শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৩

পাবনা থেকে হাসনাত আবদুল হাই’কে বলছি

মোশাররফ হোসেন মুসা:
মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে কখনও কখনও নিজের অজান্তে নিজের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে ফেলে। সম্ভবত ব্যক্তিগত রাগ বিরাগের বশবর্তী হয়ে সাবেক আমলা ও কথা সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাইও একটি গল্পের মাধ্যমে নিজের ভিতরকার প্রকৃত রূপ প্রকাশ করেছেন। তিনি অতীতে সরকারের ব্রাহ্মণরূপী একটি চাকুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এবার ব্রাহ্মণদের পত্রিকা নামে খ্যাত ‘প্রথম আলো’র ১লা বৈশাখ সংখ্যায় ‘টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি’ নামক একটি গল্প লিখে আগের মর্যাদায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি উক্ত গল্পে পাবনা থেকে যাওয়া ‘সীমা’ নামে নিম্ন মধ্যবিত্তের একটি মেয়ে ঢাকায় গিয়ে কিভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করছে তার বর্ণনা দিয়েছেন। লেখক সীমারূপী মেয়ের মাধ্যমে কিছু রাজনৈতিক দলের শহরকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান নির্ভর রাজনীতিকে বুঝাতে গিয়ে প্রকারান্তরে শাহবাগ আন্দোলনের শ্লোগান কন্যাসহ প্রগতিশীল নেতাকর্মীদের চরিত্র হননের চেষ্টা করেছেন। বর্তমান সংকটময় মুহুর্তে গল্পটি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের অবস্থানকেই শক্তিশালী করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গল্পটি সম্পর্কে প্রগতিশীল মহল থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ আসায় ইতোমধ্যে ‘লেখক’ ও ‘প্রথম আলো’ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। গল্পটিতে শাহবাগ, গণজাগরণ মঞ্চ, জাতীয় যাদুঘর, আর্ট ইনস্টিটিউট, শিশুপার্ক শব্দগুলি একাধিকবার স্থান পেয়েছে। সেজন্য বলা যায়, পত্রিকাটি সুদূর প্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে গল্পটি ছেপেছে। পত্রিকাটি এই-ই প্রথম নয়, এর আগেও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লেখার কারণে একাধিকবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। অনেকে বলেছেন- এ গল্পের মাধ্যমে বর্ণচোরা উপাধিপ্রাপ্ত পত্রিকাটির নিরপেক্ষতার পোশাকটি আবারও খসে পড়ল।
লেখক এর আগে ‘ যখন ডিসি ছিলাম’ নামে এক প্রবন্ধে বিশিষ্ট শিল্পী ও গবেষক মুর্তজা বশিরকে হেয় করার চেষ্টা করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের ডিসি থাকাকালীন সময়ে মুর্তজা বশিরকে সরকারি ফ্ল্যাট পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ হওয়ার পরও মুর্তজা বশির না কি সামান্য সৌজন্যও দেখান নি। একই প্রবন্ধে তিনি জনৈক বিভাগীয় কমিশনারের আঞ্চলিক কথন ও একটি ঘরোয়া প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরল উক্তি নিয়েও উপহাস করেছেন। যতদূর জানা যায়, এরশাদের উপজেলা সৃষ্টির পিছনে যে কয়জন আমলার অবদান রয়েছে তার মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি ‘বিকেন্দ্রিকরণ, স্থানীয় সরকার ও সম্পদ আহরণ’ নামক এক গবেষণা গ্রন্থের ভূমিকায় উপজেলাকে কার্যকর করতে সম্পদ আহরণের জন্য কতকগুলো উৎসের কথা বলেছেন। আমি একদিন টেলিফোনে তাঁকে বলার চেষ্টা করি- এভাবে উপজেলাকে কার্যকর করা হলে ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হবে। উপজেলা হলো মধ্যবর্তী স্তর। একই সেবার জন্য জনগণ একাধিক স্তরকে কেন ট্যাক্স দিবে। তিনি উত্তরে বলেন- তাকে যেন জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা না করা হয়। তখন মনে মনে ভেবেছি- স্থানীয় সরকারের বাহুল্য স্তর সম্পর্কে যদি সামান্য জ্ঞান থাকত, তাহলে তিনি এভাবে উপজেলার জন্য ওকালতি করতেন না। এখন গল্পটি পড়ে ধারণা জন্মেছে, তিনি দেশের প্রগতিও বুঝেন না। একজন বোদ্ধা পাঠক তার সম্পর্কে বলেছেন- একজন সুসাহিত্যিক  সরকারি চাকুরিতে বেশি দিন টিকে থাকতে পারেন না , সচিব হওয়া তো বহু পরের কথা । বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পুরোধা কাজী আবদুল ওদুদ বহু আগেই বলেছেন- ‘যা আছে শুধু তা-ই সত্য নয়, যা হওয়া উচিত তা-ই মানুষের জন্য বিশেষভাবে সত্য।’ একইভাবে ‘প্রগতির জন্য যা হওয়া উচিত’ দাবিগুলি কোথা থেকে এলো, কার মুখ থেকে বের হলো, সেটা বড় কথা নয়। দাবিগুলো যথার্থ কি না সেটাই বিচার্য বিষয়। সে সঙ্গে আরও মনে রাখা দরকার- সীমাদের অসহায় অবস্থার জন্য কেবল রাজনীতিবিদরাই দায়ী নন, তার মতো আমলারাও দায়ী।
লেখক ঃ
গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।
ঈশ্বরদী, পাবনা।
সেল ঃ ০১৭১২-৬৩৮৬৮২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন