:: সালাহ উদ্দিন মাহমুদ ::
‘কেউ কথা রাখেনি’- কবিতাটি প্রথম শুনি খালাতো ভাই মহিউদ্দিনের কন্ঠে। ২০০৩ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশে ফুটপাতে পুরনো বইয়ের দোকান থেকে ‘সুনীলের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বইটি বিশ টাকা দিয়ে কিনলাম। ২০০৫ সালে বাংলা সাহিত্যে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তির পর কলেজের আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে ‘কেউ কথা রাখেনি’ আবৃত্তি করলাম। আমার আবৃত্তি জীবনে ঐ একটা কবিতাই মুখস্থ। ২০০৬, ২০১০ ও ২০১১ সালে গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছি। পুরস্কারের সাথে কবির হাতের লেখা আশির্বাদপত্রে লেখা ‘আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে রই চিরদিন চিরকাল!- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।’ কবির আর্শিবাদ আমাকে কবির কাছে ঋণী করে দেয়।
২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কাজী বাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে তার জন্মভিটায় পা রাখলেন। কবিকে দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে কবি-অকবিরা ছুটে এসেছেন। সেদিন কবিকে নিবেদিত অনুষ্ঠানে জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতা আবৃত্তি করেছিলাম। কিন্তু কবি আর আসেননি।
তখন আবৃত্তি শিল্পী মেহেদী হাসান, মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যপ্রশিক্ষক আ জ ম কামাল ও উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কুমার লাভলু কবিকে একা পেয়ে ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার গোড়ার কথা জানতে চেয়েছিলেন। কবি অকপটে সব বলেছেন। মেহেদী হাসান আবৃত্তি করছেন আর কবি ব্যাখা করছেন। কবি বলেছিলেন, তাঁর বয়স যখন তেত্রিশ পেরিয়ে গেছে তখন এমন অনুভূতি তাকে তাড়িত করেছে। তাই তিনি লিখলেন ‘কেউ কথা রাখেনি।’ কবিতার কিছু অংশে কল্পনার সংমিশ্রন থাকলেও পুরো কবিতাটিই বাস্তবতার আলোকে লেখা। কবিতায় বোষ্টুমীর প্রসঙ্গ কাল্পনিক হলেও অবাস্তব নয়। কবি ১৯৩৪ সালে ৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রামের নানা বাড়িতে। তখন পৈতৃক নিবাস কালকিনির মাইজপাড়ায়। সম্ভবত ১০-১১ বছর বয়সে অর্থাৎ দেশভাগের আগেই পরিবারের সাথে চলে যান কলকাতা। তবু তিনি ভুলতে পারেননি শৈশবের স্মৃতি।
কবি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ‘পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায়’ থেকেছেন। সে সময় মনে হয়েছে তার মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী তাকে বলেছিল,‘বড় হও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি/ তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাব’। তিন প্রহরের বিলে সাপ আর ভ্রমরের প্রসঙ্গ এলে কবি মুচকি হেসে বললেন, তখন আমি ছোট ছিলাম। মামারা যখন নৌকা নিয়ে বিলে যেত। তখন আমিও বায়না ধরতাম। কিন্তু মামারা নিতেন না। ছোট্ট সুনীলকে ভয় দেখানোর জন্য বলতেন, সে বিলে যেতে- আসতে তিন প্রহর লেগে যায়। আর সেখানে ভয়ঙ্কর সাপ রয়েছে। সেই বোধ থেকেই বিলের নাম দেই তিন প্রহরের বিল। আর সাপ আর ভ্রমরের খেলাটা বাচ্চাদের ভয় দেখানোর জন্য বলা। এসময় আ জ ম কামাল অভিযোগ করে বললেন, কবি কবিতায় আপনি মুসলমানদের ছোট করেছেন। একটি মাত্র চরিত্র তাও আবার মাঝি। কবি তখনও হাসলেন। বললেন, তখন মুসলমানরা এখনকার মতো এতো সচেতন ছিলো না। আমি তাদের ছোট করিনি বরং তাদের পশ্চাৎপদতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তখনও মুসলমানরা শিক্ষাদীক্ষায় অনেক পিছিয়ে ছিল। মামাবাড়ির আশপাশের মুসলমানরা হিন্দু জমিদারদের বাড়ির কামলা খাটত বা নৌকা বেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।
কবিরা আর্থিকভাবে অতটা স্বচ্ছল ছিলেন না। মার্বেল খেলার জন্য একটা রয়্যালগুলিও তিনি কিনতে পারেননি। তখন মাইজপাড়ার লস্কররা খুবই বিত্তবান ছিলেন। লস্কর বাড়ির ছেলেদের লাঠি লজেন্স খেতে দেখে কবি বাবার কাছে বায়না ধরতেন। বাবা বলতেন, পরে কিনে দেব। কবি অপেক্ষায় থেকেছেন। বাবা স্কুল মাস্টার। বেতন কম। তাই তার মা কবিকে বলতেন, জীবনে অন্য কিছু করবে তবু মাস্টারি করবে না। তাই কবি কখনো মাস্টারি করতে যাননি।
রাস উৎসব প্রসঙ্গে কবি বললেন, তিনি ছেলেবেলায় খুব ডানপিটে স্বভাবের ছিলেন। তাদের গাঙ্গুলি বাড়িতে যখন রাস উৎসব হতো তখন ভেতর বাড়িতে মহিলারা নাচ-গান করতেন। কবি তার ব্যাঘাত ঘটাবেন বলে তাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হতোনা। নিচেকে অসহায় কল্পনা করে কবি এমন অভিব্যক্তি করেছেন। কবি তখন ভাবতেন, একদিন আমিও সব পাব। রয়্যাল গুলি, লাঠি লজেন্স আর রাস উৎসব সবই তিনি পেয়েছেন। কিন্তু তার বাবা এসব কিছুই দেখে যেতে পারেননি। আজ সুনীলের সব আছে কিন্তু তার স্কুলমাস্টার বাবা নেই। এই শূন্যতা তাকে বারবার গ্রাস করেছে।
কবিকে যখন বরুণা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলো; কবি তখন মুচকি হেসে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেন। তখন কবির সঙ্গে তার স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন। কবি শুধু এইটুকু বললেন, এটা কল্পনা। বরুণা বলে কেউ ছিলনা। তবে পরে আমরা জেনেছি, কবির এক বন্ধুর বোনের প্রতি কবির দূর্বলতা বা ভালোবাসা জন্মেছিল। কবি তার কোন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সে সময়ে একমাত্র বন্ধুর সুবাদে কেবল বন্ধুর বোনের সাথেই কথা বলার বা ভাববিনিময়ের সুযোগ ছিল। হয়ত বরুণা তার কল্পনার নারী।
কবি সবশেষে কুমার লাভলুকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন। আচ্ছা, তুই কি নাস্তিক হতে পেরেছিস? কুমার লাভলু বলল, ভয় পাই। পূর্ব পুরুষের ধর্ম ত্যাগ করি কিভাবে? কবি বললেন,‘আস্তিক হওয়া খুব সহজ; কিন্তু নাস্তিক হওয়া বড়ই কঠিন।’ কথাটায় হাস্যরসাত্মক পরিবেশটা হঠাৎ গুরুগম্ভীর হয়ে উঠলো।
৭৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে কবি এসেছিলেন তার জন্মভিটায়। এটা কবির জন্য যতটা আনন্দের; মাদারীপুরবাসীর জন্য ততটা গর্বের। তিন দিন অবস্থান করে কবি আবার চলে গেলেন তার গড়িহাটির পারিজাতে। রেখে গেলেন স্মৃতি। অকৃত্রিম ভালোবাসা আর দেশভাগের বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে সৌহার্দের মিলনরেখা। কিন্তু সব ছেড়েই তাকে চলে যেতে হলো ২২ অক্টোবর। পড়ে রইল পারিজাত। পড়ে রইল জন্মভিটার সুনীল আকাশ। কেউ কথা না রাখলেও আমরা আগলে রেখেছি তার সুনীল আকাশ সাহিত্য চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র এবং সুনীল সাহিত্য পুরস্কার।
এখন মনে হচ্ছে মাদারীপুরে প্রবর্তিত সুনীল সাহিত্য পুরস্কারকে জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। তবেই হয়তো কবির কথা না রাখার দীনতা ঘুচাতে পারবো। কবি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তার কর্মে। কবি বেঁচে থাকবেন আমাদের মর্মে। আমাদের চিন্তা-চেতনায়, আমাদের উপলব্ধিতে। তিনি বেঁচে থাকবেন চিরদিন চিরকাল।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
কালকিনি, মাদারীপুর।
‘কেউ কথা রাখেনি’- কবিতাটি প্রথম শুনি খালাতো ভাই মহিউদ্দিনের কন্ঠে। ২০০৩ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশে ফুটপাতে পুরনো বইয়ের দোকান থেকে ‘সুনীলের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বইটি বিশ টাকা দিয়ে কিনলাম। ২০০৫ সালে বাংলা সাহিত্যে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তির পর কলেজের আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে ‘কেউ কথা রাখেনি’ আবৃত্তি করলাম। আমার আবৃত্তি জীবনে ঐ একটা কবিতাই মুখস্থ। ২০০৬, ২০১০ ও ২০১১ সালে গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছি। পুরস্কারের সাথে কবির হাতের লেখা আশির্বাদপত্রে লেখা ‘আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে রই চিরদিন চিরকাল!- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।’ কবির আর্শিবাদ আমাকে কবির কাছে ঋণী করে দেয়।
২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কাজী বাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে তার জন্মভিটায় পা রাখলেন। কবিকে দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে কবি-অকবিরা ছুটে এসেছেন। সেদিন কবিকে নিবেদিত অনুষ্ঠানে জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতা আবৃত্তি করেছিলাম। কিন্তু কবি আর আসেননি।
তখন আবৃত্তি শিল্পী মেহেদী হাসান, মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যপ্রশিক্ষক আ জ ম কামাল ও উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কুমার লাভলু কবিকে একা পেয়ে ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার গোড়ার কথা জানতে চেয়েছিলেন। কবি অকপটে সব বলেছেন। মেহেদী হাসান আবৃত্তি করছেন আর কবি ব্যাখা করছেন। কবি বলেছিলেন, তাঁর বয়স যখন তেত্রিশ পেরিয়ে গেছে তখন এমন অনুভূতি তাকে তাড়িত করেছে। তাই তিনি লিখলেন ‘কেউ কথা রাখেনি।’ কবিতার কিছু অংশে কল্পনার সংমিশ্রন থাকলেও পুরো কবিতাটিই বাস্তবতার আলোকে লেখা। কবিতায় বোষ্টুমীর প্রসঙ্গ কাল্পনিক হলেও অবাস্তব নয়। কবি ১৯৩৪ সালে ৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রামের নানা বাড়িতে। তখন পৈতৃক নিবাস কালকিনির মাইজপাড়ায়। সম্ভবত ১০-১১ বছর বয়সে অর্থাৎ দেশভাগের আগেই পরিবারের সাথে চলে যান কলকাতা। তবু তিনি ভুলতে পারেননি শৈশবের স্মৃতি।
কবি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ‘পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায়’ থেকেছেন। সে সময় মনে হয়েছে তার মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী তাকে বলেছিল,‘বড় হও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি/ তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাব’। তিন প্রহরের বিলে সাপ আর ভ্রমরের প্রসঙ্গ এলে কবি মুচকি হেসে বললেন, তখন আমি ছোট ছিলাম। মামারা যখন নৌকা নিয়ে বিলে যেত। তখন আমিও বায়না ধরতাম। কিন্তু মামারা নিতেন না। ছোট্ট সুনীলকে ভয় দেখানোর জন্য বলতেন, সে বিলে যেতে- আসতে তিন প্রহর লেগে যায়। আর সেখানে ভয়ঙ্কর সাপ রয়েছে। সেই বোধ থেকেই বিলের নাম দেই তিন প্রহরের বিল। আর সাপ আর ভ্রমরের খেলাটা বাচ্চাদের ভয় দেখানোর জন্য বলা। এসময় আ জ ম কামাল অভিযোগ করে বললেন, কবি কবিতায় আপনি মুসলমানদের ছোট করেছেন। একটি মাত্র চরিত্র তাও আবার মাঝি। কবি তখনও হাসলেন। বললেন, তখন মুসলমানরা এখনকার মতো এতো সচেতন ছিলো না। আমি তাদের ছোট করিনি বরং তাদের পশ্চাৎপদতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তখনও মুসলমানরা শিক্ষাদীক্ষায় অনেক পিছিয়ে ছিল। মামাবাড়ির আশপাশের মুসলমানরা হিন্দু জমিদারদের বাড়ির কামলা খাটত বা নৌকা বেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।
কবিরা আর্থিকভাবে অতটা স্বচ্ছল ছিলেন না। মার্বেল খেলার জন্য একটা রয়্যালগুলিও তিনি কিনতে পারেননি। তখন মাইজপাড়ার লস্কররা খুবই বিত্তবান ছিলেন। লস্কর বাড়ির ছেলেদের লাঠি লজেন্স খেতে দেখে কবি বাবার কাছে বায়না ধরতেন। বাবা বলতেন, পরে কিনে দেব। কবি অপেক্ষায় থেকেছেন। বাবা স্কুল মাস্টার। বেতন কম। তাই তার মা কবিকে বলতেন, জীবনে অন্য কিছু করবে তবু মাস্টারি করবে না। তাই কবি কখনো মাস্টারি করতে যাননি।
রাস উৎসব প্রসঙ্গে কবি বললেন, তিনি ছেলেবেলায় খুব ডানপিটে স্বভাবের ছিলেন। তাদের গাঙ্গুলি বাড়িতে যখন রাস উৎসব হতো তখন ভেতর বাড়িতে মহিলারা নাচ-গান করতেন। কবি তার ব্যাঘাত ঘটাবেন বলে তাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হতোনা। নিচেকে অসহায় কল্পনা করে কবি এমন অভিব্যক্তি করেছেন। কবি তখন ভাবতেন, একদিন আমিও সব পাব। রয়্যাল গুলি, লাঠি লজেন্স আর রাস উৎসব সবই তিনি পেয়েছেন। কিন্তু তার বাবা এসব কিছুই দেখে যেতে পারেননি। আজ সুনীলের সব আছে কিন্তু তার স্কুলমাস্টার বাবা নেই। এই শূন্যতা তাকে বারবার গ্রাস করেছে।
কবিকে যখন বরুণা প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলো; কবি তখন মুচকি হেসে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেন। তখন কবির সঙ্গে তার স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন। কবি শুধু এইটুকু বললেন, এটা কল্পনা। বরুণা বলে কেউ ছিলনা। তবে পরে আমরা জেনেছি, কবির এক বন্ধুর বোনের প্রতি কবির দূর্বলতা বা ভালোবাসা জন্মেছিল। কবি তার কোন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সে সময়ে একমাত্র বন্ধুর সুবাদে কেবল বন্ধুর বোনের সাথেই কথা বলার বা ভাববিনিময়ের সুযোগ ছিল। হয়ত বরুণা তার কল্পনার নারী।
কবি সবশেষে কুমার লাভলুকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন। আচ্ছা, তুই কি নাস্তিক হতে পেরেছিস? কুমার লাভলু বলল, ভয় পাই। পূর্ব পুরুষের ধর্ম ত্যাগ করি কিভাবে? কবি বললেন,‘আস্তিক হওয়া খুব সহজ; কিন্তু নাস্তিক হওয়া বড়ই কঠিন।’ কথাটায় হাস্যরসাত্মক পরিবেশটা হঠাৎ গুরুগম্ভীর হয়ে উঠলো।
৭৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে কবি এসেছিলেন তার জন্মভিটায়। এটা কবির জন্য যতটা আনন্দের; মাদারীপুরবাসীর জন্য ততটা গর্বের। তিন দিন অবস্থান করে কবি আবার চলে গেলেন তার গড়িহাটির পারিজাতে। রেখে গেলেন স্মৃতি। অকৃত্রিম ভালোবাসা আর দেশভাগের বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে সৌহার্দের মিলনরেখা। কিন্তু সব ছেড়েই তাকে চলে যেতে হলো ২২ অক্টোবর। পড়ে রইল পারিজাত। পড়ে রইল জন্মভিটার সুনীল আকাশ। কেউ কথা না রাখলেও আমরা আগলে রেখেছি তার সুনীল আকাশ সাহিত্য চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র এবং সুনীল সাহিত্য পুরস্কার।
এখন মনে হচ্ছে মাদারীপুরে প্রবর্তিত সুনীল সাহিত্য পুরস্কারকে জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। তবেই হয়তো কবির কথা না রাখার দীনতা ঘুচাতে পারবো। কবি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তার কর্মে। কবি বেঁচে থাকবেন আমাদের মর্মে। আমাদের চিন্তা-চেতনায়, আমাদের উপলব্ধিতে। তিনি বেঁচে থাকবেন চিরদিন চিরকাল।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
কালকিনি, মাদারীপুর।