শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৩

তোমাকে ভালোবাসা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

তোমাকে ভালোবাসা অনেকটা খাবার টেবিলে
পাশাপাশি বসার প্রথম অনুভূতির মতো,
প্রবল বৃষ্টির মাঝে এক ছাতার তলে
পাশাপাশি হেটে যাওয়ার মতো।

শেষ বিকেলের বিলে আমি নৌকার মাঝি
তুমি তার সওয়ারি হওয়ার অভিজ্ঞতার মতো,
গাঢ় অন্ধকারে হাত ধরে হেটে যাওয়া
দু’জন দু’জনার অবলম্বনের মতো।

তোমাকে ভালোবাসা অনেকটা না বলা কথার
মাঝেও অনেক কিছু বলে ফেলার মতো,
পার্বণে-উৎসবে কাছে পাবার ব্যাকুল আগ্রহ
অথবা না পাবার মন খারাপের মতো।

তোমাকে ভালোবাসা অনেকটা ভালোবাসি
তবু বলতে না পারার কষ্টের মতো,
তবু ভালোবেসে যাওয়া কাছাকাছি এলে
দূরে গেলে মন কাঁদে তোমাকে না পেলে।

মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০১৩

কালকিনিতে নজরুলের জন্মজয়ন্তী উদযাপন

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের ১১৪ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী। গত ১৮ জুন সন্ধ্যা ৭টায় অফিসার্স ক্লাবে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে আজিমের সভাপতিত্বে সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিটু চ্যাটার্জির সঞ্চালনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপিকা তাহমিনা সিদ্দিকী। নজরুলের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য ও কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক দেদারুল আলম মুরাদ। আবৃত্তি করেন শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য ও সাহেবরামপুর কবি নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের বাংলা প্রভাষক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। সংগীত পরিবেশন করেন ডি কে আইডিয়াল সৈয়দ আতাহার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ জসিম উদ্দিন, শিল্পকলার সংগীত প্রশিক্ষক উমা দাস, মিলন বড়াল, শিশুশিল্পী রাফিয়া  ও সামিউন।

মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৩

একগুচ্ছ প্রেমের ছড়া

ইয়াকুব খান শিশির
১.
তুলতুলে গাল
ঠোট টুকটুকে লাল
পাখিঠোটা নাক তার
চন্দ্র কপাল
ঢেউ তোলা কালো কেশ
ডাগর আঁখি
মন বলে তার পানে
চেয়েই থাকি।

২.
প্রেয়সীর হাসি দেখে
কেউ যদি চমকায়
দু’চার কথা শুনে
বার বার দম খায়
কভু কি সে বুঝবে
প্রেম কি তা ছলনা
তার মত ভীতু যেন
প্রেম কভু করে না।

প্রেম যেন করে যার
ভয়হীন চিত্ত
হৃদয়ের নির্যাস
ভালবাসা বিত্ত
ত্যাগ আছে আছে যার
ধৈর্য ও বীর্য
প্রেম তারে খোঁজে তার
পেতে সাহচার্য।

৩.
ওটাকে চোখ বলা দায়
দৃষ্টি চোখের হানলে বুকের
পাজর ভেঙে যায়।

সাগরের গভীরতা কথার কথা
আছে তলদেশ
ও চোখের নাই কিনারা
মাপতে সারা
জীবন হবে শেষ

আকাশের নীল আর কত
সোভা কত কতই বা বিস্তৃত
কতইবা তার উদারতা
ওই চোখেরই মত

ও চোখে জাদু আছে মায়া আছে
আছে ভালবাসা
ও চোখে স্বপ্ন আছে আরো আছে
দুর্বাধ্য এক ভাষা।

সোমবার, ১০ জুন, ২০১৩

বাবার কাছে খোলা চিঠি

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
পরম শ্রদ্ধাভাজন পিতা,   
পৃথিবীর সবটুকু অনুভূতি দিয়ে আজ উপলব্ধি করছি তোমায়। তোমার মাঝেই আমার অস্তিত্ব। আর আমার মাঝে সুপ্ত তোমার আগামী দিনের স্বপ্ন। তুমি আমার স্বপ্নদ্রষ্টা। আর আমি তোমার স্বপ্নবিলাসী রাত। এখনো কী রাত জেগে জেগে ঝাপসা চোখে আগামীর স্বপ্ন দেখো? হাজার রঙের ছবি আঁকো মনে মনে। এখনো হয়তো বসে বসে ভাবো, ফেলে আসা অতীত। বার্ধক্যের মাঝে আজ খুঁজে ফেরো শৈশব ও যৌবনের সার্থকতা।
বাবা, আমাদের একান্নবর্তী পরিবারে তুমিই ছিলে প্রধান। তুমি পরিবারের বড় সন্তান। সকলের মিয়া ভাই। তোমাকে নিয়ে হয়তো তোমার বাবারও অনেক স্বপ্ন ছিলো। আজ তুমি পেশাগত জীবনে একজন শিক্ষক। সমাজে আলো ছড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিলে। অথচ তেলের অভাবে তোমার প্রদীপই ছিল নিভূ নিভূ। যৌবনে তুমি তোমার বাবাকে (আমার দাদা) হারিয়েছ। ছয় বোনকে পাত্রস্থ করাসহ তিনভাইকে মানুষ করার গুরুভার ছিলো তোমার ঘাড়ে। তুমি সফল হয়েছো। নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়েও তুমি তোমার আস্থায় অবিচল ছিলে। আদর্শ আর নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত হওনি কখনো।
বাবা, আমার মনে আছে- কাকারা বিবাহ করার পরপর আমাদের একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে যায়। সেদিন তুমি অঝোরে কেঁদেছিলে। আমি তখন থেকে বুঝতে শিখেছি- বিচ্ছেদ মানুষকে কতটা কষ্ট দেয়। আলাদা হবার মত বা নতুন সংসার গড়ার মত তেমন কোন উপাদান তোমার হাতে ছিলো না। তবুও আলাদা সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থার মধ্য দিয়ে অনেক কষ্টে আমাদের মানুষ করেছো। আসলে মানুষের মত মানুষ হতে পেরেছি কিনা সে মাপকাঠি তোমার হাতে। ছয় ভাই-এক বোনের বিশাল সংসারের দায়িত্ব তোমার মত ছাপোষা শিক্ষকের ঘাড়ে।
বাবা, ছেলেবেলা থেকেই দেখেছি- মায়ের অনেক আব্দার তুমি রক্ষা করতে পারোনি। তখন অনেক তিক্ত কথাও শুনতে হয়েছে তোমাকে। তিক্ততা রিক্ততা টানাপড়েন আর হতাশার গ্লানি নিয়েই কেটে গেছে তোমাদের সুদীর্ঘ দাম্পত্য জীবন। অনেক কষ্টে টেনে-টুনে আজো হাল ধরে আছো সংসারের। সন্তানের চাওয়াগুলো তুমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছ। সাধ্যমত চেষ্টা করেছো সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে। তোমার মধ্যে আমি হতাশা দেখেছি তবে তোমাকে অধৈর্য হতে দেখেনি।
বাবা, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করতে পারিনি। প্রকাশের কোন সুযোগ বা উপলক্ষও পাইনি। বাবা এখন তুমি আমাদের আনন্দে আনন্দিত হও। আমাদের ব্যথায় ব্যথিত হও। আমাদের আনন্দ-বেদনার সমান অংশীদার তুমি। তুমি বলতে,‘তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’ আমি জানিনা, কখনো কিছু করতে পারবো কিনা। তবে যেদিন এমএ শ্রেণির ফলাফল পেয়ে তোমাকে ফোন করেছিলাম, সেদিন তুমি মহাখুশি হয়েছিলে। তোমার ছেলে ফার্স্ট ক্লাশ পেয়েছে- তুমি তা মহল্লার সবাইকে গর্বের সাথে জানিয়েছিলে। এ যেন তোমার বিশাল পাওয়া। বাবা তুমি উপজেলা শহর থেকে চার কেজি মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরেছিলে। আনন্দে সেদিন তোমার চোখের কোণে চিকচিক করছিল আনন্দ অশ্রু।
বাবা, বিশ্বাস করো, আমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে তোমার সব ক্লান্তি মুছে দিতে চাই। তুমি শুধু সে অবধি বেঁচে থাক। সৃষ্টিকর্তার কাছে তা-ই প্রার্থনা করি। সৃষ্টিকর্তা যেন আমাকে একটু সুযোগ দেন। আমার জীবনে জন্মদাতা তুমি, আভিভাবক তুমি, এমনকি বন্ধুও তুমি। ঘৃণা যত করেছো তার চেয়ে বেশি ভালোবেসেছো আমায়। যখন কিছু না পারার ব্যর্থতার কারণে আমাকে বকতে; তখন বড্ড রাগ হতো তোমার ওপর। কিন্তু আজ বুঝতে পারি, সন্তানের সফলতায় প্রত্যেক বাবাই গর্বিত হয়। তুমিও তার ব্যতিক্রম নও।
বাবা, তুমি দীর্ঘজীবী হও। তোমার সুস্থ্যতা সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনায়Ñ
ইতি, তোমার আশির্বাদ প্রত্যাশী।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
কালকিনি, মাদারীপুর।
০৯.০৬.২০১৩