শুক্রবার, ২৪ আগস্ট, ২০১২

শিশুতোষ মঞ্চ নাটক: উভয় সঙ্কট

রচনা- সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, 
পরিচালক, প্রথমা রঙ্গমঞ্চ, কালকিনি।
আলাপ- ০১৭২৫৪৩০৭৬৩, ০১৮২৯৭৬৭২৫৮
প্রযোজনা- ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ,কালকিনি এডিপি।
পরিবেশনা- শিশু ফোরাম, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ,কালকিনি এডিপি।
চরিত্র: অভি,রনি,নুসরাত,জাকির,রাজিয়া,পুলিশ,আকাশ ও আফিয়া
প্রথম দৃশ্য:
রাস্তায় অভি ও রনি দাঁড়িয়ে আছে। কারো জন্য অপো। এদিক ওদিক তাকায়। এমন সময় নুসরাতের আগমন।
অভি: দোস্ত, ওই যে তোর পেয়ারের নুসরাত আইতাছে।
রনি: কই, কই?
অভি: আরে ওইযে, দ্যাক্ চাইয়া।
রনি: ইয়েস, তাইতো। কিন্তু মাইয়ারতো অনেক দেমাগ। মা মারা মাইয়া, কেবল কাস নাইনে পড়ে। তাতেই ভাব কত দ্যাকছোস?
অভি: হ্যা, লাইনে আনতে সময় লাগবো। ছোট মানুষতো। তাছাড়া তোর তো আবার রেকর্ড ভালো না। (কাছাকাছি আসলে গতিরোধ করে)
অভি: দাড়াও নুসরাত, রনি তোমারে যা কইছে তার উত্তর দিয়া যাও।
নুসরাত: আমি তার সাথে কথা বলতে রাজি নই। আমিতো আগেই বলেছি আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। তাহলে বাবার কাছে বলতে বাধ্য হব।
রনি: ডিস্টার্ব, কিসের ডিস্টার্ব। আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। এতে বাবার কাছে বলার কি আছে?
নুসরাত: দ্যাখ তোমরা ডিস্টার্ব কর বলে এই অল্প বয়সে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মেয়ে বলে কি এ সমাজে আমাদের কোন অধিকার নাই।
রনি: আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
নুসরাত: অসম্ভব। তোমার মতো একটা বখাটেকে বিয়ে করবো আমি। মরে গেলেও না। তোমার জন্য তায়েবা আত্মহত্যা করেছে। তুমি জেল খেটেছো। জেল থেকে বের হয়ে আমার পিছু নিয়েছ। আর এখনোতো আমার বিয়ের বয়সই হয়নি।
রনি: তোমাকে পেলে আমি ভালো হয়ে যাব।
নুসরাত: যে ভালো হবার সে এমনিতেই হয়। আমার পথ ছাড়ো। বাবা আামার জন্য বসে অছে।
রনি: তুমি আমার সাথে চল। আমি আজ তোমাকে নিয়ে যাব। (হাত ধরে)
নুসরাত: অসম্ভব। ( থাপ্পড় দেয়) (নুসরাতের প্রস্থান)
রনি: (গালে হাত দিয়ে) আমি তোকে দেখে নেব শালি। তোর জীবন আমি তছনছ করে দেব। তোর সংসারে আগুন লাগিয়ে দেব। হু.. কত বড় সাহস, রনির গায়ে হাত তোলে।
অভি: আমি জানতাম, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না, আঙুল একটু বাকা করতে হবে। চল, একদিন না একদিন এর খেসারাত ওকে দিতে হবে। রাজিয়ার সাথে কথা বলে প্ল্যান করতে হবে। আর সুযোগের অপোয় থাকতে হবে। (প্রস্থান)

দ্বিতীয় দৃশ্য:
নুসরাতের চুলের মুঠি ধরে নিয়ে আসে জাকির। ছুঁড়ে ফেলে দেয় মেঝেতে। নুসরাত উবু হয়ে কাঁদতে থাকে।
জাকির: ইকটু খানি মাইয়া তার আবার বড় বড় কথা। আমার টাকা চাই টাকা। টাকা কই? আনতে পারোস নাই। পারবি কেমনে? বাপের থাকলে তো। বিয়ার সময় তো বড় বড় কতা কইছিলো তোর বাপ।
নুসরাত: আর কত দিব। দিতে দিতে তো বাপজান জমি-জিরাত সব বেইচ্যা দিছে। আর পাইবো কই।
জাকির: টাকা কই পাইবো, তা আমি কি জানি। টাকা দিতে না পারলে সোজা বাপের বাড়ি চইলা যা। ( জাকিরের প্রস্থান)
নুসরাত: হ যামু, এই নরকের মধ্যে আর এক মুহূর্তও থাকমু না। ( নুসরাতের প্রস্থান।)
(রাস্তায় পূর্ব পরিচিত রাজিয়ার সাথে দেখা।)
রাজিয়া: কিরে নুসরাত তোর খবর কি?
নুসরাত: আপা আমার সব শ্যাষ অইয়া গেছে।
রাজিয়া: ক্যান কি অইছে?
নুসরাত: দ্যাহো আপা, বখাটে রনির ভয়ে বাজানে অল্প বয়সে বিয়া দিলো। লেখাপড়া বন্ধ অইলো। এহন আবার যৌতুকের কারণে আমার স্বামী বাড়ি থিকা বাইর কইরা দিলো। আামি এহন কি করুম আপা। আমারতো উভয় সঙ্কট।
রাজিয়া: ও তাই। যাক, তুমি কোন চিন্তা কইরো না। আচ্ছা চাকরি করবা তুমি?
নুসরাত: চাকরি? কেডা দিবো আমারে চাকরি।
রাজিয়া: সেই ব্যবস্থা আমি করুম। শোন, শহরে আমার পরিচিত একজন আছে। একটা এনজিওর জন্য কিছু মেয়ে চাইছিলো। দাড়াও ফোন দিয়া দেখি। (ফোন দেয়)
হ্যালো, দাদা আমি রাজিয়া। হ হ । একটা মেয়ে আছে।  হ হ । পারবো।  না না ।  কোন চিন্তা নাই। হ হ । আমি কাইল নিয়া আসবো। হ হ  । রাখি। ( ফোন রেখে)
হ কাজ হয়ে গেছে। তোমাকে নিয়ে কালকে যেতে বলেছে।
নুসরাত: এহন তাইলে আমি কই যামু। এইভাবে বাজানের কাছে যাইতে পারমু না।
রাজিয়া: আচ্ছা তাইলে চল আমার বাসায়।
নুসরাত: হ, তাইলে তোমার বাসাতেই চলো।
রাজিয়া: হ, খালি এক রাইতের ব্যাপার। সকালে তো তোওে নিয়া শহরেই চইলা যামু। তারপর নতুন জায়গা, নতুন চাকরি, নতুন দুনিয়া। (প্রস্থান)

তৃতীয় দৃশ্য:
নুসরাত ও রাজিয়া শহরে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হয়। এমন সময় পুলিশসহ আকাশ ও আফিয়ার আগমন। পুলিশ দেখে রাজিয়া পালাবার পথ খোঁজে। পুলিশ রাজিয়ার পথ আগলে দাঁড়ায়Ñ
পুলিশ: দাঁড়ান, আপনি রাজিয়া?
রাজিয়া: (এদিক ওদিক তাকিয়ে) ক্যান বলুন তো।
নুসরাত: হ্যা সার, ওনার নাম রাজিয়া। আমারে চাকরি দিব। আমারে নিয়া শহরে যাইব।
পুলিশ: (নুসরাতের উদ্দেশ্যে) ও আপনাকে মিথ্যা বলেছে। (রাজিয়ার উদ্দেশ্যে) রাজিয়া নারী ও শিশু পাচারের অভিযোগে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।
রাজিয়া: অফিসার আপনি ভুল করছেন।
পুলিশ: না সব প্রমাণ নিয়েই আমরা এসেছি। এর আগে আপনি পাঁচ জন নারী ও শিশুকে পাচার করেছেন। (আকাশকে উদ্দেশ্য করে) আকাশ তোমরা নুসরাতকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে ওর বাবাকে নিয়ে থানায় এসো। রাজিয়া আপনি থানায় চলুন। (প্রস্থান)
আকাশ: নুসরাত তুমি অনেক বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছ। রাজিয়া ভালো মেয়ে নয়। ও কাজ দেওয়ার কথা বলে মেয়েদেও নিয়ে বিক্রি কওে দেয়।
আফিয়া: হ্যা নুসরাত, আকাশ ঠিকই বলেছে। তোমার বিপদের কথা আমরা শুনেছি । তুমি চিন্তা করো না। আমারা তোমাকে ওয়ার্ল্ড ভিশনে নিয়ে যাব। আমাদের সাথে তুমিও কাজ করবে।
নুসরাত: ( আফিয়াকে জড়িয়ে ধরে) তোমরা আমাকে বাঁচাও। আমি বাঁচতে চাই। বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। অঅমি আমার অধিকার চাই।
আকাশ: সব হবে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ অবহেলিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে। শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে।
আফিয়া: সে সব পরে হবে। আগে চলো ওর বাবার কাছে যাই। তার কাছে সব ঘটনা খুলে বলে তাকে নিয়ে থানায় যেতে হবে। থানার কাজ শেষ হলে তাকে নিয়ে আমাদের অফিসে যাব।
আকাশ: হ্যা চল, (দর্শকের উদ্দেশ্যে) আপনারা শুনুন, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ শিশুদের পরিপূর্ণ জীবন গঠনের জন্য কাজ করে।
আফিয়া: আসুন, শিশু ফোরামে যুক্ত হোন। শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসুন।
সবাই: ‘আর সইব না অত্যাচার, ফিরিয়ে আনবো অধিকার।’
(সবাই ফ্রিজ)

বুধবার, ১৫ আগস্ট, ২০১২

জন্মভূমি

আশ্রাফুন নাহার

তোমার আমার জন্মভূমি
তোমার আমার মা,
তোমার আমার স্বপ্ন আশা
দুঃখ- বেদনা।
তোমার আমার মুখের হাসি
দু’চোখ ভরা জল,
এদেশ মোদের সুখের আকাশ
তারায় ঝলমল।
তোমার আমার রক্ত দেহের
বেঁচে থাকার শ্বাস,
জন্মভূমি বাংলা মোদের
বসন্তের আশ্বাস।

সাধারণ সম্পাদক, খেলাঘর আসর,
খাসের হাট শাখা, কালকিনি।

শীত আসবে উড়ন্ত পাখির ডানায়

হেনরী স্বপন

যে পাখিরা এলো পুচ্ছ নাড়িয়ে ডানায় ;
এরাই যে শীত খুঁজে এনেছে গরমকাল
থেকে বরফের চাক...

যেখানে কিছু পালক Ñফাটলে রেখেছি গুঁজে
কিছু বেখেয়ালে পুড়ে গেছে ;
গোপন মনিটরে আগুন ছিলো
নম্বরগুলো ঘেমে উঠলে
অবয়ব চিনে রাখা ভালো : ০১৭১-৪৫৩২৩৯...

হ্যাঁ... বলুন ; প্রচন্ড শীতের অতীত এখনো
মনে আছে ; লিখেই জানাবো...

এখনো খড়ের তাপ শুকোয় নি ;
নিুাঞ্চলে ডাকাত পড়বে বলেÑ ধানক্ষেতে
আজও জোয়ারের জল নামে...

হিংস্রতায় ভরা সাইবার গেমগুলো
ঘিরে আছে মৃত্যুকাল !
বিপন্ন শব্দের কুয়াশায় ; হিম গায়ে গরম পোশাকে

এতোবার রিং-টোন পাল্টালে ;
তবে- বুঝি ? শীত আসবে উড়ন্ত পাখির ডানায়।

১৩.১০.২০১০ ইং।

সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১২

আমি কোন জীবন পাব



সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

আমার একদিকে অনল
আমার অন্যদিকে সাগর
আমি কোন পথে যাব?

আমার এক হাতে গরল
আমার অন্য হাতে মরণ
আমি কোনটা বেছে নেব?

আমার এক পাশে কাঁটা
আমার অন্য পাশে নরক
আমি কোন দিকে যাব?

আমার এক পৃথিবী লাঞ্ছনার
আমার অন্য পৃথিবী হতাশার
আমি কোন পৃথিবী চাইব?

আমার এক জীবনে যৌনতা
আমার অন্য জীবনে ভালোবাসা
আমি কোন জীবন পাব?

বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১২

শ্রদ্ধাঞ্জলি:শিল্পী এস.এম সুলতান

আ. জ. ম কামাল:
কিছু কিছু মানুষ সমাজ সংস্কৃতি, জাতি তথা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে চলমান বিশ্বের সৃজন ধারায় কিছু অবদান রেখে যান যা আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে প্রকৃতির মতই øিগ্ধতায় অনুভবে অনুরণন তোলে। ত্যাগ আর সেবার সারল্যতায় সংস্কারের বেড়াজাল ভেঙ্গে ফুলের মত নির্মল শিশুদের থেকে শুরু করে দিন মান খেটে খাওয়া ফুটিয়ে তোলেন রঙ আর তুলির আলতো পরশে ক্যানভাসের পাতায়,ফুটিয়ে তোলে মানবতার আকুতিকে সংগ্রাম আর সহনশীল ভালবাসায় উদ্দীপ্ত চেতনার মধ্য দিয়ে। তেমনি একজন মানুষ একজন শিল্পী এস এম সুলতান।
আমার সাথে এ মহান শিল্পীর পরিচয় করিয়ে দেন গণসঙ্গীত শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীর। একুশে বই মেলায় গিয়েছিলাম আমার দুই বন্ধু তোফাজ্জেল হোসেন হিরু ও ফজলুর রহমান। আলমগীর ভাই বলেন সালাম কর। আমি তাই করলাম। কালো রংয়ের সালোয়ার, পাঞ্জাবী, ওড়না পড়া মেয়েদের মত মাথায় বড় চুল। আমার মধ্যে জানার ভীষণ আগ্রহ। ফকির ভাই বলেন, আমার পীর। পৃথিবীর বড় মাপের চিত্রশিল্পী। একা একা থাকেন। মাঝে মাঝে তার কাছে যেও। ভোলা মনের মানুষ। কিছু পরে মহিউদ্দিন ফারুকী, হাশেম খান, রফিকুন নবী, খ. ম. হাসান, শামীম শিকদার, কামরুল হাসানসহ আরো গুণীজন এলেন। আমরা সবাই তাদের কথা শুনছিলাম। এক ফাঁকে সালাম দিয়ে শিল্পীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এলাম।
তারপর থেকে রোজ একুশে বই মেলায় যেতাম সুলতান সাহেবের সাথে কথা বলতে, জানতে। মাঝে মাঝে তার বাসায় যেতাম। এস এম সুলতান সবার সাথে আপনি বলে কথা বলতেন। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক একবার বলেছিলেন,‘লাল মিয়া মানে এশিয়া’। জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, ‘এস এম সুলতানকে যে চিনবে সে এশিয়াকে চিনবে।’ চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান জ্বীদ্দশায় তার প্রতিভার স্বীকৃতি যে পাননি তা নয়। ১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ম্যান অব দ্যা ইয়ার অর্থাৎ বছরের শ্রেষ্ঠ মানব ঘোষণা করে। এ ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা কর্তৃক ম্যান অব এশিয়া সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৮১ সালে তাকে আর্টিস্ট ইন রেসিডেন্ট ঘোষণার মাধ্যমে সম্মানিত করে।
এস এম সুলতানের জন্ম ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল জেলার মাছিমদিয়া গ্রামে। বাবা রাজমিস্ত্রী মেছের আলী। বাবা তার নাম রাখেন লাল মিয়া।
৫ বছর বয়সে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৩ সালে লাল মিয়া ৫ম শ্রেণিতে পড়েন। সে সময় ড. শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় আসেন স্কুল পরিদর্শনে। লাল মিয়া তার একটি পোট্রেট এঁকে তাকে দেন, সবাই মুগ্ধ। পড়ার ফাঁকে বাবাকে সাহায্য করতেন তিনি। ১৯৩৮ সালে অজানার উদ্দ্যেশ্যে বেড়িয়ে পড়েন লাল মিয়া। বাড়ি তাকে ধরে রাখতে পারেনি। সোজা চলে এলেন কোলকাতায়। কোলকাতার ভবানীপুর রুবী স্টুডিওর মালিক ছিলেন তার স্কুলের শিক। কৃষ্ণনাথ ভট্টাচার্যের বাড়ি সেখান থেকে একদিন হাজির হন নড়াইল জমিদারদের কোলকাতার কাশিমপুরের বাড়িতে। জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় লাল মিয়াকে খুব ভালোবাসতেন, øেহ করতেন। তাকে জানালেন তিনি আর বাড়ি ফিরে যাবেন না। তিনি বলেন, জমিদার বাড়ির অরুণ রায়ের মতন শিল্পী হবেন। আর্ট কলেজে ভর্তি হতে মেট্রিক পাশ লাগে। লাল মিয়ার আগ্রহ দেখে অরুণ বাবু ব্যবস্থা করেন। ভর্তি পরীায় লাল মিয়া প্রথম হন। হৈচৈ পড়ে গেল কলেজে। কিন্তু কি হবে। মেট্রিক পাশ ছাড়া ভর্তি হওয়া যাবে না।
জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় এবং অরুণ রায় শহীদ সোহরাওযার্দীর কাছে গিযে ঘটনা বলেন। বিখ্যাত চিত্র সমালোচক শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর্ট কলেজের কার্যকরি কমিটির প্রভাবশালী সদস্য। তার অনুরোধে লাল মিয়াকে আর্ট কলেজে ভর্তি করে। লাল মিয়ার প্রতিভায় তার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে। তার দামী গাড়িতে করে মাছিমদিয়ার রাজমিস্ত্রীর ছেলে লাল মিয়া প্রতিদিন আর্ট কলেজে যাতায়াত করে।
সময় ১৯৩৮ সাল। জযনুল আবেদিন সে বছর আর্ট কলেজে শিক হিসাবে যোগদান করে। লাল মিয়া ও কামরুল হাসান সহপাঠী। শহীদ সোহরাওয়ার্দী লাল মিয়ার নাম রাখেন এস এম সুলতান। এ নামেই সে পৃথিবী জোড়া পরিচিতি লাভ করে। সুলতান প্রতিবছর প্রথম হন। কারো কাছে না বলে বেড়িয়ে পড়েন পথে। প্রথমে আগ্রা। পকেটে মাত্র চার আনা। তাজমহলে আসতেই চার আনা শেষ। দারুণ ুধা নিয়ে ছবি আঁকেন। তিনজন আমেরিকান সৈনিককে ছবি এঁকে দিতে হবে। তারা তাকে ১৫০টাকা দেন। সোজা গিয়ে ওঠেন বিসমিল্লাহ হোটেলে। এসময় ড. বি এম জহুরীর সাথে তার পরিচয় হয়। জহুরী তাকে চাকুরী করার অনুরোধ করেন। কাজ ছবি আঁকা। সুলতান রাজী হন এবং তার সাথে চলে যান।
চার মাস পর চলে আসেন দিল্লী। সেখানে এক শিল্পীর বাড়ি এক মাস থাকেন। তাদের সাথে আজমীর শরীফ আসেন। আজমীরে এক মাস থাকার পর তিনি চলে আসেন লাক্ষ্মৌতে। সেখান থেকে হিমালয়ের
 প্রতি হিল স্টেশনে পায়ে হেটে ঘুরে বেড়ান, দেখেন দেরাদুন কাগন জালি। লক্ষ্মৌ ছেড়ে আসেন সিমলা। সেখানে অনেক ছবি আঁকেন। সিমলায় বসে এক কানাডিয়ান মহিলার সাথে তার পরিচয় হয়। তার সহযোগিতায় সিমলা সেন্টার পিটার্স স্কুলে তার ছবির প্রদর্শনী হয়। উদ্বোধন করেন কাপুরতলার মহারাজ। প্রদর্শনীতে চার শত টাকার ছবি বিক্রি হয়। সেখান থেকে চলে আসেন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে। পরিচিত হন সেখানকার নবাব ফরিদ খানের সাথে। ফরিদ খান তার ভালো বন্ধু হয়েছিলেন। পরে চলে আসেন কাশ্মীরে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় করাচি এসে পরিচয় হয় কবি জসীম উদ্দীনের সাথে। এসময় শাকের আলী , শেখ আহমেদসহ আরো নামিদামি শিল্পীদের সাথে পরিচিত হন। এবং আর্ট কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। এস এম সুলতান করাচিতে প্রদর্শনী করেন। যা উদ্বোধন করেন ফিরোজ খান নুন। এরপর করাচী ুসিবধ হলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মিস ফাতেমা জিন্নাহ। টিকেট এক টাকা। প্রচুর লোক সমাগম হয়েছিল।
১৯৫০ সালে পাকিস্তান চিত্রশিল্পীদের মধ্য থেকে তাকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য মনোনিত করা হয়। তিনি ২০টি ছবি নিয়ে ১ জানুয়ারি আমেরিকা যান। আমেরিকা যাওয়ার আগে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কোথায় কোথায় যাবেন। তিনি জানান, শিশুদের স্কুল দেখতে যাবেন। আমেরিকার ওয়াশিংটন, বোস্টন,শিলানা, মিসিগান শহরে তার একক প্রদর্শনী হয়। আমেরিকা থেকে আসেন লন্ডনে। সেখানে তার একক ও যৌথ প্রদর্শনী হয়। ভিক্টোরিয়া ডুস্বি ডালি,পন, ব্র্যাক,ক্রীব’র মত বিখ্যাত শিল্পীদের সাথে তার ছবি সমমর্যাদায় প্রদর্শীত হয়।
এস এম সুলতানের আগে এশিয়া মহাদেশের এমন দুর্লভ সম্মান কোন চিত্রশিল্পী পান নি। লন্ডনের লিসার গ্যালারীর প্রদর্শনী শেষে ছবিগুলো গ্যালারীকে দান করে যান। ১৯৫৩ সালে তিনি দেশে ফেরেন। সরকার তাকে আর্ট কলেজের উপাধ্য পদের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন। জয়নুল আবেদিন তখন অধ্য। তিনি রাজী হলেন না। বিশ্বজয়ের মুকুট মাথায় নিয়ে তিনি চলে আসেন নড়াইল। ১৯৫৮ সালে সরকারি ভাবে বিশ শতাংশ জমিসহ একটি পুরাতন বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে তিনি ১৯৫৯ সালে ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। স্বরূপে স্বতন্ত্র এ মানুষটির হৃদয় জুড়ে ছিল প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা। চিত্রা নদীর তীরে তিনি গড়ে তুললেন এক তপোবন। বিভিন্ন জাতের বিচিত্র বৃরাজিতে পরিপূর্ণ এ তপোবনে প্রবেশ করলে মন ভরে যাবে।  এরপর গড়ে তোলেন চিড়িয়াখানা। এখানে বানর, হনুমান, ঘোড়া, খরগোশ, গিনিপিগ, বনবিড়াল, দেশি-বিদেশি কুকুর, জাতি সাপ ও নানান জাতের নানান রঙের পাখি রয়েছে। এ মহান শিল্পীর মৃত্যুর পর তার চিড়িযাখানার জীব-জন্তু সব ঢাকা চিড়িয়াখানায় নিযে যাওয়া হয়। লাল মিয়া সুন্দর সুরে বাঁশি বাজাতেন। গভীর রাতে জমিদার বাড়ির পুকুর ঘাটে বসে বাঁশি বাজাতেন। এলাকার লোকেরা বলেছে তার বাঁশির সুরের তালে তালে সাপ ফণা তুলতো।
১৯৫৯ সালে রফিকুন নবী ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হন। তিনি বলেন, অধ্য জয়নুল আবেদিন, কামরুর হাসান, শফি উদ্দিন আহমেদ চারুকলার চত্বরে জলসভায় বসা। তারা সবাই এক মহিলা অতিথির সাথে গল্প করছেন। মহিলা অতিথি আমাদের কাসের দিকে পিঠ করে বসা। মাথায় ঢেউ খেলানো কোকড়ানো চুল। পড়নে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি। ঠিক এগারটার দিকে স্যারদের সাথে অতিথি আমাদের কাসে আসে। আমরা সবাই চমকে উঠলাম। অতিথি মহিলা নন; সে একজন জ্বলজ্যান্ত পুরুষ মানুষ। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। হাতে বাঁশের বাঁশি। অধ্য সার পরিচয় করিয়ে দিলেনÑ নাম এস এম সুলতান। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকও এস এম সুলতানের বন্ধু ছিলেন। এস এম সুলতানের যক্ষ্মা হয়েছিল ৮০ সালের দিকে। ব্যাংককের সুমিতভেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়; ভালো হয়ে দেশে এলেন।
এস এম সুলতান সর্ববৃহৎ ক্যানভাসে ছবি এঁকেছেন। যার আয়তন ২০ বর্গফুট। নড়াইলের লাল মিয়া চির কুমার ছিলেন। আমি তাকে যত কাছ তেকে দেখেছি। তার কাছে থাকার সৌভাগ্য হয় আমার। আজ মনে হয়, আর বাঁশি বাজবেনা, ইঞ্জিনের নৌকা চলবেনা, কেউ জানতে চাইবে না, ডাক্তার আসবেনা,সাংবাদিক জানবে না, সবাইকে আড়ালে রেখে, জাতিকে ফাঁকি দিয়ে নড়াইলের চিত্রা নদীর পারের মাছিমদিয়া গ্রামের এস এম সুলতান (লাল মিয়া) ১০ অক্টোবর চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। ধন্য নড়াইলের মাটি, ধন্য চিত্রা নদী, ধন্য মাছিমদিয়া গ্রাম।

আ.জ.ম কামাল,
প্রশিক, নাটক বিভাগ
জেলা শিল্পকলা একাডেমী, মাদারীপুর।

রবিবার, ৫ আগস্ট, ২০১২

অস্থির বাতাসে নিভে যাচ্ছে শিক্ষাঙ্গনের জ্বলন্ত প্রদীপ

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
অস্থির হয়ে উঠছে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন। যা জাতির জন্য উদ্বেগজনক বিষয়। জাতির মেরুদন্ড আক্রান্ত হচ্ছে সন্ত্রাস,দলীয়করণ ও রাজনীতিসহ জঘন্যতম কর্মকান্ডে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সহিংসতায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। ফলে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে । মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে বাবা-মা সন্তানকে জ্ঞানের আলো অন্বেষণে পাঠান; তারা সর্বদাই উৎকন্ঠিত থাকেন অনাকাক্সিক্ষত কোন দুঃসংবাদের জন্য। অথচ শিক্ষাঙ্গন হওয়ার কথা পুষ্প সৌরভে সুরভিত। পাখির কুঞ্জন আর শিক্ষার্থীর পদভারে মুখরিত। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত শিক্ষাঙ্গন গোলাগুলি,মারধর আর ভাঙচুরের শব্দে অশান্ত হয়ে উঠছে।
নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার শুরু থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধীরে ধীরে রাজনীতি প্রবেশ করে। ফলে নষ্ট হতে থাকে শিক্ষার পরিবেশ। বাড়তে থাকে সহিংসতা, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, খুন ও জখমের মত অপ্রীতিকর ঘটনা। সহিংসতার অতল গহ্বরে ডুবতে থাকে শিক্ষাঙ্গন। ছাত্র-শিক্ষকদের নোংরা রাজনীতির রাহুগ্রাসে অস্থির হয়ে ওঠে সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। অবশ্য দলীয়করণ ও ছাত্ররাজনীতি এর জন্য দায়ি। সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পাশাপাশি শিক্ষকদের চক্রান্ত, রেষারেষি ও দায়িত্বহীনতাও কম দায়ি নয়। শিক্ষকরাও নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রিয় ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিতে। ছাত্ররা কী শিখছে, কেন শিখছে, কিভাবে শিখছে এ দিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ না থাকলেও নিজেদের কর্তৃত্ব বা অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে তারা সচেতন।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, কেবল মহাজোট সরকারের সাড়ে তিন বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৩ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র দু’জন ব্যক্তিগত কোন্দলে এবং বাকি ২১ জন নোংরা রাজনীতির শিকার। ২০০৯ সাল থেকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-শিবিরের পরস্পর দলীয় কোন্দল, হলদখল ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীফুজ্জামান নোমানী, ফারুক হোসেন, নসরুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বকর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাহিদ, মাসুদ বিন হাবিব, মহিউদ্দিন, হারুন অর রশীদ কায়সার, আসাদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবায়ের আহমেদ, ঢাকা মেডিকেল  কলেজের আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীব, সিলেট এমসি কলেজের পলাশ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের আবিদুর রহমান, রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের রেজানুল ইসলাম চৌধুরী, পাবনা টেক্সটাইল কলেজের মোস্তফা কামাল শান্ত ও সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহেল রানা নিহত হন।
এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সহিংসতায় জখম হন। তাদের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে ৫৪ জনকে। লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে ২৩ জনের।
চোখের সামনে শিক্ষাঙ্গনের অস্থির বাতাসে নিভে যাচ্ছে জ্বলন্ত প্রদীপগুলো। ধীরে ধীরে আঁধারে নিমজ্জিত হচ্ছে গোটা জাতি এবং কতগুলো পরিবারের আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠার আগেই দপ্ করে নিভে যাচ্ছে। জাতি হারাচ্ছে তার অমুল্য সম্পদ। এ অবস্থা থেকে উত্তরোণের পথ খোঁজে না কেউ। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জন্য তৈরি হয় না কোন নীতিমালা। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্বার্থেই তারা নেন না কোন পদক্ষেপ। শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেলে রাজনৈতিক দলগুলো নিঃস্ব হবার ভয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন দেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় মেধাবী সন্তানদের।
শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা নতুন কিছু না হলেও ইদানিং এর মাত্রাটা বেড়ে গেছে। সারাদেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত কলেজগুলোতে অস্থিতীশীল অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ হচ্ছে বিঘিœত। ভোগান্তিতে পড়ছে নিরীহ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেশ কয়েকটি কলেজ ও আটটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে চরম অশান্তি বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে কেবল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে সরিয়ে দেওযা ছাড়া অন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আদালতের রায়ে বুয়েটের আন্দোলন বন্ধ থাকলেও ভেতরে ভেতরে ফুঁসছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের কারণে বন্ধ হয়ে আছে বুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম। চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। বর্তমানে আদালতের রায়ে আন্দেলন বন্ধ থাকলেও ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য চাঁদার টাকা আদায়ের পর তা ভাগাভাগির জের ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের গোলাগুলি, বোমাবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনায় গত মাসে এক ছাত্র প্রাণ হারায়। এরপর থেকে স্বাভাবিক হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। ঢাকসু নির্বাচনের দাবিতে গত ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়। সে থেকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে যে কোন সময় ঢাবিতেও বড় ধরণের সংঘর্ষ ঘটতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির ফলে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে জগন্নাথ বিম্ববিদ্যালয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। ফলে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা করেজ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, ঢাকা কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা পলিটেকনিক কলেজসহ সারাদেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের কারণে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সর্বশেষ গত ২ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শিক্ষাঙ্গনের অস্থিরতা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা বলেছেন,‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের একটি প্রবণতাও তেরি হয়েছে।’ সাম্প্রতিককালে সরকারের দলীয়করণকে অস্থিরতার অন্যতম কারণ বলেও মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন,‘একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মতের লোকজন থাকবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি ঢালাওভাবে নিজ দলের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয় তাহলে এ সঙ্কট সহজেই কাটবে না।’
অন্যদিকে চলমান অস্থিরতাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন,‘বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এ ঘটানাগুলো দুঃখজনক। আমরা অস্থিরতা নিরসনে পদক্ষেপ নিয়েছি।’ এখন কথা হচ্ছে সব ঘটনারই তো পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু সে পদক্ষেপের পথ আর ফুরায় না। কাজের কাজ কিছুই হয় না। তবে শিক্ষাঙ্গনে নোংরা রাজনীতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করলেই কেবল সহিংসতা এড়ানো সম্ভব। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে রাজনীতির ঘাঁটিগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে দলমত নির্বিশেষে সকলকে। শিক্ষাঙ্গন রাখতে হবে রাজনীতির সব রকম প্রভাবমুক্ত। তবেই দূর হবে অস্থিরতা। শিক্ষার্থীরা পাবে তাদের কাক্সিক্ষত পরিবেশ। শিক্ষাঙ্গনের অস্থির বাতাসে আর নিভে যাবে না জ্বলন্ত প্রদীপ। জাতি পাবে তার মেধাবী সন্তান। উন্নতির চরম শিখরে উন্নীত হবে আমাদের প্রিয় স্বদেশ।

বৃহস্পতিবার, ২ আগস্ট, ২০১২

আলী ইদ্রিসের গুচ্ছ কবিতা

*এখানে বিকেল নামে

শরতের বিকেল নির্জণ নিশ্চুপ
মসৃন পাতার চকচকে পিঠ
সুর্য রূপালী রং ঢালে তরুশাখে
এখানে প্রেমিক হৃদয় শত সহস্র
স্বপ্ন আাঁকে প্রেয়সীর চোখে।
এখানে নিদাঘ আকাশ সুবোধ বালকের কায়া,
উঠোনের ঘাসে পড়ে বিকেলের ছায়া।
এখানে অপূর্ণ আশা ফোটে মেঘের সরোবরে,
একটি নয় দুটি নয় অজস্র স্বপ্ন ভাসে লতার ভীড়ে।
এখানে মাছরাঙ্গা ভালবেসে মাছরাঙ্গীর ঠোঁটে
তুলে দেয় প্রতীক্ষার ফসল
অবশিষ্ট সুখ খোঁজে পালকে মুখ ঘষে ঘষে,
এখানে মানুষ বাঁচে স্বপ্নের জমিন চষে চষে।
সরু পা ফেলে ডাহুক চলে পাতার উপর
জলের স্বাধীনতা লুফে নেয় দুর্জয় খোকা হংসশাবক।
এই বিকেল প্রশাšিতর প্রলেপ টানে নগরীর ক্ষতচিহ্নে।
এই বিকেল ধিঙ্গি মেয়ের ডিঙ্গি বাওয়া সুখ।

এই বাংলায় যেখানে বিকেল নামে
হলদে ডানায় কাশফুলের নরম ছোয়ায়
অনিন্দ্যসুন্দর লাজনম্র কুমারীর চোখে।

*শিকার

গতকাল দেখেছি কঁচুবনে ব্যাঙ হল সাপের শিকার
বর্ষা অবধি আমার চারপাশের জলাভূমিতে
নানা পদ্ধতিতে চলছে মাছ শিকার
অহরহই দেখি জলের ধারে মাছরাঙ্গার নিবাস
এছারা প্রতিদিনই দেখি মাঠে ঘাটে এমনকি আমার
বারান্দার কাছে চাতালের ঘাসে শালিক, কানিবক
ডাহুক আরও নানান জাতের পাখি
তারা সবাই শিকারের নেশায় ঘুরঘুর করে
ছোট ছোট কীটপতঙ্গ এদের শিকার
এইসব শিকারের আছে অনেক শিকার
সুন্দরবনে বাঘে হরিণ খায়
হরিণের শিকার ঘাস ও লতাপাতা
বাজপাখি ছোঁ মেরে নিয়ে যায় ইঁদুর, মুরগী ছানা
ছোটমাছ বড়মাছের শিকার
অনাদিকাল থেকেই চলছে এই হত্যাযজ্ঞ
পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় ও বেঁচে থাকার তাগিদে
চলছে এই শৃঙখল
জায়েজ না জায়েজের প্রশ্ন এখানে অবাšতর
হত্যা; প্রয়োজন এবং লালসার কারণে
আশরাফুল মাখলুকাত আজ ভুলে গেছে
প্রয়োজন আর লালসার তফাৎ
ড্রয়িং রুমে ঝুলছে হরিণের শিং, বাঘের চামড়া
শোকেসে হাতির দাঁত
বিজ্ঞান বলে মানুষ সর্বভূক তাই বলে এমন শিকার?
ছোট দেশ বড় দেশের শিকার
নীতি দুর্নীতির শিকার
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মত এভাবে অনেক সঙ্গা পাল্টে গেছে পৃথিবীতে
ইতিহাস ঐতিহ্য সমাজ সংস্কৃতি আইন আদালত
সব উপাদানই “মাইট ইজ রাইট” এর জবরদখলে
তবে খাদ্য শৃঙ্খলের সঙ্গাটাও যে এত সহজে
রাতারাতি পাল্টে যাবে ভাবতে অবাক লাগে
হয়ত এই অবদানটাও আধুনিক সভ্যতার
আজ মানুষ মানুষের শিকার।

*তোমাকে ভালবেসে

তোমাকে ভালবেসে একখন্ড আকাশ দিয়েছিলাম
তারায় তারায় ভরিয়ে দিতে
বিনিময় তুমি দিলে শ্বাসরুদ্ধকর চিলেকোঠা
ছলনার বিষবাষ্পে অস্পষ্ট নীলাকাশ
একটা ফুল দিয়েছিলাম সৌরভে জগত ভরিয়ে দিতে
তুমি পাঁপড়িগুলো শুকিয়েছ সাহারার মরুতে
তোমাকে ভালবেসে একটা নদী দিয়েছিলাম
ধরণীর তৃষ্ণা মেটাতে
তৃষ্ণার অধিক মিটিয়ে তুমি ঠাঁই করে দিলে
নদী সিক¯িত তালিকাতে
এভাবে আর কত?
তোমাকে ভালবেসে  হারিয়েছি অনেক কিছু
হারিয়েছি একমাত্র প্রেম
আমার আকাশে আর কোনদিন যা হবেনা উদয়
তোমাকে ভালবেসে পেয়েছি অনেক কিছু
তার মধ্যে একটা ভগ্ন হৃদয়।

*কাঁচের টুকরার মত

প্রতিদিন কত টেলিফোন আসে
বেজে ওঠে নকিয়া টিউন
পরিচিত পাখির মত প্রতিদিন
মনিটরে বাসে হাজারো মুখের চিন
তারে আর দেখিনা‘ক খুঁজেছি অনেক দিন
তৃতীয়া চাঁদের মত মৃদু হেসে
নিরবে হারাল সে আধার ভালবেসে।

এই ফুল পাখি লতা পাতা আর
কোনোদিন মনে রাখিবেনা তারে
ঝরা পাঁপড়ির মত ভুলে যাবে
তরুশাখা ক্ষণিক মিলনের সাথিটারে
ভুলিবনা আমি তারে আসুক যন্ত্রনা শত
এইসব দিনরাত্রির মাঝে তার স্মৃতি ভাসে
হৃদয়ের গভীরে কাঁচের টুকরার মত।

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১২

কালকিনিতে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে শোকসভা


আছিয়া নূপুর:
নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে প্রথম আলো বন্ধুসভা, কালকিনির উদ্যোগে শোক র‌্যালী ও শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ শহীদ মিনার থেকে শোক র‌্যালী শুরু হয়ে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদণি শেষে শহীদ মিনারে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে নাফিজ সিদ্দিকী তপুর সঞ্চালনে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্য মো: খালেকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি ও অধ্যাপক দুলাল সরকার, সাংবাদিক ইয়াকুব খান শিশির, সাংবাদিক মিজানুর রহমান। বক্তব্য রাখেন শহিদুল ইসলাম, খায়রুল আলম, জাহিদ হাসান, মেহেদী হাসান, মাইনুল ইসলাম ও বি এ কে মামুন প্রমুখ।

আছিয়া নূপুর,
কালকিনি বন্ধুসভা