রবিবার, ২৬ মে, ২০১৩

ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখ: শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকেই লালন করতে চান আজীবন

খায়রুল আলম:
সারাদিন কাজ নিয়ে পড়ে থাকেন। নাওয়া-খাওয়া ভুলে যান। কাজটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি নেই। পড়াশুনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা, সাহিত্য চর্চা, নাটক ও আবৃত্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। লিখতে বসলে ভোর হয়ে যায়। ঘুমঘুম চোখে দিনের সব কাজ সারেন। কাজ পাগল এই মানুষটির নাম সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। অনেকের কাছে এস. মাহমুদ নামে পরিচিত। কেউ কেউ ডাকেন সালু বলে।
সংবাদ সংগ্রহ, নাটক লেখা, অভিনয় করা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি থেকে শুরু করে সবখানেই তার বিচরণ। বিভিন্ন পত্রিকায় কবিতা, উপ-সম্পাদকীয় ও ছোটগল্প লিখেও বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সবার পরিচিত জন। পড়ালেখা করছেন বাংলা সাহিত্যে। কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ থেকে এবছর মাস্টার্সে(বাংলা) প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাই কলেজের বাংলা বিভাগ তাকে কৃতি শিক্ষার্থী হিসাবে সংবর্ধনা দিয়েছে।
সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি তার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। বাবা জেড এম এ মাজেদ মাদ্রাসা শিক্ষক ও মা হাসনে আরা গৃহিনী বলে সঙ্গত কারণেই পড়তে হয় মাদ্রাসায়। মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করে নিজ উদ্যোগে ভর্তি হন বাংলা সাহিত্যে অনার্স করার জন্য। কলেজে এসে যুক্ত হন প্রথম আলো বন্ধুসভার সাথে। দৈনিক দেশবাংলার মাধ্যমে শুরু করেন সাংবাদিকতা। জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অভিনয় ও আবৃত্তিতে অংশ নিয়ে বরাবরই প্রথম হতে থাকেন। ছোটগল্প প্রতিযোগিতায় ২০০৬, ২০১০ ও ২০১১ সালে ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন। সম্পাদনা করেন সাহিত্য পত্রিকা ‘আলোর পথে’ ও ‘দহন’। ২০০৭ সালে ‘প্রথমা রঙ্গমঞ্চ’ নামে একটা নাটকের গ্র“প প্রতিষ্ঠা করেন। এ পর্যন্ত এক ডজনের বেশি নাটক রচনা ও মঞ্চস্থ করেছেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের ‘পথনাটক নির্মাণ কর্মশালা’য় অংশগ্রহণ করেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় নাট্যোৎসবে ‘একটাই চাওয়া’ নাটকে এবং ২০১৩ সালের মে মাসে ‘স্বপ্ন ও দ্রোহের জাতীয় নাট্যোৎসবে’ কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের পরিবেশনায় নিজের লেখা ‘বৈচাপাগল’ নাটকে অভিনয় করেন। বর্তমানে অক্ষর আবৃত্তি একাডেমীর প্রশিক্ষক, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কালকিনি শাখা সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও কালকিনি শিল্পকলা একাডেমীর কার্যনির্বাহী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের অনুপ্রেরণা আর উৎসাহে এগিয়ে চলছেন তিনি। ধ্যানে-জ্ঞানে, চিন্তা-চেতনায় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকেই লালন করতে চান আজীবন।

সোমবার, ২০ মে, ২০১৩

কালকিনিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উদযাপন

জান্নাতুল ফেরদৌস মীম:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫২ তম জন্মবার্ষিকী ও নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তীর শততম বছর উদযাপন করে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা প্রশাসন। গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় অফিসার্স ক্লাবে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলে আজিমের সভাপতিত্বে লিটু চ্যাটার্জি ও মাজহারুল আলমের সঞ্চালনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপিকা তাহমিনা সিদ্দিকী। বরীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন কবি দুলাল সরকার ও অধ্যাপক দেদারুল আলম মুরাদ। আবৃত্তি করেন জারিন তাসনিম রাইসা, জান্নাতুল ফেরদৌস মীম, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, লিয়াকত হোসেন লিটন ও দুলাল সরকার। সংগীত পরিবেশন করেন অধ্যক্ষ মোঃ জসিম উদ্দিন, উমা দাস, সন্ধ্যা রানী বল, বন্ধন, একা, পৃথা, মানসী, অনিন্দিতা ও নন্দিতা।

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৩

কালকিনিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মরণ সভা

দুলাল সরকার :
দুই বাংলার বিখ্যাত কবি ও কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রয়াণে তাঁর জন্মস্থান মাদারীপুরের কালকিনিতে গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় কালকিনি প্রেসক্লাবের উদ্যোগে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কালকিনি প্রেসক্লাব সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের সঞ্চালনে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক। বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহরিয়াজ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপিকা তাহমিনা সিদ্দিকী, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ খালেকুজ্জামান, শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবি দুলাল সরকার, পৌর মেয়র এনায়েত হোসেন, মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমীর নাট্য প্রশিক্ষক আ.জ.ম কামাল, মাদারীপুর উদীচীর সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার দাস, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি অহিদুজ্জামান বুলেট ও উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি অহিদুজ্জামান আব্দুল হাই। কবির কবিতা আবৃত্তি করেন মাদারীপুর উদ্ভাসের সাধারণ সম্পাদক কুমার লাভলু, টুঙ্গিপাড়া প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ও সংস্কৃতিকর্মী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। বক্তারা কবির  নামে সড়ক, সুনীল মেলা ও সুনীল স্মৃতি পদক প্রবর্তণের দাবি জানান।

কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহ ও প্রেম

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
‘বল বীর
চির উন্নত মম শীর।’
মাথা তুলে দাঁড়াবার সাহসী উচ্চারণে সূচনা করলেন বিদ্রোহের বাণী। তিনি আর কেউ নন। আমাদের প্রিয় কবি নজরুল ইসলাম। একজন কবির দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভর করে তার সমসাময়িক অবস্থা বা প্রেক্ষাপটের ওপর। কোন সচেতন শিল্পী তার সময় ও সমাজকে কখনোই অস্বীকার করতে পারেন না। কবি কাজী নজরুল ইসলামও তার ব্যতিক্রম নন। কাজী নজরুল ইসলাম দেশের এমন এক সংকটময় মুহূর্তে আবির্ভূত হয়েছেন; যখন মুক্তি সংগ্রামের স্লোগান আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে। ফলে এ আন্দোলন সংগ্রামের প্রভাব পড়েছে তাঁর কাব্যে। দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার নেশায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন উন্মাদ। দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে হয়েছেন মহা বিদ্রোহী। কিন্তু তারপরও মানব মনের চিরন্তণ প্রেমের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে তাঁর কাব্যে। কখনো তাঁর বিদ্রোহের মাঝে প্রেম; আবার কখনো প্রেমের মাঝে বিদ্রোহ। দু’টোই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়েছিল প্রিয়তমার মতো।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বমহিমায় বাংলা সাহিত্যে চির ভাস্বর হয়ে আছেন। তাঁর ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘ঘুমভাঙার গান’, ‘ফণিমনসা’, ‘সর্বহারা’, ‘জিঞ্জির’, ‘সন্ধ্যা’, ‘প্রলয় শিখা’, ‘সাম্যবাদী’ ইত্যাদি কাব্যের মাধ্যমে তিনি জাগরণের গান শুনিয়েছেন মানুষকে। জাতির বন্দীত্ব মোচনের জন্য তাঁর প্রচেষ্টা ছিল অকৃত্রিম। তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেনÑ
‘লাথি মার ভাঙরে তালা,
যতসব বন্দীশালা,
আগুন জ্বালা আগুন জ্বালা।’
তাঁর এ বিদ্রোহ অনাসৃষ্টির জন্য নয়। পুরাতনকে ভেঙে নতুন করে গড়ার বিদ্রোহ। দেশ-জাতি-সমাজকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তাঁর বিদ্রোহ শাসক যাজক ও সমাজপতিদের বিরুদ্ধে। তার এ বিদ্রোহ নিরন্তর। যতদিন না এর কোন প্রতিকার হবে। তাইতো তিনি বলেছেনÑ
    ‘মহা বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
             আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে    উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে নাÑ
    বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত।
    আমি সেই দিন হব শান্ত।’
নিপীড়িত মানুষের মুক্তির পর কবির এ বিদ্রোহ সমাপ্ত হয়ে যাবে। বাস্তবিক অর্থে মানুষকে কতটা ভালোবাসলে এমন বিদ্রোহী হয়ে ওঠা যায়?

নিঃসন্দেহে কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’ একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জন্যই তিনি আজ সর্বত্র ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসাবে সমাদৃত। বিদ্রোহী অভিধায় অভিসিক্ত হলেও কাজী নজরুল ইসলাম একজন খাঁটি প্রেমিক। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জন্য কারাবরণ করলেও প্রেমের মহিমার ক্ষেত্রে আরো বেশি সমুজ্জ্বল তিনি। অন্তরে প্রেম না থাকলে কখনো এমন বিদ্রোহ আসেনা। ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণতূর্য’- এ যেন কবি নজরুলের অন্তরের কথা। এছাড়া নারীর প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গানে ও কবিতায়। নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন তিনি। নারীকে যথাযথ মর্যাদা দিতে গিয়ে কবি বলেছেনÑ
‘বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ কথা আমরা কখনোই অস্বীকার করতে পারি না।

‘আলগা করো গো খোপার বাঁধন’ কিংবা ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল’- এধরণের গানে তার অপার্থিব প্রেমের উৎসরণ লক্ষ্য করা যায়। এ ক্ষেত্রে তাঁকে প্রেমিক কবি হিসেবে আখ্যায়িত করলেও অত্যুক্তি করা হবে না। বিদ্রোহী রূপের আড়ালে তাঁর চিরায়ত কামনা-বাসনা-প্রেমকে ঢেকে রাখার সাধ্য আছে কার? কবি এও বলেছেন-
‘নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি প্রাণ,
যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।’
মূলত নারীর উৎসাহ-প্রেরণা ও প্রেমের মহিমা তাঁকে বিদ্রোহী হতে উৎসাহ যুগিয়েছে।

‘বিদ্রোহী’ কবিতায়ও তার প্রেম প্রকাশিত হয়েছে। নারী হৃদয়ের ব্যর্থতা, ক্ষোভ ও বাসনাকে কবি নিজের বিদ্রোহের উপাদান হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাইতো কবি বলেছেন-
‘আমি     বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,
আমি     ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!’
কিংবা
‘আমি     অভিমানী চির-ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত-     চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর!
    আমি গোপন-পিয়ার চকিত চাহনী ছল ক’রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তার কাঁকন-চুড়ির কন-কন্।’

কবি কাজী নজরুল ইসলাম একদিকে যেমন বিদ্রোহী; অপরদিকে আবার রোমান্টিক কবি। দীর্ঘাকৃতির ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মধ্যেও প্রেমের মহিমাকে তিনি উচ্চকিত করে তুলেছেন। কবির ‘মানুষ’, ‘সাম্যবাদী’ ও ‘আমার কৈফিয়ত’ প্রভৃতি কবিতায় বিদ্রোহ ফুটে উঠলেও সেখানে অত্যাচারিত, নিপীড়িত, অবহেলিত, অসহায় মানুষের প্রতি ছিল তাঁর সীমাহিন দরদ স্বার্থহীন ভালোবাসা। ‘সিন্ধু হিন্দোল’ কাব্যগ্রন্থে প্রেমের নিবিড়তা, চিরন্তনতা এবং বিচ্ছেদের তীব্র জ্বালার প্রকাশ দেখা যায়। সিন্ধুর অশান্ত রূপ কবিচিত্তের বিচ্ছেদ জ্বালা পথিকের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। কবি বলেছেন-
‘এক জ্বালা, এক ব্যথা নিয়া
তুমি কাঁদ আমি কাঁদি, কাঁদে মোর হিয়া।’

কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যে প্রেম বা রোমান্টিসিজম সম্পর্কে বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেনÑ
“প্রকৃতির মাঝে আত্মভাবের বিস্তার এবং একই সাথে প্রকৃতির উপাদান সান্নিধ্যে অন্তর ভাবনার উন্মোচন রোমান্টিক কবির সহজাত বৈশিষ্ট্য। ‘চক্রবাক’ কাব্যে নজরুলের এই রোমান্টিক সত্ত্বার প্রকাশ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ইতঃপূর্বের কাব্যসমূহেও আমরা নজরুলের প্রকৃতি চেতনার পরিচয় পেয়েছি কিন্তু ‘চক্রবাক’-এ এসে লক্ষ্য করছি, এখানে প্রকৃতি নজরুলের প্রজ্ঞাশাসিত ও অভিজ্ঞতালব্ধ মানসতার স্পর্শে এসে হয়ে উঠেছে সংযত, সংহত এবং শূন্যতা তথা বেদনার প্রতীকী ধারক।”

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা ছাড়াও বহুবিচিত্র গান রচনা করেছেন। প্রেম-বিরহ, বিদ্রোহ-বিপ্লবের ওপর তাঁর অসংখ্য গানও রয়েছে। গানে কী কবিতায় মানুষের কল্যাণে কবি পুরাতনকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। ধ্বংসের ভেতর থেকেই তিনি দেখেছেন নব সৃষ্টির উন্মাদনা। কবি সমস্ত অসুন্দরকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। তাইতো বিদ্রোহের পাশাপাশি আবার প্রেম সৌন্দর্যের সমন্বয় করেছেন। বিদ্রোহ করেছেন অন্যায়কে ধ্বংস করার জন্য, আর প্রেমের কথা বলেছেন মানবতাকে মজবুত করার জন্য। তাইতো নিঃসন্দেহে বলা যায়, এমন খাঁটি প্রেম-বিদ্রোহের কবি নজরুল ইসলাম ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
কালকিনি, মাদারীপুর।
১৮ মে ২০১৩
রাত ১১.৩৭ টা।

শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩

স্বপ্ন ও দ্রোহের জাতীয় নাট্যোৎসবে ‘বৈচাপাগল’ মঞ্চস্থ

বি এ কে মামুন:
‘দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সাথে মেলবন্ধন’- শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় স্বপ্ন ও দ্রোহের জাতীয় নাট্যোৎসবে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনায় আ জ ম কামালের নির্দেশনায় ‘বৈচাপাগল’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। গত ১৫ মে সন্ধ্যা ৮টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমী, মাদারীপুরের ব্যবস্থাপনায় কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের পরিবেশনায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটি মঞ্চস্থ হয় ।
এতে অভিনয় করেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, বি এ কে মামুন, শান্ত কুমার, সঞ্জীব তালুকদার, মেহেদী হাসান মাসুদ, শফিকুল ইসলাম জীবন, মাহমুদা আক্তার, ঝুমা আক্তার, শাকিলা আক্তার, মমগীব, সাকিব মাহমুদ মাসুম, আহসান হাবীব, রুমা ও তনিমা বাগচী।
নাটক শেষে নির্দেশকের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নাট্যব্যক্তিত্ব আরিফ হায়দার ও নৌমন্ত্রীর স্ত্রী সৈয়দা রোকেয়া বেগম প্রমুখ।

সোমবার, ৬ মে, ২০১৩

আমি আজ নির্বাক হবো

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে তুমি ভাবো কবিতা লিখবো কি না
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে বাইরে গেলে তুমি ভাবো নিরুদ্দেশ হবো কি না

সত্যি বলছি আজ তোমাকে ছুঁয়েÑ আমি আর কবিতা লিখব না
তোমার আঁচলে হাত বেঁধে বলছিÑ আমি আর নিরুদ্দেশ হবো না

আমি আজ নির্বাক হবো, আমি অপদার্থ হয়ে যাবো...

তবেই তো আর আমাকে নিয়ে তোমাকে এতো ভাবতে হবে না,
আমার জন্য ভেবে ভেবে রাত্রি জাগবে না।
তুমি পেয়ে যাবে পুরোদস্তুর গৃহপালিত এক মানুষ,
পেয়ে যাবে শয্যা পাশে কামনার আকাক্সিক্ষত পুরুষ।

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
কালকিনি, মাদারীপুর।
০৩ মে ২০১৩

শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৩

পাবনা থেকে হাসনাত আবদুল হাই’কে বলছি

মোশাররফ হোসেন মুসা:
মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে কখনও কখনও নিজের অজান্তে নিজের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করে ফেলে। সম্ভবত ব্যক্তিগত রাগ বিরাগের বশবর্তী হয়ে সাবেক আমলা ও কথা সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাইও একটি গল্পের মাধ্যমে নিজের ভিতরকার প্রকৃত রূপ প্রকাশ করেছেন। তিনি অতীতে সরকারের ব্রাহ্মণরূপী একটি চাকুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এবার ব্রাহ্মণদের পত্রিকা নামে খ্যাত ‘প্রথম আলো’র ১লা বৈশাখ সংখ্যায় ‘টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি’ নামক একটি গল্প লিখে আগের মর্যাদায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি উক্ত গল্পে পাবনা থেকে যাওয়া ‘সীমা’ নামে নিম্ন মধ্যবিত্তের একটি মেয়ে ঢাকায় গিয়ে কিভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করছে তার বর্ণনা দিয়েছেন। লেখক সীমারূপী মেয়ের মাধ্যমে কিছু রাজনৈতিক দলের শহরকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান নির্ভর রাজনীতিকে বুঝাতে গিয়ে প্রকারান্তরে শাহবাগ আন্দোলনের শ্লোগান কন্যাসহ প্রগতিশীল নেতাকর্মীদের চরিত্র হননের চেষ্টা করেছেন। বর্তমান সংকটময় মুহুর্তে গল্পটি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের অবস্থানকেই শক্তিশালী করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গল্পটি সম্পর্কে প্রগতিশীল মহল থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ আসায় ইতোমধ্যে ‘লেখক’ ও ‘প্রথম আলো’ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। গল্পটিতে শাহবাগ, গণজাগরণ মঞ্চ, জাতীয় যাদুঘর, আর্ট ইনস্টিটিউট, শিশুপার্ক শব্দগুলি একাধিকবার স্থান পেয়েছে। সেজন্য বলা যায়, পত্রিকাটি সুদূর প্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে গল্পটি ছেপেছে। পত্রিকাটি এই-ই প্রথম নয়, এর আগেও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লেখার কারণে একাধিকবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। অনেকে বলেছেন- এ গল্পের মাধ্যমে বর্ণচোরা উপাধিপ্রাপ্ত পত্রিকাটির নিরপেক্ষতার পোশাকটি আবারও খসে পড়ল।
লেখক এর আগে ‘ যখন ডিসি ছিলাম’ নামে এক প্রবন্ধে বিশিষ্ট শিল্পী ও গবেষক মুর্তজা বশিরকে হেয় করার চেষ্টা করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের ডিসি থাকাকালীন সময়ে মুর্তজা বশিরকে সরকারি ফ্ল্যাট পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ হওয়ার পরও মুর্তজা বশির না কি সামান্য সৌজন্যও দেখান নি। একই প্রবন্ধে তিনি জনৈক বিভাগীয় কমিশনারের আঞ্চলিক কথন ও একটি ঘরোয়া প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরল উক্তি নিয়েও উপহাস করেছেন। যতদূর জানা যায়, এরশাদের উপজেলা সৃষ্টির পিছনে যে কয়জন আমলার অবদান রয়েছে তার মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি ‘বিকেন্দ্রিকরণ, স্থানীয় সরকার ও সম্পদ আহরণ’ নামক এক গবেষণা গ্রন্থের ভূমিকায় উপজেলাকে কার্যকর করতে সম্পদ আহরণের জন্য কতকগুলো উৎসের কথা বলেছেন। আমি একদিন টেলিফোনে তাঁকে বলার চেষ্টা করি- এভাবে উপজেলাকে কার্যকর করা হলে ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হবে। উপজেলা হলো মধ্যবর্তী স্তর। একই সেবার জন্য জনগণ একাধিক স্তরকে কেন ট্যাক্স দিবে। তিনি উত্তরে বলেন- তাকে যেন জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা না করা হয়। তখন মনে মনে ভেবেছি- স্থানীয় সরকারের বাহুল্য স্তর সম্পর্কে যদি সামান্য জ্ঞান থাকত, তাহলে তিনি এভাবে উপজেলার জন্য ওকালতি করতেন না। এখন গল্পটি পড়ে ধারণা জন্মেছে, তিনি দেশের প্রগতিও বুঝেন না। একজন বোদ্ধা পাঠক তার সম্পর্কে বলেছেন- একজন সুসাহিত্যিক  সরকারি চাকুরিতে বেশি দিন টিকে থাকতে পারেন না , সচিব হওয়া তো বহু পরের কথা । বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পুরোধা কাজী আবদুল ওদুদ বহু আগেই বলেছেন- ‘যা আছে শুধু তা-ই সত্য নয়, যা হওয়া উচিত তা-ই মানুষের জন্য বিশেষভাবে সত্য।’ একইভাবে ‘প্রগতির জন্য যা হওয়া উচিত’ দাবিগুলি কোথা থেকে এলো, কার মুখ থেকে বের হলো, সেটা বড় কথা নয়। দাবিগুলো যথার্থ কি না সেটাই বিচার্য বিষয়। সে সঙ্গে আরও মনে রাখা দরকার- সীমাদের অসহায় অবস্থার জন্য কেবল রাজনীতিবিদরাই দায়ী নন, তার মতো আমলারাও দায়ী।
লেখক ঃ
গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।
ঈশ্বরদী, পাবনা।
সেল ঃ ০১৭১২-৬৩৮৬৮২