রচনাঃ মোঃ আজিজুল ইসলাম স্বপন
নির্দেশনায়: আ.জ.ম কামাল
প্রশিক্ষকঃ জেলা শিল্পকলা একাডেমী মাদারীপুর
সার্বিক তত্ত্বাবধানে:
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
ছাত্র, নাটক বিভাগ
জেলা শিল্পকলা একাডেমী মাদারীপুর
চরিত্রলিপি:
বয়াতী, আমীরন,সাজু , রফিক, বাদল, মানিক , রফিকের মা , বাচ্চুর বাবা, ওয়াজেদ আলী, কেতর আলী, মেজর. আরও কিছু আর্মি ও মুক্তিযোদ্ধা।
প্রথম দৃশ্য:
স্থান: বয়তীর বাড়ী
সময়ঃ সকাল
সারারাত গানবাজনা করে ভোর বেলা বাড়ী ফেরে সোলেমান বয়াতী। সোলেমান বয়াতীর স্ত্রী আমিরন তখন উঠান ঝাড়– দিচ্ছিল। সোলেমান বয়াতী উঠানে গান গাইতে পা রাখতেই আমিরনের তাছ্যিলের সুর।
আমিরনঃ আইজ কি সূর্য্য পশ্চিম দিক দিয়া উঠল নাকি? ব্যাপার কি? বয়াতী যে সাত-সকালে দোতারা হাতে নিয়া বাড়িীতে হাজির। গানের আসর কি ভালো জমে নাই?
বয়াতীঃ তুমি মনে হয় ভূল দ্যাখতাছো। সূর্যতো তোমাগো বাড়ীর পিছন দিয়া উঠছে।
আমিরনঃ সংসার চালানোর মুরদ নাই, আবার মুখে মুখে তর্ক, ভালো হইবোনা কইয়া দিতাছি।
বয়াতীঃ কেউ তর্ক করতে চাইলে কি মুখ বন্ধ কইরা থাকুম। তর্ক করলে কি করবা তুমি? কিছুই করতে পারবানা আমার। আমি বিজয়ের ডাক শুনতে পাইতাছি(উদাস ভঙ্গি)পরাধীনতার শিকল ছেড়ার আওয়াজ শুনতাছি।
আমিরনঃ কথা ঘুরাইবানা কইতাছি, ইসস.. রে আমার জুয়ান মরদ, কথা হুইন্না মনে অইতাছে দ্যাশটারে একেবারে স্বাধীন কইরা আইছো
বয়াতীঃ বউরে একলা যদিও পারুম না, তবে চেষ্টা করতে দোষ কি? আহারে, খুব মনে চায় দেশটা যদি স্বাধীন করতে পারতাম(দীর্ঘশ্বাষ)। হের লাইগ্যাইতো মুখে বানছি দেশের গান, হাতে নিছি দোতারা
আমিরনঃ কতায় আছে না, গুজায় চায় চিৎ অইয়া হুইতে বয়াতীর অইছে হেই দশা।
বয়াতীঃ তুমি কিন্তু আমারে অপমান করতাছো। তুমি জানো, প্রয়োজনে আমি দোতারা ছাইরা হাতে রাইফেলও নিতে পারি।
আমিরনঃ হ......... যার মানই নাই তার আবার অপমান, ভাত পায় না আবার চা খায়, হাটতে পারে না বন্দুক ঝুলায়
বয়াতীঃ এই, মান নাই মানে? তুই কি কইতে চাস।
আমীরনঃ কি কইতে চাই বোঝ না? একজন জোয়ান মরদের বউ মাইয়া মাইনষের বাড়ীতে কাম কইরা প্যারে খুদা মিডায়। হেইয় মনে থাকে না
বয়াতীঃ তাও তো তোর বাপের বাড়ী থিকা ভালো আছোস।
আমীরনঃ তোমার ভালোর খ্যাতা পুরি। সারাদিন রাইত পইড়া থাকে দোতারা লইয়া, আর বাড়ী আইয়া করে ঝগড়া, আগে জানলে এমন পোড়া কপাইল্যার সংসারেই আমি আইতাম না।
বয়াতীঃ অহন তো জানছোস, তয় যা গিয়া, আমার লগে আমার মাইয়া আছে, আর আছে দোতারা, তোর মতন অমন বান্দরনীরে আমার লাগবোনা, তোর তোন আমার দোতারা অনেক বেশি সুন্দর। আহারে কি সুন্দর সুর দেয়, এই দোতারা আমারে দ্যাশের মাটিতে মিশাইয়া দেয়, যার তারে বাইজা উঠে দ্যাশের গান। (একটি দেশের গান)
আমীরনঃ কি কইলা আমার তোনে তোমার দোতারা সুন্দর, তোমার দোতারা আমি ভাইঙ্গাই ছাড়–ম, (এমন সময় ঘর থেকে মেয়ের প্রবেশ,মেয়ে বলে উঠে)
সাজুঃ ওমা তোমরা এ কি শুরু করলা, কাম কাইজ বাদ দিয়া শুধু ঝগড়া করো
আমীরনঃ থাক তুমি তোমার দোতারা লইয়া, আমি ও দ্যাখতে চাই তোমার প্যাডের যোগান কেডা দেয়, তোমার দোতারা না আমি।
সাজুঃ মা,থাম তো, বাজান তুমিও থামো
বয়াতীঃ আয় মা, আমার কাছে আয় , দ্যাখ তোর মায় সকাল বেলা আমার মেজাজটা বিগরাইয়া দিছে। (আমীরন নিজের কাজে মন দেয়)
সাজুঃ বাজান, হুনছো-দ্যাশে না-কি আগুন লাগছে, পাকিস্তানি মেলেটারিরা নাকি খালি বাঙ্গালিগো ধইর্যা ধইর্যা মারতাছে।
বয়াতীঃ তোর কাছে কেডা কইল?
সাজুঃ শহরের মানুষ লাইন ধইরা গেরামে আইতাছে, শহরে নাকি মেলা গন্ডগোল অইতাছে।
বয়াতীঃ আমি ও একটু একটু হুনছি। তয় এহনতো মনে অইতাছে ঘটনা আসলেই হাছা।(আমীরন ভয় পেয়ে এসে বলে)
আমীরণঃ এই সব কতা হুইন্যা আমার খুব ডর করতাছে। হোনেন আমনে আর গান গাইতে দুরে দুরে যাইয়েন না, মাইডা বড়ো অইছে, কহন কি অইয়া যায় আমার কিন্তু আসলেই ডর করতাছে।
বয়াতীঃ ডরের কিছু নাই,(আনমনে ......... ভয় কি মরনে গান ধরে)
আমীরনঃ রাখেন আমনের গান, আমনে সব কিছুতেই খালি হেলামী করেন
বয়াতীঃ আইচ্ছা, আমি দুরে চইল¬া গ্যালেইতো তুমি খুশি অইবা, ঠিক না?
আমীরনঃ (অভিমান নিয়ে), আমনে খালি আমার বাহিরডাই দ্যাখলেন, ভিতরডা দ্যাখলেন না, ভিতরে ভিতরে যে আমার মনডা আমনের লাইগ্যা পুইড়া ছারখার হয়,হেইডা কোনদিন বুজলেন না।
বয়াতীঃ হেইডাতো তুমি ও বুজলানা।
আমীরনঃ হোনেন, আসল কতা কইতেই ভুইল্যা গেছি, কাইল সন্ধ্যাকালে মানিক ভাই আইছিলো, আমনেরে দ্যাহা করতে কইছে।
বয়াতীঃ কও কি?এই কতা আরও আগে কইবা না, আমি অহোনি যাইতাছি....(দ্রুত প্রস্থান)
আমীরনঃ কিছু মুখে দিয়া যান....... হায়রে মানুষ( সবার প্রস্থান)
২য় দৃশ্য:
*( কোন এক গোপন স্থানে কয়েকজন মুক্তিকামি যুবক বসে আলোচনা করছে, এমন সময় বয়াতীর আগমন)
বয়াতীঃ মানিক ভাই তুমি আমারে আইতে কইছো?
মানিকঃ শোন বয়াতীভাই দ্যাশের অবস্থা ভালো না, গত ২৫ শে মার্চ রাইতে পাক আর্মিরা ইয়াহিয়া খানে নির্দেশে নিরীহ বাঙ্গালীর উপর ঝাপাইয়া পড়ছে, জাগায় জাগায় আগুন ধরাইয়া দিছে।
বাদলঃ হ বয়াতী ভাই, হুনলাম বাশগাড়ীর নুরুল ইসলাম শিকদার তখন ইপিআরে আছিলো, সে পিলখানা থেকে পালইয়া আইছে, যুদ্ধ শুরু অইয়া গ্যাছে, এহন আর সময় নাই, আমরা দ্যাহাইয়া দিমু আমাগো ভারী অস্ত্র নাথাকলেও মনোবল আছে, আছে দ্যাশের প্রতি ভালোবাসা, মাটির প্রতি আছে গভীর টান, আর থাকবোইবা না ক্যান? বঙ্গবন্ধু কইছে না যার যা কিছু আছে তাই শত্র“র বিরুদ্ধে ঝাপাইয়া পড়ো, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।
বয়াতীঃ হ, ঠিকই কইছো, আমরা ও দেখাইয়া দিমু এখনোই আমাগো উপযুক্ত সময়। কিন্তু কীভাবে কি করবা? ঠিক করছো কিছু?
বাদলঃ শোন, আগে আমাদের মনোবল বাড়াতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ঘর থিকা বাহির হইয়া আসতে হবে, আমাগো যুদ্ধের প্রস্তুুতি নিতে হইবো, আমাগো এহন ট্রেনিং দরকার, লিডারদের সাথে যোগাযোগ অইতাছে। তারা সবাই আসমত আলী খান সাহেবের বাসায় আছে, ইলিয়াস চৌধুরী, শওকত ছ্যার, স্টুয়ার্ড মুজিব ও ফনি বাবু ও আছে।
মানিকঃ বাদল ভাই তুমি না কইলা, শওকত ছ্যার আর স্টুয়ার্ড মুজিব নাকি আমাগো দ্যাখা করতে কইছে।
বাদলঃ হ, হাতে সময় খুব কম, তোমরা যার যার বাড়ী থিকা বিদায় নিয়া আসবা। আগামীকাল সকালে আমরা নাজিমুদ্দিন কলেজে হইমু, জাগো জাগো বাছাই করবো তারা আমরা ট্রেনিং এ যামু।
বয়াতীঃ এহন তয়লে উডি, কাইল সকাল সাতটার মধ্যে কলেজ মাডে থাকুম।
মানিকঃ হ, স্টুয়ার্ড মুজিবের নেতৃত্বে একটা টিম ইন্ডিয়ায় ট্রেনিং এর জন্যে পাঠানো অইবো, শোন, যারা ট্রেনিং এ যাইতে চায় তাগো আসতে কইবা
বয়াতীঃ বুজছি, আমি তাইলে পোটলা পাটিলি লইয়া হাজির অইয়া যামু, তয় সবাই খুব সাবধান, আমাগো সলা পরামর্শ য্যান কেউ জানতে না পারে, হুনছি আমাগো এলাকার কয়েকজন বেঈমান নাকি গোপানে পাকিস্তানিগো সাহায্যে করে, খোজ-খবর দেয়,
বাদলঃ ঠিক আছে, আমরা এহন তাইলে, সবাই যার যার বাড়ী যাই (সকলের প্রস্থান)
৩য় দৃশ্য:
স্থানঃ বয়াতীর বাড়ী
সময়ঃ ভোরবেলা
(বয়াতী পোটলা পাটলি বাধছে, আমীরনের প্রবেশ)
আমীরনঃ আমনে পোটলা পাটলি বান্ধেন ক্যান, কই যাইবেন, দ্যাহো দেহি, মুখখান ক্যামোন হুগাইয়া আমসীর মতো অইয়া গ্যাছে। কতা কন না ক্যান?
বয়াতীঃ (সম্বিৎ ফিরে পেয়ে) আমারে কিছু কও?
আমীরনঃ হ, কই, সাত সকালে আমনে কই যান? সারাদিন কিছু খান নাই, রাইতে খান নাই, এহনো না খাইয়া পোটলা পাটলি বাইন্ধা আমনে কই যান। কাইলকের রাগ বুঝি এহনো আছে? ইচ্ছা কইর্যা কি আমনের লগে অমন করি,
বয়াতীঃ নারে, সাজুর মা তুই যা ভাবতাছোস, আসলে তা না, আমি তোর লগে রাগ যাইতাছি না। হুনছোস পাকিস্থানীরা আমাগো উপর অত্যাচার করতাছে, অগো আমার ঘেন্যা ধইরা গ্যাছে। অগো খতম কইরা আমি বাড়ী ফিরুম।
আমীরনঃ আমনে কই যাইবেন, আমনে গ্যালে আমাগো কেডা দ্যাখবো?
বয়াতীঃ তোগো আল¬ায় দ্যাখবো, তোগা লাইগ্যা আমি কিছুই করতে পারি নাই। তয় এইবার মনে অয় কিছু করতে পারুম, খালি তোগো লাইগ্যা না দ্যাশের লাইগ্যাও কিছু করতে পারুম। বউরে যদি বাইচ্যা আহি তো আইলাম, না আইলে তুই গর্ব কইরা কবি তোর স্বামী দ্যাশের লাইগ্যা যুদ্ধ কইরা শহীদ অইছে।
আমীরনঃ সাজু তো ঘুমাই রইছে, অর লগে কতা কইয়া যাইবেন না, আমি অরে ডাইক্যা দেই।
বয়াতীঃ না, অরে ডাকোনের কাম নাই, হাতে সময় কম, অয় ওটলে অরে কইবা, তোর বাজানে যুদ্ধে গ্যাছে। আমি অহোন যাই (আমীরন পিছু পিছু কাদতে কাদতে যায়, পিছন থেকে মেয়ে সাজু ডাকে)
সাজুঃ মা তুমি কান্দ কেন? বাজান কই?
আমীরনঃ তোর বাজানে গ্যাছে গা।
সাজুঃ মা বাজানে কই গ্যাছে?
আমীরণঃ তোর বাজানে যুদ্ধে গ্যাছে।
সাজুঃ মা-রফিকের মা চাচি কইলো। রফিক ভাই নাকি যুদ্ধে যাইবে, চাচি পাগোলের মত কানতাছে।
আমীরনঃ কছকি? তুই তইলে ঘরের কাম কর। আমি একটু ঐ বাড়ি যাই।
সাজুঃ আইচ্ছা যাও। তাড়াতাড়ি আই ও। (আমীরনের প্রস্থান। রফিকের প্রবেশ)
রফিকঃ চাচী, চাচী ও চাচী বাড়িতে আছেন?
সাজুঃ ক্যাডা? (বের হয়ে) ও আপনে? মায় তো এই মাত্র আপনা গো বাড়ী গেল। বাজানে যুদ্ধ গ্যাছে। আপনিও নাকি যাইবেন।
রফিকঃ হ, যাইতাছি। তয যাওয়ার আগে তোমারে একটা কতা বলার আছিল।
সাজুঃ কি কতা কইবেন। আমনে আমার দিকে ওমনে চাইয়া রইছেন ক্যান।
রফিকঃ চাইয়া রইছি ক্যান তুমি বুঝ না।
সাজুঃ না বুঝি না। বুঝলে কি জিগাইতাম।
রফিকঃ আমি তোমারে খুব পছন্দ করি। কইতে পার ভালোও বাসি।
সাজুঃ আপনার কি সরমলজ্জা নাই। আসারে এইসব কইতাছেন।
রফিকঃ তোমার কাছে আমার শরম কীসের। জানিনা সাজু জান লইয়া ফিরতে পারুম কিনা যদি ফিরি তাইলে তোমারে আমার জীবন(সঙ্গী/সাথী) করুম।
সাজুঃ ঠিক আছে আগে দ্যাশটারে রক্ষা করেন। দেশের এই বড় বিপদে আমাগো সকলেরই উচিৎ দ্যাশের কথা চিন্তা করা। যদি ঠিকমতো দ্যাশ স্বাধীন হয় আর আমরা সবাই বাইচ্চা থাকি তয় অবশ্যই আমি আমনের হমু।
রফিকঃ সাজু তোমার উৎসাহ আমার শক্তি আরও বাড়াইয়া দিছে। তুমি দোয়া কইরো আমি যেন তোমার লাইগা স্বাধীন দ্যাশের পতাকা লইয়া ফিরতে পারি। (আবেগ জরিত কন্ঠে রফিকের বিদায়) আমি তাইলে এইবার া আসি সাজু।
৪র্থ দৃশ্য:
(চারদিকে গোলাগুলির শব্দ। চিৎকার ধ্বনি।)
মানিকঃ (ফিস ফিস গলায়) বাদল ভাই, আমরা যারা ট্রেনিং নিয়া আইছি। তারা এহন কী করুম। একটা কিছু ভাবা দরকার।
বাদলঃ হ, তা-ই ভাবতাছি। দুইডা ব্রীজ ধংসের পরে আমাগো হাতে এহন তেমন কোন অস্ত্র নাই। তাই প্রথমে কৌশলে পোষ্ট অফিস পাটের গুদাম, তফসিল অফিস, টেলিফোনের লাইন এগুলা ধ্বংস করতে হবে। অস্ত্র হাতে পাওয়ার পর যামু অন্য কোন অপারেশনে।
বয়াতীঃ হ-তয় খুব সাবধান। জুটমিল, কুলপদ্দি বাজারসহ কয়েকটা জায়গায় আর্মিরা ক্যাম্প বসাইছে। আর তগো সাহায্য করতাছে আমাগো দ্যাশের কিছু বেঈমান কুত্তারা।
মানিকঃ জানেন বাদল ভাই আমার পিচ্চি ভাইর ব্যাটা বাচ্চু আছেনা? ও আমাগো লগে লগে থাকতে চায়। হেদিন আমারে কয় চাচা আমারে একটা অস্ত্র দ্যাও। আমি দ্যাশের শত্রুগুলা শ্যাষ কইরা দেই।
বয়াতীঃ শোন মানিক, বয়াতী ঠিকই কইছে। আরে কবি-কাগজে-কাগজে স্লোগান লেইখ্যা পোষ্টার বানাইয়া গোপনে সবখানে লাগাইয়া দিতে।
রফিকের প্রবেশ।
বয়াতীঃ আচ্ছা বাদল ভাই সমাদ্দারে ব্রীজটা উড়াইয়া দিলে ক্যামন হয়। নুরুল ইসলামরা নাকি কালকিনির গোপালপুর ব্রীজ উরাইয়া দিছে। তয় নুরুল ইসলাম হানাদারগো গাত থেইক্কা বাঁচতে পারে নাই। ব্রীজ উরাইয়া যাওয়ার সময় আর্মিগো গুলিতে শহীদ হইছে।
বাদলঃ হ- নুরুর লেইগ্যা খুব খারাপ লাগতাছে। তয় জীবনের ঝুকি নিয়া হইলেও সমাদ্দারের ব্রীজ উড়াইতে হইবো। তাইলে আর্মি আর মাদারীপুর এর ভিতরে ঢুকতে পারবোনা।
রফিক ঃ হ-হেইডাই ভালো হয়। চোকদার ব্রীজ, আমগ্রাম ব্রীজতো ধ্বংস করা হইছেই। তয় সমাদ্দারের ব্রীজটাই হইলো আসল।
বাদল ঃ শোন, আজকে আমাগো দুই দলে ভাগ হইয়া যাইতে অইব। একদল চরমুগরীয়ার জেডিসি পাটের গুদাম ধ্বংস করব। আর একদল এ আর হাওলাদার জুট মিল ধ্বংস করবো। শোন, আইজ ১৪ই আগষ্ট। পাকিস্তান দিবস। আমাগো প্রান থাকতে বাংলার মাটিতে পাকিস্তান দিবস পালন করতে দিমু না।
বয়াতীঃ তয় সাবধান। আমাগো খলিল বাহীনির সবার চোখ কান খোলা রাখতে হইবো। শুনলাম কুলপদ্দিতে দুই জন মুক্তিযোদ্ধারে কারা য্যান ধারাইয়া দিছে।
মানিকঃ রাজৈর, শিবচর, কালকিনির খবরাখবর ও একটু লইও কোখায় সকি অবস্থা। বাদল ভাই এহন তইলে আমরা উডি। মূল অপারেশনের দিকে যাই। আর বাচ্চুরে পাঠাইয়া দেই কুলপদ্দিতে আটক দুইজনের নাম জাইন্না আসতে।
বয়াতীঃ চলো সবাই। জয় বাংলা। (সকলের প্রস্থানঃ গোলাগুলির শব্দ)
৫ম দৃশ্য:
*সোলেমান বয়াতীর দাওয়ায় বসে আমীরন তার মেয়ে সাজুর মাথায় বিলি কাটছে। এমন সময় রফিকের মার প্রবেশ।)
রফিকের মাঃ মায়ে ঝিয়ে ক্যামন আছো?
আমীরনঃ হ-গো-বু আমাগো আর থাকা। দ্যাশের যা অবস্থা প্রত্যেকটা রাইত কাটে দুঃচিন্তায়, আর রাজাকারগো ভয়ে।
রফিকের মাঃ তুমি ঠিকই কইছো। মা সাজু ঘরে কি পান টান কিছু আছে? (সাজু ঘরে যায়)
রফিকের মাঃ বইনরে বুকটার মইধ্যে খালি ধক্্ ধক্্ করে। আমার রফিক ক্যামন আছে, খোদা মাবুদই জানে। সাজুর বাপের কোন খোজ খবর পাওনি বোইন।
আমীরনঃ নারে বু-কোন খোজ খবর পাই নাই। দোয়া করেন বু দোয়া করেন। আমাগো আপনজন যাতে দেশ স্বাধীন কইরা আমাগো বুকে ফিইরা আহে। মাইয়াডা আমার মনমরা অইয়া গ্যাছে।
রফিকের মাঃ বু- সাবধনে থাকিস। ওয়াজেদ আলী আর কেতর আলী পাকবাহীনিরে সাহায্যে করতাছে। বাড়ি বাড়ি ঘুইরা মুক্তিযোদ্ধাগো আর জুয়ান মাইয়া মানুষ ধইরা নিয়া মেলেটারীগো হাতে তুইল্লা দেয়।
আমীরনঃ আমি ও হুনছি। হের লেইগ্যাইতো ডর। ঘরে আমার ডাঙ্গর মাইয়া। (পান হাতে সাজুর প্রবেশ)
সাজুঃ নেন চাচী আমনের পান। পানও ক্যামন শুকাইয়া গ্যাছে। হাড়ে-ঘাড়ে কেন্ডা যাই কন? তিন বেলার খাওন এক বেলায় খাই।
রফিকের মাঃ হরে- মা। তোর মুখখান ক্যামন শুকাইয়া গ্যাছে। কী সুন্দর বউ আমার ক্যামন হইয়া গ্যাছে। (সাজু লজ্জা পায়) থাউক, আর কয়ডা দিন মা, পোলা আমার দ্যাশ স¦াধীন কইরা ফিরলেই তোরে লাল শাড়ী ফিন্দাইয়া আমার ঘরে নিমু।
আমীরনঃ দোয়া করো বু। দোয়া করো সব উপর আলার মর্জি।
রফিকের মাঃ আইজ যাইরে বইন। একটু সাবধানে থাকিস।
আমীরনঃ চলেন আপনেরে একটু আগায় দিয়া আহি। চল মা সাজু। (সকলের প্রস্থান)
ষষ্ঠ দৃশ্য:
স্থানঃ আর্মি ক্যাম্প
সময়ঃ বিকাল
*( পাক বাহীনির ক্যাম্পে মেজরের সাথে রাজাকার ওয়াজেদ আলী ও কেতর আলীর কথোপকথোন)
ওয়াজেদ আলীঃ মেজর সাব, মুক্তি বাহীনিরা যা শুরু করছে তাতে তো বেশি সুবিধার মনে হইতাছে না।
মেজরঃ (ভয় পেয়ে) তুম কিয়া বাত বোলা, মুক্তি কোনছে............ মুক্তি মিলেগা।
ওয়াজেদঃ না হুজুর এ ধারমে নেহী মিলেগা। তবে যেভাবে ক্ষ্যাপছে তাতে এ ধারমে আইতে কতক্ষন।
মেজরঃ (অট্রহাসি) মুক্তি এ ধারমে নেহি আয়েগা কাভি নেহি। তুম ঝুট বলতাহু। হামছে ডরমে লাগা থা। যা শালা মেজাজ মে বিগড়ে দিলে তো।
ওয়াজেদঃ হুজুর, খোশ আমদেদ হো এওগা ভি খুশির বাত বোলতাহু। মেজাজ ভি ঠান্ডা হোতা হায়।
কেতরঃ কিচু মনে না করলে একটা কথা কই। সুন্দরী জোয়ান মাইয়া আছে। আপনার মেজাজ এক্কেবারে ঠান্ডা হইয়া যাইবো।
মেজরঃ মাইয়া? মাইয়া কিয়া হ্যায় ?
কেতরঃ মাইয়া মানে হইলো মানে ....................... (আটকে যায়)
ওয়াজেদঃ মাইয়া মানে বহুত খুব সুরত লাড়কী।
মেজরঃ ও ঠিক হ্যায়, ঠিক হ্যায়। যাও ওকে লিয়ে আসতা হ্যায়।
ওয়াজেদঃ হুজুর, জেলার সাহেবকা কিয়া বাদ হে।
মেজরঃ জেলার সাবকা লাড়কীকা বাদ মে সব খতম করতা হায়।
ওয়াজেদঃ হুজুর, জেলারের মেয়ে বাদে সব খতম?
কেতরঃ মানে ঐ সুন্দরী সুফিয়া?
মেজরঃ হা- হা- হা- হা ওকে হাম ধীরে ধীরে খতম করতাহু। ও হামার ক্যাম্পে ভি রাখতাহু।
ওয়াজেদঃ আমরা তাইলে এখন আসি হুজুর।
মেজরঃ ঙশ তুম যাও মেজরের প্রস্থান)
ওয়াজেদঃ শোন কেতর আলী। বয়াতীর বাড়ীর দিকে নজর রহিস শুনলাম ও নাকি যুদ্ধে গ্যাছে। সালার কত্তবড় সাহস সালায় ভাত পায় না চা খায়।
কেতরঃ হুজুর দোতারা লইয়া যুদ্ধে যায়। হুজুর ঘরে কিন্তু সুন্দরী বউ আর মাইয়া আছে।
ওয়াজেদঃ কেতর আলী চল গায়েনের বাড়ীর দিকে যাই ওর যুদ্ধে যাওনের সাধ মিটাইয়া দিমু চল।
কেতরঃ চলেন তাইলে। (উভয়ের প্রস্থান)
সপ্তম দৃশ্য:
(স্থানঃ মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আস্তানা)
বাদলঃ কিরে মানিক চারিদিকের খবর কী?
মানিকঃ ভাই আমগ্রাম আর পাথুরিয়াপাড় ব্রীজ ধ্বংস কইরা দিছি। মিলিটারিরা এহন আর সহজে ঢুকতে পারবো না। তয় সমাদ্দারের ব্রীজ ভাঙ্গতে পারলেই আমরা সফল।
বয়াতীঃ শোন গোপনে একটা খবর পাইলাম।
সবাইঃ কী খবর?
বয়াতীঃ রফিক, কাশেম আর সাইদুলরা মিল্লা ঘটকচর স্কুলে কয়েকজন রাজাকারগো আটক করছে। আমাগো এহন সে দিকে যাওয়া দরকার।
মানিকঃ তাইলে চল, আমরা এহনই যাই। শালাগো জনমের তরে বেঈমানীর সাধ মিটাইয়া দেই।
বয়াতীঃ সাবধানে যাইস, তোরা আইলে আমরা এ আর হাওলাদার জুট মিলে হামলা করুম। হুনলাম, কালকিনির ফাসিয়াতলা হাটে পাকবাহীনিরা আইজ গণহত্যা চালাইছে। ঘরে ঘরে আগুন ধরাইয়া দিছে। শত শত মানুষরে মিথ্যা কতা কইয়া বাজারে আইন্না গুলি কইরা মারছে। আমাগো গোপন সংবাদ দাতা নুরে আলম পান্নারে ধইরা লইয়া গ্যাছে।
মানিকঃ হ- গ্রামের অনেক নারী-পুরুষ ধইরা আনছে জুট মিলে। তাগোরে মুক্ত করতে না পারলে হারামীর বাচ্চারা তাগো মাইরা জুট মিলের মধ্যেই গণকবর দিব। বেশি দেরি করন ঠিক অইবোনা।
বয়াতীঃ বাদল, মানিক আমার মনডা জানি ক্যামন করতাছে বউ মাইয়াডারে খুব দ্যাখতে মন চায়। না জানি ওরা ক্যামন আছে।
বাদলঃ বয়াতী তুমি এই অবস্থার মইধ্যে বাড়ীর কথা ভাবো?
বয়াতীঃ হ-ভাবি, তোমরা কি বুঝবা। তোমাগোতো আমার মতোন সংসার নাই, বউ নাই, শিয়ানা মাইয়া নাই। জানি না ওরা কোন বিপদে আছে।
মানিকঃ সব ঠিক অইয়া যাইব। দেইখেন আমাগোরই জয় অইবো। আপনে কোন চিন্তা কইরেন না। ওরা ভালোই আছে।
বাদলঃ না বয়াতী, তোমার বাড়ি যাওনের কাম নাই। আমার এখন উডি( সকলের প্রস্থান)
অষ্টম দৃশ্য:
(ঝি ঝি পোকার শব্দ)
* (সলেমান বয়াতীর বাড়ি। খন্দকার ও কেতর আলী আসে)
ওয়াজেদঃ বয়াতী ও সলেমান বয়াতী, বাড়ী আছ নাকি?
আমীরনঃ ক্যাডা, ক্যাডা জিগায়?
ওয়াজেদঃ আমি ঐ পাড়ার খন্দকার ওয়াজেদ আলী
আমীরনঃ তারে কি দরকার? হে তো বাড়িতে নাই।
ওয়াজেদঃ না মানে,ওতো আমাগো গৌরব। মুক্তিযোদ্ধা- জয় বাংলার সৈনিক। মনে বড় আশা ছিল যুদ্ধে যামু। এই দ্যাহো আমি ট্রেনিং কইরাও যাইতে পারলাম না।
কেতরঃ হে- হে- হে। হুজুর আপনার আর কী আশা ছিল।
আমীরনঃ আমনেরা এহোন যান। হে আইলে আমি আমনের কতা কমু হানে।
ওয়াজেদঃ আহা........ । লক্ষী পায়ে ঠ্যালতে নাই। তারে দিয়া আমি কি করুম। দরকারতো তোমারে। ঘরে মেজবান আইলে একটু খাতির যতœ করতে হয় না?
আমীরনঃ সুন্নতী লেবাস পইরা এইসব কি কতা কন? শয়তান বদমাইশ, এই দিকে আর একটু ও আগাই বিনা কইতাছি।।
ওয়াজেদঃ (অট্রহাসি দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে) কেতর আলী শালিরে আমি নিতাছি তুই মাইয়াডারে নিয়া চল মেজর সাব পাইলে খুশি হইবো।
আমিরনঃ ছাড় কুত্তার বাচ্চা। তগো মা বোন নাই। তগো উপর আল্লার গজব পরবো। তোরা শান্তিতে থাকতে পারবি না।
মেয়েঃ ছাড় শয়তান ছাড়, তোরা আমাগো ছাড় কইতাছি।
*একদিক দিয়া ওয়াজেদ আলী, গায়েনের বউ ও মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে যাবে, অপর দিক দিয়ে আবার ওয়াজেদ কেতর আমীরন ও মেয়েকে নিয়ে ঢুকবে মেজর সাবে ক্যাম্পে।
ওয়াজেদঃ হুজুর, এই যে, আপনার সুন্দরী লাড়কী
মেজরঃ আও লারকী আও। হাম তুমকো সাদি করতাম। হাম তুমকো বিবি বানাইতাম। আও মেরা দিলের রানী। তুম বহুত সুরাত হে।
আমীরনঃ না- না- না। আমার গায় হাত দিবি না কইলাম, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বরের দোহাই দিয়া কইতাছি আমারে ছাইড়া দে।
মেয়েঃ বেঈমান, রাজাকার, আমাগো ছাইড়া দে। অবলা মাইয়া মানুষ লইয়া টানাটানি করছ ক্যান। পারলে মুক্তিযোদ্ধার সামনে গিয়া খাড়া। আমার বাজানে হুনলে তোগো কাইট্টা কুত্তা দিয়া খাওয়াইব।
মেজরঃ গায়েনের বউকে অত্যাচার করতে উদ্যত হয় তখন সাজু কেতরের হাত থেকে ছুটে গিয়ে মেজরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বলে আমার মায়রে ছাইড়া দে কইতাছি। মেজর তখন রাগ হয়ে গলায় ফাস দিয়ে সাজু কে মেরে ফেলে।
(আমীরনকে টেনে নিয়ে ভিতরে নিয়ে যায় এবং সকলের প্রস্থান)
নবম দৃশ্য:
বাদলঃ হুনছনি তোমরা কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর হানাদারমুক্ত অইয়া গ্যাছে। চিন্তুা কইরো না আমরাও শীঘ্রই মুক্ত অইয়া যাইমু। আমাগো দ্যাশ ও স্বাধীন অইয়া যাইব।
মানিকঃ ভাই, রফিকের তো কোন খোজ পাইলাম না।
বাদলঃ রফিকের ঐ দুঃসম্পর্কের বোন কি জানি অর নাম বেনু না কি জানি? অয়তো গোপনে গোপনে মুক্তিযোদ্ধাগো অনেক সাহায্যে তরছে। অর খবর কী?
মানিকঃ হ- ভাই বোইনডা আমার দ্যাশের লাইগ্যা নিজের ইজ্জত পর্যন্ত হারাইছে। তয় হুনছি হানাদারগো খতম না কইরা বেনু ও থামবো না।
বাদলঃ হ-বেনু পারবো। অর বুকের মধ্যে জেদ ধইরা গ্যাছে। ও এহোন জীবনের পরোয়া করে না। কি নিয়াই ও বাচবো মাইয়াডা।
মানিকঃ বয়াতী ভাই কি হইছে- তুমি এত অস্থির ক্যান?
বয়াতীঃ সাইদুলের কাছে হুনলাম ওয়াজেদ আলী নাকি আমার বউ আর মাইয়ারে ধইরা নিয়া গ্যাছে। বাদলরে আমার সব শ্যাষ হইয়া গ্যালো রে ভাই সব শ্যাষ হইয়া গ্যালো।
বাদলঃ আইজ এতগুলা দুঃসংবাদ আমারে দিলা। বয়াতী কান্দ ক্যান। কাইন্দা কোন লাভ নাই, এই ধরো অস্ত্র, এইডারে চাইপ্পা ধরো। মনটারে শক্ত করো, বাঁচতে অইলে লড়তে অইবো। সব কিছুর বিনিময়ে অইলেও দ্যাশ স্বাধীন কইরা ছাড়–ম। চলো তোমরা, আইজই সমাদ্দারের দিকে, ঐখানে আর্মিগো গাড়ি আইসা জড়ো হইছে। অগো খতম করতেই হইবো।
বয়াতীঃ বাদলরে না আমি আর কান্দুম না, আমি এইবার পাকিস্থানি ক্ত্তুার বাচ্চাগো কইলজা টাইন্না বাইর কইরা কুত্তা দিয়া খাওয়ামু।
মানিকঃ চল সবাই (একদিকে দিয়ে বের হয়ে অন্য দিক দিয়ে ঢুকবে এবয় আর্মিদের সাথে যুদ্ধ করবে।
এক জন : আমাদের গোপন সংবাদ দাতা জানিয়েছে মাদারীপুর থেকে আর্মিরা সব কিছু নিয়ে যে কোন সময় পালিয়ে যাবে।
বাদল : ঘটকচর থেকে প্রতিরোধ শুরু করতে হবে। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে।
যুদ্ধের সময়
বাদলঃ বাচ্চু তুই গ্রেনেড সাবধানে মার। ওরা কিন্তু রাস্তার ওপারে বন্দুক তাক করে আছে।
মানিকঃ তুই যা বাচ্চু আমি তোরে কাভার দিতাছি।
আর্মিঃ মুক্তির উপর গুলি ছোর দে। (বাচ্চুর মারা যাওয়ার শব্দ)
মানিকঃ বাদল ভাই বাচ্চু মনে হয়,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
বাদল : মেজর খটক, তুমি আতœসমর্পন কর। মুক্তি যোদ্ধারা তোমাদের চারিদিক ঘিরে ফেলেছে।
*যুদ্ধের ময়দানে মানুষ মরে পড়ে থাকবে ঐ দিকে বাদলের কাছে মেজর সাব সাদা রুমাল দেখিয়ে আত্মসমর্পন করবে।
(থমথমে পরিবেশ থাকবে)
শেষ দৃশ্য:
(যুদ্ধ শেষ। জয় বাংলার মিছিলে। বয়াতী ছুটে আসে তার বাড়ী অন্যদিকে জয়বাংলার মিছিলের শব্দ শুনে রফিকের মাও ছুটে আসে বয়াতীর বাড়ী)
বয়াতীঃ আমীরন, সাজু তোমরা কই? এই দ্যাগো আমি আইছি। দ্যাশ স্বাধীন করে আইছি।
(বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)
রফিকের মাঃ সোলেমান ভাই তুমি আইছ? তয় বড় দেরি কইরা হালাইছো। তোমার মাইয়াডা আর ফিরতে পারে নাই, বউডা সব হারাইয়া পাগল হইয়া গ্যাছে। হয়তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাছে........। (হাঠাৎ রফিকের কথা মনে হয়ে ব্যাকুল হয়ে গায়েনকে প্রশ্ন করবে)
রফিকের মাঃ গায়েন ভাই তুমি একলা আইছ ক্যান? আমার রফিক আহে নাই। আমার রফিক কই। গায়েন ভাই তুমি কথা কওনা ক্যান?(গায়েন শোকে বিহ্বল হয়ে কান্নাজরিত কন্ঠে বলে)
বয়াতীঃ ভাবীসাব তোমার রফিকের কোন খোজ পাই নাই(রফিকের মার চিৎকার কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে আসবে) না........... আমার রফিক..............................
রফিকের মাঃ আমার বাজান, আয় বাব, তুই ফিরা আয় যুদ্ধ তো শ্যাষ তুই এহোনো কি করছ? সবাইতো ঘরে ফিইরা আইছে, তুই কবে আবি বাজান কবে? আয়.............বাবা আয়( বলে কানতে কানতে বেরিয়ে যাবে, গায়েন রফিকের মার পিছন পিছন গিয়ে আবার ফিরতে যাবে এমন সময় আমীরন পাগল বেশে প্রবেশ করবে এবং গায়েন দেখে আশ্চর্য হয়ে যাবে। বউকে ধরতে যায় সে ছিটকে দুরে সরে যায়)
আমীরনঃ না আমারে ছুইবিনা ছুবিনা কইতাছি, পর পুরুষ আমার সব কাইরা নিছে। তুই আবার কোন পুরুষ? তুই আবার কি চাষ(কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)
বয়াতীঃ আমীর আমার আমীরন। আমি তোমার গায়েন আমীর। আমার সাজু মইরা গিয়া বাইচ্চা গ্যাছে। দ্যাশের জন্য শহীদ হইছে। এই দৃশ্য দেখার আগে আমি ক্যান শহীদ হইলাম না? আমু...... আমুরে কতা কও আমীর কতা কও। (বলে জোরে ঝাকুনী দেয়)
আমীরনঃ (স্মৃতি ফিরে পেয়ে) আমি মরি নাই? আমি বাইচ্চা আছি ক্যান? গায়েন কতা কও ক্যান আমি বাইচ্চা আছি? কি আছে আমার? তুমিতো দ্যাশ স্বাধীন করছো। কত মানুষের মুখে হাসি ফুটাইছো। হ্যারা কি পারবো আমাগো ইজ্জত ফিরাইয়া দিতে। জানো ওরা আমার আর সাজুর ইজ্জত একলগে নিছে। (আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে গায়েনের বুকে।)
বয়াতীঃ চুপ করো, আমীরন চুপ করো, আর কইওয়ানা তুমি চুপ করো। (গায়েনের কোলে আমীর মারা যায়) আমির কতা কও, কতা কওনা ক্যান? চোখ খোল আমীরন চোখ খোল।( কান্নারত অবস্থায় আমীর কতা কও বলে জোরে চিৎকার করে)
বয়াতীঃ আমার আমীরন কতা কয়না। তোমরা কতা কওনা ক্যান? তোমরা চুপ কইরা রইছো ক্যান? দ্যাহো তোমরা, দ্যাশের লাইগ্যা আমি আমার সব হারাইলাম। তোমরা আমারে ফিরাইয়া দিতে পারবা? পারবানা। তোমাগো কাছে কিছু চাই না আমি, খালি আমার নিষ্পাপ মাইয়া আর বউরে যারা নষ্ট কইরা মারছে,যারা আমাগো মাছুম বাচ্চুরে মারছে, যারা এই দ্যাশের লগে বেঈমানী করছে যাগো হিং¯্র থাবায় দ্যাশ আর দ্যাশের মানুষ ধ্বংস হইয়া গ্যাছে, আমি হেইসব ওয়াজেদ আলী আর কেতরগো বিচার চাই। পারবানা তাগো বিচার করতে? আমি মরার আগে আমার “একটাই চাওয়া” একটা জিনিস দেইখ্যা যাইতে চাই আর কিছু চাই না (বলতে বলতে কান্নারত অবস্থায় পতাকা দিয়ে বউকে ঢেকে কোলে নিয়ে এগিয়ে যায়)
* নেপথ্যে গান বাজবে-একসাগর রক্তের বিনিময় বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা)
:সবাই ফ্রীজ:
নির্দেশনায়: আ.জ.ম কামাল
প্রশিক্ষকঃ জেলা শিল্পকলা একাডেমী মাদারীপুর
সার্বিক তত্ত্বাবধানে:
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
ছাত্র, নাটক বিভাগ
জেলা শিল্পকলা একাডেমী মাদারীপুর
চরিত্রলিপি:
বয়াতী, আমীরন,সাজু , রফিক, বাদল, মানিক , রফিকের মা , বাচ্চুর বাবা, ওয়াজেদ আলী, কেতর আলী, মেজর. আরও কিছু আর্মি ও মুক্তিযোদ্ধা।
প্রথম দৃশ্য:
স্থান: বয়তীর বাড়ী
সময়ঃ সকাল
সারারাত গানবাজনা করে ভোর বেলা বাড়ী ফেরে সোলেমান বয়াতী। সোলেমান বয়াতীর স্ত্রী আমিরন তখন উঠান ঝাড়– দিচ্ছিল। সোলেমান বয়াতী উঠানে গান গাইতে পা রাখতেই আমিরনের তাছ্যিলের সুর।
আমিরনঃ আইজ কি সূর্য্য পশ্চিম দিক দিয়া উঠল নাকি? ব্যাপার কি? বয়াতী যে সাত-সকালে দোতারা হাতে নিয়া বাড়িীতে হাজির। গানের আসর কি ভালো জমে নাই?
বয়াতীঃ তুমি মনে হয় ভূল দ্যাখতাছো। সূর্যতো তোমাগো বাড়ীর পিছন দিয়া উঠছে।
আমিরনঃ সংসার চালানোর মুরদ নাই, আবার মুখে মুখে তর্ক, ভালো হইবোনা কইয়া দিতাছি।
বয়াতীঃ কেউ তর্ক করতে চাইলে কি মুখ বন্ধ কইরা থাকুম। তর্ক করলে কি করবা তুমি? কিছুই করতে পারবানা আমার। আমি বিজয়ের ডাক শুনতে পাইতাছি(উদাস ভঙ্গি)পরাধীনতার শিকল ছেড়ার আওয়াজ শুনতাছি।
আমিরনঃ কথা ঘুরাইবানা কইতাছি, ইসস.. রে আমার জুয়ান মরদ, কথা হুইন্না মনে অইতাছে দ্যাশটারে একেবারে স্বাধীন কইরা আইছো
বয়াতীঃ বউরে একলা যদিও পারুম না, তবে চেষ্টা করতে দোষ কি? আহারে, খুব মনে চায় দেশটা যদি স্বাধীন করতে পারতাম(দীর্ঘশ্বাষ)। হের লাইগ্যাইতো মুখে বানছি দেশের গান, হাতে নিছি দোতারা
আমিরনঃ কতায় আছে না, গুজায় চায় চিৎ অইয়া হুইতে বয়াতীর অইছে হেই দশা।
বয়াতীঃ তুমি কিন্তু আমারে অপমান করতাছো। তুমি জানো, প্রয়োজনে আমি দোতারা ছাইরা হাতে রাইফেলও নিতে পারি।
আমিরনঃ হ......... যার মানই নাই তার আবার অপমান, ভাত পায় না আবার চা খায়, হাটতে পারে না বন্দুক ঝুলায়
বয়াতীঃ এই, মান নাই মানে? তুই কি কইতে চাস।
আমীরনঃ কি কইতে চাই বোঝ না? একজন জোয়ান মরদের বউ মাইয়া মাইনষের বাড়ীতে কাম কইরা প্যারে খুদা মিডায়। হেইয় মনে থাকে না
বয়াতীঃ তাও তো তোর বাপের বাড়ী থিকা ভালো আছোস।
আমীরনঃ তোমার ভালোর খ্যাতা পুরি। সারাদিন রাইত পইড়া থাকে দোতারা লইয়া, আর বাড়ী আইয়া করে ঝগড়া, আগে জানলে এমন পোড়া কপাইল্যার সংসারেই আমি আইতাম না।
বয়াতীঃ অহন তো জানছোস, তয় যা গিয়া, আমার লগে আমার মাইয়া আছে, আর আছে দোতারা, তোর মতন অমন বান্দরনীরে আমার লাগবোনা, তোর তোন আমার দোতারা অনেক বেশি সুন্দর। আহারে কি সুন্দর সুর দেয়, এই দোতারা আমারে দ্যাশের মাটিতে মিশাইয়া দেয়, যার তারে বাইজা উঠে দ্যাশের গান। (একটি দেশের গান)
আমীরনঃ কি কইলা আমার তোনে তোমার দোতারা সুন্দর, তোমার দোতারা আমি ভাইঙ্গাই ছাড়–ম, (এমন সময় ঘর থেকে মেয়ের প্রবেশ,মেয়ে বলে উঠে)
সাজুঃ ওমা তোমরা এ কি শুরু করলা, কাম কাইজ বাদ দিয়া শুধু ঝগড়া করো
আমীরনঃ থাক তুমি তোমার দোতারা লইয়া, আমি ও দ্যাখতে চাই তোমার প্যাডের যোগান কেডা দেয়, তোমার দোতারা না আমি।
সাজুঃ মা,থাম তো, বাজান তুমিও থামো
বয়াতীঃ আয় মা, আমার কাছে আয় , দ্যাখ তোর মায় সকাল বেলা আমার মেজাজটা বিগরাইয়া দিছে। (আমীরন নিজের কাজে মন দেয়)
সাজুঃ বাজান, হুনছো-দ্যাশে না-কি আগুন লাগছে, পাকিস্তানি মেলেটারিরা নাকি খালি বাঙ্গালিগো ধইর্যা ধইর্যা মারতাছে।
বয়াতীঃ তোর কাছে কেডা কইল?
সাজুঃ শহরের মানুষ লাইন ধইরা গেরামে আইতাছে, শহরে নাকি মেলা গন্ডগোল অইতাছে।
বয়াতীঃ আমি ও একটু একটু হুনছি। তয় এহনতো মনে অইতাছে ঘটনা আসলেই হাছা।(আমীরন ভয় পেয়ে এসে বলে)
আমীরণঃ এই সব কতা হুইন্যা আমার খুব ডর করতাছে। হোনেন আমনে আর গান গাইতে দুরে দুরে যাইয়েন না, মাইডা বড়ো অইছে, কহন কি অইয়া যায় আমার কিন্তু আসলেই ডর করতাছে।
বয়াতীঃ ডরের কিছু নাই,(আনমনে ......... ভয় কি মরনে গান ধরে)
আমীরনঃ রাখেন আমনের গান, আমনে সব কিছুতেই খালি হেলামী করেন
বয়াতীঃ আইচ্ছা, আমি দুরে চইল¬া গ্যালেইতো তুমি খুশি অইবা, ঠিক না?
আমীরনঃ (অভিমান নিয়ে), আমনে খালি আমার বাহিরডাই দ্যাখলেন, ভিতরডা দ্যাখলেন না, ভিতরে ভিতরে যে আমার মনডা আমনের লাইগ্যা পুইড়া ছারখার হয়,হেইডা কোনদিন বুজলেন না।
বয়াতীঃ হেইডাতো তুমি ও বুজলানা।
আমীরনঃ হোনেন, আসল কতা কইতেই ভুইল্যা গেছি, কাইল সন্ধ্যাকালে মানিক ভাই আইছিলো, আমনেরে দ্যাহা করতে কইছে।
বয়াতীঃ কও কি?এই কতা আরও আগে কইবা না, আমি অহোনি যাইতাছি....(দ্রুত প্রস্থান)
আমীরনঃ কিছু মুখে দিয়া যান....... হায়রে মানুষ( সবার প্রস্থান)
২য় দৃশ্য:
*( কোন এক গোপন স্থানে কয়েকজন মুক্তিকামি যুবক বসে আলোচনা করছে, এমন সময় বয়াতীর আগমন)
বয়াতীঃ মানিক ভাই তুমি আমারে আইতে কইছো?
মানিকঃ শোন বয়াতীভাই দ্যাশের অবস্থা ভালো না, গত ২৫ শে মার্চ রাইতে পাক আর্মিরা ইয়াহিয়া খানে নির্দেশে নিরীহ বাঙ্গালীর উপর ঝাপাইয়া পড়ছে, জাগায় জাগায় আগুন ধরাইয়া দিছে।
বাদলঃ হ বয়াতী ভাই, হুনলাম বাশগাড়ীর নুরুল ইসলাম শিকদার তখন ইপিআরে আছিলো, সে পিলখানা থেকে পালইয়া আইছে, যুদ্ধ শুরু অইয়া গ্যাছে, এহন আর সময় নাই, আমরা দ্যাহাইয়া দিমু আমাগো ভারী অস্ত্র নাথাকলেও মনোবল আছে, আছে দ্যাশের প্রতি ভালোবাসা, মাটির প্রতি আছে গভীর টান, আর থাকবোইবা না ক্যান? বঙ্গবন্ধু কইছে না যার যা কিছু আছে তাই শত্র“র বিরুদ্ধে ঝাপাইয়া পড়ো, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।
বয়াতীঃ হ, ঠিকই কইছো, আমরা ও দেখাইয়া দিমু এখনোই আমাগো উপযুক্ত সময়। কিন্তু কীভাবে কি করবা? ঠিক করছো কিছু?
বাদলঃ শোন, আগে আমাদের মনোবল বাড়াতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ঘর থিকা বাহির হইয়া আসতে হবে, আমাগো যুদ্ধের প্রস্তুুতি নিতে হইবো, আমাগো এহন ট্রেনিং দরকার, লিডারদের সাথে যোগাযোগ অইতাছে। তারা সবাই আসমত আলী খান সাহেবের বাসায় আছে, ইলিয়াস চৌধুরী, শওকত ছ্যার, স্টুয়ার্ড মুজিব ও ফনি বাবু ও আছে।
মানিকঃ বাদল ভাই তুমি না কইলা, শওকত ছ্যার আর স্টুয়ার্ড মুজিব নাকি আমাগো দ্যাখা করতে কইছে।
বাদলঃ হ, হাতে সময় খুব কম, তোমরা যার যার বাড়ী থিকা বিদায় নিয়া আসবা। আগামীকাল সকালে আমরা নাজিমুদ্দিন কলেজে হইমু, জাগো জাগো বাছাই করবো তারা আমরা ট্রেনিং এ যামু।
বয়াতীঃ এহন তয়লে উডি, কাইল সকাল সাতটার মধ্যে কলেজ মাডে থাকুম।
মানিকঃ হ, স্টুয়ার্ড মুজিবের নেতৃত্বে একটা টিম ইন্ডিয়ায় ট্রেনিং এর জন্যে পাঠানো অইবো, শোন, যারা ট্রেনিং এ যাইতে চায় তাগো আসতে কইবা
বয়াতীঃ বুজছি, আমি তাইলে পোটলা পাটিলি লইয়া হাজির অইয়া যামু, তয় সবাই খুব সাবধান, আমাগো সলা পরামর্শ য্যান কেউ জানতে না পারে, হুনছি আমাগো এলাকার কয়েকজন বেঈমান নাকি গোপানে পাকিস্তানিগো সাহায্যে করে, খোজ-খবর দেয়,
বাদলঃ ঠিক আছে, আমরা এহন তাইলে, সবাই যার যার বাড়ী যাই (সকলের প্রস্থান)
৩য় দৃশ্য:
স্থানঃ বয়াতীর বাড়ী
সময়ঃ ভোরবেলা
(বয়াতী পোটলা পাটলি বাধছে, আমীরনের প্রবেশ)
আমীরনঃ আমনে পোটলা পাটলি বান্ধেন ক্যান, কই যাইবেন, দ্যাহো দেহি, মুখখান ক্যামোন হুগাইয়া আমসীর মতো অইয়া গ্যাছে। কতা কন না ক্যান?
বয়াতীঃ (সম্বিৎ ফিরে পেয়ে) আমারে কিছু কও?
আমীরনঃ হ, কই, সাত সকালে আমনে কই যান? সারাদিন কিছু খান নাই, রাইতে খান নাই, এহনো না খাইয়া পোটলা পাটলি বাইন্ধা আমনে কই যান। কাইলকের রাগ বুঝি এহনো আছে? ইচ্ছা কইর্যা কি আমনের লগে অমন করি,
বয়াতীঃ নারে, সাজুর মা তুই যা ভাবতাছোস, আসলে তা না, আমি তোর লগে রাগ যাইতাছি না। হুনছোস পাকিস্থানীরা আমাগো উপর অত্যাচার করতাছে, অগো আমার ঘেন্যা ধইরা গ্যাছে। অগো খতম কইরা আমি বাড়ী ফিরুম।
আমীরনঃ আমনে কই যাইবেন, আমনে গ্যালে আমাগো কেডা দ্যাখবো?
বয়াতীঃ তোগো আল¬ায় দ্যাখবো, তোগা লাইগ্যা আমি কিছুই করতে পারি নাই। তয় এইবার মনে অয় কিছু করতে পারুম, খালি তোগো লাইগ্যা না দ্যাশের লাইগ্যাও কিছু করতে পারুম। বউরে যদি বাইচ্যা আহি তো আইলাম, না আইলে তুই গর্ব কইরা কবি তোর স্বামী দ্যাশের লাইগ্যা যুদ্ধ কইরা শহীদ অইছে।
আমীরনঃ সাজু তো ঘুমাই রইছে, অর লগে কতা কইয়া যাইবেন না, আমি অরে ডাইক্যা দেই।
বয়াতীঃ না, অরে ডাকোনের কাম নাই, হাতে সময় কম, অয় ওটলে অরে কইবা, তোর বাজানে যুদ্ধে গ্যাছে। আমি অহোন যাই (আমীরন পিছু পিছু কাদতে কাদতে যায়, পিছন থেকে মেয়ে সাজু ডাকে)
সাজুঃ মা তুমি কান্দ কেন? বাজান কই?
আমীরনঃ তোর বাজানে গ্যাছে গা।
সাজুঃ মা বাজানে কই গ্যাছে?
আমীরণঃ তোর বাজানে যুদ্ধে গ্যাছে।
সাজুঃ মা-রফিকের মা চাচি কইলো। রফিক ভাই নাকি যুদ্ধে যাইবে, চাচি পাগোলের মত কানতাছে।
আমীরনঃ কছকি? তুই তইলে ঘরের কাম কর। আমি একটু ঐ বাড়ি যাই।
সাজুঃ আইচ্ছা যাও। তাড়াতাড়ি আই ও। (আমীরনের প্রস্থান। রফিকের প্রবেশ)
রফিকঃ চাচী, চাচী ও চাচী বাড়িতে আছেন?
সাজুঃ ক্যাডা? (বের হয়ে) ও আপনে? মায় তো এই মাত্র আপনা গো বাড়ী গেল। বাজানে যুদ্ধ গ্যাছে। আপনিও নাকি যাইবেন।
রফিকঃ হ, যাইতাছি। তয যাওয়ার আগে তোমারে একটা কতা বলার আছিল।
সাজুঃ কি কতা কইবেন। আমনে আমার দিকে ওমনে চাইয়া রইছেন ক্যান।
রফিকঃ চাইয়া রইছি ক্যান তুমি বুঝ না।
সাজুঃ না বুঝি না। বুঝলে কি জিগাইতাম।
রফিকঃ আমি তোমারে খুব পছন্দ করি। কইতে পার ভালোও বাসি।
সাজুঃ আপনার কি সরমলজ্জা নাই। আসারে এইসব কইতাছেন।
রফিকঃ তোমার কাছে আমার শরম কীসের। জানিনা সাজু জান লইয়া ফিরতে পারুম কিনা যদি ফিরি তাইলে তোমারে আমার জীবন(সঙ্গী/সাথী) করুম।
সাজুঃ ঠিক আছে আগে দ্যাশটারে রক্ষা করেন। দেশের এই বড় বিপদে আমাগো সকলেরই উচিৎ দ্যাশের কথা চিন্তা করা। যদি ঠিকমতো দ্যাশ স্বাধীন হয় আর আমরা সবাই বাইচ্চা থাকি তয় অবশ্যই আমি আমনের হমু।
রফিকঃ সাজু তোমার উৎসাহ আমার শক্তি আরও বাড়াইয়া দিছে। তুমি দোয়া কইরো আমি যেন তোমার লাইগা স্বাধীন দ্যাশের পতাকা লইয়া ফিরতে পারি। (আবেগ জরিত কন্ঠে রফিকের বিদায়) আমি তাইলে এইবার া আসি সাজু।
৪র্থ দৃশ্য:
(চারদিকে গোলাগুলির শব্দ। চিৎকার ধ্বনি।)
মানিকঃ (ফিস ফিস গলায়) বাদল ভাই, আমরা যারা ট্রেনিং নিয়া আইছি। তারা এহন কী করুম। একটা কিছু ভাবা দরকার।
বাদলঃ হ, তা-ই ভাবতাছি। দুইডা ব্রীজ ধংসের পরে আমাগো হাতে এহন তেমন কোন অস্ত্র নাই। তাই প্রথমে কৌশলে পোষ্ট অফিস পাটের গুদাম, তফসিল অফিস, টেলিফোনের লাইন এগুলা ধ্বংস করতে হবে। অস্ত্র হাতে পাওয়ার পর যামু অন্য কোন অপারেশনে।
বয়াতীঃ হ-তয় খুব সাবধান। জুটমিল, কুলপদ্দি বাজারসহ কয়েকটা জায়গায় আর্মিরা ক্যাম্প বসাইছে। আর তগো সাহায্য করতাছে আমাগো দ্যাশের কিছু বেঈমান কুত্তারা।
মানিকঃ জানেন বাদল ভাই আমার পিচ্চি ভাইর ব্যাটা বাচ্চু আছেনা? ও আমাগো লগে লগে থাকতে চায়। হেদিন আমারে কয় চাচা আমারে একটা অস্ত্র দ্যাও। আমি দ্যাশের শত্রুগুলা শ্যাষ কইরা দেই।
বয়াতীঃ শোন মানিক, বয়াতী ঠিকই কইছে। আরে কবি-কাগজে-কাগজে স্লোগান লেইখ্যা পোষ্টার বানাইয়া গোপনে সবখানে লাগাইয়া দিতে।
রফিকের প্রবেশ।
বয়াতীঃ আচ্ছা বাদল ভাই সমাদ্দারে ব্রীজটা উড়াইয়া দিলে ক্যামন হয়। নুরুল ইসলামরা নাকি কালকিনির গোপালপুর ব্রীজ উরাইয়া দিছে। তয় নুরুল ইসলাম হানাদারগো গাত থেইক্কা বাঁচতে পারে নাই। ব্রীজ উরাইয়া যাওয়ার সময় আর্মিগো গুলিতে শহীদ হইছে।
বাদলঃ হ- নুরুর লেইগ্যা খুব খারাপ লাগতাছে। তয় জীবনের ঝুকি নিয়া হইলেও সমাদ্দারের ব্রীজ উড়াইতে হইবো। তাইলে আর্মি আর মাদারীপুর এর ভিতরে ঢুকতে পারবোনা।
রফিক ঃ হ-হেইডাই ভালো হয়। চোকদার ব্রীজ, আমগ্রাম ব্রীজতো ধ্বংস করা হইছেই। তয় সমাদ্দারের ব্রীজটাই হইলো আসল।
বাদল ঃ শোন, আজকে আমাগো দুই দলে ভাগ হইয়া যাইতে অইব। একদল চরমুগরীয়ার জেডিসি পাটের গুদাম ধ্বংস করব। আর একদল এ আর হাওলাদার জুট মিল ধ্বংস করবো। শোন, আইজ ১৪ই আগষ্ট। পাকিস্তান দিবস। আমাগো প্রান থাকতে বাংলার মাটিতে পাকিস্তান দিবস পালন করতে দিমু না।
বয়াতীঃ তয় সাবধান। আমাগো খলিল বাহীনির সবার চোখ কান খোলা রাখতে হইবো। শুনলাম কুলপদ্দিতে দুই জন মুক্তিযোদ্ধারে কারা য্যান ধারাইয়া দিছে।
মানিকঃ রাজৈর, শিবচর, কালকিনির খবরাখবর ও একটু লইও কোখায় সকি অবস্থা। বাদল ভাই এহন তইলে আমরা উডি। মূল অপারেশনের দিকে যাই। আর বাচ্চুরে পাঠাইয়া দেই কুলপদ্দিতে আটক দুইজনের নাম জাইন্না আসতে।
বয়াতীঃ চলো সবাই। জয় বাংলা। (সকলের প্রস্থানঃ গোলাগুলির শব্দ)
৫ম দৃশ্য:
*সোলেমান বয়াতীর দাওয়ায় বসে আমীরন তার মেয়ে সাজুর মাথায় বিলি কাটছে। এমন সময় রফিকের মার প্রবেশ।)
রফিকের মাঃ মায়ে ঝিয়ে ক্যামন আছো?
আমীরনঃ হ-গো-বু আমাগো আর থাকা। দ্যাশের যা অবস্থা প্রত্যেকটা রাইত কাটে দুঃচিন্তায়, আর রাজাকারগো ভয়ে।
রফিকের মাঃ তুমি ঠিকই কইছো। মা সাজু ঘরে কি পান টান কিছু আছে? (সাজু ঘরে যায়)
রফিকের মাঃ বইনরে বুকটার মইধ্যে খালি ধক্্ ধক্্ করে। আমার রফিক ক্যামন আছে, খোদা মাবুদই জানে। সাজুর বাপের কোন খোজ খবর পাওনি বোইন।
আমীরনঃ নারে বু-কোন খোজ খবর পাই নাই। দোয়া করেন বু দোয়া করেন। আমাগো আপনজন যাতে দেশ স্বাধীন কইরা আমাগো বুকে ফিইরা আহে। মাইয়াডা আমার মনমরা অইয়া গ্যাছে।
রফিকের মাঃ বু- সাবধনে থাকিস। ওয়াজেদ আলী আর কেতর আলী পাকবাহীনিরে সাহায্যে করতাছে। বাড়ি বাড়ি ঘুইরা মুক্তিযোদ্ধাগো আর জুয়ান মাইয়া মানুষ ধইরা নিয়া মেলেটারীগো হাতে তুইল্লা দেয়।
আমীরনঃ আমি ও হুনছি। হের লেইগ্যাইতো ডর। ঘরে আমার ডাঙ্গর মাইয়া। (পান হাতে সাজুর প্রবেশ)
সাজুঃ নেন চাচী আমনের পান। পানও ক্যামন শুকাইয়া গ্যাছে। হাড়ে-ঘাড়ে কেন্ডা যাই কন? তিন বেলার খাওন এক বেলায় খাই।
রফিকের মাঃ হরে- মা। তোর মুখখান ক্যামন শুকাইয়া গ্যাছে। কী সুন্দর বউ আমার ক্যামন হইয়া গ্যাছে। (সাজু লজ্জা পায়) থাউক, আর কয়ডা দিন মা, পোলা আমার দ্যাশ স¦াধীন কইরা ফিরলেই তোরে লাল শাড়ী ফিন্দাইয়া আমার ঘরে নিমু।
আমীরনঃ দোয়া করো বু। দোয়া করো সব উপর আলার মর্জি।
রফিকের মাঃ আইজ যাইরে বইন। একটু সাবধানে থাকিস।
আমীরনঃ চলেন আপনেরে একটু আগায় দিয়া আহি। চল মা সাজু। (সকলের প্রস্থান)
ষষ্ঠ দৃশ্য:
স্থানঃ আর্মি ক্যাম্প
সময়ঃ বিকাল
*( পাক বাহীনির ক্যাম্পে মেজরের সাথে রাজাকার ওয়াজেদ আলী ও কেতর আলীর কথোপকথোন)
ওয়াজেদ আলীঃ মেজর সাব, মুক্তি বাহীনিরা যা শুরু করছে তাতে তো বেশি সুবিধার মনে হইতাছে না।
মেজরঃ (ভয় পেয়ে) তুম কিয়া বাত বোলা, মুক্তি কোনছে............ মুক্তি মিলেগা।
ওয়াজেদঃ না হুজুর এ ধারমে নেহী মিলেগা। তবে যেভাবে ক্ষ্যাপছে তাতে এ ধারমে আইতে কতক্ষন।
মেজরঃ (অট্রহাসি) মুক্তি এ ধারমে নেহি আয়েগা কাভি নেহি। তুম ঝুট বলতাহু। হামছে ডরমে লাগা থা। যা শালা মেজাজ মে বিগড়ে দিলে তো।
ওয়াজেদঃ হুজুর, খোশ আমদেদ হো এওগা ভি খুশির বাত বোলতাহু। মেজাজ ভি ঠান্ডা হোতা হায়।
কেতরঃ কিচু মনে না করলে একটা কথা কই। সুন্দরী জোয়ান মাইয়া আছে। আপনার মেজাজ এক্কেবারে ঠান্ডা হইয়া যাইবো।
মেজরঃ মাইয়া? মাইয়া কিয়া হ্যায় ?
কেতরঃ মাইয়া মানে হইলো মানে ....................... (আটকে যায়)
ওয়াজেদঃ মাইয়া মানে বহুত খুব সুরত লাড়কী।
মেজরঃ ও ঠিক হ্যায়, ঠিক হ্যায়। যাও ওকে লিয়ে আসতা হ্যায়।
ওয়াজেদঃ হুজুর, জেলার সাহেবকা কিয়া বাদ হে।
মেজরঃ জেলার সাবকা লাড়কীকা বাদ মে সব খতম করতা হায়।
ওয়াজেদঃ হুজুর, জেলারের মেয়ে বাদে সব খতম?
কেতরঃ মানে ঐ সুন্দরী সুফিয়া?
মেজরঃ হা- হা- হা- হা ওকে হাম ধীরে ধীরে খতম করতাহু। ও হামার ক্যাম্পে ভি রাখতাহু।
ওয়াজেদঃ আমরা তাইলে এখন আসি হুজুর।
মেজরঃ ঙশ তুম যাও মেজরের প্রস্থান)
ওয়াজেদঃ শোন কেতর আলী। বয়াতীর বাড়ীর দিকে নজর রহিস শুনলাম ও নাকি যুদ্ধে গ্যাছে। সালার কত্তবড় সাহস সালায় ভাত পায় না চা খায়।
কেতরঃ হুজুর দোতারা লইয়া যুদ্ধে যায়। হুজুর ঘরে কিন্তু সুন্দরী বউ আর মাইয়া আছে।
ওয়াজেদঃ কেতর আলী চল গায়েনের বাড়ীর দিকে যাই ওর যুদ্ধে যাওনের সাধ মিটাইয়া দিমু চল।
কেতরঃ চলেন তাইলে। (উভয়ের প্রস্থান)
সপ্তম দৃশ্য:
(স্থানঃ মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আস্তানা)
বাদলঃ কিরে মানিক চারিদিকের খবর কী?
মানিকঃ ভাই আমগ্রাম আর পাথুরিয়াপাড় ব্রীজ ধ্বংস কইরা দিছি। মিলিটারিরা এহন আর সহজে ঢুকতে পারবো না। তয় সমাদ্দারের ব্রীজ ভাঙ্গতে পারলেই আমরা সফল।
বয়াতীঃ শোন গোপনে একটা খবর পাইলাম।
সবাইঃ কী খবর?
বয়াতীঃ রফিক, কাশেম আর সাইদুলরা মিল্লা ঘটকচর স্কুলে কয়েকজন রাজাকারগো আটক করছে। আমাগো এহন সে দিকে যাওয়া দরকার।
মানিকঃ তাইলে চল, আমরা এহনই যাই। শালাগো জনমের তরে বেঈমানীর সাধ মিটাইয়া দেই।
বয়াতীঃ সাবধানে যাইস, তোরা আইলে আমরা এ আর হাওলাদার জুট মিলে হামলা করুম। হুনলাম, কালকিনির ফাসিয়াতলা হাটে পাকবাহীনিরা আইজ গণহত্যা চালাইছে। ঘরে ঘরে আগুন ধরাইয়া দিছে। শত শত মানুষরে মিথ্যা কতা কইয়া বাজারে আইন্না গুলি কইরা মারছে। আমাগো গোপন সংবাদ দাতা নুরে আলম পান্নারে ধইরা লইয়া গ্যাছে।
মানিকঃ হ- গ্রামের অনেক নারী-পুরুষ ধইরা আনছে জুট মিলে। তাগোরে মুক্ত করতে না পারলে হারামীর বাচ্চারা তাগো মাইরা জুট মিলের মধ্যেই গণকবর দিব। বেশি দেরি করন ঠিক অইবোনা।
বয়াতীঃ বাদল, মানিক আমার মনডা জানি ক্যামন করতাছে বউ মাইয়াডারে খুব দ্যাখতে মন চায়। না জানি ওরা ক্যামন আছে।
বাদলঃ বয়াতী তুমি এই অবস্থার মইধ্যে বাড়ীর কথা ভাবো?
বয়াতীঃ হ-ভাবি, তোমরা কি বুঝবা। তোমাগোতো আমার মতোন সংসার নাই, বউ নাই, শিয়ানা মাইয়া নাই। জানি না ওরা কোন বিপদে আছে।
মানিকঃ সব ঠিক অইয়া যাইব। দেইখেন আমাগোরই জয় অইবো। আপনে কোন চিন্তা কইরেন না। ওরা ভালোই আছে।
বাদলঃ না বয়াতী, তোমার বাড়ি যাওনের কাম নাই। আমার এখন উডি( সকলের প্রস্থান)
অষ্টম দৃশ্য:
(ঝি ঝি পোকার শব্দ)
* (সলেমান বয়াতীর বাড়ি। খন্দকার ও কেতর আলী আসে)
ওয়াজেদঃ বয়াতী ও সলেমান বয়াতী, বাড়ী আছ নাকি?
আমীরনঃ ক্যাডা, ক্যাডা জিগায়?
ওয়াজেদঃ আমি ঐ পাড়ার খন্দকার ওয়াজেদ আলী
আমীরনঃ তারে কি দরকার? হে তো বাড়িতে নাই।
ওয়াজেদঃ না মানে,ওতো আমাগো গৌরব। মুক্তিযোদ্ধা- জয় বাংলার সৈনিক। মনে বড় আশা ছিল যুদ্ধে যামু। এই দ্যাহো আমি ট্রেনিং কইরাও যাইতে পারলাম না।
কেতরঃ হে- হে- হে। হুজুর আপনার আর কী আশা ছিল।
আমীরনঃ আমনেরা এহোন যান। হে আইলে আমি আমনের কতা কমু হানে।
ওয়াজেদঃ আহা........ । লক্ষী পায়ে ঠ্যালতে নাই। তারে দিয়া আমি কি করুম। দরকারতো তোমারে। ঘরে মেজবান আইলে একটু খাতির যতœ করতে হয় না?
আমীরনঃ সুন্নতী লেবাস পইরা এইসব কি কতা কন? শয়তান বদমাইশ, এই দিকে আর একটু ও আগাই বিনা কইতাছি।।
ওয়াজেদঃ (অট্রহাসি দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে) কেতর আলী শালিরে আমি নিতাছি তুই মাইয়াডারে নিয়া চল মেজর সাব পাইলে খুশি হইবো।
আমিরনঃ ছাড় কুত্তার বাচ্চা। তগো মা বোন নাই। তগো উপর আল্লার গজব পরবো। তোরা শান্তিতে থাকতে পারবি না।
মেয়েঃ ছাড় শয়তান ছাড়, তোরা আমাগো ছাড় কইতাছি।
*একদিক দিয়া ওয়াজেদ আলী, গায়েনের বউ ও মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে যাবে, অপর দিক দিয়ে আবার ওয়াজেদ কেতর আমীরন ও মেয়েকে নিয়ে ঢুকবে মেজর সাবে ক্যাম্পে।
ওয়াজেদঃ হুজুর, এই যে, আপনার সুন্দরী লাড়কী
মেজরঃ আও লারকী আও। হাম তুমকো সাদি করতাম। হাম তুমকো বিবি বানাইতাম। আও মেরা দিলের রানী। তুম বহুত সুরাত হে।
আমীরনঃ না- না- না। আমার গায় হাত দিবি না কইলাম, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বরের দোহাই দিয়া কইতাছি আমারে ছাইড়া দে।
মেয়েঃ বেঈমান, রাজাকার, আমাগো ছাইড়া দে। অবলা মাইয়া মানুষ লইয়া টানাটানি করছ ক্যান। পারলে মুক্তিযোদ্ধার সামনে গিয়া খাড়া। আমার বাজানে হুনলে তোগো কাইট্টা কুত্তা দিয়া খাওয়াইব।
মেজরঃ গায়েনের বউকে অত্যাচার করতে উদ্যত হয় তখন সাজু কেতরের হাত থেকে ছুটে গিয়ে মেজরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বলে আমার মায়রে ছাইড়া দে কইতাছি। মেজর তখন রাগ হয়ে গলায় ফাস দিয়ে সাজু কে মেরে ফেলে।
(আমীরনকে টেনে নিয়ে ভিতরে নিয়ে যায় এবং সকলের প্রস্থান)
নবম দৃশ্য:
বাদলঃ হুনছনি তোমরা কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর হানাদারমুক্ত অইয়া গ্যাছে। চিন্তুা কইরো না আমরাও শীঘ্রই মুক্ত অইয়া যাইমু। আমাগো দ্যাশ ও স্বাধীন অইয়া যাইব।
মানিকঃ ভাই, রফিকের তো কোন খোজ পাইলাম না।
বাদলঃ রফিকের ঐ দুঃসম্পর্কের বোন কি জানি অর নাম বেনু না কি জানি? অয়তো গোপনে গোপনে মুক্তিযোদ্ধাগো অনেক সাহায্যে তরছে। অর খবর কী?
মানিকঃ হ- ভাই বোইনডা আমার দ্যাশের লাইগ্যা নিজের ইজ্জত পর্যন্ত হারাইছে। তয় হুনছি হানাদারগো খতম না কইরা বেনু ও থামবো না।
বাদলঃ হ-বেনু পারবো। অর বুকের মধ্যে জেদ ধইরা গ্যাছে। ও এহোন জীবনের পরোয়া করে না। কি নিয়াই ও বাচবো মাইয়াডা।
মানিকঃ বয়াতী ভাই কি হইছে- তুমি এত অস্থির ক্যান?
বয়াতীঃ সাইদুলের কাছে হুনলাম ওয়াজেদ আলী নাকি আমার বউ আর মাইয়ারে ধইরা নিয়া গ্যাছে। বাদলরে আমার সব শ্যাষ হইয়া গ্যালো রে ভাই সব শ্যাষ হইয়া গ্যালো।
বাদলঃ আইজ এতগুলা দুঃসংবাদ আমারে দিলা। বয়াতী কান্দ ক্যান। কাইন্দা কোন লাভ নাই, এই ধরো অস্ত্র, এইডারে চাইপ্পা ধরো। মনটারে শক্ত করো, বাঁচতে অইলে লড়তে অইবো। সব কিছুর বিনিময়ে অইলেও দ্যাশ স্বাধীন কইরা ছাড়–ম। চলো তোমরা, আইজই সমাদ্দারের দিকে, ঐখানে আর্মিগো গাড়ি আইসা জড়ো হইছে। অগো খতম করতেই হইবো।
বয়াতীঃ বাদলরে না আমি আর কান্দুম না, আমি এইবার পাকিস্থানি ক্ত্তুার বাচ্চাগো কইলজা টাইন্না বাইর কইরা কুত্তা দিয়া খাওয়ামু।
মানিকঃ চল সবাই (একদিকে দিয়ে বের হয়ে অন্য দিক দিয়ে ঢুকবে এবয় আর্মিদের সাথে যুদ্ধ করবে।
এক জন : আমাদের গোপন সংবাদ দাতা জানিয়েছে মাদারীপুর থেকে আর্মিরা সব কিছু নিয়ে যে কোন সময় পালিয়ে যাবে।
বাদল : ঘটকচর থেকে প্রতিরোধ শুরু করতে হবে। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে।
যুদ্ধের সময়
বাদলঃ বাচ্চু তুই গ্রেনেড সাবধানে মার। ওরা কিন্তু রাস্তার ওপারে বন্দুক তাক করে আছে।
মানিকঃ তুই যা বাচ্চু আমি তোরে কাভার দিতাছি।
আর্মিঃ মুক্তির উপর গুলি ছোর দে। (বাচ্চুর মারা যাওয়ার শব্দ)
মানিকঃ বাদল ভাই বাচ্চু মনে হয়,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
বাদল : মেজর খটক, তুমি আতœসমর্পন কর। মুক্তি যোদ্ধারা তোমাদের চারিদিক ঘিরে ফেলেছে।
*যুদ্ধের ময়দানে মানুষ মরে পড়ে থাকবে ঐ দিকে বাদলের কাছে মেজর সাব সাদা রুমাল দেখিয়ে আত্মসমর্পন করবে।
(থমথমে পরিবেশ থাকবে)
শেষ দৃশ্য:
(যুদ্ধ শেষ। জয় বাংলার মিছিলে। বয়াতী ছুটে আসে তার বাড়ী অন্যদিকে জয়বাংলার মিছিলের শব্দ শুনে রফিকের মাও ছুটে আসে বয়াতীর বাড়ী)
বয়াতীঃ আমীরন, সাজু তোমরা কই? এই দ্যাগো আমি আইছি। দ্যাশ স্বাধীন করে আইছি।
(বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)
রফিকের মাঃ সোলেমান ভাই তুমি আইছ? তয় বড় দেরি কইরা হালাইছো। তোমার মাইয়াডা আর ফিরতে পারে নাই, বউডা সব হারাইয়া পাগল হইয়া গ্যাছে। হয়তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাছে........। (হাঠাৎ রফিকের কথা মনে হয়ে ব্যাকুল হয়ে গায়েনকে প্রশ্ন করবে)
রফিকের মাঃ গায়েন ভাই তুমি একলা আইছ ক্যান? আমার রফিক আহে নাই। আমার রফিক কই। গায়েন ভাই তুমি কথা কওনা ক্যান?(গায়েন শোকে বিহ্বল হয়ে কান্নাজরিত কন্ঠে বলে)
বয়াতীঃ ভাবীসাব তোমার রফিকের কোন খোজ পাই নাই(রফিকের মার চিৎকার কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে আসবে) না........... আমার রফিক..............................
রফিকের মাঃ আমার বাজান, আয় বাব, তুই ফিরা আয় যুদ্ধ তো শ্যাষ তুই এহোনো কি করছ? সবাইতো ঘরে ফিইরা আইছে, তুই কবে আবি বাজান কবে? আয়.............বাবা আয়( বলে কানতে কানতে বেরিয়ে যাবে, গায়েন রফিকের মার পিছন পিছন গিয়ে আবার ফিরতে যাবে এমন সময় আমীরন পাগল বেশে প্রবেশ করবে এবং গায়েন দেখে আশ্চর্য হয়ে যাবে। বউকে ধরতে যায় সে ছিটকে দুরে সরে যায়)
আমীরনঃ না আমারে ছুইবিনা ছুবিনা কইতাছি, পর পুরুষ আমার সব কাইরা নিছে। তুই আবার কোন পুরুষ? তুই আবার কি চাষ(কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)
বয়াতীঃ আমীর আমার আমীরন। আমি তোমার গায়েন আমীর। আমার সাজু মইরা গিয়া বাইচ্চা গ্যাছে। দ্যাশের জন্য শহীদ হইছে। এই দৃশ্য দেখার আগে আমি ক্যান শহীদ হইলাম না? আমু...... আমুরে কতা কও আমীর কতা কও। (বলে জোরে ঝাকুনী দেয়)
আমীরনঃ (স্মৃতি ফিরে পেয়ে) আমি মরি নাই? আমি বাইচ্চা আছি ক্যান? গায়েন কতা কও ক্যান আমি বাইচ্চা আছি? কি আছে আমার? তুমিতো দ্যাশ স্বাধীন করছো। কত মানুষের মুখে হাসি ফুটাইছো। হ্যারা কি পারবো আমাগো ইজ্জত ফিরাইয়া দিতে। জানো ওরা আমার আর সাজুর ইজ্জত একলগে নিছে। (আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে গায়েনের বুকে।)
বয়াতীঃ চুপ করো, আমীরন চুপ করো, আর কইওয়ানা তুমি চুপ করো। (গায়েনের কোলে আমীর মারা যায়) আমির কতা কও, কতা কওনা ক্যান? চোখ খোল আমীরন চোখ খোল।( কান্নারত অবস্থায় আমীর কতা কও বলে জোরে চিৎকার করে)
বয়াতীঃ আমার আমীরন কতা কয়না। তোমরা কতা কওনা ক্যান? তোমরা চুপ কইরা রইছো ক্যান? দ্যাহো তোমরা, দ্যাশের লাইগ্যা আমি আমার সব হারাইলাম। তোমরা আমারে ফিরাইয়া দিতে পারবা? পারবানা। তোমাগো কাছে কিছু চাই না আমি, খালি আমার নিষ্পাপ মাইয়া আর বউরে যারা নষ্ট কইরা মারছে,যারা আমাগো মাছুম বাচ্চুরে মারছে, যারা এই দ্যাশের লগে বেঈমানী করছে যাগো হিং¯্র থাবায় দ্যাশ আর দ্যাশের মানুষ ধ্বংস হইয়া গ্যাছে, আমি হেইসব ওয়াজেদ আলী আর কেতরগো বিচার চাই। পারবানা তাগো বিচার করতে? আমি মরার আগে আমার “একটাই চাওয়া” একটা জিনিস দেইখ্যা যাইতে চাই আর কিছু চাই না (বলতে বলতে কান্নারত অবস্থায় পতাকা দিয়ে বউকে ঢেকে কোলে নিয়ে এগিয়ে যায়)
* নেপথ্যে গান বাজবে-একসাগর রক্তের বিনিময় বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা)
:সবাই ফ্রীজ:

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন