রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৩

রচয়িতা: দুই বাংলার কবিদের মিলনমেলা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

ষান্মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘রচয়িতা’ ৩য় বর্ষের ২য় সংখ্যা প্রকাশিত হলো ঢাকার একুশে বইমেলায়। ‘দুই বাংলার কবি ও কবিতা’ নিয়ে ৫০ পৃষ্ঠার মনভুলানো এ আয়োজন নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এ সফলতা ‘রচয়িতা’র নিপূণ কারিগর আরিফুল ইসলামের। কবিরা উপলক্ষ মাত্র। কারণ কবিরা কেবল জন্মদাতা, সম্পাদক গর্ভধারিনী। গর্ভধারণের যন্ত্রণা ও প্রসবের বেদনা আমরা বুঝিনা। আমাদের মুখে শুধু তৃপ্তির হাসি। প্রচ্ছদ এঁকে শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছেন এম. আসলাম লিটন। অশেষ ধন্যবাদ জানাই তাকে।
বর্তমান অবক্ষয়িত যুব সমাজের জন্য আলোকবর্তিকা হাতে আবির্ভূত হয়েছেন আরিফুল ইসলাম। ‘সাহিত্য পরিবার গঠনের দৃঢ় অঙ্গিকার’ নিয়ে কন্টকাকীর্ণ পথে হেঁটে চলেছেন ক্লান্তিহীন এক পথিক। তার কাফেলায় সামিল হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে আজ। নবীন-প্রবীণ কবিদের সমন্বয়ে সাজানো ‘রচয়িতা’ সর্বস্তরের পাঠকের মনে দাগ কাটতে পেরেছেÑ এ আমার বিশ্বাস। শুধু তা-ই নয়, ‘রচয়িতা’ জামালপুরের ইসলামপুর থেকে ছড়িয়ে পড়বে সারা বাংলাদেশ এমনকি ওপার বাংলায়। লিটল ম্যাগ প্রকাশ, প্রচার ও প্রসারের আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবেÑ এটাই আমার প্রত্যাশা।
নবীন কবিদের লেখালেখির সুতিকাগার ছোট কাগজ। প্রবীন বা প্রথিতযশা কবিদের পাশাপাশি নবীনরাও তাদের কাঁচা হাতের আঁকিবুকির প্রয়াস অব্যাহত রাখবে। তবেই আমাদের বাংলা সাহিত্য আরো সমৃদ্ধ হবে। কেননা, আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে সবকিছু এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। দুই হাতে লিখতে পারি। বাতাসে উড়িয়ে দিতে পারি যা কিছু তা-ই। মুহূর্তেই তা পৌঁছে যাচ্ছে সঠিক গন্তব্যে। সবকিছুই যখন হয়ে উঠেছে যান্ত্রিক। তখন আমরা কেনইবা থাকবো স্থবির হয়ে।
‘রচয়িতা’ হাতে পাওয়ার পর আমি বিস্মিত অভিভূত। মফন্বলে বসেও এমন চমৎকার সৃজন সম্ভব। সাহিত্য চর্চা এখন কেবল নগরকেন্দ্রিক নয়। একথাই প্রমাণ করে ‘রচয়িতা’। কবিতা বাছাই, সম্পাদনা, প্রকাশ ও বিপণনের ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন সম্পাদক। ওপার বাংলার পাঠকরাও আগরতলা বইমেলায় রচয়িতার মুখ দেখেছেন। ১৩০ জন কবির পাঠানো কবিতার মধ্যে মাত্র বিয়াল্লিশ জন কবির কবিতা বাছাই করা আসলেই কষ্টসাধ্য। বিশাল এ দায়িত্ব তিনি সামলেছেন প্রজ্ঞা, ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে। কায়মনো বাক্যে অপারগতাও প্রকাশ করেছেন। বাকী লেখা আগামী সংখ্যায় প্রকাশ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। হয়তো আগামী সংখ্যার জন্য আরো কবিতা জমা পড়বে। এভাবে পড়তেই থাকবে। দায়বদ্ধতা থেকে যাবে কবিদের কাছে। তবুও এগিয়ে যেতে হবে।
আরিফুল ইসলামের সম্পাদকীয় পড়ে মনে হয়েছে কবিতার বিপ্লব শুরু হয়েছে। বিস্ফোরক বারুদ স্পি­ন্টারের মত দিগি¦দিক কবিতার বিস্ফোরণ। প্রতিশ্র“তিশীল কবিদের উদাত্ত আহ্বান- কবিতার ভূবনে আসার। একটি সুন্দর আগামী বিনির্মাণেও প্রত্যয়দীপ্ত কন্ঠস্বর অনুরণন তুলছে চারিদিকে। কাঁটাতারের বেড়াকে উপেক্ষা করে এপার বাংলা-ওপার বাংলার কবিদের মিলন মেলার আয়োজক ‘রচয়িতা’। তাই অবলীলায় বলা যায়, ‘কবিতা কোন বাধাকে স্বীকার করে না, কবিতা সশস্ত্র কবিতা স্বাধীন।’
মৃণাল বসু চৌধুরী, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, জ্যোতির্ময় দাশ, মধুমঙ্গল বিশ্বাস, ইন্দ্রানী সেনগুপ্তা, চিরঞ্জিব হালদার, মনোজিৎ কুমার দাশ, শিবশংকর পাল, সুবীর সরকার, রহমান হেনরী, নজরুল জাহান, টোকন ঠাকুর, ধ্র“বজ্যোতি ঘোষ মুকুল, গোলাম মোস্তফা, কচি রেজা, রতœাদিপা দে ঘোষ, ড. আফরোজা পারভীন, ওয়াহিদুজ্জামান, আলী ইদ্রিস, ভোলা দেবনাথ, তালাত মাহমুদ, আমজাদ সুজন, অমিতাভ দাশ, রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ, আদিত্য অনিক, সুচেতা রায়, অনুপম মুখোপাধ্যায়, সুরঞ্জন রায়, আজিজ আহমেদ, ফয়সাল অভি, সৈকত আহমেদ বেল্লাল, রিপন ঘোষ, নাজমুল হাসান, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, অঞ্জন আচার্য, মৌ সেনগুপ্তা, সীমা রানী বন্দ্য, সৈয়দ সাদী, চঞ্চল মেহমুদ কাসেম, সুমন হাফিজ, সামীর রহমান ও আরিফুল ইসলামের কবিতা নি:সন্দেহে পাঠককে আকৃষ্ট করেছে। অনেকে অনেক ফোন পেয়েছেন। যেমন পেয়েছি আমি। কবি ও কবিতার স্বার্থকতা এখানেই।
ধন্য রচয়িতা, ধন্য আরিফুল ইসলাম।
কবিতার জয় হোক। ‘রচয়িতা’ দীর্ঘজীবি হোক।

কালকিনি, মাদারীপুর।
৩০.০৩.২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন