সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৩

রচয়িতা সম্পাদক কবি আরিফুল ইসলামের আঁকাবাঁকা পথচলা

:: এম এস আই সাগর ::
একবিংশ শতাব্দীর সূচনাতে যে সকল উদীয়মান তরুণ কবির আবির্ভাব ঘটেছে তাদের মধ্যে অন্যতম লিটলম্যাগ রচয়িতা সম্পাদক কবি আরিফুল ইসলাম। হৃদয়ের লুকায়িত আবেগ, অনুভূতি ও আত্মপ্রত্যয়টুকুই সাধারণত কবি-সাহিত্যিকরা বিভিন্ন বাচনভঙ্গি, কাব্যরস, গল্প, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন। আবার উপন্যাস, নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের মাধ্যমেও হতে পারে। মূলকথা সমাজে ঘটে যাওয়া প্রতিটি বাস্তব চিত্রের প্রতিচ্ছবি নিজের মত করে সাজিয়ে কবি-সাহিত্যকরা প্রকাশ করে থাকেন। তারই এক জ্বলন্ত প্রমাণ কবি ও ঔপন্যাসিক আরিফুল ইসলাম। বর্তমান তরুণ সমাজ যখন নেশার ঘোরে আচ্ছন্ন; তখন কবি ও সম্পাদক আরিফুল ইসলাম এর জীবন সৃজনশীল নেশায় ঢুলুঢুলু।
আরিফুল ইসলাম ১৯৮৩ সালের ১৫ মে জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার কিংজাল্লা নামক এক অজপাড়াগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হাবিবুর রহমান ও মাতা মোছাঃ ফাতেমা বেগমের পঞ্চম সন্তান তিনি। কবির শৈশব কেটেছে আঁকাবাঁকা মেঠোপথের মত। ছেলেবেলা থেকেই ডানপিটে স্বভাবের এই তুখোড় কিশোরের কাছে লেখাপড়া ছিল অস্বস্তিকর। কিন্তু সাহিত্যের প্রতি তার ছিল অকৃত্রিম অনুরাগ। যার ফলশ্র“তিতে প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি না পেরোতেই ১৯৯৬ সালে দৈনিক পত্রিকাতে ‘রক্তের বিনিময়ে’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। কবিতাটির দু’টি লাইন উদ্ধৃতি না দিলেই নয়-
‘রক্তে খেয়েছে স্বাধীনতার তারছিড়াঁ বিনিময়
বাঙালি সয়েছে তারও প্রতিফলন।’
এ থেকে অনুমান করা যায়, কবি তার কবিতায় দেশপ্রেমের নিবীড় প্রেমে পাগল ছিলেন। এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যুগোপযোগি না হওয়ায় তার শিক্ষাজীবন বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি। তবে তিনি যথেষ্ঠ মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমাপনিতে বৃত্তি অর্জন করেছিলেন। কৃতিতের সাথে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন ইসলামপুরের বিখ্যাত ইসলামপুর নেকজাহান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। স্থানীয় কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে কবি শিক্ষা জীবনের ইতি টানেন রীতিমত বাধ্য হয়েই। কিন্তু তার সাহিত্য জীবন থেমে থাকেনি। এরই মধ্যে বেরিয়ে আসে তার কলম থেকে কালজয়ী সব কবিতার পঙক্তি। তার উল্লেখ্যযোগ্য কবিতার মধ্যে ‘যা বাস্তব’,‘আমি বিদ্রোহী’,‘রক্তে বাংলাদেশ’,‘রচয়িতার কাছে খোলা চিঠি’,‘নন্দিনীর কাছে খোলা চিঠি’,‘আমি পূজারী নই’,‘কবিতায় আমি পথকলি’,‘কবিতায় আমি পথকলি-২’,‘কবি’,‘কলমের আতœকথা’,‘বিদায় অতপর বেঁচে থাকা’,‘মুক্তিযোদ্ধা বাতেন বলছি’,‘আমন্ত্রণ’,‘অধিকার চাই’,‘আমি বাঙালি’,‘স্বরসতীর প্রেম’,‘আমি হিন্দুদের অনুসারী’ প্রভৃতি।
তার কবিতায় ঢেউ খেলেছে প্রেম, প্রেমকে দিয়েছেন হাজারো রূপ। ‘নন্দিনীর কাছে খোলা চিঠি’ তার এক অনবদ্য ও জ্বলন্ত প্রমাণ-
 “চন্দ্রাণী বলেছিলো-
     পাঁচদিন পর জেল থেকে বেরিয়ে আসছি!
তোমার অপেক্ষার অবসান ঘটাতে
অন্তরের অব্যক্ত কথনগুলোকে-
উজাড়  করে দেবো তোমার তরে
নগ্ন পায়ে হেঁটে হেঁটে পাহাড়ের চূড়াঁয়-
গিয়ে ঘপটি মেরে বসে থাকবো
     রাতকে সন্ধ্যার সাথে সন্ধি করে দেবো
নদীর ভরা যৌবন দেখতে দেখতে...
দু’জনে মিলে একাকার হয়ে যাবো।
         আমি পোড়ামুখে হেসে বলেছিলাম,
          ভার্সিটি কখনো কি জেলখানা হয় ?”
তিনি ধর্মের ভেদাভেদ ভাঙতে সদা অস্থির। তাই তাকে পড়তে হয়েছে অনেক বির্তকের মধ্যে। তারপরও তার কলম তাকে ছুটি দেয়নি কখনো। তার কলমের কালি তার সাথেই সুর মিলিয়ে লিখেছে বির্তকের কবিতা “আমন্ত্রণ”-
“ভেঙে ফেল তোমার অস্পষ্ট মন্দির নামের পবিত্র উপাসনালয়
যেখানে অমানুষের রাজ্যে বসবাস করে অপদার্থ, বেহায়া আর মানুষ্যরূপী কিছু শয়তান
ভগবানের নামে মাটির স্বর্গে যারা ধোয়া উড়িয়ে উড়িয়ে পাপ করেই চলেছে দিন দিন
আমি হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী! কারণ আমি মানুষ রুপে জন্ম নিয়েছি কুকুরের বেশে নয়
জন্মের সাত জনম আগে আমি হয়ত সনাতন অথবা পুরোহিত ছিলাম
খ্রিস্টান হয়ত আমার প্রিয় ধর্ম ছিল অথবা বৌদ্ধ ছিলাম হয়ত”
তাকে ডাকা যেতে পারে টোকাইদের সহযোদ্ধা বলে। কারণ তিনি ব্যতিক্রমভাবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তার কবিতায় পথকলিদের। তার মন কেঁদেছে পথকলিদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে। লিপিবদ্ধ করেছেন অনেক কবিতা তাদের নিয়ে। তাই তিনি অবশ্যই আর সব কবিদের চেয়ে একটু আলাদা। একদিকে দেশ, একদিকে ধর্ম, একদিকে পথকলি। কোথায় নেই তার কলমের বিচরণ। পথকলির প্রতি তার ভালবাসা সত্যি প্রশংসনীয়। তিনি এভাবেই গেঁথে দিয়েছেন ‘কবিতায় আমি পথকলি-২’ কবিতায়-
“সমাজ বদলাতে হলে আগে আমার অধিকার দিতে হবে
দিতে হবে পথকলি ভাতা, পথকলি পেনশন, মহার্ঘ্য ভাতা-
সম্মান, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা অথবা ত্রাণের সবটুকু অধিকার
আমিও তো মুক্তিযোদ্ধা!
তোমরা দেশের জন্য একবার  যুদ্ধ করেছ; আর আমি যুদ্ধ করি প্রতিনিয়ত!।”
সমাজের অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন, মারামারি, হত্যা এগুলো দেখে তিনি চুপ ছিলেন না । লিখে গেছেন প্রতিবাদী হিসেবে অনেক বিদ্রোহী কবিতা। যেমনটি তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন “আমি বিদ্রোহী” কবিতায়-
“যুদ্ধে যাবো মা, আরেক বার যুদ্ধে যাবো
৭১’ এর যুদ্ধে যারা রাজাকার, আলবদর ছিল
তাদের ধ্বংস করার যুদ্ধে
আমি আজ বিদ্রোহী
রক্তে আমার বিস্ফোরিত হচ্ছে
জ্বালা মেটানোর ইচ্ছাগুলো
আমি উন্মাদ মাগো, বড্ড উন্মাদ।”
এভাবেই লিখেছেন তিনি অনেক কবিতা। একদিকে দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ; আরেক দিকে সাহিত্যকর্ম সত্যি আশ্চর্যজনক। তা তার লিখনিতে বুঝে নেবে যে কোন পাঠক। তার কর্ম জীবনের শুরুটা আরও চমকে দেওয়ার মত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার কর্মজীবন শুরু। তারপর থেকেই চলছে জীবনের সাথে যুদ্ধ। তারপরও থেমে থাকেনি তার সাহিত্যকর্ম। প্রথমে বাবার হাত ধরেই কর্ম শুরু করেন। মুদির দোকানে দীর্ঘদিন ব্যবসা করেন তার বাবার সাখে। তারপর তিনি পরিবারকে না জানিয়ে চলে যান চট্টগ্রাম । সেখানে জাহাজ ঘাঁটিতে কাজ করেন দুই বছর। তিনি ছিলেন জাহাজের মাল খালাসের সুপার ভাইজার। সেখানেও তিনি বেশিদিন টিকতে পারেননি। চলে আসেন ঢাকায় তার এক চাচাতো ভাইয়ের বাসায়। চাচাতো ভাইয়ের সহযোগিতায় একবছর চাকুরি করেন একটি কাপড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে ফ্লোর ইনচার্জ হিসাবে। সেটাও বেশিদিন টেকেনি। তারপর সোজা চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। এ যেন নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা। বাড়িতে এসে আবার চলে তার কর্মচেষ্টা। এবার চাকুরী নেন বেসরকারী ট্রেনে সুপারভাইজার পদে।  চাকরির সুবাদে তিনি ভ্রমণ করেছেন বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। আর কুড়িয়েছেন হাজারো অভিজ্ঞতা। এ থেকে প্রমাণিত হয়- কবি শুধু নিজ এলাকা নয়, সারা বাংলার সংগতি-অসংগতি সব কিছুই পাওয়া যায় তার কবিতায়। একবছর সততার সাথে চাকুরী করেন তিনি। ভালো না লাগায় আবার চলে আসেন। কর্মের স্বাদ যেন কোন ভাবেই মিটতে চায় না তার। গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকায় তিনি অল্প কিছুদিন জুতার কারখানায় চাকুরী করেন। তারপর এলাকার কোন এক শিল্পপতির সাহায্যে চলে যান চাঁদপুর। তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। চাঁদপুরের বিশিষ্ট শিল্পপতি আলম খানের ম্যানেজার হিসাবে দীর্ঘদিন (প্রায় ৪ বছর) চাকুরী করেন। এরপর ২০১০ সালের দিকে নিজগ্রামে ফিরে আসেন মালিককে না বলে। তারপরই তার জীবনের একাকী পথ চলা শুরু। বর্তমানে তিনি ভাই ভাই গ্র“পের ডিজিটাল টেকনোলজি এর নির্বাহী পরিচালক। শুরু করেন সাহিত্যচর্চা। রচয়িতা সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি উইড (অসহায় জনগোষ্ঠির জন্য একটি বিদ্যালয়) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। রাসান-২০১২ (একটি শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে তিনি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
দুই বাংলার বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘রচয়িতা’ সম্পাদনা করায় সত্যি তার সাহস অনুজদের আশ্চর্যের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে ভাবলে বিন্দুমাত্র ভুল হবেনা। রচয়িতা সম্পাদনা করে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বয়সে তরুণ এবং সম্পাদক হিসেবে নবীন হলেও তিনি ‘রচয়িতা’ প্রকাশ করে প্রমাণ করে দিয়েছেন, বয়স দিয়ে সাহিত্যিকদের মেধা মাপা যায় না বরং সাহিত্যিকের লেখাই তার জ্ঞানগড়িমা, দক্ষতা কিংবা অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে। অর্থাৎ বয়স কারো যোগ্যতা কিংবা অভিজ্ঞতা মাপার মাপকাঠি নয়। দেশ-বিদেশের অনেক সুনামধণ্য কবি-লেখকরা লিখেন তার রচয়িতায়। প্রতিবছর কবির নিজের অর্থায়নে ‘রচয়িতা সাহিত্য পরিষদ’ কর্তৃক রচয়িতার বাছাইকৃত কবি লেখকদের বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। জামালপুর জেলার জন্য অবশ্যই তা গর্বের বিষয়। তিনি একমাত্র সম্পাদক; যিনি সর্বপ্রথম ইসলামপুরে কবি-লেখকদের সম্মানিত করেছেন। করে যাচ্ছেন। তিনি ‘কাব্য কথা’ লিটলম্যাগ এর নির্বাহী সম্পাদক পদে নিয়োজিত আছেন। সদ্য প্রকাশিত ‘রচয়িতা’ (চার বাংলার ১০০ কবি ও কবিতা) সংখ্যাটি বেশ আলোচনার ঝড় তুলেছে লিটলম্যাগ মহলে। দেশ ও দেশের বাহিরের অনেক সনামধণ্য কবি-লেখকগণ লিখেছেন এ সংখ্যায়। এ যাবৎ ‘রচয়িতা’ প্রসঙ্গে দৈনিক যায়যায়দিন, দৈনিক ইত্তেফাক, বগুড়ার বিখ্যাত দৈনিক করতোয়া, জাতীয় অনলাইন প্রতিমুহূর্ত ডটকম, জাতীয় সাহিত্যবিষয়ক অনলাইন অন্যধারা ডটকম ও মাদারীপুরনিউজ ডটকম-এ আলোচনা স্থান পেয়েছে।
এছাড়াও ডজন খানেক অনলাইন পত্রিকায় এসেছে রচয়িতার আলোচনা। কবি আরিফুল ইসলামকে নিয়ে বিশেষ আলোচনা ছাপা হয়েছে জামালপুরের সনামখ্যাত ‘দৈনিক আজকের জামালপুর’ পত্রিকায়। মাদারীপুর জেলার কালকিনি প্রেস ক্লাবে রচয়িতার মোড়ক উন্মোচন করেছেন রচয়িতার সহ-সম্পাদক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। দ্বিতীয় বারের মত মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে সহ-সম্পাদক সুমন হাফিজের সভাপতিত্বে ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত শান্ত মরিয়ম এন্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি’র ক্যাম্পাসে। এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় কবি তার নিজের গুণে কত বিচক্ষণতার স্বাক্ষর রেখেছেন। 
তিনি একাধারে কবি, সম্পাদক, ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক। তাকে সব্যসাচী বললেও অত্যুক্তি হবেনা। তার লেখা প্রথম উপন্যাস ‘অপেক্ষার শেষ প্রহর...’ ২০১১ সালে প্রগতি প্রকাশনী, আরামবাগ, ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়ে সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। উপন্যাসে তিনি সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন যা ভাবিয়ে তুলেছে অনেক পাঠকের অন্তর। আলোচনা এসেছে প্রায় ১০-১৫ টি আঞ্চলিক পত্রিকায়। তার লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কালোমুখোশ’। প্রকাশক সৈকত আহমেদ বিল্লালের সাহয্যে প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে। রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে লেখায় তা স্থানীয় প্রশাসনের কারণে বিক্রি নিষিদ্ধ হয়। ‘কালো মুখোশ’ এর একটা কবিতা “মানুষ ঝালাই” এরকম-
“দেশটা তোর বাবার বলেই দেখাস্ যত ক্ষমতা
ভেবে দেখ্ কি  হবে তোর ক্ষেপে যদি জনতা”
তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘একাকী জীবন’। নিরেট প্রেম ধরা দিয়েছিল কবির কলমে। বাস্তববাদী প্রেম কতটা নির্মল হয় তা বোঝাতে চেয়েছেন কবি তার একাকী জীবন কাব্যগ্রন্থের “আটটি বছর পর” কবিতায়-
ভুল করেই আবার আসার অপেক্ষায়-
হাতে হাত,আর দু-বাহুর স্পর্শে চরম তৃপ্তি প্রাপ্তির প্রত্যাশায়
যৌবন যেখানে দাঁড়িয়ে হাস্যরসে
শূণ্য অযৌবনের লাঠির উপর ভর করে।”
তার সাহিত্য কর্ম আর জীবন কর্ম সত্যি ভাবিয়ে তোলার মতই।
 কবি আরিফুল ইসলাম অনেক জায়গায় সাহিত্যকর্মের জন্য পেয়েছেন অনেক সম্মান। ২০০৬ এ পেয়েছেন চাঁদপুর সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক কবিতার জন্য বিশেষ সনদ ও কবি, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবি সেলিনা পারভিন এর স্বরণে  ঢাকা পাবলিক লাইব্ররিতে আয়োজিত বিশেষ ক্রোড়পত্রে কবিতা লেখার জন্য পেয়েছেন বিশেষ সনদ ২০১৩। এ যাবৎ কবির অনেক কবিতা গল্প, উপন্যাস, বাংলাদেশসহ পশ্চিম বঙ্গের অনেক সনামধণ্য লিটলম্যাগে প্রকাশিত হয়েছে।
লেখক: এম এস আই সাগর
কবি, শিক্ষক, সম্পাদক ও আলোচক
ইসলামপুর, জামালপুর

অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান: লোকপ্রিয় স্বপ্নবিলাসী এক রসিক মানব

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। লোকপ্রিয় স্বপ্নবিলাসী এক রসিক মানব। তাঁর সাথে আমার পরিচয় বা যোগাযোগ বছর খানেকের। ২০১২ সালের জুলাই মাসে গাজীপুরের কোনাবাড়ি ক্যামব্রিজ কলেজে যোগদান করি। প্রথমদিন পাঠদানের পর আর ভালো লাগেনি। মন কেমন পালাই পালাই করছিল। পালাবার পথ খুঁজছিলাম। হঠাৎ করে পেয়ে গেলাম। কলেজ জীবনের এক বড় আপার সাথে ফোনে কথা হয়। তিনি জানালেন সাহেবরামপুর কবি নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজে একজন খন্ডকালিন বাংলা প্রভাষক দরকার। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি তাঁর সাথে কথা বলে আমাকে বললেন, কালকিনি চলে যাও। স্যারের সাথে ফোনে কথা বলো। সেই তাঁর সাথে প্রথম কথা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে কথা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। ভবিষ্যতেও হবে। খুব অল্প দিনেই আমার মনে হয়েছে তিনি লোকপ্রিয় এক মানুষ। কিন্তু আত্মপ্রচার বিমুখ। তবে স্বপ্নবিলাসী ও পুরোদস্তুর রসিক মানুষ। তাঁর নির্মল হাসি ও নিভাঁজ গল্পবলার ঢঙ দেখেই তার উদারতা ও মনের বিশালতা অনুমান করা যায়। জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও তার কর্মচাঞ্চল্য ও আশাবাদ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। তিনি আমাদের অনুকরণিয় আদর্শ।
জন্মপরিচয়:
অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান ১৯৩৭ সালের ১ জানুয়ারি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের সাহেবরামপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আলহাজ্ব আব্দুর রহমান রাঢ়ি ও মাতা মরহুমা জোবেদা খাতুন। ছয় ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। কিশোর বয়সেই তিনি প্রতিবেশি আ. মাজেদ আকনের কন্যা মোসা: মনোয়ারা বেগম বুনুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর এবং বর্তমানে তিনি পাঁচ পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক।
অধ্যয়ন:
১৯৪৭ সালে গ্রামের জুনিয়র স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথম বিভাগে পাস করে চলে যান জেলা শহরে। ১৯৫২ সালে মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৪ সালে মাদারীপুর সরকারি নাজিমুদ্দিন কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় সম্মানসহ এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন:
অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে দীর্ঘকাল অধ্যাপনা করেন। তিনি মাদারীপুর সরকারি নাজিমুদ্দিন কলেজ, কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ, নরসিংদী সরকারি কলেজ ও টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ডের একত্রীকরণ পর্যন্ত এর সচিব হিসেবে এবং কিছুকাল তিনি এ সংস্থার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে জাতীয় শিক্ষা কমিশনে প্রধান প্রতিবেদক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং সিঙ্গাপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ভ্রমণ করার সুযোগ লাভ করেন। সর্বশেষ তিনি জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) পরিচালকের পদ থেকে ১৯৯৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর ঢাকা সেনানিবাসস্থ শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কিছুকাল কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৩-১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনার্থে গঠিত সাত সদস্য বিশিষ্ট সুপারিশমালা প্রনয়ন কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। তিনি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের সাহেবরামপুর কবি নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমানে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
সাহিত্যচর্চা:
স্কুল জীবন থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫১ সালে দশম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় পুরান বাজারের সাহিত্য মজলিসে যাতায়াত শুরু করেন। একই বছর মাদারীপুর এমএম হাফিজ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। ১৯৫৪-১৯৫৫ সালে মাসিক সাহিত্যপত্র ‘মোহাম্মদী’তে ছোটগল্প ও প্রবন্ধ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাঁর সাহিত্যচর্চার সূচনা। ১৯৫৬-১৯৫৭ সালে ‘শুধু কাহিনী’,‘কুমার নদীর ইতিকথা’,‘দাদুর আঙ্গিনা ও আকাশ’,‘অধিকার’ ও ‘কেচ্ছার মানুষ শৈজুদ্দিনের দ্বিতীয় মরণ’ নামে কয়েকটি ছোটগল্প  প্রকাশিত হয়। অনুবাদ সাহিত্যে তার অবদান বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে ঢাকার তৎকালিন সিভিল সার্জন জেমস টেলর ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের মেডিক্যাল বোর্ডের সচিব লর্ড হাসিনসনের নির্দেশে এদেশের রোগব্যাধি সংক্রান্ত টপোগ্রাফি লিখতে গিয়ে ঢাকা তথা বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, মানুষ ও উদ্ভিদরাজির চমৎকার বিবরণ পেশ করেন এবং তা ‘টপোগ্রাফি অব ঢাকা’ নামে কলকাতা মিলিটারি অরফ্যান প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান কর্তৃক এই দু®প্রাপ্য ও মূল্যবান গ্রন্থটি ‘কোম্পানি আমলে ঢাকা’ নামে অনূদিত হয়ে বাঙলা একাডেমী থেকে ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় এবং পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। তাঁর অন্য অনূদিত গ্রন্থের নাম ‘বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস’ (প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড)। তাঁর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘এই আঙিনা ও আকাশের উপাখ্যান’। এছাড়া ২০০৪ সালে ‘ঔপনিবেশিক প্রশাসন কাঠামোঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা:
অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, অনুবাদক, শিক্ষানুরাগী, জনগণের ক্ষমতায়ন ধারার লেখক, গবেষক, আলোচক, সাহিত্যিক ও সমাজ কর্মী। তিনি ‘দৈনিক বাংলা’,‘সাপ্তাহিক রোববার’,‘দৈনিক ইনকিলাব’,‘দৈনিক সকালের খবর’ সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের নিয়মিত কলাম লেখক। তিনি মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ক্যালেন্ডারে ইংরেজির সাথে বাংলা তারিখ সংযুক্ত করা, সমমান ও সমমর্যাদার ক্যাডার সার্ভিস গঠন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আন্তঃ ও বহিঃ পরীক্ষার গড় নম্বরে ফলাফল প্রকাশ ও প্যাকেট ভিত্তিক পাশ-ফেল রহিতকরণ, কৃষিভিত্তিক মিনি গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেন। গত ২৯ জুলাই ২০১৩ তারিখে দৈনিক সকালের খবরের ‘সম্পাদকীয়’ পাতায় ‘গণতন্ত্র, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জাতীয় সার্ভিস সিস্টেম থেকে বৈষম্যদূরীকরণ’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে তিনি বলেন,‘পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও শোষণের হাতিয়ার হিসেবে এই ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের ভিত আরো পাকাপোক্ত করা হয়। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির পরিবর্তে তৎকালিন সিএসপিরা অধিক ক্ষমতা ও মহিমায় শাসন চালাতে থাকে। জনগণ থাকে অপাঙক্তেয় ও অবহেলিত।’ এছাড়া চ্যানেল আই আয়োজিত টক শো’তে অতিথি হিসাবেও অংশগ্রহণ করেন।
লোকপ্রিয় স্বপ্নবিলাসী এক রসিক মানব:
তাঁর রসবোধ চমৎকার। গল্পে ঢঙে উপস্থাপনায় সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ। তৎকালিন উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আলোকচিত্র দেখেছি তাঁর গ্রামের বাড়ি সাহেবরামপুরের ঘরের দেয়ালে। মেয়ের দেওয়া একটা শখের ক্যামেরায় গ্রামের প্রকৃতির ছবি তুলে তা ফ্রেমবন্দী করে রেখেছেন। মাঝে মাঝে তিনি বাড়ি আসেন। হাসি-আনন্দ-আড্ডায় মাতিয়ে রাখেন পুরো বাড়ি। নাতি-নাতনিদের নিয়ে গল্প করে, গ্রামের মেঠোপথ ঘুরে কিংবা ফসলের মাঠের কিনারে বসে কাটিয়ে দেন পড়ন্ত বিকাল কিংবা জ্যোৎøা রাতের গহীণ অবধি।
শেষ হয়েও হলো না শেষ:
তাঁর কথা কীভাবে এত স্বল্প কথনে শেষ করা যায়? আমার জানা নেই। আমার মনে হয় এ যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ। মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান মনে প্রাণে একজন কবি-স্বভাবের মানুষ। তাঁকে প্রকৃতিপ্রেমিক বললেও অত্যুক্তি হবে না। গ্রামকে ভালোবাসেন মায়ের মতোই। পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি তাঁর আর্কষণ দুর্নিবার। এই লোকপ্রিয় মানুষটির মধ্যে একটি মহৎ ও সুন্দর মনের সন্ধান মেলে। তার সহজাত সারল্য, চিত্তের ঔদার্য, অনুভূতি ও উপলব্ধির তীব্রতা তাকে করেছে মহিমান্বিত। দীর্ঘ ও সফল অধ্যাপনা জীবনে তার সাহচর্যে ও স্নিগ্ধ মনের স্পর্শে উজ্জীবিত হয়েছে অগণিত ছাত্রছাত্রী ও অসংখ্য গুণগ্রাহী, অনুরাগী বন্ধুজন। এমন লোকপ্রিয় স্বপ্নবিলাসী রসিক মানুষ বেঁচে থাকুক অনন্তকাল। তাঁর দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।

তথ্যসুত্র:  কোম্পানি আমলে ঢাকা: জেমস্ টেলর- মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান অনূদিত।
দৈনিক সকালের খবর, ২৯ জুলাই’ ২০১৩ইং।
একজন লোকপ্রিয় মানুষ আসাদুজ্জামান তাঁর জীবন ভাবনা ও কর্মসাধনা- অধ্যাপক সফিউল আলম
লেখক:   সাধারণ সম্পাদক, কালকিনি প্রেস ক্লাব
    কবি, কলাম লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী

আমি আমার নয়

:: এম,ডি রাসেল ::
আমি আমাকে কখনও নিজের ভাবি না
আমি সবার,সব কিছুর ভিতরে,
সকলের মাঝে আমি আমাকে খুঁজে পাই।
 কখনও বাঁশরীর বাঁশীর সুরে
আবার কবির নিরব ভাবনাতে
সেখানে আমি আমাকে খুঁজে পাই।
সকাল বেলার সূর্য,সোলালী রঙের আলো ছড়ায়
আলোকিত করে ধরণীর বুক
লাঙ্গল কাঁধে কৃষক মাঠে যায়
রাখাল ধরে যখন গান
শিল্পীর মনের মাধুরী দিয়ে
আঁকে যখন রূপসী বাংলার ছবি
সেখানে আমি আমাকে খুঁজে পাই।
প্রিয়াহারা বেদনায় কাতর
হতচকিত জীবনের মাঝে
সেখানে আমি আমাকে খুঁজে পাই।
রমণীর চোখে মায়াবী যাদু
মিনতি করে ভালোবাসা চাওয়া
ঠোঁটের বাঁকা হাসিতে মুক্তো ঝরায়
জন্ম নেয় ভালোবাসার ফন্দি
সেখানে আমি আমাকে খুঁজে পাই।
যুবক, যৌবনের দাপটে পাড়ি দেয়
অজানা পথে,ফিরিবার আশা নেই
সৃষ্টি করে নতুন কিছু
সেখানে আমি আমাকে খুঁজে পাই।
যখন কোনো যুদ্ধ বাঁধে
 নিজ মাতৃভূমির রক্ষার্থে
জীবন বাজি ধরে যুদ্ধ করে
সেখানে আমি আমাকে খুঁজে পাই।
উৎসর্গ:- জনাব কাজী কামরুজ্জামান স্যারকে।


শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৩

প্রসঙ্গ: মালালা- আসলে কোনটা সত্য?

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
রাত তিনটায় একটি অনলাইন পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে চোখ আটকে গেল। কৌতুহল নিয়ে পড়ে জানলাম, মালালার ঘটনা না কি পুরোটাই সাজানো নাটক। আসলে কোনটা বিশ্বাস করবো? মালালার ঘটনা একটা সাজানো নাটক; পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ডনের ব্লগে এমন দাবি করা হয়েছে।
অনলাইন পত্রিকাটি বলছে, নারীশিক্ষার পক্ষে কলাম ধরায় পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় গত বছর ৯ অক্টোবর মালালা ইউসুফজাইর ওপর হামলা চালায় তালেবান। গুলি লাগে মালালার মুখ আর মাথায়। সে সময় সঙ্গে থাকা আরো তিনজন আহত হন। এরপর গণমাধ্যমের 'কল্যাণে' স্কুলপড়ুয়া মালালা মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি। প্রথমে পাকিস্তান এবং পরে ইংল্যান্ডে কয়েক মাসের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এত কিছুর পরও ১৫ বছরের মালালা নারীশিক্ষার পক্ষে অনড় থাকার ঘোষণা দেন। মালালা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, হাজারো বাধা টপকাতে তিনি প্রস্তুত। জঙ্গি হামলার ভয়ে মালালা বর্তমানে ব্রিটেনেই থাকছেন। এবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তাঁর নামটাই ছিল প্রত্যাশার শীর্ষে। যদিও শেষমেষ পুরস্কার তিনি পান নি। আর সে পুরস্কার না পাওয়ার আলোচনা শেষ হতে না হতেই 'বোমা' ফাটালেন পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ডনের ব্লগ।
ডন পত্রিকা ও অনলাইনের জ্যেষ্ঠ কলামিস্ট নাদিম ফারুক পারাচা ব্লগে দাবি করছেন, কাহিনী আগেই লেখা ছিল, মালালা সে অনুযায়ি অভিনয় করেছে মাত্র। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও পশ্চিমা বিশ্ব না কি এ নাটক সাজিয়েছে। যা গত ১০ অক্টোবর পাকিস্তান সময় বিকাল ৪টা ৪৭ মিনিটে দ্য ডনের ব্লগে আপডেটসহ প্রকাশ করা হয়। পরে অবশ্য ১১ অক্টোবর শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিটে আপডেট দিয়ে জানানো হয়, ব্লগের লেখাটি ব্যঙ্গাত্মক ও কল্পকাহিনী। কিন্তু ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সারাবিশ্বে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা ঝড় শুরু হয়ে যায়।
ব্লগে বলা হয়েছে, মালালার ঘটনা সারাবিশ্ব যা জেনেছে তা ভুল। আসল ঘটনা একেবারে উল্টো। লেখক ফারুক বলছেন, মালালার বিষয়টি নিয়ে এ বছরের এপ্রিল মাসে ডনের একটি দক্ষ প্রতিবেদক দল সোয়াত এলাকায় গভীর অনুসন্ধান চালিয়েছে। তারা পাঁচ মাসের অনুসন্ধানে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মত তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন। মালালা মূলত সোয়াতে জন্মগ্রহণ করে নি, এমনকি সে পশতুনও নয়। সোয়াতের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ইমতিয়াজ আলী খানজাই ডনের প্রতিবেদককে না কি জানিয়েছেন, তার কাছে মালালার ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আছে। যা প্রমাণ করে মালালা পশতুন নয়। রিপোর্টটি দেখিয়ে তিনি জানান, তিনি মালালার ডিএনএ সংগ্রহ করেছেন। যখন তিনি মালালার ডিএনএ সংগ্রহ করেছেন; তখন মালালা শিশু ছিল। সে সময় মালালার কানের সমস্যা নিয়ে তার কাছে এসেছিল।
ডাক্তার ডিএনএ পরীক্ষায় দেখেন, মালালা আসলে ককেশীয়। ধারণা করা হচ্ছে- মালালা পোল্যান্ড থেকে এসেছে। এরপর তিনি মালালার বাবাকে ডেকে পাঠান। তখন তিনি মালালার বাবাকে বলেন, আমি মালালার আসল পরিচয় জানি। এ কথা শুনে মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই ঘাবড়ে যান। তিনি বলেন, এ কথা আমি যেন প্রকাশ না করি। আমি তাকে বলি, আপনি যদি সত্য ঘটনা খুলে বলেন তবে কাউকে বলব না। মালালার বাবা তখন ডাক্তারকে বলেন, মালালার প্রকৃত নাম হচ্ছে জেইন। ১৯৯৭ সালে সে হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেছে। তার প্রকৃত বাবা-মা খ্রিস্টান মিশনারিতে ছিলেন। তারা ২০০২ সালে সোয়াতে বেড়াতে এসেছিলেন এবং মালালাকে উপহার হিসেবে তার কাছে দিয়ে যান। ওই সময় তারা গোপনে খ্রিস্টান ধর্মগ্রহণ করেন।
এ সময় ডনের প্রতিবেদক ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন তিনি মালালার আসল পরিচয় এখন প্রকাশ করছেন। তখন ডাক্তার বলেন,‘তিনি মনে করেন মালালাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে দাঁড় করানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে পাঠানো হয়েছিল।’ এমনকি গুলিবর্ষণকারির ডিএনএ পরীক্ষা করেও ডাক্তার আবিষ্কার করেন যে, সে ইতালি থেকে এসেছে। ডাক্তার বলেন, আমি ২০১২ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এ বিষয়গুলো জানিয়ে ই-মেইল করি। এর কয়েকদিন পর তার ক্লিনিকে পুলিশ অভিযান চালায়। তার কয়েকজন কর্মচারীকে সে সময় নির্যাতনও করা হয়েছিল। তিনি জানান, এ বছরের জুন মাসে ডাক্তার আইএসআই’র একজন তরুণ কর্মকর্তার কাছে যান। তখন ওই কর্মকর্তা ক্লিনিকে এমন অভিযানের জন্য তার কাছে ক্ষমা চান।
অফিসার ডাক্তারকে বলেন, আইএসআই মালালার আসল পরিচয়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক অবস্থানে আছে। অনেক অনুরোধের পর ডাক্তার ওই আইএসআই অফিসারের মুঠোফোনর নাম্বার দেন। এরপর সেই ডাক্তার আইএসআই অফিসারের নম্বর দেন ডনের এ প্রতিবেদককে। ডনের প্রতিবেদকের সাথে অফিসার দেখা করেন সোয়াতের একটি পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ে। আইএসআই’র সেই অফিসার ডনের প্রতিবেদককে জানান, মালালার ওপর হামলার ঘটনা পাতানো হয়েছিল গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পথ পরিষ্কার করতে পুরো ঘটনাটি পাকিস্তান ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সাজানো হয়েছিল। অফিসার জানান,‘এটা একটা নাটক। পাকিস্তান সেনাবাহিনী উত্তর ওয়াজিরিস্তান আক্রমণের একটি অজুহাত দাঁড় করানোর জন্য এটি মঞ্চস্থ করেছিল।’
তার দেওয়া তথ্য মতে, ১ অক্টোবর ১৯৯৭ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে হাঙ্গেরিয়ান বাবা-মায়ের ঘরে মালালার জন্ম । তার নাম রাখা হয় জেইন। ২০০২ সালের ৪ অক্টোবর তার বাবা-মা সিআই’র সাথে যুক্ত হন। তাদের একটি সংক্ষিপ্ত সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ২০০৩ সালের ৭ অক্টোবর তারা পাকিস্তানে প্রবেশ করেন এবং সোয়াতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ শুরু করেন। সে সময় তারা আইএসআই’র একজন নিু শ্রেণির এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি পুরো পরিবারকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করেন। তারা জেইনকে তার কাছে রেখে যান। পরবর্তীতে ওই এজেন্ট জেইনের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মালালা। ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর মালালা ব্লগে লেখা শুরু করেন এবং সেখানে তিনি সোয়াতের জঙ্গিদের অস্ত্রবাজি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। ২০১১ সালের ২১ অক্টোবর জঙ্গিরা তাকে আনুরোধ করে এ ধরণের ব্লগ না লিখতে। ২০১২ সালের ১ অক্টোবর সিআইএ নিউইয়র্কে বসবাসকারী ইতালিয় বংশোদ্ভুত রবার্ট নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করে। এবং নিয়োগের পর তাকে গুলি চালানোর ওপর স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর সিআইএ মালালার ওপর মিথ্যা গুলিবর্ষণের জন্য আইএসআই’র সাথে পরিকল্পনার ব্যাপারে আলোচনা করে এবং বিষয়টি মালালা ও তার পরিবারকে অবগত করা হয়। ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর রবার্ট সোয়াত এলাকায় প্রবেশ করে উজবেক বলে পরিচয় দেয়।
সবশেষে ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর রবার্টকে গুলিহীন একটি বন্দুক সরবারহ করা হয়। বন্দুকধারী মালালার ওপর মিথ্যা গুলি চালায়। এ সময় মালালা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার অভিনয় করে। মালালার কাছে আগে থেকে টমেটোর সস রাখা ছিলো যা সে শরীর ও মুখে মেখে নেয়। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একটি অ্যাম্বুলেন্সও সেখানে পৌঁছায় এবং মালালাকে নিয়ে যায়। এরপর পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সারাবিশ্বে প্রচার করতে থাকে যে, মালালাকে তালেবান জঙ্গিরা গুলি করেছে।
এই কথাগুলো যদি সত্য ঘটনা হয়, তাহলে কত বড় ধোঁকা দেওয়া হলো সারা বিশ্বকে। তা আর ভাববার অবকাশ রাখেনা। তাই যদি হয় তাহলে এর জবাব দেবে কারা? তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়। আসলে কোনটা সত্য? ডনের প্রতিবেদন না কি মালালার ওপর ঘটে যাওয়া কাহিনী। মালালাকে নিয়ে সারা বিশ্ব যখন মুখর; তখন এমন একটা সংবাদ মানুষকে ভড়কে দেবে। এটাই স্বাভাবিক। এদিকে আবার বাংলাদেশের অন্য একটি অনলাইনের বার্তা সম্পাদক আমাকে বললেন, ঘটনা ভূয়া। মালালা ঠিক আছে। পাকিস্তানের ্ওই দৈনিক একটি স্যাটায়ার লিখেছে। সেটাকে না বুঝে বাংলাদেশের অনেক পত্রিকা নিউজ করেছে। এখন আমরা পাঠক সমাজ কী করবো? কী আর করার? আছি শুধু সময়ের অপেক্ষায়। সত্য একদিন বেরিয়ে আসবেই। আজ অথবা কাল। সে অপেক্ষাতেই রইলাম।

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী।

সেই সে রাতে

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সেদিনের সেই বৃষ্টিভেজা রাতে
হাতে হাত রেখে এক বুক সাহস নিয়ে দু’জনের নিরন্তর পথচলা
আজ শুধু স্মৃতি;
শরতের বৃষ্টিজলে অনুভবের কাঁশফুল ছুঁয়ে গেছে হৃদয়
পুলকের কোনো এক মায়াবি আবির্ভাবে
জীবনের না পাওয়া সব সত্যগুলো পেয়েছিলাম সেদিন।

ভিজেছে এই তনু-মন শরৎপ্রেমে;
প্রেমের গহীন জলাশয়ে সাঁতরিয়ে পেয়েছে সব না পাওয়াকে
আহ্ পৃথিবীর সর্বসুখ যেনো ছিলো তারই মাঝে!

কবি: নিজস্ব প্রতিবেদক, আলোকিত বাংলাদেশ।