বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১২

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

মাইনুল ইসলাম:
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার একটি আলোচিত নাম। সাংবাদিকতা, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিনি। কালকিনির বিনোদন জগতে যার অবদান অপরিসীম। ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র নেশায় যিনি ছুটে যান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ঘুণে ধরা সমাজের জন্য কিছু করার ব্রত নিয়ে যিনি এগিয়ে যেতে চান বহুদূর। আজ তাকে নিয়ে আমাদের আয়োজন।
জন্ম :
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ ১৯৮৮ সালের ১ ফেব্র“য়ারি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর উড়ার চর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জেড এম এ মাজেদ। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। মাতা হাসনে আরা। একজন আদর্শ গৃহিনী। ৬ ভাই ১ বোনের মধ্যে বাবা-মার তৃতীয় সন্তান।
শিক্ষা জীবন:
øানঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পার্শ্ববর্তী øানঘাটা ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ২০০২ সালে দাখিল পাশ করেন। ২০০৪ সালে ঢাকার নয়াটোলা এ ইউ এন কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করেন। মাদ্রাসা-ই- আলিয়ায় ফাজিল শ্রেণিতে ভর্তি হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিজ এলাকার কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিএ ( সম্মান) শ্রেণির বাঙলা বিভাগে ভর্তি হন। ২০০৮ সালে সম্মান শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে এমএ ( বাংলা) শ্রেণিতে অধ্যয়নরত রয়েছেন।
কর্মজীবন:
ছাত্রাবস্থায়ই ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, কালকিনি এডিপি’র স্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রকল্পের পিয়ার এডুকেটর হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তিতে ওয়েস্টার্ন কোচিং সেন্টারে বাংলা, অক্সফোর্ড কোচিং সেন্টারের ধর্মীয় ও শিশুকানন কিন্ডার গার্টেনের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসাবে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি ২০০৭ সাল থেকে দৈনিক দেশবাংলা পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন।
সাহিত্য চর্চা:
তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালীন ছোটগল্প লেখার মাধ্যমে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। ২০০৩ সালে মাদারীপুর থেকে প্রকাশিত ‘জাবাল ই নুর’ পত্রিকায় ‘জিজ্ঞাসা’ নামে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে দৈনিক প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, সমকাল, সকালের খবর, যায়যায়দিন, দেশবাংলা, জনতা, স্থানীয় বিশ্লেষণ, সুবর্ণগ্রাম, আনন্দবাংলা, সাপ্তাহিক কালকিনি, কালকিনি ডটকম, খুলনা থেকে প্রকাশিত‘ কবি ও কবিতা’, ‘পানসী’, নীলফামারী থেকে ‘রাঙা শিমুল’,গোপালগঞ্জ থেকে ‘গাঙচিল কন্ঠ’, মাসিক কবিতাপত্র ‘বোধিবৃক্ষ’, ‘মিছিল’ ও লিটল ম্যাগাজিন ‘বুনন’সহ একাধিক পত্রিকায় কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ছোট গল্পের জন্য ২০০৬, ২০১০ ও ২০১১ সালে ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন।
সাংগঠনিক কার্যক্রম :
সাংবাদিক খায়রুল আলমের হাত ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার আগমন ঘটে। বন্ধুসভার প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাংবাদিক ইয়াকুব খান শিশিরের অনুপ্রেরণায় উদীচীর সাথে যুক্ত হন। সালাহ উদ্দিন মাহমুদ বর্তমানে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কালকিনি শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক।  উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদের সাবেক কার্র্যনির্বাহী সদস্য, প্রথম আলো কালকিনি বন্ধুসভার সভাপতি,  জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম কালকিনির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক, প্রথমা রঙ্গমঞ্চ কালকিনির পরিচালক, কালকিনি শিল্পকলা একাডেমির আবৃত্তি বিভাগের সাবেক সদস্য, মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমির নাটক বিভাগ ছাত্র,  মাদারীপুরের উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠনের  সদস্য, দহন সাহিত্য সংসদের সভাপতি ও কালকিনি প্রেসক্লাব’র সহ সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
আবৃত্তি চর্চা :
কলেজ জীবনে এসে বিভিন্ন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। একাধারে লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন আয়োজিত মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিযোগিতায় আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করে বহুবার প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এছাড়া টি আই বি, উদীচী, মাত্রা আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সুনাম অক্ষুণœ রাখেন। বর্তমানে আবৃত্তি সংগঠন উদ্ভাস-এর সাথে নিয়মিত কাজ করেন।
নাট্য চর্চা:
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর গড়ে তোলেন ‘প্রথমা রঙ্গমঞ্চ’ নামে একটি নাট্যগোষ্ঠী। ২০০৮ সালে কালকিনি শিল্পকলা একাডেমীর বৈশাখী মেলা মঞ্চে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনা ও পরিচালনায় ‘মুকুট বাবার মাজার’ নাটক প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এরপর সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনায় কাজী নিয়ামূল ইসলাম, জাহিদ হাসান, এইচ এম মিলন, মেহেদী হাসান, বি এ কে মামুন, মাইনুল ইসলাম ও নাফিজ সিদ্দিকী তপু’র পরিচালনায় আ.জ.ম কামালের নির্দেশনায় ‘ঘৃণা নয় ভালোবাসা চাই’, ‘আলোর পথে’,‘ ডিসকো ফকির’,‘ কালচারাল ফ্যামিলি’,‘বোকার হদ্দ’,‘ঘাতক’,‘যুদ্ধাপরাধী’,‘কাপুরুষ’ ও ‘মুক্তি’সহ বেশ কয়েকটি নাটক মঞ্চস্থ হয়।
এছাড়া সালাহ উদ্দিন মাহমুদের পরিচালনায় লিয়াকত আলী লাকীর ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’,সেলিম আল দীনের ‘বাসন’,মমতাজ জামানের ‘মুক্তির জননী’,এস.এম সোলায়মানের‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাচাল’,মান্নান হীরার‘ফেরারী নিশান’ ও মলিয়েঁরের ‘পেজগী’ মঞ্চস্থ হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পটুয়াখালীর ভান্ডারিয়ায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের আমন্ত্রণে‘ঘাতক’মঞ্চস্থ হয়। একই বছর মার্চ মাসে যশোরে ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ‘মুক্তি’ নাটক মঞ্চস্থ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নাটক বিভাগের ছাত্র হিসাবে মাদারীপুরে ক্ষুদিরামের দেশে, গ্রাস, ফেরারী নিশান ও একটাই চাওয়া নাটকে অভিনয় করেন। তাছাড়া বিভাগীয় নাট্য উৎসবে ২০১২ সালের ৫ মে ফরিদপুরে শিল্পকলা একাডেমী মঞ্চে ‘একটাই চাওয়া’ নাটকে অভিনয় করেন। ছাত্র জীবনে লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন আয়োজিত মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিযোগিতায় একক অভিনয়ে অংশগ্রহণ করে বহুবার প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বর্তমানে লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন মাদারীপুরের নাট্যদলের সাথে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর অঞ্চলে ‘গ্রামের আদালত’ ও ‘সুবিচার চাই’ নাটকে নিয়মিত অভিনয় করেন।
সম্পাদনা:
কলেজ জীবন থেকে বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশ করে আসছেন। কলেজের বাঙলা বিভাগের উদ্যোগে ‘রক্তিম ফালগুন’ নামে দেয়াল পত্রিকা দিয়ে সম্পাদনা শুরু করেন। কালকিনি বন্ধুসভা থেকে ‘বন্ধন’ ও ‘বৈশাখী’ নামে দেয়াল পত্রিকা, ‘আলোর পথে’ নামে সাহিত্য পত্রিকা ও ‘দহন’ নামে মাসিক কবিতাপত্র সম্পাদনা করেন। এছাড়া লিটল ম্যাগাজিন ‘বুনন’র সহ সম্পাদক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন।
সাংবাদিকতা:
তৎকালীন ‘আজকের কাগজ’র সাংবাদিক জাকির হোসেনের কাছে তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ২০০৭ সালে দৈনিক দেশবাংলা’র কালকিনি প্রতিনিধি হিসাবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে দৈনিক বিশ্লেষণ’র বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক প্রান্ত’র কালকিনি প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ ডটকম’র নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা’র কারকিনি প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক একুশ দর্পণের কালকিনি প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন। বর্তমানে দৈনিক সকালের খবর’র কালকিনি সংবাদদাতা, দৈনিক সুবর্ণগ্রাম’র কালকিনি প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক আনন্দবাংলার কালকিনি অফিসে কর্মরত। এবং সাপ্তাহিক কালকিনির বার্তা বিভাগে ও কালকিনি ডটকমের সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত আছেন।
শেষ কথা :
গতাণুগতিকতার বাইরে থেকে কাজ করাই যার স্বভাব। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা, চাকুরী ও সমাজ ব্যবস্থার বিরোধী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিহিংসা তাকে আহত করে। জীবিকা নির্বাহের কথা কখনোই ভাবেন না। অর্থ-বিত্তের প্রতিও আকর্ষণ নেই বললেই চলে। তার মতে-‘ খ্যাতি ও বিত্ত এক সাথে আসে না। যার খ্যাতি আছে তার বিত্তের তেমন প্রয়োজন হয় না। বিত্তের লোভ মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপার্জনেই সন্তুষ্ট তিনি। আশা করি তিনি তার কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। নিরন্তর শুভকামনা তার জন্য।

চৈতীর রোজনামচা

 সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
(সুনীল সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ছোটগল্প)

সারারাত দু'চোখের পাতা এক করতে পারেনি চৈতী। ফজরের আজানের পর সারারাতের ক্লান্তিতে অবশ শরীরে একটু চোখ বন্ধ করেছিল। তাও আবার মায়ের চেঁচামেচিতে ভেঙ্গে গেল। ঘরের দেয়াল ঘড়িটা ঢং ঢং শব্দে জানান দিলো- সকাল নয় টা।

বিছানা ছেড়ে উঠে বসল চৈতী। সারারাতের দু:শ্চিন্তাগুলো মাথার মধ্যে পোকার মতো কিলবিল করছে। প্রচন্ড মাথাব্যথা। কিছুই আর ভাবতে পারছেনা। দু’হাত দিয়ে মাথাটা চেঁপে ধরলো। জানালা খুলে ভোরের আলো দেখতে ইচ্ছে করছেনা। জীবনের আলো যার ফুরিয়ে এসেছে। জগতের আলোতে তার কী হবে? আলোকিত অতীত আর অন্ধকারাচ্ছন্ন বর্তমান তাকে দোদুল্যমান করে তুলেছে।
‘এ্যাই চৈতী, এ্যাতো ব্যালা পর্যন্ত ঘুমাস, কলেজে যাওয়া লাগবো না।’-মায়ের চিৎকারে সম্বিৎ ফিরে পায় সে।

কলেজ! হ্যা, সেতো কলেজেই পড়ে। একাদশ শ্রেণীতে। কলেজের প্রিয় মুখগুলো ভেসে ওঠে মনের ক্যানভাসে। ভেসে ওঠে জমজ বোন চাঁদনীর মুখ। হঠাৎ আঁৎক ওঠে। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। না, যেভাবে হোক চাঁদনীকে তার রক্ষা করতেই হবে।

স্মৃতির পথ ধরে চৈতী চলে যায় চিরচেনা এক  জগতে। তখন সে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। জমজ বলে চৈতী ও চাঁদনী একই ক্লাসে পড়ে। তখনকার আনন্দের মুহূর্তগুলো এখন কেবল বেদনা বাড়ায়। চৈতীকে চাঁদনী, চাঁদনীকে চৈতী বলে অনেকেই ভুল করতেন। এমন কি শিক্ষকরাও।

মধুময় স্মৃতির প্রসবণ তাকে ভাসিয়ে নিয়ে আসে কণ্টকাকীর্ণ মোহনায়। আসতে বাধ্য হয়। একরকম সুখেই কাটছিল ওদের দিনগুলো। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে রোজ একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কোন কথা নেই। শুধু অপলকে তাকিয়ে থাকা।

একদিন একটা গোলাপ ফুল হাতে চৈতী-চাঁদনীর পথ আগলে দাঁড়ায় ছেলেটা। চৈতীরা ভীত-সন্ত্রস্ত। এদিক-সেদিক তাকায়। নির্জন রাস্তা। দৌঁড়ে পালাবার সাহসও হয়না। চিৎকার করার মনোবৃত্তি জাগেনা মান-সম্মানের ভয়ে। নিথর হয়ে নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকে দু’জন। ছেলেটার মুখে স্মীত হাসি।
‘আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। চৈতীর জন্য আমার এ ক্ষুদ্র উপহার।’-বলেই ফুলটা চাঁদনীর হাতে জোর করে গুঁজে দিয়ে কম্পমান পায়ে দাঁড়ায়। চাঁদনী হেসে ওঠে।
‘ফুলটা কার? চৈতী না চাঁদনীর ?’-ছেলেটা হতবাক।
থতমত খেয়ে বলে-‘চৈতীর জন্য।’
আবার হাসে চাঁদনী। ‘আমি চাঁদনী, এটা নিশ্চয়ই আমার নয়?’
ছেলেটা এবার ভীষণ লজ্জিত হয়Ñ‘সরি, আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। যারটা তাকেই দিয়ে দাও।’-বলে দ্রুত চলে যায়। একবারও পিছন ফিরে তাকায়নি।

চৈতী ও চাঁদনী খুব মজা পায়। হাসতে হাসতে পা বাড়ায় স্কুলের দিকে।

সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে , না পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। বিষয়টি নিয়ে স্যার খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছেন। কিন্তু কোন কথাই  চৈতীর মাথায় ডোকে না। কারণ চৈতীর পৃথিবীই এখন বিরামহীন ঘুরছে।
চৈতীকে লক্ষ্য করে স্যার বললেন,‘ চাঁদনী তোমার কী হয়েছে?’
চৈতী এবার হেসে উঠলোÑ‘ স্যার আমি চাঁদনী নই-চৈতী।’
‘এই হলো আর কী, কি হয়েছে তোমার?’-স্যার জানতে চাইলেন।
‘না স্যার কিছু হয়নি তো।’-বাধ্যগত ছাত্রের মতো কথাটা বলল চৈতী।
‘ ঠিক আছে পড়ায় মনোযোগ দাও।’ -বলেই স্যার পুনরায় আলোচনা শুরু করলেন।

একটা উদাসীনতা ক্রমেই গ্রাস করতে থাকে চৈতীকে। ঘুরে-ফিরে একটা লাল গোলাপ আর গোবেচারা ধরণের একটা চেহারা ভেসে ওঠে মনের ক্যানভাসে। ছেলেটার প্রতি কেন যেন একটা মায়া জন্ম হয় তার। ভালো লাগতে শুরু করে।

এই ভালোলাগাই ভালোবাসার মহিরূহ আকার ধারণ করে। মধুময় হয়ে ওঠে জীবন ও যৌবন। বাবা-মার অগোচরে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে ভাবতে কতই না ভালো লাগে।

আর ভাবতে পারেনা। শরীরটা গুলিয়ে ওঠে। বমি বমি ভাব হয়। নিজের শরীরের দিকে তাকায়। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিজেকে নিজের কাছে কেমন অচেনা লাগে। শরীরটাকে আর নিজের বলে মনে হয়  না। রাতের কথা মনে পড়ে। খাবারের টেবিলে কী বিশ্রীভাবে বকলেন বাবা। বাবাতো বকবেনই। নিজের চোখে কে তার মেয়ের অধ:পতন সহ্য করবে? কিন্তু কূল-মানের আশা ছেড়ে চৈতী যার জন্য আজ পথের ভিখিরি। সেই বা কোথায়? এ পথের শেষই বা কোথায়? কেনই বা এমন হলো?

সাগরের পরিবার মেনে নেয়নি ওদের ভালোবাসা। তাই জোর করে সাগরকে বিয়ে করালো অন্য জায়গায়। চৈতীর মাথায় বাজ পড়লো। বিয়ের দেড় বছর পর ঘর আলো করে এল সন্তান। ঘর আলো করলেও সাগরের মন আলোকিত করতে পারেনি। পুরনো ভালোবাসা নাকি শরীরী টানে কাঙালের মতো ছুটে এসেছে চৈতীর কাছে।

এ কেমন খেলা? কোন আশায় বাঁধবে তারা খেলাঘর? এ কেমন পরীক্ষা? কী করবে এখন চৈতী? একটা দোদুল্যমানতা আঁকড়ে ধরে তাকে। কিন্তু মন যে মানে না। সেও কাছে পেতে চায় সাগরকে। ফিরে পেতে চায় হারানো ধন। একটি ঘর ভাঙ্গার আয়োজন চলে প্রতিনিয়ত। ভালোবাসার উন্মাদনায় মেতে ওঠে দু’টি প্রাণ। মনের টানে শরীরে শরীর ঘষে পেতে চায় মধুর উত্তাপ। দগ্ধ হতে চায় দু’জন। সে উত্তাপের আগুনেই তিলে তিলে দগ্ধ হয় চৈতী। পরকীয়ার অপবাদ নিয়ে গৃহবন্দীর মতো সময় কাটে। তিলে তিলে বিপর্যস্ত নাবিকের মতো ছেড়া পালে ভাঙ্গা নায়ে হাল ধরে বসে থাকে।

কথাটা বাবার কান অব্দি পৌঁছে যায়। তাই যাচ্ছে-তাই বলে বকলেন রাতে। দরজাটা খুলতে আর প্রবৃত্তি হয় না। এ মুখ সে কাকে দেখাবে, কীভাবে দেখাবে?

চাঁদনী কলেজে চলে গেছে। চৈতীর ওপর ঝড়ের বিধ্বস্ততা দেখে কলেজে যাওয়ার সময় ডাকতে ইচ্ছে হয়নি। বাবা রীতিমতো ফার্মেসীতে। মা গৃহস্থালির টুকিটাকি নিয়ে ব্যস্ত। ক্ষণে ক্ষণে চেঁচিয়ে যায়-‘চৈতী ওঠ, বের হ।’
ঝড়ের পূর্বাভাস সবাই টের পায়। আকাশে মেঘ দেখে সবাই বলে দেয় কীরকম ঝড় হতে পারে। ক্ষুব্ধ নদীতে মাঝি শক্ত হাতে হাল ধরে। উত্তাল সমুদ্রে নাবিক খোঁজে কূল। অকূল পাথারে পড়ে চৈতীও সাঁতরায়। খড়-কুটা ধরে বাঁচতে চায়।

টলতে টলতে গিয়ে বসে পড়ার টেবিলে। বইয়ের সাথে সাজানো ডায়রিটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টায়। কলমদানী থেকে একটা কলম নিয়ে পরাজীত জীবনের কিছু কথা লিখে রেখে যায় কালো অক্ষরে। ভুল আর মিথ্যা সম্পর্কের জাল ছিন্ন করতে না পারার ব্যর্থতা তাকে আর কতদূর নিয়ে যেতে পারে?

বাইরের কাজ শেষে ঘরে  এসে দরজা বন্ধ দেখে থমকে দাঁড়ায় চৈতীর মা। মেয়েটার হলো কী? বেলা বয়ে যায় তবু ওঠার নাম নেই। বাবা না হয় একটু বকেছে। ভুল করলে বাবাতো বকবেই। এখনতো ভুলেরই বয়স। বাবা-মাতো শাসন করবেই। তাই বলে এতো অভিমান? এতই যদি ঘৃণা হয়- তবে কেন একটা বিবাহিত ছেলের সাথে প্রেম। কেন অন্যের সাজানো সংসার তছনছ করার অভিপ্রায়। একবার হারানোর পরও কেন মিথ্যে প্রণয়ে আবদ্ধ হওয়া।

দরজায় কড়া নাড়ে বারকয়েক। কোন সাড়া শব্দ নেই। এমন অঘোরে কেউ ঘুমায়? হঠাৎ বুকের মধ্যে একটা হোচট খায়। দু:শ্চিন্তার রেখা অঙ্কিত হয় মুখে। জোরে জোরে ডাকে বারকয়েক। প্রতিবেশিরা কী ভাববে? মহল্লায় এমনিতেই কানাকানি। ঘরের কথা পরের মুখে বাতাসের আগে দৌঁড়ায়। তিলকে তাল বানানোর ভয়। কণ্ঠ কিছুটা ক্ষীণ হয়ে আসে। এবার সে হতাশ হয়ে পড়ে।

দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে যায় চৈতীর মা। নির্বাক চোখে অশ্র“ গড়িয়ে পড়ে দু’গন্ড বেয়ে। সম্মুখে ঝুলন্ত চৈতীর শরীর। নিথর সে দেহ। চৈতীর চোখে মুখে ক্ষোভের বিচ্ছুরণ। জিহ্বাটা বের হয়ে দু’মাড়ির দাতের সাথে আটকে আছে। এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় একটি টিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন চৈতীর মা। চিৎকার আর পতনের শব্দে ছুটে আসেন পাশের বাড়ির একজন। ক্রমান্বয়ে বাড়ি ভর্তি লোকজন। আত্মীয়-স্বজন, শত্র“-মিত্র, থানা-পুলিশ, সাংবাদিক, হিতাকাক্সিক্ষ-পরশ্রীকাতর সহ সর্বস্তরের মানুষ।

চৈতী এখন একটা লাশ। সবাই ভুলে যাচ্ছে তার নাম। সবার মুখে মুখে চৈতী শব্দের পরিবর্তে লাশ শব্দটাই ব্যবহার হচ্ছে। সুরতহাল প্রতিবেদন, আলামত সংগ্রহ ও ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর আয়োজন চলছে। পুলিশের হাতে একটি রোজনামচা। আলামত সংগ্রহ করতে গিয়ে যেটা পাওয়া গেছে চৈতীর টেবিলে। সাংবাদিকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তার উপর।

পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে এক জায়গায় এসে সবার চোখ আটকে যায়। কোন সম্বোধন ছাড়াই শুরু হয়েছে লেখাটি
         ‘ লম্পট সাগর আমাকে বাঁচতে দিল না। ভালোবাসার অভিনয় করে মিথ্যা আশ্বাসে আমাকে নষ্ট করেছে। এখন আমার ছোট বোনকেও নষ্ট করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। একথাগুলো কাউকেই বলতে পারলামনা। আমার বাবা খুব রাগী। তাকে খুব সম্মান করি। তাই তার কাছেও বলার সাহস হয়নি।

একটা মেয়ে কখন তার জীবনের মায়া ত্যাগ করে? কিন্তু আমি যে বাঁচবো, তার কোন কূল-কিনারা বা পথ খুঁজে পাই না। বাধ্য হয়ে আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম।

আব্বু-আম্মু, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। দাদু,কাকা,চাঁদনী,আন্না,মুন্না ও স্বর্ণা তোমরা কেউ আমার জন্য কেঁদ না।

যারা আমার চিঠি পড়বেন, তাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ- আমার মতো আর কারো জীবন যেন নষ্ট না হয়। এই সব লম্পট বখাটে ছেলের শিকার যেন আর কাউকে না হতে হয়।
 ইতি, চৈতী।’

স্বপ্ন

প্রিয়া চক্রবর্তী

এক সময়ে স্বপ্ন ছিল
চড়বো কবে গাড়ি,
কবে হবে এ শহরে
তিনতলা এক বাড়ি।
সোনারগাঁয়ে নাস্তা খাব
শেরাটনে ডিনার,
লং ড্রাইভে আড্ডা মেরে
গড়বো স্মৃতির মিনার।
মুঠোফোনে কথা বলে
দিন বানাবো রাত,
রুই কাতলা রাঘব বোয়াল
অমনি কুপোকাত।
এখন আমার সব হয়েছে
হইনি আমি মানুষ,
সুখ শান্তির বাইরে থাকা
রঙ করা এক ফাণুস।

স্বাধীন বাংলাদেশ

আমির হোসেন

স্বাধীনতা তুমি চির মুক্ত আকাশ,
মুক্ত কেতন ওড়ার শো শো আওয়াজ।
স্বাধীনতা তুমি মায়ের কোলে দোলনার দোল,
বোনের গালে মাখা রাঙা আবীর।
স্বাধীনতা তুমি রক্তে মাখা বিজয় নিশান,
লক্ষ কোটি জনতার উল্লাস।
স্বাধীনতা তুমি বাবার মুখে শেখা প্রথম বুলি,
আমার চির মুক্ত স্বদেশ তুমি।

একাদশ শ্রেণী
কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ।






প্রিয় স্বদেশ

আলী ইদরিস

শিশিরের ঘুম ভাঙেনি এখনও
অবগুন্ঠন খোলেনি শীতের প্রকৃতি,
কুয়াশায় ঘেরা অস্পষ্ট শস্য ক্ষেত আর
শিশির ভেজা পথে হেটেছি দিগি¦জয়ী বীরের বেশে,
কত শিশিরের মুখে দেখেছি প্রথম সূর্যের হাসি
বিকেলের ম্লান রোদেও তুমি এত সুন্দর!
এই প্রথম আবিষ্কার করি সরষে ফুলে তোমার ছবি।

তুমি রাগলেও যে এত ভাল লাগে
কালো মেঘের পাশে উড়ন্ত বলাকা দেখেছ?
কত সুন্দর ! ও তোমার রাগান্বিত চোখের উপমা।
আমি স্বপ্নিল বলাকার মত আত্মবিশ্বাসে
পাখা মারি তোমার আকাশে বাতাসে
আমার বিশ্বাস তোমার বুকেই আমার নিশ্চিত আশ্রয়।
অঝোর বর্ষার জলে ভাসিয়ে দিবে না তো!
বলো কার কাছে গেলে পাবো এত ভালোবাসা,
কার এমন সুন্দর মুখ প্রাণে জাগাবে নতুন আশা?

মেঘমুক্ত সুনীল আকাশসম হৃদয়ে তোমার
আমি জারুল, কৃষ্ণচূড়া হয়ে ফুটবো,
গহীণ অরণ্যে বুনো ঝোপের আড়ালে
নামহীন ফুলের মত সুবাস বিলাব
তোমার উড়ন্ত উৎসবে।

তুমি যে আমার প্রিয় স্বদেশ।

কামনা ও প্রেমের রহস্য

আলী ইদরীস

যত কাছে আসি প্রেম হয় তত বাসি
কামনা ফিরে পায় প্রাণ,
রসনাতৃিপ্ত শেষে ভাবি ভোগের চেয়ে
ঢের ভালো ছিল বস্তুর ঘ্রাণ।
দূরে থেকেও স্বস্তি পাইনা
যেতে চাই খুব কাছাকাছি,
নিষিদ্ধ গন্ধমের মত টান
জানি এ প্রেম কেবল মিছামিছি।
যেন কিশোরের হস্তমৈথুন শেষে
রতি ক্ষয়ের অনুশোচনা,
তোমার প্রতি উদাসীন হয়ে
কামগন্ধহীন হাটি ছদ্মবেশে...।

একটি ঘুমহীন রাত

রিয়া বল

আমার একটা ঘুমহীন রাত যদি তোমায় দিতে পারতাম,
হয়তো তুমি বুঝতে, সে রাত  কতোটা গভীর হতে পারে।
অমাবস্যার রাতে একা একা বড় ভয় হয়,
মনে হয় আলো যদি এ জীবনে আর না আসে।
আর যদি খুঁজে না পাই-
অবুঝ মনটাকে বোঝাতে না পারি,
ইচ্ছা হয় ছুটে যাই তোমার কাছে।
তোমাকে জাগিয়ে তুলে সারাটা জীবন জড়িয়ে রাখি বুকে।
বিশ্বাস করো কিছুতেই হারাতে চাইনা তোমায়,
বলতে পারো কতোটা ভালোবাসলে এমনটা হয়।
কতোটা ভালোবাসা জন্মালে হৃদয়ে হারাবার ভয় জাগে,
জানি আমি অক্ষম। কোন কিছুই দিতে পারবোনা তোমায়;
কিন্তু বিশ্বাস করো পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিতে সক্ষম।
জানি তোমায় কখনো পাবোনা, পারবোনা নিজের করে নিতে।
তবুও বলছি - জীবনের শেষপ্রান্তে গিয়েও যদি অনুভব করো,
তখনো দেখবে আমি দাঁড়িয়ে শুধু তোমারী অপেক্ষায়।


নানামতঃ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি মেলেনি শহীদ পান্নার

নাফিজ সিদ্দিকী তপু ঃ
১৯৭১ সালে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রাজদী গ্রামের এমএ কাদের সিদ্দিকীর ছেলে শহীদ নুরুল আলম পান্না টগবগে তরুণ। বরিশালের গৌরনদী সরকারী কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছাত্র জীবনে তিনি জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে। তিনি ছিলেন কলেজের গরীব ছাত্র-ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। প্রয়োজনে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে হলেও গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করতেন। চলা-ফেরায়, কথা-বার্তায় ছিল নিজস্ব স্বকীয়তা। দেশপ্রেমিক, পরোপকারী, আত্মপ্রত্যয়ী, স্বাধীনচেতা ও উদ্যমী এক যুবক।
দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। চলে আসেন নিজগ্রামে। ১৯৭১ এর মে মাসে যোগ দেন ৩০৩ নম্বর রাইফেলে। মেজর মনজুর নেতৃত্বে ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে কালকিনি অঞ্চলে নুরু কবিরাজের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। যুদ্ধকালীন তাঁর কাজ ছিল পাকবাহিনীর গোপন সংবাদ সংগ্রহ করা। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে একাত্তরের ১০ অক্টোবর উপজেলার ফাসিয়াতলা বাজারে যান। সেখানে রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী তাকে আটক করে মাদারীপুর এ.আর হাওলাদার জুট মিলের মিলিটারি ক্যাম্পে নিয়ে যান। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। হত্যার পর নিশ্চিহ্ণ কওে দেওয়া হয় মৃতদেহ।
আজ স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর তাঁর আত্মীয়-স্বজনের কাছে খোঁজ নিয়ে শুনতে হয় লজ্জাজনক ইতিহাস। তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়নি। শহীদ পান্নার স্মরণে এলাকাবাসীর উদ্যোগে নিজ গ্রামে ১৯৭৩ সালে শহীদ পান্না স্মৃতি সংঘ স্থাপিত হয়। যার নিবন্ধন নম্বর ফÑ০০৬৬। সেটাও আজ বিলুপ্তির পথে। অর্থাভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ঘরটি। ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রণীত তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত ছিল। কেন কী কারণে চুড়ান্ত তালিকায় তাঁর নাম নেই সে ইতিহাস সবার অজানা। অথচ ১৯৯৫ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন জমাদার রচিত ‘মাদারীপুর মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতিকথা’র পঁচিশ পৃষ্ঠায় তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও শহীদ হওয়ার ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে। ১৯৯৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘মুক্তি বার্তা’র দ্বিতীয় বর্ষের দশম সংখ্যায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত আছে। যার মুক্তি বার্তা নম্বর- ০১১০০২০৩৭০।
শহীদ পান্নার ভাই জহিরুল আলম ডালিম ২০০৯ সালের ৩ মার্চ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বরাবর একটি আবেদন করেন। তার আবেদনের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা প্রশাসক শশী কুমার সিংহ বরাবর একটি আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনের ২ বছর পরও শহীদ পান্নার নাম তালিকাভূক্ত হয়নি। এরপর ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর উপজেলা পরিষদের সভায় কালকিনি-ভূরঘাটা সড়কের কাঠেরপোল থেকে বড়বাড়ি পর্যন্ত সড়কের নাম ‘শহীদ পান্না সড়ক’ নামে করার প্রস্তাব গৃহিত হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের ২ ফেব্র“য়ারি শহীদ পান্নার নাম তালিকাভূক্ত করার জন্য পুণরায় আবেদন করা হয়। তাই শহীদ পান্নার পরিবার এখনো তাঁর নাম তালিকাভূক্ত হওয়ার প্রত্যাশায় দিন গুণছে। সরকারি চুড়ান্ত তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত হয়নি কেন? এ প্রশ্নের জবাব শুধু সরকারই দিতে পারে।

ভিন্ন মতঃ মন্ত্রিসভায় রদবদল কী আসলেই ব্যর্থতার প্রমাণ?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক- এক মন্ত্রী গেলেন স্বর্গ দর্শণে। এ সময় ভগবান বললেন, স্বর্গের ভেতরে সংস্কার চলছে। এখন স্বর্গে যাওয়া যাবেনা। তুমি বরং দু’দিন নরক থেকে ঘুরে আস। মন্ত্রী তখন নরকে গেলেন। গিয়ে দেখলেন,বাহ ! কী চমৎকার পরিবেশ। এখানে স্বর্গের চেয়েও বেশি শান্তি। আরাম- আয়েশ। দু’দিন পর স্বর্গের সংস্কার কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে মন্ত্রী এবার স্বর্গে গেলেন। কিন্তু স্বর্গে গিয়ে দেখলেন, সেটাতো নরকের চেয়েও খারাপ। কোন শান্তি নেই। নেই কোন আরাম-আয়েশ। স্বর্গের দেবতারা মানুষকে শাস্তি দিচ্ছেন। মন্ত্রী এবার বিরক্ত হয়ে গেলেন। ভগবানকে বললেন, এরচেয়েতো নরকই ভালো। স্বর্গের বুঝি এই অবস্থা। ভগবান তখন বললেন, নরকে ঐ দু’দিন ছিল তোমাদের ক্যাম্পেইন। মন্ত্রী বললেন তার মানে? তার মানে, নির্বাচনের আগে তোমরা যেমন নরককেও স্বর্গ বানাও। আর ভোটে জেতার পরে স্বর্গকেও নরক বানিয়ে ছাড়ো।
গল্পটির সারমর্ম কী দাঁড়ায়। আসলে কী তাই? আমাদের মন্ত্রিরাতো মন্ত্রীত্ব পাবার আগে আমাদের জন্য অনেক কিছু করেন। কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার পরে কী করতে পারেন সেটাই ভেবে দেখার বিষয়। তখন যত দোষ নন্দ ঘোষের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে। তাই যদি না হবে তবে মন্ত্রীসভায় রদবদল কেন? বিবেকবান মানুষের এ প্রশ্নের জবাব কী? বিরোধী দলের কথা না হয় বাদই দিলাম। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মন্ত্রিসভার রদবদল সম্পর্কে বলেছেন, ‘মন্ত্রিসভায় রদবদলই মন্ত্রিদের দুর্নীতির প্রমাণ।’ দিন বদলের স্লোগানের সাথে সাথে মন্ত্রিসভায় রদবদল করে কী হবে? তিন বছরে যা সম্ভব হয়নি; দুই বছরে তা কীভাবে সম্ভব হবে? না কি আমরা অসম্ভব বলতে কিছু নেই স্লোগান নিয়ে নেমেছি।
আমাদের ব্যর্থতার ঝুলি এত বেশি ভারী হয়ে গেছে যে এখন আর একা বহন করতে পারছিনা। তাই অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচা। দায়িত্ব নেওয়ার আগে ভাবা উচিৎ ছিল- যথা সময়ে তা পারবো কি না। যারা দায়িত্ববণ্টন করেন তাদেরও ভাবা উচিৎ ছিল সে পারবে কি না। বিজ্ঞাপনের কমপ্ল্যানতো আর আমাদের হাতে নেই। ওটা বিজ্ঞাপণের জন্যই মানানসই। আমরা মুকুটের জন্য হা-হুতাশ করি। কিন্তু একবারও ভাবিনা, সেটা রক্ষা করতে পারবো কিনা? তারপরও কাউকে না কাউকেতো দায়িত্ব নিতেই হবে।
কিন্তু মন্ত্রীদের রদবদলে ভালো কিছু আশা করছে না নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন মহল। তারা কয়েকজন মন্ত্রিদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন। ঈদের নামাজ শহীদ মিনারে পড়েছিলেন। তারা হতাশ হয়েছিলেন। গোপনে গোপনে সমালোচনা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। কোন কোন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। তারা কী ব্যর্থতাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন না কি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টাকে অভিনন্দিত করেছিলেন। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী করায় আমরা লাভবান হয়েছি নিশ্চয়ই। তার বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি, সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম, বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তা কি প্রমাণিত হয়েছে? দেশ-বিদেশে সৈয়দ আবুল হোসেন ও আওয়ামীলীগ সরকারের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। যারা তাকে ভোট দিয়ে সাংসদ বানিয়েছে, ব্যর্থতার কালিমা কি তাদের গায়ে লাগেনি? কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের চল্লিশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্বব্যংক আমার বিরুদ্ধে অহেতুক অসত্য অভিযোগের তীর তুড়েছে । কিন্তু দুদকের তদন্তে সকল অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, অসত্য অভিযোগ তুলেছে, তারা সবাই একদিন আমার সততা ও স্বচ্ছতার কাছে লজ্জিত হবে।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন ফারুক খান। তাই তাকে বাণিজ্য মন্ত্রী থেকে সরিয়ে করা হয়েছে বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী। প্রশ্ন থেকে যায়, এখানে এসে আবার বিমানের উর্ধ্বগতি ঠেকাতে গেলে সর্বনাশ। জিএম কাদের বিমানের ওঠা-নামা দেখতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এসে আবার বাজার দরের ওঠা-নামা দেখতে অস্বস্তি বোধ করবেন কিনা? ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব এখন সৈয়দ আবুল হোসেন ও ইয়াফেস ওসমানের কাঁধে। দেখুন নরকটাকে এবার একটু ডিজিটাল করা যায় কিনা? মাফ করবেন, শোনা গিয়েছিল - প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসার পর এরচেয়ে বড় চমক না কি রয়েছে সামনে। সামনে কপি নয় পুরনো ফাইলটা এবার ডিলেট করে দিয়ে নাকি নতুন ফাইল পেস্ট করা হবে। এখনো তা হয়নি। তবে সে তালিকায় যারা রয়েছেন। সময় থাকতে সাবধান। নয়তো নিজে ডুববেন, দলকে ডোবাবেন। সর্বোপরি স্বর্গের সোনার বাংলা নরকে পরিণত হবে। আশা করা যায় যে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদেরের মত মন্ত্রী থাকতে এমন আশঙ্কা করা সঙ্গত নয়। তবু কথা আছে না- চুন খেয়ে মুখ পোড়লে দধি দেখেও ভয় পায়। সুরঞ্জিত আপনি এবার কালো বিড়ালটাকে খুঁজে বের করুন। কারণ ‘শুঁটকির হাটের বিড়াল চৌকিদার’কে তাড়ানোর এখনি উপযুক্ত সময়। ওবায়দুল কাদের ঢেউয়ের মধ্যে সাঁতার কাটতে চান। কিন্তু ঢেউয়ের জন্য বর্ষাকালের অপেক্ষায় থাকতে হবে। শীতকালেতো নদী শান্ত থাকে। একবার চেষ্টা করে দেখুন শান্ত নদীতেই এবার ঢেউ তুলতে পারেন কি না? আপনিতো চ্যালেঞ্জকেই বেশি ভালোবাসেন। চ্যালেঞ্জ করেও লাভ হলো না। তার এপিএসের গাড়িতে টাকার কেলেঙ্কারিতে পদত্যাগ করলেন। এখন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হয়েছেন। এতকিছুর পরও ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই বলছেন,‘মন্ত্রিসভার রদবদলে কিছু লাভ নেই। প্রধানমন্ত্রী ভুল পথে হাটছেন।’ 
শেষ করার পূর্ব মুহূর্তে আরেকটা গল্প মনে পড়ে গেল- বাবা আর ছেলে বাজারে যাচ্ছে আটা বিক্রি করতে। কিছুদূর যাওয়ার পর ছেলে আব্দার করেছে বাবার কাছে- বাবা আটার বস্তাটা আমার মাথায় দাও। বাবা বললেন, এত বড় বোঝা তুমি বইতে পারবেনা। কিন্তু ছেলে নাছোড়বান্দা। অবশেষে বাবা বাধ্য হয়ে ছেলের মাথায় বস্তাটা চেপে ধরলেন। ছেলে বস্তাটা মাথায় নিয়ে ঠিক চলতে পারছিল না। হেলে-দুলে পড়ে যাচ্ছে। বাবা তখন বস্তার মুঠোটা নিজের হাতে ধরে রেখে ওজনের চাপটা কমিয়ে দিলেন। কিছুদূর গিয়ে ছেলে বলল, তোমার বোঝা তুমিই বহন করো। ছেলের মুখের দিকে বাবা তাকিয়ে দেখলেন ব্যর্থতার লজ্জা। বাবার মুখে তখন সন্তুষ্টির হাসি।
দেখা যাচ্ছে মন্ত্রীদের মুখেও ব্যর্থতার লজ্জা। কিন্তু আসল ব্যাপারটি দেখার পালা এখন। বাবারা কিভাবে সফল হবেন? জানিনা, তবে এবারও আমরা পূর্বের মত আশ্বাস পেয়েছি। কিন্তু আর আশ্বাসে বিশ্বাসী নই। কাজ দেখতে চাই। ভালো কথার চেয়ে ভালো কাজ দেখতে চাই। সফলতার হাসি দেখতে চাই। শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। নয়তো এ ব্যর্থতার দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। তবে একটা অনুরোধ স্বর্গটাকে আর নরক বানাবেন না। যদি পারেন তবে এই নরকটাকেই স্বর্গ বানিয়ে দিন না। আমরা স্বস্তি পাবো। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী যে পথে হাটছেন সেটাই যেন সঠিক পথ হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ প্রথম গল্পটি গত ৬ ডিসেম্বর ২০১১ রাতে টিভি চ্যানেল জি বাংলার মিরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার-৬ এর গেস্ট পারফর্মার বাংলাদেশের মেয়ে ফারজানা সগির শশীর পরিবেশনা থেকে সংগৃহিত।
লেখকঃ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ,
সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী

কালকিনি প্রবাহ

 - আকন মোশাররফ হোসেন
কল্যাণ, লেখক, কৃষ্টি ও নৈতিকতা নিয়েই কালকিনি থানা এবং বর্তমানে কালকিনি উপজেলা। ১৭৯৩ সনে লর্ড কর্নওয়ালিসের আমলে দেশের তথা ভারত বর্ষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইন পাশ হয়। ফলশ্র“তিতে সৃষ্টি হয় জমিদার শ্রেণি। জমিদারগণ রাজস্ব আদায় ও স্থানীয় শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। জমিদারগণ বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় জনকল্যাণমূলক কাজ থেকে ক্রমশই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে শান্তি-শৃঙ্খলার পরিবর্তে বহু ক্ষেত্রেই অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই সময়টি ছিল ১৮৭০ সাল পর্যন্ত। এরপরে কালকিনি অঞ্চলের পট পরিবর্তন ঘটে নতুন আর একটি অধ্যায়ের শুরু হয়।
১৮৭০ সনের পূর্বেকার সময়ে ইংরেজ শাসনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনের অধীনে কালকিনি থানা অঞ্চলকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে জমিদার শাসন এলাকা হিসাবে বিভক্ত করে জমিদারী প্রথায় শাসন করেছিল। তখন কালকিনি থানার কতিপয় মুসলমানও জমিদার ছিলেন। তবে মুসলিম জমিদারগণ হাওলাদার ও তালুকদার বংশ বেশি ছিলেন।
কালকিনি উপজেলার ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে সাহেবরামপুর এলাকার জমিদার মিঃ এ্যাওয়ার্ড। শেওলাপট্টি এলাকার জমিদার বৈকুন্ঠ রায় চৌধুরী। বাজিতপুর এলাকার রাজ কুমার মজুমদার। গোপালপুরের জমিদার আঃ রব চৌধুরী। এনায়েত নগরের জমিদার রাজ মোহন দাস। বাঁশগাড়ীর জমিদার ওয়াসেক উদ্দিন তালুকদার। লক্ষ্মীপুরের জমিদার ভগোলা সুন্দরী। লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত জালালপুর পরগনার জমিদার ভগোলা স্দুরীর জমিদারী আওতাভুক্ত। এই জমিদারের বিশ্বস্ত কালেক্টর বা নায়েব ছিলো ‘দামুসা’।
প্রাচীন কালের অনেক কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের নিদর্শন কালকিনি উপজেলায়। সেই ঐতিহ্যকে এখনো এলাকাবাসীর নিদর্শন হিসাবে মেলা বা গোলেয়া এখনো প্রচলিত। প্রতি বাঙলা সনের ৩০ চৈত্র-চৈত্রসংক্রান্তি বা বাংলা বর্ষকে বিদায় এবং নববর্ষকে বরণ করে নেওয়ার লক্ষে জালালপুর পরগোনা এলাকায় ‘দামুসা’ মেলা বসে।
তদ্রুপ কালকিনি উপজেলার শেওলাপট্টি, সিডি খানের বটতলা, রায়পুরের রক্ষাচন্ডি চৈত্রসংক্রান্তিতে মেলা বসে। তবে ভগোলা সুন্দরী প্রিয় ব্যক্তিদের নামে ‘দামুসা’ মেলা ইংরেজ আমল থেকে এখন প্রচলিত। জালালপুরে বা ইদিলপুর পরগোনা নামে বর্তমানে কোন মৌজা নেই। তো সিএস এবং আরএস জমি জরিপের পর্চায় জালালপুর ও ইদিলপুর জমিদার পুর্নেন্দ্রনাথ সরকার নাম ছাপা  অক্ষরে প্রমাণিত রয়েছে। অপরদিকে শহীদ তিতুমীরের শহীদ হওয়ার পর হাজী শরীয়ত উল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের সময় ইংরেজ সেনাপতি ‘ডানলপ’ বাহিনীর সাথে ফরায়েজি বাহিনীর সাথে যুদ্ধের সময় ইংরেজগণ পরাজিত হয়ে পালাবার সময় ‘দামুসা’ নিহত হন।
তারই স্মৃতির স্মরণে জমিদার ভগোলা সুন্দরী মেলার আয়োজন করেছিল তাই মেলার নামকরণ হয় ‘ দামুসা মেলা’।
চলবে-

মায়ের জন্য চিঠি ( মা দিবস উপলক্ষে)

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

তোমার এ হতভাগা সন্তানের লেখাটুকু পড়বে কি না জানিনা। চশমাহীন ঝাপসা চোখে লেখাটুকু খুব দুর্বোধ্য মনে হবে। তবুও যে কথাগুলো কখনোই বলতে পারিনি; সে কথা আজ বলার জন্য বুকটা কেমন খাঁ খাঁ করছে।
তুমি আমায় গর্ভে ধরে ভুল করনি। বরং আমিই পৃথিবীতে এসে পাপ করেছি। তাই আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমাকেই করতে দাও। শুধু তোমার চোখের জলে আমার পাপগুলো ধুইয়ে দিও। তোমার শুচি-শুভ্র জীবনটাকে সাজিয়ে নিও।
আমার জন্য ভেবনা মা। তোমার ছেলে সুখেই আছে। এখন আমার অনাত্মীয়ই আত্মীয় সব। রক্তের বন্ধন তুচ্ছ এখন আমার কাছে। রক্তটানের বাইরে থেকেও অনেকে আমায় ভালোবাসে।
তুমি আমার স্বরবর্ণ; তুমিই আমার ব্যঞ্জন বর্ণ। আজো তুমি মুখস্থ এক আদর্শলিপি। ব্যাকরণে ভুল ছিল সব। শব্দ-বাক্য তাই অগোছালো। তোমার বলা রূপকথার কিস্সাগুলো এখন আমি আস্তে আস্তে ভুলতে শিখেছি। এখন আমি বাস্তবতার গল্প লিখছি।
হয়তো এখন তোমার আঁখি জলে ছলছল। জানি তোমার কান্না হবে নিস্ফল। বাঁধনহারা আউলাচন্ডি আমি এক বাউলা মানুষ। সাধ্য আছে কার বলোতো- এখন আমায় রাখবে বেঁধে?
মুছে ফেল মা অশ্র“রাশি। তুমিই ভাগ্যের চরণদাসী। আমার গলায় পড়লাম আমি অবিশ্বাসের কঠিন ফাঁসি। তোমার মুখে ঝরুক হাসি। আমি না হয় জলেই ভাসি!
অন্ধ চোখে এতো বেশি পড়তে তোমার কষ্ট হবে। আজকে না হয় বিদায় দিও। আবার যদি লিখতে বসি?
ইতি তোমার হতভাগা, লিখে গেলাম পত্রখানি। নাম ঠিকানা অচিনপুরÑ দৃষ্টি যাবে যতদূর.....।

মে দিবসের কাব্য

 - সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

 এ কবিতা হাতুড়ে ও কাস্তের

এ কবিতা চাকায় চাকায় ঘোরে

এ কবিতা কংক্রিট ও পাথরের

এ কবিতা মেহনতি মানুষের।

 এ কবিতার গা বেয়ে এখনো ঘাম ঝরে

নারীর বগলের ঘাম জমে ওঠে

শিশুর নরম হাতে ভাড়ি হাতুড়ের আওয়াজ ওঠে

শ্রমিকের রক্তের ধারায় রচিত হয় প্রতিটি পঙক্তি।

 মে দিবস এলেই এ কাব্য রচিত হয়

‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’- স্লোগান ওঠে

শিকাগোর কান্নায় কবিতার বুকে জাগে বেদনার সুর

দাবির মিছিলে জড়ো হয় অগণিত বঞ্চিত মানুষ।




বৈশাখ এলে

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

বৈশাখ এলে মনে মনে ভাবতে লাগে বেশ,
অনেক দিন পরে পাব বাঙালিয়ানার রেশ।
বৈশাখের সকাল বেলা পান্তা আর ইলিশ,
ফিরিয়ে দেয় খাবারে পুরণো সেই আবেশ।

শাড়ি পড়ে সেজে-গুজে ভুলে যাই জিন্স,
পরক্ষণেই সব ছেড়ে পড়তে হবে টপস।
পাঞ্জাবি-লুঙ্গি পড়ে ক্ষণিকে হই বাঙালী,
বিকালেই শার্ট-প্যান্টে শত জোড়াতালি।

মুখে মুখে বাঙালি আর অন্তরে হই ঘৃণ্য,
দেশি সংস্কৃতি ছেড়ে খুঁজি বিদেশি পণ্য।
যদি কাকের লেজে পড়াই ময়ূরের পালক,
কখনোই কি তা জুড়াবে আমাদের চোখ।

সকলে মনে প্রাণে বাঙালী হতে হবে আজ,
আজ হতে সাজতে হবে সর্বদা নিজস্ব সাজ।
আমি পুরো বাঙালী এ হোক আমাদের গর্ব,
আমাদের সংস্কৃতি আর হতে দেব না খর্ব।
০৮.০৪.২০১২, রাত ১২.২১টা।


কবি দুলাল সরকারের গাঙচিল সাহিত্য পদক লাভ

নুরুদ্দিন আহমেদ:
শশীকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কবি দুলাল সরকার ‘গাঙচিল সাহিত্য পদক-২০১২’ লাভ করেছেন।
কবি দুলাল সরকার ১৯৫৩ সালের ০৮ আগস্ট মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের শশীকর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কানাইলাল সরকার ও মা সাবিত্রী দেবী।
দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তেকে পুণরায় বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষা জীবন শেষে কবিতার টানে চলে আসেন মাটি ও মানুষের কাছে। অধ্যাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন শশীকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে।
সাহিত্য কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৬ সালে কবি জসিম উদ্দীন পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে- ‘আছে প্রেম আছে ক্রোধ’, ‘নারীকে ছোঁব না, ফুলকে ছোঁব না’, ‘আমি বিরুদ্ধে দাঁড়াব’, ‘আজ দোয়েলের জন্মোৎসব’, ‘লজ্জিত সুন্দর’, ‘যে মেঘে রোদের রেণ, ‘আউশের নীলজল’, ‘আগুনের ডালপালা’ ও ‘ভালোবাসার পদাবলি’।
গত ২৮ জানুয়ারি ২০১২ ঢাকার আগারগাঁও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র মিলনায়তনে কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর হাতে পদক তুলে দেন। এসময় কবি মহাদেব সাহা, আসলাম সানী ও রেজাউদ্দিন স্টালিন উপস্থিত ছিলেন।

আর কত প্রাণ গেলে সড়ক নিরাপদ হবে

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই একটি শিরোনাম চোখে পড়ে- ‘সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত.....ও আহত.....’। এ খবরটি আমাদের জন্য নিয়মিত হয়ে গেছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ নামে একটি আলাদা বিভাগ চালু করতে হবে। তাই জনমনে শুধু একটাই প্রশ্নÑ আর কত মায়ের বুক খালি হলে সড়ক নিরাপদ হবে? আর কত স্বজনের আর্তনাদে আকাশ ভারি হলে সড়ক নিরাপদ হবে? কেবলই জিজ্ঞাসা? উত্তর নেই। বিবেকের দরজায় কড়া নেড়েও কী এর সদুত্তর পাওয়া যাবে না?
আমাদের দেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে দৈনিক যে পরিমাণ প্রাণহানী ঘটে তার চেয়ে বেশি প্রাণহানী ঘটে সড়ক দূর্ঘটনায়। গতবছর মিরসরাই ট্র্যাজিডিতে বড় ধরনের একটা ধকল গেল। উজ্জ্বল আগামীর কর্ণধার কোমলমোতি শিশুরা প্রাণ হারালো। এতগুলো প্রাণ যার অবহেলায় অকালে ঝরে গেল। তার শাস্তি কী অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট ছিল? সবাই সমস্বরে বলবেন, ছিল না। তা সামলে উঠতে না উঠতেই আবার সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হল দেশের প্রথিতযশা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনিরকে। তাদের অকাল মৃত্যুতে নড়েচড়ে উঠেছিল সারাদেশ। চালকের শাস্তির দাবিতে কত আন্দোলন - সংগ্রাম হলো। কিন্তু সরকার পক্ষ নির্বিকার। অথচ সরকার পক্ষের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্তব্যক্তি চলে গেলেন চালকদের পক্ষে। মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠল। এক সময় ঝড় থেমে গেলে আবার সব স্বাভাবিকভাবেই চলছে। কোন পরিবর্তন নেই। সেই পুরণো নিয়মে প্রতিনিয়তই ঘটতে থাকলো দুর্ঘটনা।
গত ১৭ ফেব্র“য়ারি শুক্রবার সকালে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পান্তাপাড়ায় ঘটেছে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। এতে ১৮ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়। নিহতের বাড়ি ও স্বজনদের মধ্যে এখনো বিরাজ করছে শোকের ছায়া। ঐ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ি করা হয় ত্র“টিপূর্ণ বিকল্প সড়ককে। পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন ছাঁপা হলো। সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা ঠিকাদার। মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেও ঠিকাদারের টনক নড়াতে পারে নি জনগণ। শুধু বৃথাই স্লোগান দেওয়া-‘জনগণ সকল ক্ষতার উৎস’। মূলত বর্তমান গণতন্ত্রে সরকারি দলই সকল ক্ষমতার উৎস। তাই যদি না হবে- তবে যেখানে ব্রীজ ভেঙ্গে বক্স কালভার্ট করার কথা থাকলেও দীর্ঘ দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও এখনো কাজ শেষ হয়নি। যার ফলে ডাইভারশন বা বিকল্প সড়কের কারণে ঝরে গেছে ১৮টি তাজা প্রাণ।
সম্প্রতি আমাদের দেশের নৌ পরিবহন মন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাজাহান খান নিজেই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। ভাগ্য অতি প্রসন্ন যে, শাকুরা পরিবহনের ধাক্কায় তাঁর গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নিজে রক্ষা পেয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান যে চালকদের পক্ষে সাফাই গাইতেন; তাঁর দুর্ঘটনার পর সেই গাড়ির চালককে কেন আটক করা হলো। জনমনে প্রশ্ন- তিনি দুর্ঘটনায় না পড়লে কী চালককে আটক করা হতো?
গত ৫ মে শনিবার দিবাগত রাত ১টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার বহরিয়ার ছালামত খাঁ মোড় এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চার জন নিহত হয়েছেন। গো-খাদ্যবাহী একটি ট্রাক উল্টে রাস্তার পাশের বসত ঘরের ওপর পড়ে। এতে ঘরে থাকা পাঁচ জনের মধ্যে চার জনই মারা যায়। নিহত সেলিম শেখ,  তার স্ত্রী ফজিন্নেছা বেগম, ছেলে রাসেল শেখ ও মেয়ে শিল্পী আক্তারকে নিয়ে চার জনের এ সুখের সংসারটি মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ণ হয়ে গেল। এখন মনে হচ্ছে- রাস্তার পাশে ঘর-বাড়িও নিরাপদ নয়। ঘরে থাকলেও মৃত্যু, রাস্তায় গেলেও মৃত্যু। তাহলে আমরা যাব কোথায়? আর কত মৃত্যু...? মৃত্যুর মিছিল আর কত দীর্ঘ হবে?
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। এ আন্দোলন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। অথচ ‘আল্লার মাল আল্লায় নিয়া গেছে’- বলে স্বান্তনা দেওয়া হয়। বা ‘সড়ক দূর্ঘটনার জন্য চালক দায়ী নয়’- এমন কথাও বলা হয়। কিন্তু পিতার কাধে সন্তানের লাশ কতটা যন্ত্রণার তা কেবল ভূক্তভোগীরাই জানে। স্বান্তনাই নয় প্রত্যেককে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। সর্বস্তরে সচেতনতা প্রয়োজন। চালক হওয়ার আগে প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ । সাক্ষরজ্ঞানহীন চালক হলেও বোধশক্তি থাকা দরকার। ‘গরু-ছাগল চিনলেই তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া যাবে’- বলে নির্বোধের হাতে চালিকা শক্তি দেওয়া সমীচিন নয়।
আমাদের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম সড়ক পথ। তাই দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে গাড়ীর সংখ্যা। অনুমোদন ছাড়াই ফিটনেস বিহীন গাড়ি সংখা বেড়ে যাচ্ছে। গাড়ীর সংখ্যা বাড়লেও দক্ষ চালকের সংখ্যা বাড়ে না। নছিমন, ভটভটিসহ অদ্ভুত অনেক গাড়ি প্রমাসনের নাকের ডগা দিয়ে চলাচল করে। প্রশাসন চোখ থাকতেও অন্ধ। কারণ মাস শেষে তারা অনুমোদনহীন গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা পেয়ে থাকেন। তাই এত দুর্ঘটনা।
এ পর্যন্ত আমরা হারিয়েছি অনেক তাজা প্রাণ। তার সঠিক পরিসংখ্যান করতে পারবো কি না জানি না। আর পরিসংখ্যান করেই কী হবে? আমরা কী আর ফিরে পাবো, যা হারিয়েছি এতদিন। পাবো না। শুধু বলতে পারি-অকালে ধূলিস্মাৎ হয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্ন। আকাশে-বাতাসে আজ শুধুই আর্তনাদ। রাস্তায়-রাস্তায় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল।

বহু দিন পর


        কৃষ্ণা সারথী

বহুদিন পর যখন তোমার সাথে দেখা
তোমার দু’টি চোখে আনন্দের উত্তাল বন্যা।
যেন অভিজ্ঞতাস্নাত এক মধ্যবয়স্ক পুরুষ,
একজন নির্ভরযোগ্য, আদর্শ স্বামী
কিংবা দায়িত্বশীল বাবা।

হয়তো আবার হবে দেখা
আমরা তখন জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে,
বয়সের ভারে রোগাক্রান্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।

সেদিন স্মৃতির পাতা উল্টে দেখব দু’জন
অতীতের ক্ষত চিহ্ণগুলি।
একদিন পা রাখবো পরপারের ডিঙ্গিতে,
ক্ষণিকের পৃথিবী থেকে মুছে যাবে সব
ভালোবাসার স্মৃতি প্রেমকাহিনী।

আর দেখা হবে না,
প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে থাকবো না,
গল্পলোকে পাবো তোমায়
সে আশায় আর থাকবো না,
বহুদিন পর আর দেখা হবে না।

অরণ্যে ফিরে যাব

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ      

কী এমন তুমুল প্রয়োজনে বার বার
তোমার কাছে ছুটে আসি,                             
কেন এমন অবাধ্য টানে চলে আসা?
বার বার ফিরতে চেয়েছি অরণ্যে
শ্বাপদ সংকুল পথে হায়েনার                                
নখরাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে হৃদয়।

তোমার বুকের উত্তাল উর্মিমালা
উত্তাল করেছে হৃদয় তীর,
লবণাক্ত জল মিলেমিশে হয়েছে একাকার।
কী এমন প্রয়োজন ছিল ছুটে আসার?                        
কেন অলৌকিক সুতার টানে
নড়ে ওঠে আমার অস্তিত্বের নোঙর।

আমিতো এমনটি চাইনি কখনো
ফিরে যেতে চাই অরণ্যের মাঝে,
তবু অধরা সুখ কেন পিছু ডাকে।