মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫

তোর জন্য শীতকাব্য

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

ও সোনা বউ বড্ড বেশি শীত পড়েছে,
এবার একটু আয় না কাছে।
আর কতকাল দূরে থেকে কষ্ট দিবি,
একলা শুয়ে হাড়কাঁপানো রাত কাটাবি?

আয় না কাছে বুকের মাঝে 
আসলে পাবি আমার বুকে উষ্ণ আরাম,
তোর শরীরের পরশে আমার 
শরীরজুড়ে বইবে গরম।

ও সোনা বউ কতদিন তোর পাই না ছোঁয়া,
শীত গেলে আর এমন মজা যায় না পাওয়া।
একটি বারের জন্য হলেও আয়রে কাছে,
ও সোনা বউ বড্ড বেশি শীত পড়েছে।

প্রথম প্রকাশ: দৈনিক সমকাল
রোববার |৩০ জানুয়ারি ২০১১ |১৭ মাঘ ১৪১৭ |২৪ সফর ১৪৩২

শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫

চলছে দেশ



সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

চলছে দেশ বেশ বেশ,
হত্যাযজ্ঞের নেই তো শেষ
মরছে মানুষ উড়ছে ফানুস,
বিদেশিরা ভয়ে বেহুশ

মরছে লেখক- প্রকাশক,
গোয়েন্দারা আঁকছে ছক
টিভি শোতে টক টক,
করে সবাই বকবক

বিবৃতির মিথ্যাচ্ছলে,
ঘাতকরা কি যাবে চলে?
ঘাতকরা সব গোয়েন্দা জালে,
আটক হবে কোন কালে?

মালিবাগ, ঢাকা




তিনটি কবিতা


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ 

:: আমি কেমন আছি ::

বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি।
এখানে পরাবাস্তব এক মাংসল সত্ত্বা জেগে আছে-
ধীরে ধীরে একক সত্ত্বায় রূপান্তরিত হচ্ছি,
বহুত্ববাদ হারিয়ে যাচ্ছে মন থেকে।
অনেকটা বিচ্ছন্ন জীবন কাটছে আজকাল-
জানি না এভাবে কতকাল কতটা সময় চলবে।
স্বজনের তালিকা সংকীর্ণ হয়ে গেছে-
আমার আমিই কেবল আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
তাই বিগত দিনের মনপ্রতিবেশি আজ জানে না-
আমি কেমন আছি, কীরকম ভাবে বেঁচে আছি...
মালিবাগ মোড়, ঢাকা

:: তবু চলছে জীবন ::

এখানেই এসে থেমে গেছে জীবনের নদী-
আর কোনো শাখা নেই
নেই কোনো স্রোত
এখানে আসে না ভেসে পালতোলা নাও-
শিশুদের কোলাহল নেই-
নেই জলকেলি খেলা
তবু চলছে জীবন হতাশার বাঁকে বাঁকে-
শরতে যেমন কাটে-
হেমন্তেও হয় না ব্যতিক্রম।
মধ্যবাড্ডা, ঢাকা

:: আমার হত্যার দায়ভার রাষ্ট্রের ::

আমি কোনো ধর্মের অনুসারি নই- একথা সত্য হলেও আমি রাষ্ট্রের নাগরিক।
কোনো ধর্ম আমার নিরাপত্তা না দিলেও-
রাষ্ট্র আমার নিরাপত্তা দিতে বাধ্য।
আজ ধর্ম-রাষ্ট্র একাকার হলে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি।
আমি সাম্প্রদায়িক হতে পারি না।
আমি আমার ধর্মে বিশ্বাসী, রাষ্ট্র তা জানে না।
কিন্তু আমার মৃত্যু হলে রাষ্ট্রকেই তার দায়ভার নিতে হয়।
এমনটাই বলতে চেয়েছিলো অনন্ত-অভিজিৎ-নিলয়
বাংলাবাজার, ঢাকা

শিশুতোষ নাটক : নরপিশাচ


                                 নাট্যকার : সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

নির্দেশক : কামাল

রচনাকাল: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কুশীলব: রাজন, বাবা, মা, রফিক, হাসু, ফরিদ, আলম, পুলিশ, গ্রামবাসী, পথিক, কনস্টেবল ও সাংবাদিক

প্রথম দৃশ্য:
মঞ্চে সকালের আলো জ্বলে উঠবে মা সংসারের টুকিটাকি কাজে ব্যস্ত বাবার আগমন বের হওয়ার তাড়া
বাবা: শোন রাজনের মা আমি তাইলে বাইর অইলাম রাজনতো ঘুমায়া রইছে আইজ একটা বড় খ্যাপ পাইছি ট্যাকাটা পাইলে রাজনের ঈদের জামা-কাপড় লইয়া আইমু
মা: এহনই যাইবেন? কিছু খাইয়া যান ভাততো চুলায়, তরকারি অইয়া গ্যাছে
বাবা: নারে, সময় নাই দেরি অইয়া যাইবো বাজারের তোন নাস্তা কইরা লইমু আমি গেলাম রাজনরে এদিক-ওদিক যাইতে না কইও আমার ফিরতে ফিরতে রাইত অইবার পারে
মা: আইচ্ছা সাবধানে যাইয়েন
বাবা বের হয়ে যায় মা সংসারের কাজে মনযোগ দেয়রাজন মাকে ডাকতে ডাকতে প্রবেশ করে
রাজন: মা, মাগো, খিদা লাগছেকিছু খাইতে দাও
মা: যা, আত-মুখ ধুইয়া আয় রান্ধন অইয়া গেছে
রাজন: যাইতাছি আব্বায় কই?
মা: তোর আব্বায় গ্যাছে গা ফিরতে রাইত অইবো
রাজন: মা, বাজানে কি আইজ প্যান্ট-শার্ট লইয়া আইবো?
মা: হঅ, মনে অয় রাইতে বাড়ি আহোনের সময় লইয়া আইবো
রাজন: আইচ্ছা, তাড়াতাড়ি ভাত বাড়ো আমি কলেরতোন আত-মুখ ধুইয়া আহি
মা: যা আমি ঘরে গিয়া ভাত বাড়তাছি
দুদিকে দুজনের প্রস্থান

দ্বিতীয় দৃশ্য:
মঞ্চে আলো-আঁধারির খেলা মাঝখানে খুঁটির সাথে হাত-পা বাধা একটি শিশু লাঠি হাতে হাসু রফিকের আগমন শিশুটির শরীরে একের পর এক আঘাত করে শিশুটি চিৎকার করে
রফিক: বল, তুই চুরি করছোস?
রাজন: না, আমি চুরি করি নাই আমি চোর না
রফিক: আবার মিথ্যা কথা কস? (জোরো পেটায়)
হাসু: আস্তে মারলে কাম অইবো না অত সহজে স্বীকার করবো না দে, আমার কাছে দে অয় স্বীকার করবো না অর বাপ করবো
রফিক: নে, দেখ, মুখ দিয়া হাচা কথা বাইরায় কিনা
হাসু: শালা চোরের বাচ্চা চোর এহনো সময় আছে হাচা কথা কঅ তুই চুরি করতে আইছোস
রাজন: না, মুই চুরি করতে আহি নাই মোরে মাইরেন না
হাসু: (হাসি) মারবো না তয় কি চুমা দিবো? শালার পো শালা (পিটাবে)
রাজন: মা-মাগো, ওমা, আব্বা, আব্বারে, আমারে মাইরা হালাইলো আব্বা, মুই চুরি করতে আহি নাই মোরে বাঁচাও গো আব্বা
হাসু: চুরি করতে আহোস নাই, তয় ভ্যানের ধারে খাড়ায়া খাড়ায়া কি করতাছিলি?
রাজন: (কেঁদে) আমি এমনিতেই খাড়ায়া আছিলাম মুই চোর না বিশ্বাস করেন
হাসু: শালা চোরের পয়দা চোর চোরের আবার বিশ্বাস স্বীকার কর এহনো স্বীকার কর
রাজন: .. .. না আমি চুরি করি না আমি পড়ালেখা করি আব্বারে মাঝে মাঝে কামে সাহায্য করি
(আরও দুজন আসে একজন মোবাইল দিয়ে ভিডিও করে)
আলম: মার শালারে, ভালো কইরা মার এই ফরিদ ভিডিও কর ভিডিও কইরা ফেসবুকে ছাইড়া দে সবাই দেইখা যাতে শিক্ষা পায় চুরি করার সাহস না পায়
ফরিদ: , ভিডিও অইতাছে মারোছ না ক্যা ভালো কইরা মার
রাজন: (ক্লান্ত হয়ে) মোরে ছাইড়া দেন আমি মার কাছে যামু আব্বার কাছে যামু পানি খামু পানি মোরে একটু পানি দেন
আলম: পানি খাবি? পানি? (অট্টহাসি) খাওয়ামু তোরে পানি হাচা কথা কঅ
ফরিদ: তোর কপালে পানি নাই শরীরের ঘাম চাইটা চাইটা খা
রাজন: পানি, পানি খামু মার কাছে যামু, স্কুলে যামু আব্বার লগে গাড়িতে যামু পানি, পানি
রফিক: (হাসি) দেখ শালারপোয় ভান ধরছে পাকা চোর এত মাইর খাইলো তাও স্বীকার করলো না কড়া ট্রেনিং দেয়া চোর
হাসু: হঅ, দেহোস না, কেমন আধমরা ভান ধরছে ভাবছে ভান ধরলে ছাইড়া দিমু দেখবি ছাইড়া দিলে এক দৌড়ে পালায়া যাইবো
(আলম এগিয়ে যায় রাজনের কাছে রাজন নিথর হয়ে পরে আছে নাকের কাছে হাত ধরে নিঃশ্বাস বের হয় না পালস পরীক্ষা করে)
আলম: কিরে ভাই, হালারপোতো লড়ে না
রফিক: কস কি? এহন কেমন অইবো?
হাসু: মনে অয় মইরা গেছে গা এহন কি করোন যায়? আলম এক কাম কর মাইক্রোডা লইয়া আয় পশ্চিমের খালের পাড়ে ফালায়া দিয়া আহি
আলম: মাইক্রোতো বাইরেই আছে আমি গিয়া স্টার্ট দেই তোরা অরে লইয়া বাইরে আয়
(আলমের প্রস্থান রফিক আর হাসু রাজনকে ধরে নিয়ে বাইরে চলে যায়)

তৃতীয় দৃশ্য:
ঘরে চিন্তিত বাবা-মা রাজন এখনো ফেরেনি
বাবা: রাজন এহনো আইলো না যে
মা: আমিও তো হেইডাই ভাবতাছি হেই সকালবেলা গেলো কইলো, বাজানের কাছে যাই
বাবা: কই? ওতো আমার কাছে যায় নাই আমি সকালেই গাড়ি লইয়া বাইরায়া গেছি
মা: হারাদিন তাইলে কই আছিলো? কি খাইছে? টাহাওতো লইয়া যায় নাই
বাবা: রাইত অইছে মেলা ঘরে বইয়া থাকলে কাম অইবো না খোঁজতে বাইর অইতে অইবো কয়দিন পরে ঈদ
মা: হঅ, ঠিকই কইছেন লন, দুইজনেই যাই
বাবা: তুমিও যাইবা? আচ্ছা, ঈদের জামা-কাপড় কেনতে দেরি করছি দেইখা রাগ করে নাইতো?
মা: না, তেমন কিছু তো কইলো না খালি জিগাইছে, মা, বাজানে কি আইজ প্যান্ট-শার্ট লইয়া আইবো? আমি কইলাম, হঅ, মনে অয় রাইতে বাড়ি আহোনের সময় লইয়া আইবো তারপরতো আর কিছু কইলো না
বাবা: লও লও, আর দেরি করন যাইবো না আমার টর্চ লাইটটা লও বের অই
(দুজন বের হয়ে যায়)

চতুর্থ দৃশ্য:
হা-পা ধরে ঝুলন্ত রাজনকে নিয়ে আসে দুইজন এদিক-ওদিক তাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখে
হাসু: চল যাইগা কেউ টের পায় নাইতো?
রফিক: না মনে অয়
(হঠাৎ চোখের ওপর লাইটের আলো এসে পড়ে)
পথিক: কে, কে ওখানে?
ওরা দৌড় দেয় পথিক চিৎকার করে
পথিক: চোর, চোর, চোর গেলো
চারদিক থেকে বের হয়ে আসে মানুষ একজনকে ধরে ফেলে টানতে টানতে রাজনের মৃতদেহের কাছে নিয়ে আসে
গ্রামবাসী: কঅ, দৌড় দিছোস ক্যা আকাম না করলে দৌড় দিবি ক্যান
হাসু: কইলামতো, চুরি করতে আহি নাই ওরে ফালাইতে আইছিলাম
(লাশের দিকে তাকিয়ে)
পথিক: অ্যা.. কয় কি? বাচ্চাডারে মাইরা ফাইলাইছোস?
হাসু: আমি একলা না আরো কয়েকজন আছিল
গ্রামবাসী: অরে বাইন্দা পুলিশ খবর দে আর দেখ, পোলাডা কি সুত্যই মইরা গেছে?
দুজন এগিয়ে এসে হাসুকে বেধে ফেলে একজন রাজনের কাছে যায় পরীক্ষা করে
গ্রামবাসী-: নাহ, বাঁইচা নাই অনেক আগেই শ্যাষ পুলিশ খবর দিছোস?
পথিক: (ফোন করে) হ্যালো দারোগা সাব, কান্দিরপাড় রাস্তার পাশে একটা শিশুর লাশ পাওয়া গেছে একজনরে আটকাইছি তারাতারি আহেন জ্বি স্যার থ্যাঙ্কু
পথিক: ধরেন, ধরেন বাচ্চাডারে উপরে উঠায়া রাখি আর অরে বাইন্দা রাখি
গ্রামবাসী: ধর, ধর তোরা
সবাই বাচ্চাটাকে ধরে পরিস্কার স্থানে নেয় গামছা দিয়ে হাসুর হাত বেধে নিয়ে যায়

পঞ্চম দৃশ্য:
মঞ্চের এক কোণে রাজনের মৃতদেহ গামছা দিয়ে রেখে রাখা হবে হাত বাধা হাসু এক কোণে বসে আছে - জন গ্রামবাসী পায়চারী করবে এমন সময় পুলিশের গাড়ির আওয়াজ পাওয়া যাবে তিনজন পুলিশ মঞ্চে আসবে
অফিসার: কোথায় কোথায় লাশ?
পথিক: এইতো স্যার
অফিসার: দেখি (গামছা সরিয়ে দেখবে) ইস, কী নির্মমতা এরা মানুষ না পশু কে কে করেছে এসব?
গ্রামবাসী: স্যার একজনরে আটকাইছি
অফিসার: কোথায়, কোথায় সে?
পথিক: ওইতো স্যার বাইন্দা রাখছি
অফিসার: সেন্ট্রি
পুলিশ: ইয়েস স্যার
অফিসার: লাশ গাড়িতে তোল আর ওকে হ্যান্ডকাপ লাগাও
পুলিশ: ইয়েস স্যার
সেন্ট্রি দুজন লাশ নিয়ে রেখে আসবে এবার হাসুকে ধরে নিয়ে চলে যাবে
অফিসার: আপনারা আমার সাথে থানায় চলুন
পথিক: চলেন স্যার আহারে কার বুকের ধনরে এই অবস্থা করছে এরা মানুষ না, জানোয়ার
সকলের প্রস্থান

শেষ দৃশ্য:
রাজন হত্যার বিচার চাই খুনিদের ফাঁসি চাইস্লোগান নিয়ে একদল মানুষ আসে মঞ্চে সামনে রাজনের বাবা-মা পুলিশ এসে বাধা দেয়
পুলিশ: থামুন থামুন
বাবা: কেন থামবো? আমার পোলা মরছে, আমি জানি কতটা কষ্ট আমার বুকে
মা: পারবেন আমার রাজনরে ফিরায়া দিতে?
গ্রামবাসী: নিষ্পাপ শিশু রাজনরে অরা মারলো, আমরা এর বিচারও চাইতে পারবো না?
পুলিশ: পারবেন রাজন হত্যার বিচার হবেআমরা খুনিদের ধরার চেষ্টা করছি কেউ রক্ষা পাবে না
বাবা: পুলিশের কথা মানুষ এহন বিশ্বাস করে না ক্ষমতার জোরে খুনিরা ছাড়া পেয়ে যায়
পুলিশ: আপনারা নিশ্চিতে বাড়ি যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে হুকুম এসেছেযেবাবেই হোক নরপিশাচদের ধরতে হবে আমরা খুনিদের ধরার চেষ্টা করছি আপনারা রাস্তায় বিক্ষোভ না করে ওদের ধরতে আমাদের সাহায্য করতে পারেন
বাবা: তাই যেন হয় অফিসার তাই যেন অয় এই চল সবাই চাইরদিকে খোঁজ লাগা পলায়া ওরা যাইবো কই? চল সবাই
ভিড় ঠেলে সাংবাদিক আসে
শিশু রাজন হত্যায় ফুসে উঠেছে সারা দেশপুলিশ প্রশাসন হয়ে উঠেছে তৎপার রাজনের হত্যাকারীদের সন্ধান পেলে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজনের বাবা-মার একটাই দাবি- নরপিশাচদের ফাসি চাই’- সাগর তামিম, ক্রাইম টিভি, কান্দির পাড়

পর্দা নামবে