সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যময়
সম্ভারের অন্যতম উপাদান শীতকাল। পৌষ-মাঘ দুইমাস শীতকাল হিসেবে প্রচলিত হলেও শীতের প্রকোপ
থেকে যায় প্রায় চারমাস। শীতের আগমনী বার্তা শোনার সাথে সাথেই জনমনে শুরু হয় কাঁপুনি।
সে কাঁপুনি যখন তীব্রতা পায় তখন হয়ে ওঠে দুর্গতি।
শীত নিয়ে মজার
মজার ছড়া-কবিতা, গল্প থাকলেও এর দুঃখের সারথি কম নয়। শৈত্যপ্রবাহ যখন মানবপ্রবাহকে
স্থীতিমিত করে দেয় তখন আর শীতকে নিয়ে গীত গাওয়ার বাসনা জাগে না। বরং কাঁপা কাঁপা শরীরে
কম্পমান কান্নার সুর ভেসে ওঠে।চোখের সামনে ভেসে ওঠে কৃষকের উলঙ্গ শরীর বেয়ে গড়িয়ে পড়া
শিশির। কুয়াশাচ্ছন্ন নদীর বুকে দিকভ্রান্ত নাবিকের পাণ্ডুর মুখখানি ভেসে ওঠে চোখের
তারায়। কিংবা হেডলাইটের আলোয় যখন কাটে না কুয়াশা; কুয়াশার শক্ত দেয়াল ভেদ করেও দেখতে
পায় না অগ্রগামী কিছু। তখন কিইবা করার থাকে। কুয়াশা আর শীতের হাতে সব শপে দিয়ে দুমড়ে
মুচড়ে একাকার হয়ে যায় আনন্দ ভ্রমণ।
উচ্চবিত্তরা শীতকে
উপভোগ করে। আর নিম্নবিত্তরা শীতকে সহ্য করে। অথচ তোমার পরনের চাদরটা খুলে কাউকে দিতে
পেরেছো কি না এ প্রশ্ন কখনোই নিজেকে আমরা করি না। শীতের পথশিশু বা বস্তির অসহায় বৃদ্ধ
জানে শীত কাকে বলে। ভ্রাম্যমাণ দেহপসারিনীর শরীরেও উত্তাপ নেই। কম্পমান শরীরে জবুথবু
হয়ে তারা বসে থাকে গলির মোড়ে কিংবা পথের ধারে।
আমার কথাগুলোই
আসলে রুক্ষ্ম। শীতের সন্ধ্যায় শীতকে জড়িয়ে ভালোবাসতে পারি না। কিংবা সকালে শীতের অলস
কম্বলে নিজেকে জড়াতে পারি না। স্নানঘরে কুসুম কুসুম গরম জলের পরিবর্তে তীক্ষ্ম আর তীব্র
হাড় কাঁপানো জল ঢেলেই পবিত্র হই। তাতে কোনো আক্ষেপ নেই।
আমি কবিতায় যতোই
বলি-
ও সোনা বউ, বড্ড
বেশি শীত পড়েছে,
এবার একটু আয় না কাছে।
আর কতকাল দূরে থেকে কষ্ট দিবি,
একলা শুয়ে হাড়কাঁপানো রাত কাটাবি? (তোর জন্য শীতকাব্য)
এবার একটু আয় না কাছে।
আর কতকাল দূরে থেকে কষ্ট দিবি,
একলা শুয়ে হাড়কাঁপানো রাত কাটাবি? (তোর জন্য শীতকাব্য)
স্বপ্নের সোনাবউ
স্বপ্নই থেকে যায়। কম্বল কেনার সম্বলও যার কাছে নেই তার আবার শীতের রাতে সোনাবউ খোঁজার
তাগিদ কীসের?
তবু শীত আসে শীত
চলে যায়- কেবল কেঁপে যায় মানবতা। আমরা না হয় মধ্যবিত্ত। শীতের সাথে লড়াই করে হরহামেশা
দিব্যি সুখে বেঁচে আছি। শরীর আমার শীতে কাঁপে না। তবে যারা নিম্নবিত্ত, উদ্বাস্তু, পথশিশু, ফুটপাতের রাজা
তাদের জন্য হৃদয় কাঁপে।
আসুন ওদের সেই
কাঁপাকাঁপি বন্ধ করতে আমরা এগিয়ে যাই। এই শীতে আমাদের মানবতা কেঁপে উঠুক। শীতার্তের
পাশে দাঁড়াবার সৌভাগ্য রচনা করি নিজের হাতেই। কেন নয়- আমরা কি মানুষ নই? আমাদের যেমন
মিষ্টি মধুর শীত আছে, ওদের না হয় হাড় কাঁপানো কষ্ট আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন