সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৩

সাম্যবাদী চেতনার কবি নজরুল

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
বাঙলা সাহিত্যে ধুমকেতুর ন্যায় আগমন যার। বিদ্রোহ-প্রেম-সাম্যবাদের মশাল হাতে যিনি আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নানাবিধ সমস্য-সংকটে যখন সারা বিশ্ব আলোড়িত। কাজী নজরুল ইসলামের(১৮৯৯-১৯৭৬) তখন আবির্ভাব। যুদ্ধ বিধ্বস্ত পৃথিবীতে যখন মানবতা ধুলায় লুন্ঠিত তখন তাঁর কন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে সাম্যবাদের গান। একই কন্ঠে হামদ- নাত এবং শ্যামা সংগীতের সুরের মূর্ছনায় মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন সাম্যবাদের মূলমন্ত্র। মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসায় কবি হয়ে উঠেছেন মানবতাবাদী।

নজরুলের সাম্যবাদের প্রধান ক্ষেত্র মানুষ। কে কুলি-মজুর আর কে সাহেব? সবাই তার দৃষ্টিতে সমান। আশরাফ আর আতরাফের কোন ভেদাভেদ নেই এখানে। সবাই সৃষ্টির সেরা। সবাইকেই তিনি গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। নজরুলের সাম্যবাদ তাঁর অন্তরের প্রেরণালব্ধ বস্তু। কবি কল্পনার রঙে রঙিন। মানবতাবোধই তার সাম্যবাদের ভিত্তি।  তিনি সকল ধর্মের উর্ধে মানবধর্মকেই উচ্চাসনে বসিয়েছেন। মানবের মাঝে তিনি স্রষ্টাকে আবিস্কার করেছেন। তাঁর সাম্যবাদ স্রষ্টাকে অস্বীকার কওে নয়। কাল মার্কসের মত তাঁর সাম্যবাদ নাস্তিক্য সাম্যবাদ নয়। তাঁর সাম্যবাদ আস্তিক্য সাম্যবাদ। অসাম্প্রদায়িক হলেও তিনি পুরোপুরি আস্তিক ছিলেন।

নজরুলের সাম্যবাদ প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থে। ১৯৫২ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থে মোট ১১টি কবিতা স্থান পেয়েছে। যেমন- ‘সাম্যবাদী’, ‘নারী’, ‘মানুষ’, ‘বারাঙ্গনা’, ‘রাজা-প্রজা’, ‘ঈশ্বর’, ‘পাপ’, কুলি-মজুর’, ‘চোর-ডাকাত’, ‘সাম্য’ ও ‘কান্ডারী হুশিয়ার’। মূলত  ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের কবিতাগুলোতে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের প্রভাব রয়েছে।
তাঁর ‘সাম্যবাদী’ কাব্যের ‘নারী’ কবিতাটি বহুল প্রশংসিত। ‘নারী’ কবিতায় কবি নারী-পুরুষে সাম্যের বাণী উচ্চারণ করেছেন। কবি নারী-পুরুষের ভেদাভেদ অস্বীকার করেছেন। কবির ভাষায়-
“বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
আর ‘বারাঙ্গনা’ কবিতাটি অধিক সমালোচিত। কবিতায় কবি বলেছেনÑ
“কে তোমায় বলে বারাঙ্গনা মা, কে দেয় থুতু ও-গায়ে?
হয়ত তোমায় স্তন্য দিয়াছে সীতা-সম সতী মায়ে।”
তিনি মন্দির-কাবার চেয়ে মানুষের হৃদয়কে বড় জ্ঞান করেছেন। কবি বলেছেনÑ
“এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।”

‘সাম্য’ কবিতায় কবি বলেছেন-
“হেথা স্রষ্টার ভজন আলয় এই দেহ এই মন,
হেথা মানুষের বেদনায় তার দুঃখের সিংহাসন।
সাড়া দেন তিনি এখানে তাঁহারে যে নামে যে কেহ ডাকে,
যেমন ডাকিয়া সাড়া পায় শিশু যে নামে ডাকে সে মাকে।”

নজরুল মানুষের কবি। সাম্যের কবি। নজরুলের বড় পরিচয় তিনি সাম্যবাদী কবি। নজরুলের সাম্যবাদ সকল মানবের মহামিলন।
‘‘গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।’’
কবি মানবতার জয়গান গেয়েছেন। মানুষকে কখনো তিনি ঘৃণার চোখে দেখেন নি। কবি বলেছেনÑ
“বন্ধু, তোমার বুক ভরা লোভ, দু’চোখে স্বার্থ ঠুলি,
নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হয়েছে কুলি।”

মানুষকে তিনি সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। হিন্দু- মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কারো আসল পরিচয় হতে পারে না। আসল পরিচয় হলো- আমরা সবাই মানুষ। ‘কান্ডারী হুশিয়ার’ কবিতায় বলেছেন-
‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার।’
এছাড়াও তার কন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে-
‘জাতের চাইতে মানুষ সত্য
অধিক সত্য প্রাণের টান
প্রাণ ঘরে সব এক সমান।’

‘ঈশ্বর’ কবিতায় নজরুল ইসলাম ঈশ্বর অন্বেষণের ব্যাপারে বলেছেন, বনে- জঙ্গলে, পর্বত চূড়ায় ঈশ্বর অন্বেষণের কোন প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর মানব মনেই অধিষ্ঠিত। আর শাস্ত্র অন্বেষণে না গিয়ে সত্যের সন্ধানে অগ্রসর হতে বলেছেন। ঈশ্বর মানুষের মধ্যেই বিরাজিত, তাকে বাইরে না খুঁজে নিজের মধ্যে ডুব দিতে হবে। কবি বলেছেন- “স্রষ্টারে খোঁজো - আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে।”

সর্বোপরি কবি ‘সাম্য’ কবিতায় স্বপ্নের দেশ- আদর্শ দেশের করেছেন। এমন দেশ যেখানে রাজা প্রজা নেই, ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ নেই। ‘সাম্যবাদী’ এ স্থানে বর্ণবৈষম্য নেই, এখানে সাদা ও কালোদের জন্য আলাদা গোরস্থান বা গির্জা নেই। এখানে কোন ধর্মের বা শাস্ত্রের ভেদ নেই, নেই কোলাহল। সেখানে পাদ্রী পুরুত মোল্লা এক পাত্রে জল খেলেও জাত যাবে না, স্রষ্টা বাতিল হবে না।
‘সাম্য’ কবিতায় কবিতায় স্রষ্টাকে মহিমাময় এবং মানুষের দেহ মনকেই তার ভজনালয় রূপে বিবেচনা করেছেনÑ
“সাড়া দেন তিনি এখানে তাঁহারে যে নামে কেহ ডাকে
যেমন ডাকিয়া সাড়া পায় শিশু যেই নামে ডাকে সে মা’কে।”

সাম্যবাদ বাঙলা সাহিত্যে নতুন কোন বিষয় নয়। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম যে মমতায় মানবতা মিশ্রিত সাম্যের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন তা একান্তই অভিনব। এখানেই নজরুলের সাম্যবাদী চেতনার নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে।    

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী
কালকিনি, মাদারীপুর
২৩.০৮.২০১৩

রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৩

তেঁতুল রাজ্য

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

সম্মানিত সভাসদ!
নারী জাগরণ সভায় আপনাদের অভিনন্দন!
আজ আমি একক বক্তা এখানে।
অনেক মুখরোচক আলোচনা হবে।
হবে তেঁতুল বিষয়ক লালা ঝরানো ভাষণ।
ধৈর্য ধরে বসুন এবং উপলব্ধি করুন।
সভায় আসার সময় স্ত্রীকে ঘরের ভেতর রেখে
দরোজার তালা সতর্কভাবে লাগিয়েছেন কিনা?
দেশটাকে আজ আমরা তেঁতুল রাজ্যে পরিণত করেছি-
সর্বত্রই লালা ঝরানো পিচ্ছিল পথ।
বাড়ি ফেরার পথে সাবধানে পা ফেলবেন।
নয়তো হোচট খাবেন কিংবা ভাঙবে কোমড়।
তেঁতুল গাছে ধরবে তেতুল। ঝরবে শুধু লালা।
ঝরতে ঝরতে একদিন দেখবেন লালা শূন্য হবে পুরুষ।
আমার বক্তব্য সেইদিন শেষ হবে-
ততদিন এসভায় আপনাদের উদার আমন্ত্রণ!

বন্ধন

(ছোট কাকার ফোন পেয়ে পারিবারিক জটিলতা নিয়ে)
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

বন্ধন কী এতোই তুচ্ছ- এতোই শিথিল?
ইচ্ছে করলেই ছিঁড়ে নেওয়া যায়?
জীবনের খুঁটি-নাটি দুঃখবোধ হাসি-কান্না
ফেলনা কোন ময়লা নয়Ñ
ইচ্ছে করলেই ভাসিয়ে দেওয়া যায়।

বন্ধন কী রান্না শেষে চুলার ছাঁই?
ভাও বাতাসে উড়িয়ে দিলাম কুয়োর জলে।
চাওয়া-পাওয়া কিংবা হতাশা-ব্যর্থতার
হিসেব কষে বলে দেওয়া যায় লাভ
কিংবা ক্ষতির পরিমাণ।

বন্ধনে বন্ধনে অটুট করে জীবনের গতিপথ
আমাদের চলতে হবে বহুদূর।
ভালোবাসা- শ্রদ্ধা- ত্যাগের মহিমায়
টুকরো টুকরো স্মৃতির লুক্কায়িত বোধের
অন্তরালে অঙ্কুরিত হোক যাবতীয় লেনদেন।

বন্ধন কোন তুচ্ছ- শিথিল বস্তু নয়.. ..
ইচ্ছে করলেই তাকে ছুঁড়ে ফেলবে ভাঁগাড়ে।

হ্যালো, রবীন্দ্র্রনাথ!

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো। গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছিল। অন্ধকার হাতরে খাটের কোণায় পানির বোতলের অস্তিত্ব টের পেলাম। ঢক-ঢক করে গলা ভিজিয়ে নিলাম। চোখ বন্ধ করলাম আবার।
তবু স্বপ্নটা আমার পিছু ছাড়ছে না। ফোন করলাম রবীন্দ্রনাথকে।
- হ্যালো, রবীন্দ্রনাথ!
- হ্যা বৎস! বলো।
- তুমি গুরু মরিয়া প্রমাণ করিলে তুমি মর নাই। কাদম্বিনী রোজ সকালে আমার ঘুম ভেঙে দেয়।
- ও তাই। আর...
- গোরা প্রতিনিয়ত ভর্ৎসনা করে। আমাদের নোংরা রাজনীতির জন্য তার সেকি খিস্তিখেউর।
- তুমি কি বলো?
- আমি আর কী বলবো। আহাম্মকের মতো সব শুনি। মুখ বুজে থাকি। কোন উত্তর নেই।
- তুমি আসলে কী করো?
- বছরখানেক হলো, একটা ডিগ্রী কলেজে বাংলা পড়াই।
- ভালোতো।
- কিসের ভালো? সমস্যাতো ওখানেই।
- কী সমস্যা?
- ‘হৈমন্তির এত কষ্ট কেন?’ ‘অপু কেন বাবার আচরণের প্রতিবাদ করে না?’ নানাবিধ প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের।
- তুমি কী বলো?
- তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার দোষ দেই। তা শুনে ছাত্রীরা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। বলে, আমরা তখন থাকলে দেখিয়ে দিতাম।
- তুমি কী বিবাহিত?
- নারে বাবা। তোমাদের মত অল্প বয়সে বিয়ে করার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। এন্ট্রান্স পড়লেই বাবা বিয়ে দেবেন। এমন ভাগ্য আমাদের নেই। সতের বছরের হৈমন্তি বয়সে দাদি-নানিকে হার মানালেও বাংরাদেশ সরকার আঠারো বছরের আগে মেয়েদের বিবাহ নিষিদ্ধ করেছে।
- সে যাই হোক। যখন যে নিয়ম। আমাদের সময় আট বছরে বিয়ের নামে ‘গৌড়ি দান’ করা হতো। বিয়ে না করতে পারো। প্রেমতো নিশ্চয়ই করো। ওটাতে তো আর বয়সের বালাই নেই।
- হা- হা- হা। তা বলতে পারো। ডজন খানেক তো হবে। জলের মতো আসে আর যায়। তবে এ ক্ষেত্রে তোমার গানগুলি বেশ সহায়ক।
- যেমন?
- কাউকে দেখলেই গেয়ে উঠি-‘আমারও পরাণও যাহা চায়’ কিংবা ‘ভালোবাসি- ভালোবাসি...’
- তাতে কাজ হয়?
- হবে না মানে। রবীন্দ্রনাথকে কে না জানে। তার গান কে না শোনে। তবে মাইন্ড করলে বলি, তোমাকে কিছু বলিনি। রবীন্দ্র সংগীত গাইছি।
- হা- হা- হা। ভালো তো। দারুণ বুদ্ধি তোমার।
- তোমার চেয়ে কমই।
- অনেক দিন পরে হাসলাম। তুমি আমাকে হাসালে।
- কেন?
- ফটিকের জন্য মন খারাপ হয়। আমার ফটিকরা কেমন আছে?
- আগের মতোই দুষ্টু। খালি ছুটির জন্য অস্থির হয়ে ওঠে।
- তা না হয় মানলাম। তুমি লেখালেখি কর নাকি?
- চেষ্টা করি। হয় কি না জানি না। তবে প্রেমিকার উদ্দেশ্যে দু-চার লাইন। হাতে হাতে দিতে পারি না। ফলে পত্রিকায় পাঠাই। সম্পাদক মহাশয় সদয় হলে প্রকাশ হয়। পত্রিকার কপিটা নিয়ে ভালোবাসার মানুষটির হাতে দেই। হাতে পেয়ে বলে, ‘বাহ! চমৎকার কবিতা তো।’ কিন্তু মাঝে মাঝে কষ্ট হয়। যার জন্য লিখলাম- সে বোঝল না। আর প্রেমে পড়লো কি না অন্যজন। বল, এটা মহামুশকিল না?
- চালিয়ে যাও। একদিন বুঝিবে বাছাধন। আমার ‘শেষের কবিতা’ পড় নাই?
- আরে মহাশয়! সেতো কয়েকবার পড়েছি। কিন্তু আমার বাবারও সাধ্য নাই বোঝার। না বুঝলেও শেষের কবিতাটা কয়েকবার আবৃত্তি করেছি। শ্রোতারা বড্ড হাততালি দেয়।
- তাই নাকি? তুমি আবৃত্তি করো? আমি না ভালো আবৃত্তি করতে পারতাম না। মিনমিনে কন্ঠ ছিল তো।
- হ্যা, তা ঠিক বলেছো। তোমার কন্ঠে ‘সোনার তরী’ শুনে আমি অনেক হেসেছি। কেমন কাতর-কাতর কন্ঠ। মেয়েলি-মেয়েলি ভাব।
- তুমি আমাকে অপমান করছো?
- দুঃখিত, সে স্পর্ধা আমার নেই। ক্ষমা করবেন জাহাপনা! তবে আপনার ‘হঠাৎ দেখা’, ‘বাঁশি’, ‘দেবতার গ্রাস’, ‘দুই বিঘা জমি’, ‘সোনার তরী’, ‘অপমানিত’, ও ‘রক্ত করবী’র অংশবিশেষ বহুবার আবৃত্তি করেছি। পুরস্কারও পেয়েছি।
- বাহ- বাহ! তোমরাইতো আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে। তা নাহলে কবেই পঁচে যেতাম। মিশে যেতাম মাটির সঙ্গে।
- কী বলেন? আপনি আছেন বলেইতো আমরা আছি। আজো বাংলা সাহিত্য আছে। বিশ্ব সাহিত্যের দরবারে বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে। ‘নোবেল’ পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছি আমরা।
- ও কথা আর বলো না। পেলাম একটা নোবেল। তা নিয়ে কত সমালোচনা। শেষমেষ আবার নোবেলটা চুরিও হয়ে গেল।
- দুঃখিত! অনাকাক্সিক্ষত এ ভুলের জন্য।
- না থাক, ঠিক অছে। তবে আমার একটা অনুরোধ। সাহিত্যটাকে কলুষিত হতে দিও না। বিখ্যাত হওয়ার বাসনা নিয়ে লিখতে বসো না। বরং লিখে বিখ্যাত হও। সহজ-সরল পাঠককে ঠকিও না। তোমারা লিখে যাও। তাতেই আমি বেঁচে থাকবো। বাংলা সাহিত্য বেঁচে থাকবে। মানুষ বেঁচে থাকবে। সর্বোপরি মানুষের জন্য কিছু করো।
‘আজি ঝরোঝরো মুখোড়ও বাদল দিনে’ গানের সুরে হঠাৎ মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো।
ঘুম ভেঙে গেল। সাথে স্বপ্নটাও। মোবাইল স্ক্রীনে ‘অনিন্দিতা কলিং’ দেখে রাগটা সামলে নিয়ে ফোন রিসিভ করলাম। ---
- হ্যালো, রবীন্দ্রনাথ!
অনিন্দিতা বললো- পাগল নাকি? রবীন্দ্রনাথ এলো কোত্থেকে?
- ও তাইতো, তুমি অনিন্দিতা। আসলে এতক্ষণ রবীন্দ্রনাথের সাথে কথা বলছিলাম তো।
অনিন্দিতা হাসলো।
- তোমার মাথা একেবারে গ্যাছে। আমার মনে হয় কি জানো? বাইশে শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকী। তুমি হয়তো ভাবছিলে কিছু লিখবে। কিন্তু কি লিখবে খুঁজে পাচ্ছিলে না। তাই ভাবতে- ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছো। আর অমনি ঘুমের ঘোরে রবীন্দ্রনাথকে ফোন করেছো। হা- হা- হা।
ফোন কানে ধরে আছি। অনিন্দিতার হাসির লহরী বেজে যাচ্ছে অবিরাম। আসলে রবীন্দ্রনাথ আমাকে স্বপ্ন দেখায়। রবীন্দ্রনাথ আমাকে বাঁচতে শেখায়।
তুমি কেন চলে গেলে রবীন্দ্রনাথ? আর কিছুদিন থাকতে পারলে না? কিংবা আবার কেন ফিরে আসো না!

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
কালকিনি, মাদারীপুর।
০১৭২৫৪৩০৭৬৩