বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১২

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

মাইনুল ইসলাম:
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার একটি আলোচিত নাম। সাংবাদিকতা, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিনি। কালকিনির বিনোদন জগতে যার অবদান অপরিসীম। ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র নেশায় যিনি ছুটে যান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ঘুণে ধরা সমাজের জন্য কিছু করার ব্রত নিয়ে যিনি এগিয়ে যেতে চান বহুদূর। আজ তাকে নিয়ে আমাদের আয়োজন।
জন্ম :
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ ১৯৮৮ সালের ১ ফেব্র“য়ারি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর উড়ার চর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জেড এম এ মাজেদ। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। মাতা হাসনে আরা। একজন আদর্শ গৃহিনী। ৬ ভাই ১ বোনের মধ্যে বাবা-মার তৃতীয় সন্তান।
শিক্ষা জীবন:
øানঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পার্শ্ববর্তী øানঘাটা ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ২০০২ সালে দাখিল পাশ করেন। ২০০৪ সালে ঢাকার নয়াটোলা এ ইউ এন কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করেন। মাদ্রাসা-ই- আলিয়ায় ফাজিল শ্রেণিতে ভর্তি হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিজ এলাকার কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিএ ( সম্মান) শ্রেণির বাঙলা বিভাগে ভর্তি হন। ২০০৮ সালে সম্মান শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে এমএ ( বাংলা) শ্রেণিতে অধ্যয়নরত রয়েছেন।
কর্মজীবন:
ছাত্রাবস্থায়ই ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, কালকিনি এডিপি’র স্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রকল্পের পিয়ার এডুকেটর হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তিতে ওয়েস্টার্ন কোচিং সেন্টারে বাংলা, অক্সফোর্ড কোচিং সেন্টারের ধর্মীয় ও শিশুকানন কিন্ডার গার্টেনের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসাবে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি ২০০৭ সাল থেকে দৈনিক দেশবাংলা পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন।
সাহিত্য চর্চা:
তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালীন ছোটগল্প লেখার মাধ্যমে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। ২০০৩ সালে মাদারীপুর থেকে প্রকাশিত ‘জাবাল ই নুর’ পত্রিকায় ‘জিজ্ঞাসা’ নামে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে দৈনিক প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, সমকাল, সকালের খবর, যায়যায়দিন, দেশবাংলা, জনতা, স্থানীয় বিশ্লেষণ, সুবর্ণগ্রাম, আনন্দবাংলা, সাপ্তাহিক কালকিনি, কালকিনি ডটকম, খুলনা থেকে প্রকাশিত‘ কবি ও কবিতা’, ‘পানসী’, নীলফামারী থেকে ‘রাঙা শিমুল’,গোপালগঞ্জ থেকে ‘গাঙচিল কন্ঠ’, মাসিক কবিতাপত্র ‘বোধিবৃক্ষ’, ‘মিছিল’ ও লিটল ম্যাগাজিন ‘বুনন’সহ একাধিক পত্রিকায় কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ছোট গল্পের জন্য ২০০৬, ২০১০ ও ২০১১ সালে ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন।
সাংগঠনিক কার্যক্রম :
সাংবাদিক খায়রুল আলমের হাত ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার আগমন ঘটে। বন্ধুসভার প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাংবাদিক ইয়াকুব খান শিশিরের অনুপ্রেরণায় উদীচীর সাথে যুক্ত হন। সালাহ উদ্দিন মাহমুদ বর্তমানে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কালকিনি শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক।  উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদের সাবেক কার্র্যনির্বাহী সদস্য, প্রথম আলো কালকিনি বন্ধুসভার সভাপতি,  জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম কালকিনির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক, প্রথমা রঙ্গমঞ্চ কালকিনির পরিচালক, কালকিনি শিল্পকলা একাডেমির আবৃত্তি বিভাগের সাবেক সদস্য, মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমির নাটক বিভাগ ছাত্র,  মাদারীপুরের উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠনের  সদস্য, দহন সাহিত্য সংসদের সভাপতি ও কালকিনি প্রেসক্লাব’র সহ সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
আবৃত্তি চর্চা :
কলেজ জীবনে এসে বিভিন্ন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। একাধারে লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন আয়োজিত মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিযোগিতায় আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করে বহুবার প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এছাড়া টি আই বি, উদীচী, মাত্রা আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সুনাম অক্ষুণœ রাখেন। বর্তমানে আবৃত্তি সংগঠন উদ্ভাস-এর সাথে নিয়মিত কাজ করেন।
নাট্য চর্চা:
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর গড়ে তোলেন ‘প্রথমা রঙ্গমঞ্চ’ নামে একটি নাট্যগোষ্ঠী। ২০০৮ সালে কালকিনি শিল্পকলা একাডেমীর বৈশাখী মেলা মঞ্চে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনা ও পরিচালনায় ‘মুকুট বাবার মাজার’ নাটক প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এরপর সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনায় কাজী নিয়ামূল ইসলাম, জাহিদ হাসান, এইচ এম মিলন, মেহেদী হাসান, বি এ কে মামুন, মাইনুল ইসলাম ও নাফিজ সিদ্দিকী তপু’র পরিচালনায় আ.জ.ম কামালের নির্দেশনায় ‘ঘৃণা নয় ভালোবাসা চাই’, ‘আলোর পথে’,‘ ডিসকো ফকির’,‘ কালচারাল ফ্যামিলি’,‘বোকার হদ্দ’,‘ঘাতক’,‘যুদ্ধাপরাধী’,‘কাপুরুষ’ ও ‘মুক্তি’সহ বেশ কয়েকটি নাটক মঞ্চস্থ হয়।
এছাড়া সালাহ উদ্দিন মাহমুদের পরিচালনায় লিয়াকত আলী লাকীর ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’,সেলিম আল দীনের ‘বাসন’,মমতাজ জামানের ‘মুক্তির জননী’,এস.এম সোলায়মানের‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাচাল’,মান্নান হীরার‘ফেরারী নিশান’ ও মলিয়েঁরের ‘পেজগী’ মঞ্চস্থ হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পটুয়াখালীর ভান্ডারিয়ায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের আমন্ত্রণে‘ঘাতক’মঞ্চস্থ হয়। একই বছর মার্চ মাসে যশোরে ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ‘মুক্তি’ নাটক মঞ্চস্থ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নাটক বিভাগের ছাত্র হিসাবে মাদারীপুরে ক্ষুদিরামের দেশে, গ্রাস, ফেরারী নিশান ও একটাই চাওয়া নাটকে অভিনয় করেন। তাছাড়া বিভাগীয় নাট্য উৎসবে ২০১২ সালের ৫ মে ফরিদপুরে শিল্পকলা একাডেমী মঞ্চে ‘একটাই চাওয়া’ নাটকে অভিনয় করেন। ছাত্র জীবনে লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন আয়োজিত মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিযোগিতায় একক অভিনয়ে অংশগ্রহণ করে বহুবার প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বর্তমানে লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন মাদারীপুরের নাট্যদলের সাথে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর অঞ্চলে ‘গ্রামের আদালত’ ও ‘সুবিচার চাই’ নাটকে নিয়মিত অভিনয় করেন।
সম্পাদনা:
কলেজ জীবন থেকে বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশ করে আসছেন। কলেজের বাঙলা বিভাগের উদ্যোগে ‘রক্তিম ফালগুন’ নামে দেয়াল পত্রিকা দিয়ে সম্পাদনা শুরু করেন। কালকিনি বন্ধুসভা থেকে ‘বন্ধন’ ও ‘বৈশাখী’ নামে দেয়াল পত্রিকা, ‘আলোর পথে’ নামে সাহিত্য পত্রিকা ও ‘দহন’ নামে মাসিক কবিতাপত্র সম্পাদনা করেন। এছাড়া লিটল ম্যাগাজিন ‘বুনন’র সহ সম্পাদক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন।
সাংবাদিকতা:
তৎকালীন ‘আজকের কাগজ’র সাংবাদিক জাকির হোসেনের কাছে তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ২০০৭ সালে দৈনিক দেশবাংলা’র কালকিনি প্রতিনিধি হিসাবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে দৈনিক বিশ্লেষণ’র বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক প্রান্ত’র কালকিনি প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ ডটকম’র নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা’র কারকিনি প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক একুশ দর্পণের কালকিনি প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন। বর্তমানে দৈনিক সকালের খবর’র কালকিনি সংবাদদাতা, দৈনিক সুবর্ণগ্রাম’র কালকিনি প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক আনন্দবাংলার কালকিনি অফিসে কর্মরত। এবং সাপ্তাহিক কালকিনির বার্তা বিভাগে ও কালকিনি ডটকমের সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত আছেন।
শেষ কথা :
গতাণুগতিকতার বাইরে থেকে কাজ করাই যার স্বভাব। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা, চাকুরী ও সমাজ ব্যবস্থার বিরোধী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিহিংসা তাকে আহত করে। জীবিকা নির্বাহের কথা কখনোই ভাবেন না। অর্থ-বিত্তের প্রতিও আকর্ষণ নেই বললেই চলে। তার মতে-‘ খ্যাতি ও বিত্ত এক সাথে আসে না। যার খ্যাতি আছে তার বিত্তের তেমন প্রয়োজন হয় না। বিত্তের লোভ মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপার্জনেই সন্তুষ্ট তিনি। আশা করি তিনি তার কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। নিরন্তর শুভকামনা তার জন্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন