শনিবার, ১২ মে, ২০১২

কালকিনি প্রবাহ

- আকন মোশাররফ হোসেন
(পূর্ব প্রকাশের পর)
বিলুপ্ত হয়ে গেছে এখানকার খরস্রোতা নদী-নালা। টেংরা নদী, রাজমনী নদী ও গজারিয়া নদী এখনো নদী নামের স্মারক বহন করে আছে। তবে ডাকের চর নদী ও গজারিয়া নদী শত বছর পর্যন্ত নামের স্বার্থকতা বহন করে এখন শুধু গজারিয়া ও ডাকের চর খাল ক্ষীণাবস্থায় বয়ে চলেছে। এই দুটি খালই বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে রয়েছে।
রাজমনী নদী পালরদী নদীর ঠাকুর বাড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে শিকারমঙ্গল ও এনায়েত নগর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে আঁকা-বাঁকা বয়ে গেছে ভবানীপুর ও মৃধা কান্দির নিকট আড়িয়াল খা নদীতে পতিত হয়েছে। এই নদী এখন শুধুই ঠাকুর বাড়ি, সমিতির হাট, মিয়ার হাট খাল।
কথিত আছে যে, জমিদার রাজ মহন দাসের বাড়ির নিকট দিয়ে প্রবাহিত বলে রাজমনি নদীর নাম পত্তন ঘটেছিল। অপর একটি বেশি দৈর্ঘ খাল যেখানে বর্ষায় দুর্গাপুজা উৎসবে নৌকা বাইচের জন্য বিখ্যাত ছিল। এই খালটি মাদারীপুর সদর থানার ঘটকচর - মস্তফাপুর কুমার নদী থেকে ডাসার, কাজী বাকাই, গোপালপুর ও বর্তমান কালকিনি পৌরসভার দক্ষিণ-পশ্চিম খাঞ্জাপুর সীমানা দিয়ে ঝুরগাও বাজারের পশ্চিমপাড়ে মাইড্যাল খেয়াঘাটের নিকট পালরদী নদীতে উপনিত হয়েছে। এই খালটির নাম আমানতগঞ্জ খাল। কাল প্রবাহে এখন খাল নামেই পরিচিত। তবে এই খাল সমুহের যৌবনে পালরদী ও কুমার নদীর মতোই খরস্রোত ছিল।
অপর একটি খাল শরীয়তপুর জেলার পট্টি বাজারের পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে নাগের পাড়া, খাসের হাট, কাচারী বাজার, আকাল বরিশ হয়ে আড়িয়াল খাঁ নদীতে মিলিত হয়েছে। এই খালটি যৌবনে টেংরা নদী নামে পরিচিত ছিল। এই টেংরা নদী দিয়ে এক সময় নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, চাঁদপুর থেকে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী জাহাজ ও স্টিমার আড়িয়াল খা নদী ও কুমার নদী হয়ে কোলকাতা যেত এবং আসতো। ইংরেজ আমলে ১৮০০ সালের শেষ দিকে টেংরা নদীর ভাঙণে নদীর দুই পাড়ের লোকজন গৃহহীন হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে দেখা দেয় চরম দুর্ভিক্ষ।
তখন ইংরেজ শাসক নদীর দুই পাড়ের অসহায় মানুষের জন্য আশ্রয় শিবির তৈরি করে তাদের পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করে। এই শিবিরের খাদ্যসামগ্রী টেংরা নদী দিয়ে কোলকাতা থেকে জাহাজ-স্টীমার যোগে আসতো। এই নদী পাড়ের আশ্রয় শিবিরের লোকদের আকালী বলা হতো। সেই থেকে নদীর দুই পাড়ের মৌজার নাম আকাল বরিশ নামে পরিচিত। পরবর্তী কালে ভূমি জরিপে উত্তর ও দক্ষিণ আকাল বরিশ রাখা হয়।

(চলবে)   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন