সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
রাত তিনটায় একটি অনলাইন পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে চোখ আটকে গেল। কৌতুহল নিয়ে পড়ে জানলাম, মালালার ঘটনা না কি পুরোটাই সাজানো নাটক। আসলে কোনটা বিশ্বাস করবো? মালালার ঘটনা একটা সাজানো নাটক; পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ডনের ব্লগে এমন দাবি করা হয়েছে।
অনলাইন পত্রিকাটি বলছে, নারীশিক্ষার পক্ষে কলাম ধরায় পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় গত বছর ৯ অক্টোবর মালালা ইউসুফজাইর ওপর হামলা চালায় তালেবান। গুলি লাগে মালালার মুখ আর মাথায়। সে সময় সঙ্গে থাকা আরো তিনজন আহত হন। এরপর গণমাধ্যমের 'কল্যাণে' স্কুলপড়ুয়া মালালা মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি। প্রথমে পাকিস্তান এবং পরে ইংল্যান্ডে কয়েক মাসের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এত কিছুর পরও ১৫ বছরের মালালা নারীশিক্ষার পক্ষে অনড় থাকার ঘোষণা দেন। মালালা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, হাজারো বাধা টপকাতে তিনি প্রস্তুত। জঙ্গি হামলার ভয়ে মালালা বর্তমানে ব্রিটেনেই থাকছেন। এবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাঁর নামটাই ছিল প্রত্যাশার শীর্ষে। যদিও শেষমেষ পুরস্কার তিনি পান নি। আর সে পুরস্কার না পাওয়ার আলোচনা শেষ হতে না হতেই 'বোমা' ফাটালেন পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ডনের ব্লগ।
ডন পত্রিকা ও অনলাইনের জ্যেষ্ঠ কলামিস্ট নাদিম ফারুক পারাচা ব্লগে দাবি করছেন, কাহিনী আগেই লেখা ছিল, মালালা সে অনুযায়ি অভিনয় করেছে মাত্র। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও পশ্চিমা বিশ্ব না কি এ নাটক সাজিয়েছে। যা গত ১০ অক্টোবর পাকিস্তান সময় বিকাল ৪টা ৪৭ মিনিটে দ্য ডনের ব্লগে আপডেটসহ প্রকাশ করা হয়। পরে অবশ্য ১১ অক্টোবর শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিটে আপডেট দিয়ে জানানো হয়, ব্লগের লেখাটি ব্যঙ্গাত্মক ও কল্পকাহিনী। কিন্তু ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সারাবিশ্বে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা ঝড় শুরু হয়ে যায়।
ব্লগে বলা হয়েছে, মালালার ঘটনা সারাবিশ্ব যা জেনেছে তা ভুল। আসল ঘটনা একেবারে উল্টো। লেখক ফারুক বলছেন, মালালার বিষয়টি নিয়ে এ বছরের এপ্রিল মাসে ডনের একটি দক্ষ প্রতিবেদক দল সোয়াত এলাকায় গভীর অনুসন্ধান চালিয়েছে। তারা পাঁচ মাসের অনুসন্ধানে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মত তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন। মালালা মূলত সোয়াতে জন্মগ্রহণ করে নি, এমনকি সে পশতুনও নয়। সোয়াতের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ইমতিয়াজ আলী খানজাই ডনের প্রতিবেদককে না কি জানিয়েছেন, তার কাছে মালালার ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আছে। যা প্রমাণ করে মালালা পশতুন নয়। রিপোর্টটি দেখিয়ে তিনি জানান, তিনি মালালার ডিএনএ সংগ্রহ করেছেন। যখন তিনি মালালার ডিএনএ সংগ্রহ করেছেন; তখন মালালা শিশু ছিল। সে সময় মালালার কানের সমস্যা নিয়ে তার কাছে এসেছিল।
ডাক্তার ডিএনএ পরীক্ষায় দেখেন, মালালা আসলে ককেশীয়। ধারণা করা হচ্ছে- মালালা পোল্যান্ড থেকে এসেছে। এরপর তিনি মালালার বাবাকে ডেকে পাঠান। তখন তিনি মালালার বাবাকে বলেন, আমি মালালার আসল পরিচয় জানি। এ কথা শুনে মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই ঘাবড়ে যান। তিনি বলেন, এ কথা আমি যেন প্রকাশ না করি। আমি তাকে বলি, আপনি যদি সত্য ঘটনা খুলে বলেন তবে কাউকে বলব না। মালালার বাবা তখন ডাক্তারকে বলেন, মালালার প্রকৃত নাম হচ্ছে জেইন। ১৯৯৭ সালে সে হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেছে। তার প্রকৃত বাবা-মা খ্রিস্টান মিশনারিতে ছিলেন। তারা ২০০২ সালে সোয়াতে বেড়াতে এসেছিলেন এবং মালালাকে উপহার হিসেবে তার কাছে দিয়ে যান। ওই সময় তারা গোপনে খ্রিস্টান ধর্মগ্রহণ করেন।
এ সময় ডনের প্রতিবেদক ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন তিনি মালালার আসল পরিচয় এখন প্রকাশ করছেন। তখন ডাক্তার বলেন,‘তিনি মনে করেন মালালাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে দাঁড় করানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে পাঠানো হয়েছিল।’ এমনকি গুলিবর্ষণকারির ডিএনএ পরীক্ষা করেও ডাক্তার আবিষ্কার করেন যে, সে ইতালি থেকে এসেছে। ডাক্তার বলেন, আমি ২০১২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এ বিষয়গুলো জানিয়ে ই-মেইল করি। এর কয়েকদিন পর তার ক্লিনিকে পুলিশ অভিযান চালায়। তার কয়েকজন কর্মচারীকে সে সময় নির্যাতনও করা হয়েছিল। তিনি জানান, এ বছরের জুন মাসে ডাক্তার আইএসআই’র একজন তরুণ কর্মকর্তার কাছে যান। তখন ওই কর্মকর্তা ক্লিনিকে এমন অভিযানের জন্য তার কাছে ক্ষমা চান।
অফিসার ডাক্তারকে বলেন, আইএসআই মালালার আসল পরিচয়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক অবস্থানে আছে। অনেক অনুরোধের পর ডাক্তার ওই আইএসআই অফিসারের মুঠোফোনর নাম্বার দেন। এরপর সেই ডাক্তার আইএসআই অফিসারের নম্বর দেন ডনের এ প্রতিবেদককে। ডনের প্রতিবেদকের সাথে অফিসার দেখা করেন সোয়াতের একটি পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ে। আইএসআই’র সেই অফিসার ডনের প্রতিবেদককে জানান, মালালার ওপর হামলার ঘটনা পাতানো হয়েছিল গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পথ পরিষ্কার করতে পুরো ঘটনাটি পাকিস্তান ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সাজানো হয়েছিল। অফিসার জানান,‘এটা একটা নাটক। পাকিস্তান সেনাবাহিনী উত্তর ওয়াজিরিস্তান আক্রমণের একটি অজুহাত দাঁড় করানোর জন্য এটি মঞ্চস্থ করেছিল।’
তার দেওয়া তথ্য মতে, ১ অক্টোবর ১৯৯৭ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে হাঙ্গেরিয়ান বাবা-মায়ের ঘরে মালালার জন্ম । তার নাম রাখা হয় জেইন। ২০০২ সালের ৪ অক্টোবর তার বাবা-মা সিআই’র সাথে যুক্ত হন। তাদের একটি সংক্ষিপ্ত সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ২০০৩ সালের ৭ অক্টোবর তারা পাকিস্তানে প্রবেশ করেন এবং সোয়াতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ শুরু করেন। সে সময় তারা আইএসআই’র একজন নিু শ্রেণির এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি পুরো পরিবারকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করেন। তারা জেইনকে তার কাছে রেখে যান। পরবর্তীতে ওই এজেন্ট জেইনের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মালালা। ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর মালালা ব্লগে লেখা শুরু করেন এবং সেখানে তিনি সোয়াতের জঙ্গিদের অস্ত্রবাজি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। ২০১১ সালের ২১ অক্টোবর জঙ্গিরা তাকে আনুরোধ করে এ ধরণের ব্লগ না লিখতে। ২০১২ সালের ১ অক্টোবর সিআইএ নিউইয়র্কে বসবাসকারী ইতালিয় বংশোদ্ভুত রবার্ট নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করে। এবং নিয়োগের পর তাকে গুলি চালানোর ওপর স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর সিআইএ মালালার ওপর মিথ্যা গুলিবর্ষণের জন্য আইএসআই’র সাথে পরিকল্পনার ব্যাপারে আলোচনা করে এবং বিষয়টি মালালা ও তার পরিবারকে অবগত করা হয়। ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর রবার্ট সোয়াত এলাকায় প্রবেশ করে উজবেক বলে পরিচয় দেয়।
সবশেষে ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর রবার্টকে গুলিহীন একটি বন্দুক সরবারহ করা হয়। বন্দুকধারী মালালার ওপর মিথ্যা গুলি চালায়। এ সময় মালালা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার অভিনয় করে। মালালার কাছে আগে থেকে টমেটোর সস রাখা ছিলো যা সে শরীর ও মুখে মেখে নেয়। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি অ্যাম্বুলেন্সও সেখানে পৌঁছায় এবং মালালাকে নিয়ে যায়। এরপর পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সারাবিশ্বে প্রচার করতে থাকে যে, মালালাকে তালেবান জঙ্গিরা গুলি করেছে।
এই কথাগুলো যদি সত্য ঘটনা হয়, তাহলে কত বড় ধোঁকা দেওয়া হলো সারা বিশ্বকে। তা আর ভাববার অবকাশ রাখেনা। তাই যদি হয় তাহলে এর জবাব দেবে কারা? তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়। আসলে কোনটা সত্য? ডনের প্রতিবেদন না কি মালালার ওপর ঘটে যাওয়া কাহিনী। মালালাকে নিয়ে সারা বিশ্ব যখন মুখর; তখন এমন একটা সংবাদ মানুষকে ভড়কে দেবে। এটাই স্বাভাবিক। এদিকে আবার বাংলাদেশের অন্য একটি অনলাইনের বার্তা সম্পাদক আমাকে বললেন, ঘটনা ভূয়া। মালালা ঠিক আছে। পাকিস্তানের ্ওই দৈনিক একটি স্যাটায়ার লিখেছে। সেটাকে না বুঝে বাংলাদেশের অনেক পত্রিকা নিউজ করেছে। এখন আমরা পাঠক সমাজ কী করবো? কী আর করার? আছি শুধু সময়ের অপেক্ষায়। সত্য একদিন বেরিয়ে আসবেই। আজ অথবা কাল। সে অপেক্ষাতেই রইলাম।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
রাত তিনটায় একটি অনলাইন পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে চোখ আটকে গেল। কৌতুহল নিয়ে পড়ে জানলাম, মালালার ঘটনা না কি পুরোটাই সাজানো নাটক। আসলে কোনটা বিশ্বাস করবো? মালালার ঘটনা একটা সাজানো নাটক; পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ডনের ব্লগে এমন দাবি করা হয়েছে।
অনলাইন পত্রিকাটি বলছে, নারীশিক্ষার পক্ষে কলাম ধরায় পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় গত বছর ৯ অক্টোবর মালালা ইউসুফজাইর ওপর হামলা চালায় তালেবান। গুলি লাগে মালালার মুখ আর মাথায়। সে সময় সঙ্গে থাকা আরো তিনজন আহত হন। এরপর গণমাধ্যমের 'কল্যাণে' স্কুলপড়ুয়া মালালা মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি। প্রথমে পাকিস্তান এবং পরে ইংল্যান্ডে কয়েক মাসের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এত কিছুর পরও ১৫ বছরের মালালা নারীশিক্ষার পক্ষে অনড় থাকার ঘোষণা দেন। মালালা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, হাজারো বাধা টপকাতে তিনি প্রস্তুত। জঙ্গি হামলার ভয়ে মালালা বর্তমানে ব্রিটেনেই থাকছেন। এবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাঁর নামটাই ছিল প্রত্যাশার শীর্ষে। যদিও শেষমেষ পুরস্কার তিনি পান নি। আর সে পুরস্কার না পাওয়ার আলোচনা শেষ হতে না হতেই 'বোমা' ফাটালেন পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ডনের ব্লগ।
ডন পত্রিকা ও অনলাইনের জ্যেষ্ঠ কলামিস্ট নাদিম ফারুক পারাচা ব্লগে দাবি করছেন, কাহিনী আগেই লেখা ছিল, মালালা সে অনুযায়ি অভিনয় করেছে মাত্র। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও পশ্চিমা বিশ্ব না কি এ নাটক সাজিয়েছে। যা গত ১০ অক্টোবর পাকিস্তান সময় বিকাল ৪টা ৪৭ মিনিটে দ্য ডনের ব্লগে আপডেটসহ প্রকাশ করা হয়। পরে অবশ্য ১১ অক্টোবর শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিটে আপডেট দিয়ে জানানো হয়, ব্লগের লেখাটি ব্যঙ্গাত্মক ও কল্পকাহিনী। কিন্তু ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সারাবিশ্বে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা ঝড় শুরু হয়ে যায়।
ব্লগে বলা হয়েছে, মালালার ঘটনা সারাবিশ্ব যা জেনেছে তা ভুল। আসল ঘটনা একেবারে উল্টো। লেখক ফারুক বলছেন, মালালার বিষয়টি নিয়ে এ বছরের এপ্রিল মাসে ডনের একটি দক্ষ প্রতিবেদক দল সোয়াত এলাকায় গভীর অনুসন্ধান চালিয়েছে। তারা পাঁচ মাসের অনুসন্ধানে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মত তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন। মালালা মূলত সোয়াতে জন্মগ্রহণ করে নি, এমনকি সে পশতুনও নয়। সোয়াতের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ইমতিয়াজ আলী খানজাই ডনের প্রতিবেদককে না কি জানিয়েছেন, তার কাছে মালালার ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আছে। যা প্রমাণ করে মালালা পশতুন নয়। রিপোর্টটি দেখিয়ে তিনি জানান, তিনি মালালার ডিএনএ সংগ্রহ করেছেন। যখন তিনি মালালার ডিএনএ সংগ্রহ করেছেন; তখন মালালা শিশু ছিল। সে সময় মালালার কানের সমস্যা নিয়ে তার কাছে এসেছিল।
ডাক্তার ডিএনএ পরীক্ষায় দেখেন, মালালা আসলে ককেশীয়। ধারণা করা হচ্ছে- মালালা পোল্যান্ড থেকে এসেছে। এরপর তিনি মালালার বাবাকে ডেকে পাঠান। তখন তিনি মালালার বাবাকে বলেন, আমি মালালার আসল পরিচয় জানি। এ কথা শুনে মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই ঘাবড়ে যান। তিনি বলেন, এ কথা আমি যেন প্রকাশ না করি। আমি তাকে বলি, আপনি যদি সত্য ঘটনা খুলে বলেন তবে কাউকে বলব না। মালালার বাবা তখন ডাক্তারকে বলেন, মালালার প্রকৃত নাম হচ্ছে জেইন। ১৯৯৭ সালে সে হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেছে। তার প্রকৃত বাবা-মা খ্রিস্টান মিশনারিতে ছিলেন। তারা ২০০২ সালে সোয়াতে বেড়াতে এসেছিলেন এবং মালালাকে উপহার হিসেবে তার কাছে দিয়ে যান। ওই সময় তারা গোপনে খ্রিস্টান ধর্মগ্রহণ করেন।
এ সময় ডনের প্রতিবেদক ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন তিনি মালালার আসল পরিচয় এখন প্রকাশ করছেন। তখন ডাক্তার বলেন,‘তিনি মনে করেন মালালাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে দাঁড় করানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে পাঠানো হয়েছিল।’ এমনকি গুলিবর্ষণকারির ডিএনএ পরীক্ষা করেও ডাক্তার আবিষ্কার করেন যে, সে ইতালি থেকে এসেছে। ডাক্তার বলেন, আমি ২০১২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এ বিষয়গুলো জানিয়ে ই-মেইল করি। এর কয়েকদিন পর তার ক্লিনিকে পুলিশ অভিযান চালায়। তার কয়েকজন কর্মচারীকে সে সময় নির্যাতনও করা হয়েছিল। তিনি জানান, এ বছরের জুন মাসে ডাক্তার আইএসআই’র একজন তরুণ কর্মকর্তার কাছে যান। তখন ওই কর্মকর্তা ক্লিনিকে এমন অভিযানের জন্য তার কাছে ক্ষমা চান।
অফিসার ডাক্তারকে বলেন, আইএসআই মালালার আসল পরিচয়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক অবস্থানে আছে। অনেক অনুরোধের পর ডাক্তার ওই আইএসআই অফিসারের মুঠোফোনর নাম্বার দেন। এরপর সেই ডাক্তার আইএসআই অফিসারের নম্বর দেন ডনের এ প্রতিবেদককে। ডনের প্রতিবেদকের সাথে অফিসার দেখা করেন সোয়াতের একটি পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ে। আইএসআই’র সেই অফিসার ডনের প্রতিবেদককে জানান, মালালার ওপর হামলার ঘটনা পাতানো হয়েছিল গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পথ পরিষ্কার করতে পুরো ঘটনাটি পাকিস্তান ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সাজানো হয়েছিল। অফিসার জানান,‘এটা একটা নাটক। পাকিস্তান সেনাবাহিনী উত্তর ওয়াজিরিস্তান আক্রমণের একটি অজুহাত দাঁড় করানোর জন্য এটি মঞ্চস্থ করেছিল।’
তার দেওয়া তথ্য মতে, ১ অক্টোবর ১৯৯৭ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে হাঙ্গেরিয়ান বাবা-মায়ের ঘরে মালালার জন্ম । তার নাম রাখা হয় জেইন। ২০০২ সালের ৪ অক্টোবর তার বাবা-মা সিআই’র সাথে যুক্ত হন। তাদের একটি সংক্ষিপ্ত সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ২০০৩ সালের ৭ অক্টোবর তারা পাকিস্তানে প্রবেশ করেন এবং সোয়াতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ শুরু করেন। সে সময় তারা আইএসআই’র একজন নিু শ্রেণির এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি পুরো পরিবারকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করেন। তারা জেইনকে তার কাছে রেখে যান। পরবর্তীতে ওই এজেন্ট জেইনের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মালালা। ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর মালালা ব্লগে লেখা শুরু করেন এবং সেখানে তিনি সোয়াতের জঙ্গিদের অস্ত্রবাজি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। ২০১১ সালের ২১ অক্টোবর জঙ্গিরা তাকে আনুরোধ করে এ ধরণের ব্লগ না লিখতে। ২০১২ সালের ১ অক্টোবর সিআইএ নিউইয়র্কে বসবাসকারী ইতালিয় বংশোদ্ভুত রবার্ট নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করে। এবং নিয়োগের পর তাকে গুলি চালানোর ওপর স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর সিআইএ মালালার ওপর মিথ্যা গুলিবর্ষণের জন্য আইএসআই’র সাথে পরিকল্পনার ব্যাপারে আলোচনা করে এবং বিষয়টি মালালা ও তার পরিবারকে অবগত করা হয়। ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর রবার্ট সোয়াত এলাকায় প্রবেশ করে উজবেক বলে পরিচয় দেয়।
সবশেষে ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর রবার্টকে গুলিহীন একটি বন্দুক সরবারহ করা হয়। বন্দুকধারী মালালার ওপর মিথ্যা গুলি চালায়। এ সময় মালালা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার অভিনয় করে। মালালার কাছে আগে থেকে টমেটোর সস রাখা ছিলো যা সে শরীর ও মুখে মেখে নেয়। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি অ্যাম্বুলেন্সও সেখানে পৌঁছায় এবং মালালাকে নিয়ে যায়। এরপর পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সারাবিশ্বে প্রচার করতে থাকে যে, মালালাকে তালেবান জঙ্গিরা গুলি করেছে।
এই কথাগুলো যদি সত্য ঘটনা হয়, তাহলে কত বড় ধোঁকা দেওয়া হলো সারা বিশ্বকে। তা আর ভাববার অবকাশ রাখেনা। তাই যদি হয় তাহলে এর জবাব দেবে কারা? তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়। আসলে কোনটা সত্য? ডনের প্রতিবেদন না কি মালালার ওপর ঘটে যাওয়া কাহিনী। মালালাকে নিয়ে সারা বিশ্ব যখন মুখর; তখন এমন একটা সংবাদ মানুষকে ভড়কে দেবে। এটাই স্বাভাবিক। এদিকে আবার বাংলাদেশের অন্য একটি অনলাইনের বার্তা সম্পাদক আমাকে বললেন, ঘটনা ভূয়া। মালালা ঠিক আছে। পাকিস্তানের ্ওই দৈনিক একটি স্যাটায়ার লিখেছে। সেটাকে না বুঝে বাংলাদেশের অনেক পত্রিকা নিউজ করেছে। এখন আমরা পাঠক সমাজ কী করবো? কী আর করার? আছি শুধু সময়ের অপেক্ষায়। সত্য একদিন বেরিয়ে আসবেই। আজ অথবা কাল। সে অপেক্ষাতেই রইলাম।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনকবি! এতোদিন আমিও দ্বিধা-দ্বন্দে ছিলাম। কয়েকদিন যাবত পত্রিকা খুলে হঠাৎই দেখি ‘মালালা হতে চায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট’, ‘মালালার ওপর জঙ্গী আক্রমণ’সহ নানা ধরনের চক্রান্তমূলক শিরোনাম। যা দেখে সরলমনা যে কেউই ভড়কে যাবেন। আমিও তেমনি ভড়কে গিয়েছিলাম। তবে মনে মনে ভাবছিলাম, নিশ্চয়ই এর পেছনে ইহুদি-খ্রিস্টান কিংবা অন্য কারোর হাত রয়েছে; যাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ইসলাম ও মুসলমানের অপপ্রচার করা এবং বিশ্ববাসীর কাছে তাদেরকে ঘৃণ্যরূপে পরিচিত করা। আপনার এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে অনেকটাই আশ্বস্ত হতে পারলাম। ধন্যবাদ সত্যটা প্রকাশের জন্য।
উত্তরমুছুন