সোমবার, ১৪ মে, ২০১২

উপমহাদেশের প্রথম মহিলা চিকিৎসক জোহরা বেগম কাজী

আফিয়া মুন :
৭ নভেম্বর উপমহাদেশের প্রথম মহিলা চিকিৎসক জোহরা বেগম কাজীর মৃত্যুবার্ষিকী। তার স্মৃতির উদ্দ্যেশ্যে আমাদের এই শ্রদ্ধাঞ্জলি । জীবদ্দশায় যিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন নিঃস্বার্থভাবে। অধ্যাপক ডাঃ জোহরা বেগম কাজী স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যায় নতুন এক ইতিহাস তৈরি করেছেন। তিনিই প্রথম ধাত্রীবিদ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করে নারী সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসেন। নারী সমাজের উন্নত চিকিৎসার সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। কুসংস্কার ও ধর্মীয় বাধা অতিক্রম করে নারী সমাজের মুক্তিদাতা হিসাবে আবির্ভূত হন।
জন্মঃ
এই মহিয়সী নারী ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজনানগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর পৈত্রিক নিবাস মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। পিতার নাম কাজী আব্দুস সাত্তার এবং মাতার নাম আঞ্জুমান নেছা।
শিক্ষা জীবনঃ
রাজানানগাঁওয়ে রাণী সূর্যমুখী পুত্রিমানেতে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু।  প্রাথমিক শিক্ষা শেষে একে একে তিনি কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক ও আইএসসি পাস করেন। পরে ১৯২৯ সালে দিল্লীর লেডি হাডিং গার্লস মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এটি উপমহাদেশের প্রথম মহিলা মেডিকেল কলেজ। আর এ কলেজে তিনিই প্রথম মুসলিম বাঙালি ছাত্রী। এখান থেকে ১৯৩৫ সালে এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। তখন তাকে সম্মানজনক ভাইসরয় ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
কর্মজীবনঃ
মহাত্মা গান্ধীর পরিবারের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তখন নাগপুরে সেবাগ্রামে একটি গান্ধী আশ্রম ছিল। তিনি সেখানে অবৈতনিক চিকিৎসা সেবা দিতেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশবিভাগের পর তিনি বড়ভাই কাজী আশরাফ মাহমুদ ও ছোটবোন শিরিন কাজীর সাথে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে গাইনি বিভাগের প্রধান হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের অনারারি কর্ণেল পদে এবং হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে কনসালটেন্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
পদকঃ
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘তখমা-ই পাকিস্তান’ খেতাবে ভূষিত করেন। ২০০২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘রোকেয়া পদক’ প্রদান করে। তিনি ‘ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল অব ঢাকা’ নামে পরিচিত ছিলেন।
শেষ কথাঃ
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩২ বছর বয়সে তৎকালীন আইনজীবি ও এমপি রাজু উদ্দিন ভূইয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আজীবন মানব সেবায় নিয়োজিত জোহরা বেগম কাজী ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিবছর তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিনে কালকিনিসহ সারাদেশের মানুষ তাঁর স্মরণে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করেন।

সম্পাদনা: সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন