ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, ড. এ.কে.এম. রিয়াজুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন মুসা:
গণতান্ত্রিক ¯া’ নীয় সরকার কি ও কেন এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থানীয়করণ
এক কথায় বলা যায়, স্থানীয় মানুষের সেবা ও উনড়বয়নের জন্য দেশের প্রতিটি স্থানীয় প্রশাসনিক ইউনিটে গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে যে
স্বাবলম্বি ও স্বশাসিত সরকার ব্যবস্থা থাকে তাকেই গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বলে। স্থানীয় সরকার নিজস্ব আয় দ্বারা প্র মে শতভাগ
সিস্টেম কস্ট তথা দাপ্তরিক খরচ, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও অনির্বাচিত কর্মকর্তা-কর্মীদের বেতন-ভাতা, বিদ্যুৎ বিল, টেলিফোন বিল,
ইন্টারনেট বিল, আপ্যায়ন ব্যয় ইত্যাদি নির্বাহ করে থাকে, এবং একই সঙ্গে নিজস্ব উদ্বৃত্ত আয়ে ও প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের
আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে নিজস্ব এলাকায় সেবামূলক ও উনড়বয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত করে থাকে। তাই বলা যায়, স্থানীয়
সরকার স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া মানেই গোটা দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া, এবং স্থানীয় সেবা ও উনড়বয়ন মানেই সমগ্র দেশের সমষ্টিগত সেবা ও
উনড়বয়ন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এসব বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে কোনও স্বাবলম্বী ও
স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নেই। তাই, ২০২০ সাল ও ২০৫০ সাল নাগাদ নগরায়নসহ অন্যান্য পরিবর্তনশীল বিষয়গুলো
বিবেচনায় নিয়ে গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে স্বাবলম্বি, স্বশাসিত ও গতিশীল স্থানীয় সরকাব স্থাপন করতে ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের
রূপরেখা’টি একটি সমন্বিত ডিজাইন হিসেবে প্রণীত হয়েছে, এবং তা আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯৭ সালের ১৩ জানুয়ারী ঢাকায় জাতীয়
জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় সেমিনারে সকলের বিবেচনার জন্য উপস্থাপিত করা হয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি
যে, এই রূপরেখাটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল স্থানীয় স্তরে গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থানীয়করণ অর্থাৎ
প্রতিটি স্থানীয় ইউনিটে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হতে পারে।
স্বশাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠাকরণ, কেন্দ্রীয় সরকার নামকরণ ও সরকারের প্রকারভেদকরণ
বাংলাদেশে বর্তমানে একটিই সরকার, তা হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। একটি মাত্র সরকার থাকায় ‘কেন্দ্রীয় সরকার’
প্রত্যয়টি ব্যবহৃত হওয়া সঠিক নয়, যদিও প্রায় সকলে তা উলেখ
করে থাকেন। বিদ্যমান ব্যবস্থায় ‘স্থানীয় সরকার’ নামে ইউনিয়ন
পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও নগর কর্পোরেশন বাংলাদেশ সরকারের নির্বাহী বিভাগের স্থানীয় এজেন্ট/শাখা হিসেবে কাজ
করছে; এসব স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে স্বাবলম্বী ও স্বশাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নয় বলে তাদের পরিবর্তে সকল
স্থানীয় স্তরে গণতন্ত্রের ভিত, স্বাবলম্বী ও স্বশাসিত হিসেবে স্থানীয় সরকার গঠন করতে হবে এবং আইন, বিধি-বিধান ও বইপু
স্তকের যেসব জায়গায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বোঝাতে শুধু “সরকার” শব্দটি রয়েছে সেসব জায়গায় “কেন্দ্রীয় সরকার”
শব্দগুচ্ছ প্রতিস্থাপন করতে হবে। তা করা হলে বাংলাদেশে দুই প্রকারের সরকারের Ñ কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার Ñ অস্তিত্ব
আইনতঃ প্রতিষ্ঠিত হবে, এবং তা সকলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দৃশ্যমান হবে।
স্থানীয় ইউনিট ও স্থানীয় সরকারের প্রকারভেদকরণ
বাংলাদেশের স্থানীয় ইউনিটগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: (১) গ্রামীণ স্থানীয় ইউনিট, যেমন- ৪,৫০৩টি ইউনিয়ন এবং ১৭৪টি
উপজেলা, কারণ এসব ইউনিট আইনীমতে গ্রামীণ এলাকা নিয়ে গঠিত; (২) নগরীয় স্থানীয় ইউনিট, যেমন- ৩০৯টি পৌরসভা ও ৬টি
নগর কর্পোরেশন, কারণ এসব ইউনিট আইনীমতে শুধু নগরীয় এলাকা নিয়ে গঠিত; এবং (৩) গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় ইউনিট, যেমন-
৭টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা ও ৩০৮টি উপজেলা, কারণ এসব ইউনিট গ্রামীণ ও নগরীয় এলাকার সমন্বয়ে গঠিত। সাধারণত গ্রামীণ
স্থানীয় ইউনিটে গঠিত স্থানীয় সরকারকে বলা হয় গ্রামীণ স্থানীয় সরকার; নগরীয় স্থানীয় ইউনিটে গঠিত স্থানীয় সরকারকে বলা হয়
নগরীয় স্থানীয় সরকার; এবং গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় ইউনিটে গঠিত স্থানীয় সরকারকে বলা হয় গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় সরকার।
বাংলাদেশে তিন প্রকারের স্থানীয় ইউনিটে তিন প্রকারের স্থানীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে: এক. গ্রামীণ স্থানীয় সরকার; দুই.
নগরীয় স্থানীয় সরকার; এবং তিন. গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় সরকার। কিন্তু বাংলাদেশে স্থানীয় ইউনিটের প্রকারভেদকরণ যথার্থভাবে
করা যায়নি বলে স্থানীয় সরকারের প্রকারভেদকরণ যথার্থভাবে করা সম্ভব হয়নি এবং তার ফলে ক্ষমতা ও দায়িত্ব যথার্থভাবে নির্ধারিত
ও বণ্টিত হয়নি, হচ্ছেনা। তাই স্থানীয় ইউনিট ও স্থানীয় সরকারের প্রকারভেদকরণ যথার্থভাবে করতে হবে এবং সেসব ইউনিটে
গঠিত স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সেভাবে প্রদান করতে হবে।
২
গ্রামীণ-নগরীয়
স্থানীয় সরকার
গ্রামীণ স্থানীয় সরকার
নগরীয় স্থানীয় সরকার
স্থানীয় সরকারের একটি সমন্বিত ¯রÍ বিন্যাসকরণ: তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক
স্থানীয় সরকার এক স্তরবিশিষ্ট হলে স্তরবিন্যাসকরণের বিষয়টি কখনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হত না। এটি বহু স্তরবিশিষ্ট হবার কারণে
সমন্বিত স্তরবিন্যাসকরণের কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটিকে
একটি তত্ত্বগত ফর্মূলায় বা¯বÍ অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে প্রণয়ন
করতে হবে, যা মোঘল-পূর্ব, মোঘল, বৃটিশ, পাকিস্তান ও
বাংলাদেশ আমল মিলে আজ অবধি করা সম্ভব হয়নি। তত্ত্বগতভাবে
প্রদর্শিত রেখাচিত্র অনুযায়ী গ্রামীণ- নগরীয় স্থানীয় সরকার হবে স্থানীয়
সরকারের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। তারপর একদিকে থাকবে গ্রামীণ
স্থানীয় সরকার এবং অপরদিকে থাকবে নগরীয় স্থানীয় সরকার।
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় সরকার হিসেবে বিভাগীয় সরকার হবে স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট। তারপর একদিকে
থাকবে গ্রামীণ স্থানীয় সরকার অর্থাৎ ইউনিয়ন সরকার, উপজেলা সরকার ও জেলা সরকার, এবং অন্যদিকে থাকবে নগরীয় স্থানীয়
সরকার অর্থাৎ নগর সরকার। এক্ষেত্রে শুধু ইউনিয়ন নয়, উপজেলা ও জেলার এলাকার মধ্যেও কোনো নগরীয় এলাকা (পৌরসভা ও
নগর কর্পোরেশন) থাকবে না; তাতে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সম্পূর্ণভাবে গ্রামীণ ইউনিটে পরিণত হবে। পৌরসভা ও নগর
কর্পোরেশনগুলো শুধু নগর হিসেবে আখ্যায়িত হবে এবং সেখানে এক ধরনের নগরীয় স্থানীয় সরকার থাকবে, তা করতে গিয়ে
বর্তমানকার দুই ধরনের নাম, দুই ধরনের আইন ও দুই ধরনের ব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয় বলে বিলুপ্ত হবে। এখানে লক্ষণীয় যে, নগরের
আয়তন, সংখ্যা ও জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ ইউনিটগুলোর আয়তন, সংখ্যা ও জনসংখ্যা কমতে থাকবে। গোটা বাংলাদেশ
নগরে পরিণত হয়ে যাবার ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রামীণ ইউনিটগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে; ফলে বাংলাদেশ অনেকগুলো নগরীয়
ইউনিটে বিভক্ত হয়ে পড়বে; তখন স্থানীয় সরকার দুই স্তরবিশিষ্ট Ñ বিভাগীয় সরকার ও নগর সরকার Ñ হয়ে যাবে; এবং
বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা তিন স্তরবিশিষ্ট Ñ কেন্দ্রীয় সরকার, বিভাগীয় সরকার ও নগর সরকার Ñ হবার মাধ্যমে সরকারের
আকার-আয়তন ছোট হয়ে পড়বে। তাই, প্রস্তাবিত স্তরবিন্যাসটি খুবই গতিশীল ও সুদূরপ্রসারী। এটি গ্রহণ করে দ্রুত বাস্তবায়ন
প্রμিয়া শুরু করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম বলে প্রতীয়মান হয়।
স্থানীয় সরকারের সর্বনিমড়ব ইউনিট: ইউনিয়ন সরকার ও নগর সরকার
স্থানীয় সরকারের সর্বনিমড়ব ইউনিট যথার্থভাবে নির্ধারিত না হওয়ায় এক ধরনের মারাত্বক ধারণাগত বিভ্রান্তি বিরাজমান রয়েছে।
ইউনিয়নকে কিংবা ইউনিয়নের নীচে অন্য কোনও ইউনিটকে স্থানীয় সরকারের সর্বনিমড়ব ইউনিট মনে করা হত, হয়। কিন্তু স্থানীয়
সরকারের সর্বনিমড়ব ইউনিট একটি নয়; বস্তুত, সর্বনিমড়ব ইউনিট হতে হবে দু’টি Ñ ইউনিয়ন ও নগর Ñ অর্থাৎ ইউনিয়ন সরকার ও নগর
সরকার। নগর বলতে দেশের ৩০৯টি পৌরসভা ও ৬টি নগর কর্পোরেশনকে বোঝানো হয়েছে। তৃণমূলে ইউনিয়ন ও নগর পাশাপাশি
অবস্থিত দুইটি স্থানীয় ইউনিট, এবং ভৌগোলিকভাবে পৃক ও ভিনড়ব ধরনের দুইটি স্থানীয় প্রশাসনিক ইউনিট। তাই স্থানীয় সরকারের
সর্বনিমড়ব ইউনিট হিসেবে একদিকে গ্রামীণ এলাকায় থাকবে ইউনিয়ন সরকার এবং অপরদিকে নগরীয় এলাকায় থাকবে নগর সরকার।
গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় উপস্থাপিত ইউনিয়ন সরকারের রূপরেখা ও নগর সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী স্থানীয়
সরকারের সর্বনিমড়ব ইউনিটদ্বয় অবশ্যই গঠন করতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় ইউনিয়নের নিচে আর কোনও প্রশাসনিক ইউনিটের
প্রয়োজনীয়তা না থাকা সত্ত্বেও অতীতে স্বনির্ভর গ্রাম সরকার, পলী
পরিষদ, গ্রাম সভা, গ্রাম পরিষদ, গ্রাম সরকার ইত্যাদি নামে
আরেকটি স্থানীয় সরকার ইউনিট স্থাপন করা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে দেশের কোটি কোটি টাকা ও মূল্যবান সময় অপচয়
করা হয়েছে, এবং তা করতে গিয়ে ইউনিয়নকে দূর্বল থেকে দূর্বলতর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে, এবং স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ
ইউনিট Ñ বিভাগ অথবা জেলা Ñ গঠন ও কার্যকর করার ওপর জোর না দিয়ে মধ্যবর্তী ইউনিট হিসেবে উপজেলার ওপর অতিমাত্রায়
জোর দিতে গিয়েও ইউনিয়নকে অবহেলিত ও দূর্বলতম প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। অনুরূপ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বর্তমানে
‘ওয়ার্ড সভা’ নামে আরেকটি অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের স্বার্থে এসব
অপ্রয়োজনীয় তৎপরতা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে হয়। তাই আমাদেরকে ‘ইউনিয়নে ইউনিয়নে গণতন্ত্রায়ন, ইউনিয়নের
জনগণের ক্ষমতায়ন’ এবং ‘নগরে নগরে গণতন্ত্রায়ন, নগরের জনগণের ক্ষমতায়ন’ ¯োগানদ্বে
য়র ভিতরগত তাৎপর্য উপলব্ধি করে
অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হতে হবে।
৩
স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট: বিভাগীয় সরকার অথবা জেলা সরকার
স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত ও কার্যকরী না করায় মারাত্বক বিভ্রান্তি ও অসঙ্গতির মধ্যে স্থানীয় সরকারের
ক্ষমতা, দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারিত ও প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়টি খুবই দোলায়মান রয়েছে। বিভাগকে মাঠ পর্যায়ের সর্বোচ্চ ইউনিট
বলা হলেও তাতে যথেষ্ট ক্ষমতা ও কার্যাবলী অর্পণ এবং নির্বাচিত প্রতিনিধির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ‘সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক
সরকার চাই’ এই তাৎপর্যপূর্ণ শ্লোগানের বাস্তবায়ন প্রμিয়ায় বিভাগকে গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় ইউনিট হিসেবে স্থানীয় সরকারের
সর্বোচ্চ ইউনিট করতে হবে এবং তাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায়
উপস্থাপিত বিভাগীয় সরকারের রূপরেখায় ব্যবস্থামতে বিভাগীয় সরকার স্থাপন করতে হবে। যদি সর্বোচ্চ ইউনিট হিসেবে বিভাগ
অপ্রয়োজনীয় বিবেচিত হয় তদস্থলে জেলাকে সর্বোচ্চ ইউনিট করা যেতে পারে, এবং সেক্ষেত্রে বিভাগকে অবশ্যই বিলুপ্ত করতে হবে
এবং গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় উপস্থাপিত জেলা সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী প্রত্যেক জেলায় জেলা সরকার স্থাপন
করতে হবে। জেলা অথবা বিভাগ নিজস্ব কিছু সুনির্দিষ্ট কাজ করার পাশাপাশি একদিকে ইউনিয়ন ও উপজেলা এবং অন্যদিকে নগরকে
(অর্থাৎ ৩০৯টি পৌরসভা ও ৬টি নগর কর্পোরেশনকে) তদারকি ও সহযোগিতা করবে।
ক্ষমতার পৃকীকরণ তত্ত্বের প্রয়োগ করতে হবে: স্থানীয় প্রশাসন, যেমন- ইউনিয়ন প্রশাসন ও নগর
প্রশাসন; স্থানীয় সংসদ, যেমন- ইউনিয়ন সংসদ ও নগর সংসদ; এবং স্থানীয় আদালত, যেমন-
ইউনিয়ন আদালত ও নগর আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে
সরকার কী, সরকার কিভাবে গঠিত হয়, সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে কোন বিভাগের কি ক্ষমতা ও দায়িত্ব, সরকারের রাজস্ব
আয়ের উৎস কি কি, বিধানিক, প্রশাসনিক ও বিচারিক বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, ক্ষমতার পৃকীকরণ ইত্যাদি বিষয়
তৃণমূলের ইউনিটে দৃশ্যমান না থাকায় মানুষের কাছে ‘সরকার’ একটি অস্পষ্ট ও দূরবর্তী বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। সেজন্য এবং
স্থানীয় প্রয়োজনেই কেন্দ্রীয় সরকারের মতো স্থানীয় ইউনিটগুলোতেও স্থানীয় সরকারের স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ ও স্থানীয়
আদালত সম্বলিত সরকার ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে; অর্থাৎ ক্ষমতার পৃকীকরণ তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনগুলো
হবে: বিভাগীয় প্রশাসন, নগর প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন প্রশাসন। স্থানীয় সংসদগুলো হবে: বিভাগীয়
সংসদ, নগর সংসদ, জেলা সংসদ, উপজেলা সংসদ ও ইউনিয়ন সংসদ। অনুরূপভাবে ইউনিয়ন আদালত, নগর আদালত ইত্যাদি
গঠন করতে হবে। এসব স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় ব্যবস্থামতে গঠন করতে হবে।
গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন: নরনারীর ১০০/১০০ প্রতিনিধিত ¡ নিশ্চিত করতে এমপো অর্থাৎ মিলেনিয়াম
প্রোপোজাল পার্ট ওয়ান অনুযায়ী প্রণীত ১১ দফা সুপারিশ বা¯বÍ ায়ন করতে হবে
বর্তমানে এটি প্রমাণিত সত্য, প্রকৃতিগতভাবে মেধাগত বিবেচনায় পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। সেজন্য ‘মিলেনিয়াম
প্রোপোজাল পার্ট ওয়ান-এমপো’ অনুযায়ী সরকারের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানে (সকল বিধানিক প্রতিষ্ঠানে ও যথাসম্ভব অন্যান্য ক্ষেত্রে)
১০০/১০০ প্রতিনিধিত্বে নরনারীর গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন করা খুবই জরুরি প্রয়োজন। সেরকম ব্যবস্থা গৃহীত হলে নারীরা কোথায়,
কিভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তা তারাই নিরসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন। সেজন্য জাতীয় সংসদে এবং স্থানীয়
সরকারের বিধানিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে তাতে নারীদের ১০০/১০০ প্রতিনিধিত্বে গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করতে হবে; সেই
লক্ষ্য পূরণ করতে ইত্যেমধ্যে সিডিএলজি’র পক্ষ থেকে এমপো অনুযায়ী প্রণীত ১১ দফা সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে
এবং এমপো বাস্তবায়ন ফোরাম বাংলাদেশ এর নেতৃত্বে ২৫টি সংগঠন এমপো ও ১১ দফা নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন পরিচালিত
করছে। ১১ দফায় ব্যবস্থামতে জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রে একজন মহিলা ডেপুটি স্পিকার ও একজন পুরুষ ডেপুটি স্পিকার এবং প্রতি
আসনে একজন মহিলা সদস্য ও একজন পুরুষ সদস্য নির্বাচিত হবেন। ইউনিয়নের ক্ষেত্রে একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও
একজন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রতি ওয়ার্ডে একজন মহিলা মেম্বার ও একজন পুরুষ মেম্বার নির্বাচিত হবেন। নগরের ক্ষেত্রে
একজন মহিলা ডেপুটি মেয়র ও একজন পুরুষ ডেপুটি মেয়র এবং প্রতি ওয়ার্ডে একজন মহিলা কাউন্সিলর ও একজন পুরুষ
কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। এছাড়া, এমপো অনুযায়ী উপজেলায় নির্বাচিত একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন পুরুষ ভাইস
চেয়ারম্যান এর ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে।
‘বটম-আপ’ পদ্ধতিতে ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রদান এবং স্বশাসন নিশ্চিত করতে হবে
ক্ষমতা ও দায়িত্ব ‘বটম-আপ’ পদ্ধতিতে অর্থাৎ নীচ থেকে উপরের দিকে বণ্টিত হওয়া উচিত। যেমন- ইউনিয়ন যে কাজগুলো করতে
পারবে না সেগুলো উপজেলা, উপজেলা যে কাজগুলো করতে পারবে না সেগুলো জেলা, এবং নগর ও জেলা যে কাজগুলো করতে
৪
পারবে না সেগুলো বিভাগ সম্পাদন করবে। কেন্দ্রীয় সরকার মূলতঃ জাতীয় ও বৈশ্বিক কাজগুলো সম্পাদন করার পাশাপাশি স্থানীয়
সরকারের কাজে সহযোগিতামূলক ভূমিকায় থাকবে। স্থানীয় সরকারের ইউনিটগুলোতে স্ব-শাসন না থাকায় তাদের ওপর অর্পিত
দায়িত্বাবলী পালনে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভরশীলতা দেখা যায়। যেমন, পত্রিকায় জানা যায়, একটি হাটের জায়গা কতিপয়
ব্যক্তি দখল করে নিলে সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকার এসে হাটের জায়গা উদ্ধার করুক।’ এই বক্তব্যে
বুঝা যায়, তারা কোনও কাজকেই নিজের কাজ মনে করেন না, এবং নিজেদেরকে সরকারই মনে করেন না, অথচ স্থানীয় সরকারও
একটি সরকার। সেজন্য এজেন্ট হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অর্থ চাওয়া এবং অর্থ আদায় করাকেই তারা কৃতিত্ব ও সফলতা
মনে করে থাকেন; নিজেদের উদ্যেগে, নিজেদের আয়ে কিছু করার বিষয়টি মাথায় থাকেনা, থাকছেনা। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া
খুবই প্রয়োজন; তাই, প্রতিটি স্থানীয় ইউনিটে স্বশাসন প্রদান করে প্রতিটি ইউনিটকে স্বশাসিত হবার সুযোগ সৃষ্টি করা খুবই জরুরি
কর্তব্য বলে প্রতীয়মান হয়।
স্থানীয় নির্বাচনী বোর্ড গঠন
প্রতিটি স্থানীয় ইউনিটে সরকার কাঠামোর বাইরে একটি করে নির্বাচনী বোর্ড থাকবে, তথা ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন নির্বাচনী বোর্ড’,
উপজেলায় ‘উপজেলা নির্বাচনী বোর্ড’, জেলায় ‘জেলা নির্বাচনী বোর্ড’, বিভাগে ‘বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড’ এবং নগরে (পৌরসভা ও
নগর কর্পোরেশন) ‘নগর নির্বাচনী বোর্ড’ গঠন করতে হবে। সেরকম ব্যবস্থা গৃহীত হলে প্রতিটি ইউনিট নিজস্ব দায়িত্বে, নিজস্ব অর্থে
সময়মত সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার ব্যবস্থা করবে। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হবে এবং স্থানীয় সরকারগুলো
অধিকতর দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে।
স্থানীয় ন্যায়পাল এর পদ সৃষ্টি
প্রতিটি ইউনিটে একজন করে ন্যায়পাল থাকবেন, তথা ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন ন্যায়পাল’, উপজেলায় ‘উপজেলা ন্যায়পাল’, জেলায়
‘জেলা ন্যায়পাল’, বিভাগে ‘বিভাগীয় ন্যায়পাল’ এবং শহরে (৩০৯টি পৌরসভা ও ৬টি নগর কর্পোরেশন) ‘নগর ন্যায়পাল’ থাকবেন।
স্থানীয় ন্যায়পালগণ প্রতিটি ইউনিটের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও অনির্বাচিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যাচাই-বাছাই
সাপেক্ষে মিমাংসা করবেন। এতে প্রতিটি ইউনিটে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং তাতে প্রতিনিয়ত গণ-অসন্তোষ নিরসন
করা সম্ভব হবে।
৩১৫টি নগর সরকার গঠন করতে হবে; কেবল ঢাকা শহর নয়, ৩১৫টি শহরকেই রক্ষা করতে হবে
পরিবেশের প্রতি চরম উদাসীনতা ও অপরিকল্পিত নগর ও নগরায়নের কারণে ঢাকা শহর আজকের মরণদশায় উপনীত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭ রিখটার মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে এবং তাতে তাৎক্ষণিকভাবে ১ লাখ লোকের
মৃত্যু ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। লক্ষণীয় যে, ঢাকা শহর কেন্দ্রীক একটি মাত্র সরকার ব্যবস্থা থাকার কারণে সমগ্র দেশের মানুষ ঢাকা
শহরমুখী। তবে বর্তমানে ঢাকা শহরের যে অবস্থা, সে অবস্থা আগামীতে অন্যান্য শহরেও প্রকটভাবে দেখা দেবে, যার আলামত
ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সেজন্য দেশের ৩১৫টি শহরে (৩০৯টি পৌরসভা আর ৬টি নগর কর্পোরেশন মিলে ৩১৫টি শহর)
৩১৫টি নগর সরকার গঠন করে তাদের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত ৩১৫টি নগর গড়তে হবে এবং তা সবসময় বজায় রাখতে
হবে। এতে একদিকে ঢাকা শহর কেন্দ্রীকতা রাতারাতি হ্রাস পাবে এবং অন্যদিকে ঢাকা শহরসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত
দেশের ৩১৫টি শহর কেন্দ্রীক উনড়বয়ন ভাবনা ও কর্মকান্ড পরিচালিত ও বিকশিত হবে।
সরকারের আকার-আয়তন ছোট করতে হবে; স্থানীয় সরকারের সংখ্যা ও স্তর কমাতে হবে এবং
মধ্যবর্তী ইউনিটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভাবতে হবে
ছোট্ট সরকার সাধারণত দক্ষ সরকার হয়ে থাকে; সিস্টেম কস্ট কমানো গেলে সেবা ও উনড়বয়ন ব্যয় বাড়ানো যায়। আমাদের দেশের
আয়তন, জনসংখ্যার ঘনত্ব, যোগাযোগ ব্যবস্থা, μমাগত দ্রুত নগরায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির বিপুল প্রসার ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা নিয়ে
বলা যায়, স্থানীয় ইউনিটের স্তর ও সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী বলে প্রতীয়মান হয়। প্রাথমিকভাবে ইউনিয়নের সংখ্যা
৪,৫০৩ থেকে কমিয়ে ৩,০০০ করা যেতে পারে; উপজেলার সংখ্যা ৪৮২ থেকে কমিয়ে ৪০০ করা যায়। স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ
ইউনিট Ñ জেলা অথবা বিভাগ Ñ এবং সর্বনিমড়ব ইউনিট Ñ ইউনিয়ন ও নগর Ñ ভালভাবে কার্যকর করার পাশাপাশি মধ্যবর্তী ইউনিটের
অস্তিত্ব প্রয়োজনের নিরিখে নির্ধারিত হওয়া খুবই প্রয়োজন বলে প্রতীয়মান হয়।
৫
পার্বত্য বিভাগ বনাম পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরে সম্পাদিত শান্তি চুক্তির আওতায় গঠিত পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদকে সম্প্রতি মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ
অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছেন। এই রায়ে বলা হয়েছে, ‘এটা স্থানীয় সরকারের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এই
আঞ্চলিক পরিষদের মাধ্যমে একক রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো নষ্ট করা হয়েছে।’ অথচ ১৯৯৭ সালের ১৩ জানুয়ারী ঢাকা শহরে
জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক জাতীয় সেমিনারে ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা’য় ৬টি বিভাগীয় সরকার এবং
পার্বত্য চট্রগ্রামের সংঘাতপূর্ণ সমস্যাটি নিরসনকল্পে একটি নতুন “পার্বত্য বিভাগ” গঠন করে তাতে পার্বত্য বিভাগীয় সরকার গঠন
করার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। তৎকালীন সরকার পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন না করে যদি পার্বত্য বিভাগ গঠন করে
তাতে ‘পার্বত্য বিভাগীয় সরকার’ গঠন করতেন তাহলে সরকারের এই মহৎ শান্তি উদ্যোগটি এভাবে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অবৈধ
বলে ঘোষিত হতো না। এখানে উল্লেখ্য যে, সংবিধান সংশোধন না করে সাধারণ আইনেই বিদ্যমান ৭টি বিভাগে ‘বিভাগীয় সরকার’
এবং প্রস্তাবিত পার্বত্য বিভাগে ‘পার্বত্য বিভাগীয় সরকার’ গঠন করা খুবই সম্ভব।
২০৫০ সাল: গোটা দেশের নগরায়ন
বর্তমানে বাংলাদেশের ৪ কোটি লোক নগরে বসবাস করে। ২০২০ সাল নাগাদ প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী এবং ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায়
গোটা জনগোষ্ঠী নগরবাসী হবেন। সেজন্য এখনই দেশের ৩১৫টি নগরকে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত নগরে পরিণত করতে হবে এবং
পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত নগর ও নগরায়ন বজায় রাখতে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। μমাগতভাবে দ্রুত নগরায়নের
ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রামভিত্তিক প্রশাসনিক ইউনিটের Ñ ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা Ñ বিলুপ্তি ঘটবে; ফলশ্রুতিতে সে সময়
নগরগুলো বিভাগের অধীনে পরিচালিত হবে। তখন গোটা সরকার ব্যবস্থা তিন স্তরবিশিষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ তখন কেন্দ্রীয় সরকার,
বিভাগীয় সরকার ও নগর সরকার অথবা কেন্দ্রীয় সরকার, জেলা সরকার ও নগর সরকার থাকবে। কেউ কেউ সরকারের আকার-
আয়তন, স্তরবিন্যাসকরণ, প্রকারভেদকরণ, নগরায়ন, বিদ্যুতায়ন, পেশাগত পরিবর্তন, শিক্ষার প্রসার, বহুতল ভবন, জনঘনত্ব,
যোগাযোগ ব্যবস্থা ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, সিস্টেম কস্ট, সেবা ও উনড়বয়ন কস্টের বিষয়গুলো বিবেচনায় না এনে নতুন নতুন ইউনিয়ন,
উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও প্রদেশ সৃষ্টির প্রস্তাব করছেন, যা খুবই অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন বলে প্রতীয়মান হয়। তাই, গণতান্ত্রিক
স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় উপস্থাপিত সমন্বিত স্তরবিন্যাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, গতিশীল ও সুদূরপ্রসারী বলে আমরা মনে করি।
বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে নগরীয় কৃষি ও নগর সরকার নিয়ে বিশেষ ভাবনা থাকতে হবে
বর্তমানে ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৪ কোটি মানুষ দেশের ৩১৫টি শহরে বসবাস করে। ২০২০ সাল নাগাদ অর্ধেক জনগোষ্ঠী এবং
২০৫০ সাল নাগাদ গোটা জনগোষ্ঠী নগরীয় এলাকায় বসবাস করবে বলে মনে করা হয়। ফলে গ্রামীণ কৃষি, গ্রামীণ জীবন, গ্রামীণ
সমাজ, গ্রামীণ সভ্যতা, গ্রামীণ সংস্কৃতি ও গ্রামীণ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাμমে নগরীয় কৃষি, নগরীয় জীবন, নগরীয়
সমাজ, নগরীয় সভ্যতা, নগরীয় সংস্কৃতি ও নগরীয় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠতে থাকবে। বর্তমানে বিপুল জনসংখ্যার জন্য
খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থার পাশাপাশি নগর সরকারের মাধ্যমে প্রতি নগরে নগরীয় কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার
ওপর সবিশেষ জোর দিতে হবে, এবং ভবিষ্যতের কৃষি হিসেবে নগরীয় কৃষির ওপর গুরুত্বারোপ তো অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে,
এবং ‘নগর মানে কৃষি নয়’ এই ক্ষতিকর ভাবনার বিপরীতে ‘কৃষিকে নিয়েই নগর’ এই উপকারী ভাবনা সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে
হবে। তাই, গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় ২০৫০ সাল নাগাদ একটি নগরীয় বাংলাদেশ এর কথা বিবেচনায় নিয়ে নগর
সরকারের রূপরেখা ও তার আলোকে প্রণীত ২১ দফা সুপারিশ উপস্থাপিত করা হয়েছে। সেজন্য এখন থেকেই ব্যাপক পরিকল্পনার
আওতায় গোটা সমাজকে এর জন্য মানসিক ও শিক্ষাগতভাবে প্রস্তুত করতে হবে; সেক্ষেত্রে নগর সরকার ও নগরীয় কৃষির
প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব খুবই অপরিসীম বলে প্রতীয়মান হয়।
২০২০ সালের মধ্যে বিদেশে ২ কোটি লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব
বর্তমানে প্রায় এক কোটি লোক বিদেশে কর্মরত রয়েছে বলে বেসরকারীভাবে মনে করা হয়। ২০২০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ২
কোটিতে উনড়বীত করা সম্ভব। ঢাকা শহরে অনুষ্ঠিত প্র ম এনআরবি সম্মেলনে উপস্থাপিত এই প্রস্তাবটি সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়।
সেটি পূরণে একাগ্র প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে এ বিষয়ে সফলতার সম্ভাবনা ১০০ ভাগ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়, এবং প্রবাসীদের
অর্থ, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, আইডিয়া ইত্যাদি যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে এক বিপুল সেবা ও উনড়বয়ন ধারার সৃষ্টি হবে। সে
জন্য সর্বস্তরে অর্থাৎ কেন্দ্রে, বিভাগে, নগরে, জেলায়, উপজেলায় ও ইউনিয়নে গণতন্ত্রায়নের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করা
খুবই জরুরি। এটি মাথায় রেখে এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসবকে সামনে রেখেই গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায়
৬
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি উনড়বত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের পরিকল্পনা Ñ গণস্বপড়ব ২০২০ Ñ উপস্থাপন করা হয়।
এই বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করতে হবে বলে আমরা মনে করি।
উনড়বত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ: গণস্বপড়ব ২০২০
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার Ñ অর্থাৎ উনড়বত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার Ñ বিষয়টি অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঝুলিয়ে না রেখে একটি
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পনড়বড়ব করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। গণস্বপড়ব ২০২০ হচ্ছে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২৫টি
ক্ষেত্রে স্বল্প টাকায় গণতন্ত্রায়ন সম্পনড়ব করে একটি উনড়বত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ প্রμিয়া সম্পনড়ব করার একটি বা¯বÍ ায়নযোগ্য
পরিকল্পনা। যদি এই কাজটি ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সফলতার সঙ্গে সম্পনড়ব করা যায়, তাহলে তার কয়েক মাস পরেই
অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে একে একটি বিশেষ অর্জন হিসেবে উলেখ
করা সম্ভব হবে।
অনুরূপভাবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসবকে সামনে রেখে অন্যান্য বা¯বÍ ায়নযোগ্য লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমাও ২০২০ সাল
কেন্দ্রীক করে এগিয়ে যাওয়া খুবই যৌক্তিক হবে বলে মনে হয়। এছাড়া, ২০২০ সাল গোটা বিশ্বজুড়েই নানা ধরনের বা¯বÍ ায়নযোগ্য
লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমার একটি ল্যান্ডমাকর্ হিসেবে খুবই সুপরিচিত সাল। সেই বিবেচনায়ও একে লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা ধরে
একটি জাতীয় কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হতে পারে বইকি। “গণস্বপড়ব ২০২০” নামটিও খুবই সার্থক ও যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়, কারণ এর
মাধ্যমে জাতীয় স্বপড়বকে সকল মানুষের স্বপড়ব এবং এর সঙ্গে সকল মানুষের সংযুক্ততা খুব ভালভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
শেষ কথা
বিভিনড়ব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত “সেন্টার ফর ডেমোμেটিক লোকাল গভার্ন্যান্স-সিডিএলজি” এর মাধ্যমে
স্থানীয় সরকার গবেষক ও সিডিএলজি’র নির্বাহী পরিচালক আবু তালেব প্রণীত “গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা’ ভিত্তিক
একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্যাম্পেইন দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। প্রস্তাবিত গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখাটির কপি ও তার আলোকে
প্রণীত উপজেলার জন্য ২৫ দফা, নগরের জন্য ২১ দফা, ইউনিয়নের জন্য ১৭ দফা, এমপো অর্থাৎ মিলেনিয়াম প্রোপোজাল পার্ট
ওয়ান অনুযায়ী ১০০-১০০ প্রতিনিধিত্বে নারী-পুরুষের গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের জন্য ১১ দফা সুপারিশের কপি ও তার সারসংক্ষেপ
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, জাতীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, রাজনীতিক, গবেষক, লেখক,
সাংবাদিক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, এনজিও ব্যক্তিত্বসহ সংশিষ্ট
সকলের সদয় অবগতি ও বিবেচনার জন্য পেশ করা
হয়েছে; এর পাশাপাশি সভা, সেমিনার, মতবিনিময় সভা, দলগত সভা, একজন-একজন-করে মতবিনিময় সভা, টেলি সংলাপ,
প্রকাশনা, পত্রিকায় লেখালেখি, ই-মেইল সংবাদ প্রেরণ ইত্যাদি করা হয়েছে, হচ্ছে। এসবের মাধ্যমে সকলের মাঝে উক্ত রূপরেখা ও
সুপারিশের প্রতি একটি ইতিবাচক প্রত্যয় ও দৃঢ সমর্থন পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। তাই, বতর্ম ান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে প্রস্তাবিত
গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখাটি এবং তার আলোকে প্রণীত সুপারিশগুলো অবিলম্বে বা¯বÍ ায়নের লক্ষ্যে গণসমর্থন ও
সহযোগিতা আরো বিস্তৃত ও ব্যাপকতর করতে আমরা সকলের দৃঢ় সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করছি, এবং সরকারকে তা বিশেষ
গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।
লেখকবৃন্দ: প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, চেয়ারম্যান, জানিপপ; প্রফেসর ড. এ.কে.এম. রিয়াজুল হাসান, বিসিএস
শিক্ষা; এবং মোশাররফ হোসেন মুসা, সদস্য, সিডিএলজি। ই-মেইল- লধহরঢ়ড়ঢ়১৯৯৫@মসধরষ.পড়স