সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
অস্থির হয়ে উঠছে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন। যা জাতির জন্য উদ্বেগজনক বিষয়। জাতির মেরুদন্ড আক্রান্ত হচ্ছে সন্ত্রাস,দলীয়করণ ও রাজনীতিসহ জঘন্যতম কর্মকান্ডে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সহিংসতায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। ফলে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে । মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে বাবা-মা সন্তানকে জ্ঞানের আলো অন্বেষণে পাঠান; তারা সর্বদাই উৎকন্ঠিত থাকেন অনাকাক্সিক্ষত কোন দুঃসংবাদের জন্য। অথচ শিক্ষাঙ্গন হওয়ার কথা পুষ্প সৌরভে সুরভিত। পাখির কুঞ্জন আর শিক্ষার্থীর পদভারে মুখরিত। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত শিক্ষাঙ্গন গোলাগুলি,মারধর আর ভাঙচুরের শব্দে অশান্ত হয়ে উঠছে।
নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার শুরু থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধীরে ধীরে রাজনীতি প্রবেশ করে। ফলে নষ্ট হতে থাকে শিক্ষার পরিবেশ। বাড়তে থাকে সহিংসতা, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, খুন ও জখমের মত অপ্রীতিকর ঘটনা। সহিংসতার অতল গহ্বরে ডুবতে থাকে শিক্ষাঙ্গন। ছাত্র-শিক্ষকদের নোংরা রাজনীতির রাহুগ্রাসে অস্থির হয়ে ওঠে সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। অবশ্য দলীয়করণ ও ছাত্ররাজনীতি এর জন্য দায়ি। সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পাশাপাশি শিক্ষকদের চক্রান্ত, রেষারেষি ও দায়িত্বহীনতাও কম দায়ি নয়। শিক্ষকরাও নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রিয় ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিতে। ছাত্ররা কী শিখছে, কেন শিখছে, কিভাবে শিখছে এ দিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ না থাকলেও নিজেদের কর্তৃত্ব বা অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে তারা সচেতন।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, কেবল মহাজোট সরকারের সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৩ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র দু’জন ব্যক্তিগত কোন্দলে এবং বাকি ২১ জন নোংরা রাজনীতির শিকার। ২০০৯ সাল থেকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-শিবিরের পরস্পর দলীয় কোন্দল, হলদখল ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীফুজ্জামান নোমানী, ফারুক হোসেন, নসরুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বকর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাহিদ, মাসুদ বিন হাবিব, মহিউদ্দিন, হারুন অর রশীদ কায়সার, আসাদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবায়ের আহমেদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব, সিলেট এমসি কলেজের পলাশ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের আবিদুর রহমান, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের রেজানুল ইসলাম চৌধুরী, পাবনা টেক্সটাইল কলেজের মোস্তফা কামাল শান্ত ও সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহেল রানা নিহত হন।
এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সহিংসতায় জখম হন। তাদের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে ৫৪ জনকে। লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে ২৩ জনের।
চোখের সামনে শিক্ষাঙ্গনের অস্থির বাতাসে নিভে যাচ্ছে জ্বলন্ত প্রদীপগুলো। ধীরে ধীরে আঁধারে নিমজ্জিত হচ্ছে গোটা জাতি এবং কতগুলো পরিবারের আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠার আগেই দপ্ করে নিভে যাচ্ছে। জাতি হারাচ্ছে তার অমুল্য সম্পদ। এ অবস্থা থেকে উত্তরোণের পথ খোঁজে না কেউ। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জন্য তৈরি হয় না কোন নীতিমালা। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্বার্থেই তারা নেন না কোন পদক্ষেপ। শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেলে রাজনৈতিক দলগুলো নিঃস্ব হবার ভয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন দেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় মেধাবী সন্তানদের।
শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা নতুন কিছু না হলেও ইদানিং এর মাত্রাটা বেড়ে গেছে। সারাদেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত কলেজগুলোতে অস্থিতীশীল অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ হচ্ছে বিঘিœত। ভোগান্তিতে পড়ছে নিরীহ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেশ কয়েকটি কলেজ ও আটটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে চরম অশান্তি বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে কেবল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সরিয়ে দেওযা ছাড়া অন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আদালতের রায়ে বুয়েটের আন্দোলন বন্ধ থাকলেও ভেতরে ভেতরে ফুঁসছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের কারণে বন্ধ হয়ে আছে বুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম। চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। বর্তমানে আদালতের রায়ে আন্দেলন বন্ধ থাকলেও ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য চাঁদার টাকা আদায়ের পর তা ভাগাভাগির জের ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের গোলাগুলি, বোমাবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনায় গত মাসে এক ছাত্র প্রাণ হারায়। এরপর থেকে স্বাভাবিক হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। ঢাকসু নির্বাচনের দাবিতে গত ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়। সে থেকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে যে কোন সময় ঢাবিতেও বড় ধরণের সংঘর্ষ ঘটতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির ফলে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে জগন্নাথ বিম্ববিদ্যালয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। ফলে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা করেজ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, ঢাকা কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা পলিটেকনিক কলেজসহ সারাদেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের কারণে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সর্বশেষ গত ২ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শিক্ষাঙ্গনের অস্থিরতা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা বলেছেন,‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের একটি প্রবণতাও তেরি হয়েছে।’ সাম্প্রতিককালে সরকারের দলীয়করণকে অস্থিরতার অন্যতম কারণ বলেও মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন,‘একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মতের লোকজন থাকবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি ঢালাওভাবে নিজ দলের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয় তাহলে এ সঙ্কট সহজেই কাটবে না।’
অন্যদিকে চলমান অস্থিরতাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন,‘বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ ঘটানাগুলো দুঃখজনক। আমরা অস্থিরতা নিরসনে পদক্ষেপ নিয়েছি।’ এখন কথা হচ্ছে সব ঘটনারই তো পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু সে পদক্ষেপের পথ আর ফুরায় না। কাজের কাজ কিছুই হয় না। তবে শিক্ষাঙ্গনে নোংরা রাজনীতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করলেই কেবল সহিংসতা এড়ানো সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে রাজনীতির ঘাঁটিগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে দলমত নির্বিশেষে সকলকে। শিক্ষাঙ্গন রাখতে হবে রাজনীতির সব রকম প্রভাবমুক্ত। তবেই দূর হবে অস্থিরতা। শিক্ষার্থীরা পাবে তাদের কাক্সিক্ষত পরিবেশ। শিক্ষাঙ্গনের অস্থির বাতাসে আর নিভে যাবে না জ্বলন্ত প্রদীপ। জাতি পাবে তার মেধাবী সন্তান। উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হবে আমাদের প্রিয় স্বদেশ।
অস্থির হয়ে উঠছে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন। যা জাতির জন্য উদ্বেগজনক বিষয়। জাতির মেরুদন্ড আক্রান্ত হচ্ছে সন্ত্রাস,দলীয়করণ ও রাজনীতিসহ জঘন্যতম কর্মকান্ডে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সহিংসতায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। ফলে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে । মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে বাবা-মা সন্তানকে জ্ঞানের আলো অন্বেষণে পাঠান; তারা সর্বদাই উৎকন্ঠিত থাকেন অনাকাক্সিক্ষত কোন দুঃসংবাদের জন্য। অথচ শিক্ষাঙ্গন হওয়ার কথা পুষ্প সৌরভে সুরভিত। পাখির কুঞ্জন আর শিক্ষার্থীর পদভারে মুখরিত। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত শিক্ষাঙ্গন গোলাগুলি,মারধর আর ভাঙচুরের শব্দে অশান্ত হয়ে উঠছে।
নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার শুরু থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধীরে ধীরে রাজনীতি প্রবেশ করে। ফলে নষ্ট হতে থাকে শিক্ষার পরিবেশ। বাড়তে থাকে সহিংসতা, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, খুন ও জখমের মত অপ্রীতিকর ঘটনা। সহিংসতার অতল গহ্বরে ডুবতে থাকে শিক্ষাঙ্গন। ছাত্র-শিক্ষকদের নোংরা রাজনীতির রাহুগ্রাসে অস্থির হয়ে ওঠে সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। অবশ্য দলীয়করণ ও ছাত্ররাজনীতি এর জন্য দায়ি। সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পাশাপাশি শিক্ষকদের চক্রান্ত, রেষারেষি ও দায়িত্বহীনতাও কম দায়ি নয়। শিক্ষকরাও নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রিয় ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিতে। ছাত্ররা কী শিখছে, কেন শিখছে, কিভাবে শিখছে এ দিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ না থাকলেও নিজেদের কর্তৃত্ব বা অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে তারা সচেতন।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, কেবল মহাজোট সরকারের সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৩ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র দু’জন ব্যক্তিগত কোন্দলে এবং বাকি ২১ জন নোংরা রাজনীতির শিকার। ২০০৯ সাল থেকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-শিবিরের পরস্পর দলীয় কোন্দল, হলদখল ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীফুজ্জামান নোমানী, ফারুক হোসেন, নসরুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বকর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাহিদ, মাসুদ বিন হাবিব, মহিউদ্দিন, হারুন অর রশীদ কায়সার, আসাদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবায়ের আহমেদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব, সিলেট এমসি কলেজের পলাশ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের আবিদুর রহমান, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের রেজানুল ইসলাম চৌধুরী, পাবনা টেক্সটাইল কলেজের মোস্তফা কামাল শান্ত ও সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহেল রানা নিহত হন।
এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সহিংসতায় জখম হন। তাদের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে ৫৪ জনকে। লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে ২৩ জনের।
চোখের সামনে শিক্ষাঙ্গনের অস্থির বাতাসে নিভে যাচ্ছে জ্বলন্ত প্রদীপগুলো। ধীরে ধীরে আঁধারে নিমজ্জিত হচ্ছে গোটা জাতি এবং কতগুলো পরিবারের আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠার আগেই দপ্ করে নিভে যাচ্ছে। জাতি হারাচ্ছে তার অমুল্য সম্পদ। এ অবস্থা থেকে উত্তরোণের পথ খোঁজে না কেউ। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জন্য তৈরি হয় না কোন নীতিমালা। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্বার্থেই তারা নেন না কোন পদক্ষেপ। শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেলে রাজনৈতিক দলগুলো নিঃস্ব হবার ভয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন দেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় মেধাবী সন্তানদের।
শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা নতুন কিছু না হলেও ইদানিং এর মাত্রাটা বেড়ে গেছে। সারাদেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত কলেজগুলোতে অস্থিতীশীল অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ হচ্ছে বিঘিœত। ভোগান্তিতে পড়ছে নিরীহ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেশ কয়েকটি কলেজ ও আটটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে চরম অশান্তি বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে কেবল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সরিয়ে দেওযা ছাড়া অন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আদালতের রায়ে বুয়েটের আন্দোলন বন্ধ থাকলেও ভেতরে ভেতরে ফুঁসছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের কারণে বন্ধ হয়ে আছে বুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম। চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। বর্তমানে আদালতের রায়ে আন্দেলন বন্ধ থাকলেও ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য চাঁদার টাকা আদায়ের পর তা ভাগাভাগির জের ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের গোলাগুলি, বোমাবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনায় গত মাসে এক ছাত্র প্রাণ হারায়। এরপর থেকে স্বাভাবিক হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। ঢাকসু নির্বাচনের দাবিতে গত ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়। সে থেকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে যে কোন সময় ঢাবিতেও বড় ধরণের সংঘর্ষ ঘটতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির ফলে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে জগন্নাথ বিম্ববিদ্যালয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। ফলে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা করেজ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, ঢাকা কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা পলিটেকনিক কলেজসহ সারাদেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের কারণে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সর্বশেষ গত ২ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শিক্ষাঙ্গনের অস্থিরতা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা বলেছেন,‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের একটি প্রবণতাও তেরি হয়েছে।’ সাম্প্রতিককালে সরকারের দলীয়করণকে অস্থিরতার অন্যতম কারণ বলেও মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন,‘একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মতের লোকজন থাকবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি ঢালাওভাবে নিজ দলের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয় তাহলে এ সঙ্কট সহজেই কাটবে না।’
অন্যদিকে চলমান অস্থিরতাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন,‘বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ ঘটানাগুলো দুঃখজনক। আমরা অস্থিরতা নিরসনে পদক্ষেপ নিয়েছি।’ এখন কথা হচ্ছে সব ঘটনারই তো পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু সে পদক্ষেপের পথ আর ফুরায় না। কাজের কাজ কিছুই হয় না। তবে শিক্ষাঙ্গনে নোংরা রাজনীতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করলেই কেবল সহিংসতা এড়ানো সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে রাজনীতির ঘাঁটিগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে দলমত নির্বিশেষে সকলকে। শিক্ষাঙ্গন রাখতে হবে রাজনীতির সব রকম প্রভাবমুক্ত। তবেই দূর হবে অস্থিরতা। শিক্ষার্থীরা পাবে তাদের কাক্সিক্ষত পরিবেশ। শিক্ষাঙ্গনের অস্থির বাতাসে আর নিভে যাবে না জ্বলন্ত প্রদীপ। জাতি পাবে তার মেধাবী সন্তান। উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হবে আমাদের প্রিয় স্বদেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন