বুধবার, ১৬ মে, ২০১২

কালকিনি প্রবাহ

- আকন মোশাররফ হোসেন :
(পূর্ব প্রকাশের পর)
কালকিনি উপজেলার আদিবাসী কারা, কোথা থেকে তাদের আগমন ঘটেছিল আর কোথায় চলে গেছেন তা- বলা কঠিন। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, কালকিনি উপজেলার মুসলমান বনেদী পরিবারগুলো বহিরাগত। সৈয়দ, খন্দকার, চৌধুরী, হাওলাদার, ভূইয়া, তালুকদার এদের অন্তর্ভূক্ত। অন্যদিকে ব্রাক্ষ্মণ সম্প্রদায়ের বসবাস এখানে অনেক আগে থেকে তাছাড়া কায়স্থ, সাহা, মালো ইত্যাদি হিন্দু সম্প্রদায় তখনও ছিল এখনও আছে। তবে নিু বর্ণের হিন্দু নম সম্প্রদায়ের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি ছিল। বাঁশগাড়ী, আলীনগর, কাজী বাকাই, মাইজপাড়া, ঘোষেরহাট, নবগ্রাম, শশিকর এলাকার জলাভূমিতে ও বিল অঞ্চলের এরা প্রধান অধিবাসী। হিন্দু জমিদার ও উচ্চ বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের অত্যাচার ও শোষণের কারণে এরা নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছিল। ভৌগোলিক  দৃষ্টিতে দেখা যায় নদী প্রবাহিত এলাকা আলীনগর, এনায়েতনগর, বাঁশগাড়ী, শিকারমঙ্গল, চর দৌলত খান, সাহেবরামপুর, কয়ারিয়া ও রমজানপুর ইউনিয়নের নদীর তীর বা চরাঞ্চলের মুসলমানদের আবাসন। যদিও নদীর ভাঙ্গা-গড়ার খেলা কৌতুহলের বিষয়। এ এলাকার নম শুদ্র সম্প্রদায়ের নারীরা এবং গরীব মুসলমান নারীদের অনেককে পুরুষের মতো ধুমপান করতে দেখা গিয়েছে আদীকাল থেকেই।
প্রাচীন অনেক নিদর্শন কালকিনি থানাতে রয়েছে। এই উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের আমড়াতলা ও খাতিয়াল গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে আড়াই হাজার একর জমিতে সেনাপতির দিঘি রয়েছে। শীত মৌসুমে নানা প্রকার হাজার হাজার অতিথি পাখি ঐ দিঘিতে শীত অবকাশ যাপন করে। জনশ্র“তিতে জানা যায়, মুগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে সুবাদার ইসলাম খার নেতৃত্বে বিশাল একদল সৈন্য ঢাকা যাওয়ার পথে এখানে কিছুদিন অতিবাহিত করেন। পানীয় জলের অভাব মেটাতে সেনাবাহিনী দ্বারা এই দিঘি খনন করা হয়। এ কারণেই এই দিঘির নামকরণ করা হয় সেনাপতির দিঘি।
কালকিনি উপজেলায় ইসলাম ধর্মের আগমন ও বিকাশের পূর্বে হিন্দু ধর্ম ছিল প্রধান। এখানকার প্রাচীন জনগোষ্ঠী ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। দশম শতাব্দীতে এ এলাকায় কিছু কিছু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর বসবাসের প্রাচীন ইতিহাস পাওয়া যায়। ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার লক্ষে এ এলাকায় পীর-দরবেশ- আউলিয়ার আগমন ঘটেছে। সেই সুবাদে এই এলাকার একটি মৌজার নাম আউলিয়ার চর।
হযরত পীরজাদা শাহ সুফি এনায়েতপুরী (র) সাহেবের বর্জার (ইঞ্জিনবিহীন বড় নৌকা) নোঙর করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন যেকারনে এই মৌজার নাম এনায়েতনগর হয়েছে। এবং সেই থেকে এই মৌজা ও ইউনিয়নের নাম এনায়েতনগর।
(চলবে)   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন