীকে পেটানো বা কোন রকম সাজা দেওয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। শিক্ষকরা তা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু রাজপথে পুলিশ দ্বারা শিক্ষক পেটানো কি অপরাধ নয়? এমন অপরাধও কি মুখ বুজে সহ্য করতে হবে। শ্রেণীকক্ষের বাইরে প্রাইভেট পড়ানো কিংবা কোচিং করানো সরকার বাহাদুর অবৈধ ঘোষণা করেছেন। শিক্ষকরা তাও মেনে নিয়েছেন। তাহলে শিক্ষকদের দাবি সরকার বাহাদুর কেন মেনে নেবেন না। মেনে নিলে তো আজ এ রকম লজ্জাজনক ইতিহাস লিখতে হতো না।
শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থীর মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার চেয়ে শিক্ষকের অবদানই বেশি। এ কথা আমরা স্বীকার করি কিন্তু ক্ষমতার দম্ভে তা মানতে চাই না। ভুলে গেলে চলবে না- শিক্ষকেরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। অথচ পুলিশি নির্যাতনের পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করে দিলেন। তারা ইচ্ছা করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে পারতেন। শুধু শিক্ষার্থীদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে বুকে-পিঠে ক্ষত নিয়েও পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী মেনে নেবেন তাদের দাবিগুলো? গত রোববার বা সোমবার শিক্ষকদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বসার কথা ছিল। কিন্তু বসা হয় নি। কেন বসা হয় নি, সে কারণ হয়ত অজ্ঞাত। তবে কেন এই মিথ্যা আশ্বাস? নাকি জাতির প্রধান চালিকাশক্তির চাঁকা স্তব্ধ করে দেবার প্রয়াস। তাঁর আশ্বাসের ফলাফল কী হবে? এটাই এখন দেখার বিষয়।
আমাদের শিক্ষকরা এতো অবহেলিত কেন? যুগ যুগ ধরে তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে কেন? জাতির মেরুদন্ডকে সচল রাখতে নিরলস পরিশ্রম করেও যথাযোগ্য পারিশ্রমিক হতে তারা বঞ্চিত কেন? যদিও শিক্ষকতাকে অপরাপর পেশার মানদন্ডে পরিমাপ করা যায় না বলে অনাদিকাল থেকে এটি মহান পেশা হিসাবে সমাজ-সংসারে পরিগণিত। তারপরও সেই ‘তালসোনা পুরের তালেব মাস্টারের অবস্থার’ আর পরিবর্তণ হয় না। শিক্ষকদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে না। যুগের সাথে, দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়।
সামাজিক দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকতা গুরুত্বপূর্ণ পেশা হলেও জাতীয়ভাবে শিক্ষকদের তেমন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। যুগের পর যুগ বহতা নদীর মতো বয়ে গেলেও শিক্ষকদের নির্মম ভাগ্যের কোন পরিবর্তণ আজও ঘটে নি। শিক্ষকদের প্রতি কেন এই উদাসীনতা? অথচ তাঁরা প্রদীপের মতো অন্যকে আলোকিত করে নিজেরা জ্বলে জ্বলে নিঃশেষিত হন। একথা এজন্য বলতে হয়- যখন বিশ্ব শিক্ষকসমাজ যুগোপযোগী ও উন্নত শিক্ষার কথা ভাবছেন, তখন আমাদের দেশের শিক্ষকসমাজ অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন করছেন। কারণ গোটা শিক্ষাব্যবস্থার নব্বই ভাগ নিয়ন্ত্রণকারী বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থসামাজিক অবস্থান অনেকটাই অবহেলিত। ফলে ইউনেসকো-আইএলও সনদের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকের দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ধারণ এবং অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
বিভিন্ন সময়ে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও আমাদের স্বাধীনতার চল্লিশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন তো দূরের কথা গ্রহণযোগ্যতাও পায়নি। একটি স্বাধীন জাতির জন্য এ অবস্থা যেমন দুর্ভাগ্যজনক, তেমনই লজ্জার। বর্তমান সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি -২০১০ প্রণয়ন করলেও এর বাস্তবায়ন সে অর্থে শুরু হয় নি। শিক্ষানীতিতে অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় বৈষম্য অবসানের কোন দিকনির্দেশনা নেই।ূ
বর্তমান সরকার যদি শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেল, বেসরকারি শিক্ষদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর জীবনে পেনশনের ব্যবস্থা ও পরিপূর্ণ উৎসব ভাতার মতো শিক্ষানীতির কল্যাণমূলক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে তা হবে জাতির জন্য মঙ্গলজনক। শিক্ষকদের জন্য আশাব্যঞ্জক। পুলিশ দিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা না করে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। তবেই শিক্ষকরা তাদের মর্যাদা ফিরে পাবেন। সুতরাং আর কোন বঞ্চনা নয়, আর কোন হতাশা নয়। সরকারি-বেসরকারি বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক- এ প্রত্যাশা গোটা শিক্ষকসমাজের।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী
এতো অনেক আগের কথা। গল্পের মতো মনে হয়। আমরা কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতায় এ ঘটনা জেনেছি। ইতিহাসও সাক্ষী। এখন বাদশাহ আলমগীরের যুগ নেই। তাই বলে কি শিক্ষকদের মর্যাদাও নেই। ইতিহাস আজ ভিন্নভাবে লিখতে হয়। সে ইতিহাস শিক্ষকদের অবহেলার ইতিহাস। লাঞ্ছনা আর নির্যাতনের ইতিহাস। আমরা অতীত ভুলে যাচ্ছি। সরকার বাহাদুরই শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে জানেন না। তার পোষা সন্তানেরা কীভাবে শিক্ষকের মর্যাদা দিবে। তা নাহলে গত চার অক্টোবর সরকার বাহাদুরের পোষা পেটোয়া পুলিশ সন্তানেরা কীভাবে শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলে। এ কথা লিখতে গিয়ে যেখানে আমাদের হাত কেঁপে উঠছে। সেখানে তাদের বুক এতটুকুও কাঁপলো না।
নিয়তির নির্মম পরিহাস! যে পুলিশের হাতে আজ শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছে, তারা কোন না কোন শিক্ষকের ছাত্র ছিল। তাদের মানুষ করার দায়িত্ব ঐ শিক্ষকরাই নিয়েছিল। আজ প্রাক্তন ছাত্রদের ছোড়া কাদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও লাঠিপেটার যন্ত্রণা নিয়ে পরদিন চোখের জলে পালন করতে হলো বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকরা দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তাঁরা হয়ত তাঁদের বেয়াদব ছাত্রদের বরাবরই ক্ষমা করে দেন। কিন্তু বিবেকবান মানুষ এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের যথাযোগ্য শাস্তি কামনা করেন। বাকিটা নির্ভর করে সরকার বাহাদুরের ওপর। কারণ এ ব্যর্থতা তার এবং এমন আচরণের দায়ভারও তার। জাতির এমন কলঙ্কজনক অধ্যায়ের যেন আর পুণরাবৃত্তি না ঘটে- এ প্রত্যাশা সকলের।
‘যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত’-কথাটাকে আজ উল্টে বলার সময় চলে এসেছে। তাই অতীব দুঃখের সাথে বলতে হয়-‘যে জাতি যত বেশি শিক্ষকদের পেটায় সে জাতি তত বর্বর।’ এটাই আজ নির্মম বাস্তব সত্য। এটা অস্বীকার করার কোন পথ বা উপায় নেই।
সরকার বাহাদুর আইন করে শিক্ষকদের হাত থেকে বেত বা লাঠি কেড়ে নিয়েছেন। সে লাঠি আজ তাদের পিঠেই। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়-‘বাহ! কী চমৎকার দেখা গেল।’ শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীকে পেটানো বা কোন রকম সাজা দেওয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। শিক্ষকরা তা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু রাজপথে পুলিশ দ্বারা শিক্ষক পেটানো কি অপরাধ নয়? এমন অপরাধও কি মুখ বুজে সহ্য করতে হবে। শ্রেণীকক্ষের বাইরে প্রাইভেট পড়ানো কিংবা কোচিং করানো সরকার বাহাদুর অবৈধ ঘোষণা করেছেন। শিক্ষকরা তাও মেনে নিয়েছেন। তাহলে শিক্ষকদের দাবি সরকার বাহাদুর কেন মেনে নেবেন না। মেনে নিলে তো আজ এ রকম লজ্জাজনক ইতিহাস লিখতে হতো না।
শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থীর মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার চেয়ে শিক্ষকের অবদানই বেশি। এ কথা আমরা স্বীকার করি কিন্তু ক্ষমতার দম্ভে তা মানতে চাই না। ভুলে গেলে চলবে না- শিক্ষকেরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। অথচ পুলিশি নির্যাতনের পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করে দিলেন। তারা ইচ্ছা করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে পারতেন। শুধু শিক্ষার্থীদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে বুকে-পিঠে ক্ষত নিয়েও পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী মেনে নেবেন তাদের দাবিগুলো? গত রোববার বা সোমবার শিক্ষকদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বসার কথা ছিল। কিন্তু বসা হয় নি। কেন বসা হয় নি, সে কারণ হয়ত অজ্ঞাত। তবে কেন এই মিথ্যা আশ্বাস? নাকি জাতির প্রধান চালিকাশক্তির চাঁকা স্তব্ধ করে দেবার প্রয়াস। তাঁর আশ্বাসের ফলাফল কী হবে? এটাই এখন দেখার বিষয়।
আমাদের শিক্ষকরা এতো অবহেলিত কেন? যুগ যুগ ধরে তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে কেন? জাতির মেরুদন্ডকে সচল রাখতে নিরলস পরিশ্রম করেও যথাযোগ্য পারিশ্রমিক হতে তারা বঞ্চিত কেন? যদিও শিক্ষকতাকে অপরাপর পেশার মানদন্ডে পরিমাপ করা যায় না বলে অনাদিকাল থেকে এটি মহান পেশা হিসাবে সমাজ-সংসারে পরিগণিত। তারপরও সেই ‘তালসোনা পুরের তালেব মাস্টারের অবস্থার’ আর পরিবর্তণ হয় না। শিক্ষকদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে না। যুগের সাথে, দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়।
সামাজিক দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকতা গুরুত্বপূর্ণ পেশা হলেও জাতীয়ভাবে শিক্ষকদের তেমন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। যুগের পর যুগ বহতা নদীর মতো বয়ে গেলেও শিক্ষকদের নির্মম ভাগ্যের কোন পরিবর্তণ আজও ঘটে নি। শিক্ষকদের প্রতি কেন এই উদাসীনতা? অথচ তাঁরা প্রদীপের মতো অন্যকে আলোকিত করে নিজেরা জ্বলে জ্বলে নিঃশেষিত হন। একথা এজন্য বলতে হয়- যখন বিশ্ব শিক্ষকসমাজ যুগোপযোগী ও উন্নত শিক্ষার কথা ভাবছেন, তখন আমাদের দেশের শিক্ষকসমাজ অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন করছেন। কারণ গোটা শিক্ষাব্যবস্থার নব্বই ভাগ নিয়ন্ত্রণকারী বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থসামাজিক অবস্থান অনেকটাই অবহেলিত। ফলে ইউনেসকো-আইএলও সনদের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকের দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ধারণ এবং অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
বিভিন্ন সময়ে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও আমাদের স্বাধীনতার চল্লিশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন তো দূরের কথা গ্রহণযোগ্যতাও পায়নি। একটি স্বাধীন জাতির জন্য এ অবস্থা যেমন দুর্ভাগ্যজনক, তেমনই লজ্জার। বর্তমান সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি -২০১০ প্রণয়ন করলেও এর বাস্তবায়ন সে অর্থে শুরু হয় নি। শিক্ষানীতিতে অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় বৈষম্য অবসানের কোন দিকনির্দেশনা নেই।ূ
বর্তমান সরকার যদি শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেল, বেসরকারি শিক্ষদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর জীবনে পেনশনের ব্যবস্থা ও পরিপূর্ণ উৎসব ভাতার মতো শিক্ষানীতির কল্যাণমূলক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে তা হবে জাতির জন্য মঙ্গলজনক। শিক্ষকদের জন্য আশাব্যঞ্জক। পুলিশ দিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা না করে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। তবেই শিক্ষকরা তাদের মর্যাদা ফিরে পাবেন। সুতরাং আর কোন বঞ্চনা নয়, আর কোন হতাশা নয়। সরকারি-বেসরকারি বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক- এ প্রত্যাশা গোটা শিক্ষকসমাজের।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী