বুধবার, ২৭ জুন, ২০১২

মাদক বিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

নুরুদ্দিন আহমেদ:
মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ কালকিনি এডিপি’র উদ্যোগে গত ২৬ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জারী গান পরিবেশন করেন আঃ সাত্তার বয়াতী ও তার দল, সংগীত পরিবেশন করেন ইব্রাহীম, জামাল ও শান্তা ইসলাম। আবৃত্তি করেন সুবর্ণা, জারিন তাসনিম রাইসা ও জান্নাতুল ফেরদাউস মীম। নৃত্য পরিবেশন করেন রোজিনা, সুমী, মিতু, নিপা, তামান্না, নাসিমা, রিয়া, রুহুল াামিন, মাসুম ও লিমা।
সবশেষে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনায় মাইনুল ইসলামের পরিচালনায় মেহেদী হাসানের নির্দেশনায় আ জ ম কামালের রূপসজ্জায় ও প্রথম আলো কালকিনি বন্ধুসভার পরিবেশনায় মাদক বিরোধী নাটক ‘আলোর পথে’ মঞ্চস্থ হয়। এতে অভিনয় করেন বি এ কে মামুন, লিমা, মাইনুল ইসলাম, মহিউদ্দিন, সিমন, মেহেদী হাসান, সাইফুল ইসলাম, সজল নন্দী ও মাসুম।

মাদকবিরোধী দিবস পালিত

আফিয়া মুন:
মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ কালকিনি এডিপি’র উদ্যোগে গত ২৬ জুন শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।সকাল ১০টায় কালকিনি এডিপি কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শেষে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডা. শামীম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের সঞ্চালনে প্রধান অতিথি ছিলেন কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ খালেকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের সমাজ কর্ম বিভাগের প্রধান জাহাঙ্গীর হোসেন ও উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মোঃ এনামুল হক। বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হোসেন, মনিরুল ইসলাম ও মোঃ সেলিমুল্লাহ প্রমুখ।

রবিবার, ২৪ জুন, ২০১২

বাচ্চু মিয়ার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেবরাম পুর ইউনিয়নের আন্ডার চর গ্রামে পৌঁছতেই দেখা গেল সারিবদ্ধভাবে দাাঁড়িয়ে আছে কিছু দরিদ্র মানুষ। লাইনের সামনে একটা কাঠের টেবিলে কিছু ঔষধ নিয়ে বসে আছেন একজন। তিনি রোগী দেখছেন আর রোগ নির্ণয়ের পর বিনামুল্যে ঔষধ দিচ্ছেন। পিছনে ঝোলানো একটি ব্যানার। তাতে ‘শৃঙ্খলা ও সুস্থ্যতাই সুন্দর জীবন’ স্লোগান লেখা। এরপর ‘মানব স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচী’ ও ‘বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা’সহ বিস্তারিত বিবরণ।
লোকটির নাম বিএম বাচ্চু মিয়া। এ নামটি এখন হতদরিদ্র মানুষের মুখে মুখে। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তিনি দরিদ্র মানুষদের বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ঔষধ দিয়ে থাকেন। তার এ কর্মকান্ডে উপকৃত হচ্ছে নিজের গ্রামসহ পাশ্ববর্তী আরও ৪টি ইউনিয়নের মানুষ। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক অসহায় মানুষ ছুটে আসে তার কাছে স্বাস্থ্য সেবা নিতে। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি মানুষকে সুস্থ্য থাকার নানাবিধ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তার এ কর্মকান্ডের খবর পেয়ে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ মসিউর রহমান স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিদর্শণ করেন। এবং ২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর একটি প্রত্যয়ন পত্র দেন। সবাইকে তিনি একটা কথাই বলেন,‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ শ্রেয়। রোগ হওয়ার আগে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ও সচেতন হওয়া জরুরী।’ তিনি সুস্থ্য থাকতে রীতিমত শাক-সবজি ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ছোটবেলা থেকে অসহায় অবহেলিত মানুষের জন্য কিছু করার কথা চিন্তা করতেন। বিশেষ করে হতদরিদ্র মানুষ যখন বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। তখন তিনি খুব ব্যথিত হতেন। সে চিন্তা ও দর্শন থেকেই নিজের উপার্জিত অর্থ থেকে ব্যয় করে শুরু করেন তার কার্যক্রম। কেমিস্ট প্যারাডাইস কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ থাকাকালীন ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মানব সেবা ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংগঠন। ঐ বছর ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার দিন তিনি তার স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচী আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন। সেদিন ২০ জন মেডিকেল অফিসার এনে দিনভর এলাকার অসুস্থ্য মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেন। তার এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রফেসর আসাদুজ্জামান। পরে রিপ্রেজেন্টিটিভের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ঢাকার আইয়ূব মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের সাথে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। আর নিজের উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে চালিয়ে যান মানব সেবা। চিকিৎসার স্বার্থে ২০১০ সালের ৩০ জুন পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। প্রায় একযুগ ধরে তিনি মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রত্যেক রোগীকে ৪০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের ঔষধ দিয়ে থাকেন। শুরুর দিকে প্রতি শুক্রবার ক্রোকির চর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চালালেও প্রতিষ্ঠানের নিষেধাজ্ঞায় এখন পাশ্ববর্তী আন্ডার চর গ্রামের আনোয়ার হোসেন মাস্টারের বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কোন মেডিকেল কলেজে পড়াশুনা না করেও কেন এমন কাজের প্রতি বাচ্চু মিয়ার আগ্রহ। এটা তো একটা জটিল বিষয়। রোগ নির্ণয় কিভাবে করবেন। এমন সব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আমি মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ থাকাকালীন রোগসংক্রান্ত যে বিদ্যা অর্জন করেছি। তা-ই আমাকে সহায়তা করে। এরপর পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তাছাড়া আমিতো জটিল রোগের চিকিৎসাও করি না, ঔষধও দেই না। শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তাতে ইনশাআল্লাহ শতকরা নব্বই জন লোকই আমার ঔষধে আরোগ্য লাভ করেছে।’
স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচি ছাড়াও তার আরো কয়েকটি কর্মসূচি রয়েছে। তার মধ্যে বাচ্চু মিয়া নিজ অর্থায়নে সাহেবরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও ক্রোকির চর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র তেরি করে দিয়েছেন। তার দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে অর্ধশতাধিক নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় গরিব মানুষদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তাও করেন।
বিএম বাচ্চু মিয়া এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন সমবায় সমিতি। সমিতির সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে ২০ টাকা করে চাঁদা দেন। সমিতির বর্তমান সঞ্চয় হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। এ সমিতির মাধ্যমে বিনা সুদে বিপদগ্রস্ত মানুষকে ঋণ দিয়ে থাকেন। যাতে উপকৃত হয় হতদরিদ্র মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেল, অনেক মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চিকিৎসার জন্য। নিবিষ্ট মনে রোগী দেখছেন বাচ্চু মিয়া। তাকে সহযোগিতা করছেন দুই নারী। তারা এই মানব সেবা ফাউন্ডেশনের কর্মী। একজন রুনু কাওসারি। তিনি আগত রোগীদের তালিকা করছেন এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। আরেকজন পল্লবী বিশ্বাস। তিনি রোগীদের ঔষধ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে রুনু কাওসারি জানান,‘প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। পাশ্ববর্তী কয়ারিয়া, রমজানপুর, চর দৌলতখান, শিকার মঙ্গলসহ প্রায় ৫টি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামে এ সেবা কার্যক্রম চলে। ২০০১ সাল থেকে এপর্যন্ত প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।’
চিকিৎসা নিতে আসা আন্ডার চর গ্রামের ফরনা বেগম জানান,‘ এর আগেও দুই বার আইছি। কোন টাহা পয়সা লাগে না। রোগও ভালো অয়। উপকার পাই, তাই আহি। মোগোতো আর অত টাহা খরচ কইরা বড় ডাক্তার দেহানোর ক্ষমতা নাই। তাই মোগো বাচ্চু মিয়াই ভরসা।’ এছাড়াও রিণা বেগম, ওয়াজেদ হাওলাদার, লিলি, সুখী, সুমি ও স্বপন ঘরামিসহ বেশ কয়েকজন বলেন,‘আমাগো অসুখ-বিসুখে বাচ্চু মিয়ার কাছে ছুইট্টা আহি। উপকারও পাই। বিনা পয়সায় ওষুধ দেয়। একযুগ ধইরা এই কাম কইরা আইতাছে। আইজ পর্যন্ত কোন মাইনষের অপকার বা সমস্যা অয় নাই।’ ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ বাহারুল ও ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজাহার মীর জানান,‘বাচ্চু মিয়া একটি মহৎ কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা তাকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করি। তার মতো এরকম কাজ আরো হওয়া উচিৎ।’
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেব রামপুর ইউনিয়নের ক্রোকির চর গ্রামে ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিএম বাচ্চু মিয়ার জন্ম। পিতা এসকান্দার আলী ও মা আমেনা বেগম। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে বাচ্চুই সবার বড়। ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। স্ত্রী আরজু বেগম ও সন্তানদের নিয়ে মাদারীপুর শহরে বসবাস করেন। সাদা মনের এ আলোকিত মানুষটি প্রথম আলোকে জানান,‘ রাজনৈতিক বা অন্য কোন উদ্দেশ্য নিয়ে মানব সেবা করছিনা। নিজে পরিবারসহ খেয়ে পড়ে যা থাকে তাই দিয়ে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করি। বর্তমানে বসার জায়গা নিয়ে সমস্যায় আছি। পাশাপাশি আরো কিছু অর্থ দরকার। তবে সকলের সহযোগিতা পেলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারব। আমি চাই আমার এলাকার একটা মানুষও যাতে বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।’
বিএম বাচ্চু মিয়ার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা ও মানব সেবা ফাউন্ডেশন সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ মসিউর রহমান বলেন,‘বাচ্চু মিয়ার এ কার্যক্রম অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। আমি তার কার্যক্রম পরিদর্শণ করেছি। আমার মতে, তার মতো আমাদের প্রত্যেককেই এরকম জনসেবা মূলক কাজে এগিয়ে আসা উচিৎ।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহরিয়াজ বলেন,‘এমন জনসেবা মূলক কাজের জন্য তাকে সাধুবাদ জানাই। তার মতো প্রত্যেক গ্রামে বা ইউনিয়নে তা নাহলে অন্তত উপজেলা পর্যায়ে আরো অনেকের এগিয়ে আসা উচিৎ। আমি তাকে যে কোন ধরণের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিচ্ছি। যাতে সে তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে।’

বুধবার, ২০ জুন, ২০১২

বৃষ্টি নয় খরা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

ভেবেছিলাম- তোমায় নিয়ে যাব বৃষ্টিøানে;
কিন্তু বৃষ্টি কোথায়? সারাটা দিন খরা।
বর্ষা এলো তবু দেখ শুকিয়ে যায় কদম,
এমন সময় এর আগে দেখিনি কোন জনম।

তাইতো তোমায় একটুখানি
চাইতে গেলেই চতুর্মুখী বাঁধা।
এখন আর মৌসুমও নেই ভালোবাসার,
জগত জুড়েই হতাশা আর হাহাকার।

বৃষ্টির আশায় আকাশ পানে চাইতে গেলে
মরার খরা পোড়ায় এ দেহটারে।
তার চেয়ে সেই কি নয় ভালোÑ
তোমার চোখের জলে আমি ভিজি,
আমার চোখের জলে তুমি।

সোমবার, ১৮ জুন, ২০১২

মঞ্চ নাটক: একটাই চাওয়া

রচনাঃ মোঃ আজিজুল ইসলাম স্বপন
নির্দেশনায়: আ.জ.ম কামাল
প্রশিক্ষকঃ জেলা শিল্পকলা একাডেমী মাদারীপুর
সার্বিক তত্ত্বাবধানে:
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
ছাত্র, নাটক বিভাগ
 জেলা শিল্পকলা একাডেমী মাদারীপুর
চরিত্রলিপি:
বয়াতী, আমীরন,সাজু , রফিক, বাদল, মানিক , রফিকের মা , বাচ্চুর বাবা, ওয়াজেদ আলী, কেতর আলী, মেজর. আরও কিছু আর্মি ও মুক্তিযোদ্ধা।
প্রথম দৃশ্য:
স্থান: বয়তীর বাড়ী
সময়ঃ সকাল
সারারাত গানবাজনা করে ভোর বেলা বাড়ী ফেরে সোলেমান বয়াতী। সোলেমান বয়াতীর স্ত্রী আমিরন তখন উঠান ঝাড়– দিচ্ছিল। সোলেমান বয়াতী উঠানে গান গাইতে পা রাখতেই আমিরনের তাছ্যিলের সুর।
আমিরনঃ আইজ কি সূর্য্য পশ্চিম দিক দিয়া উঠল নাকি? ব্যাপার কি? বয়াতী যে সাত-সকালে দোতারা হাতে নিয়া বাড়িীতে হাজির। গানের আসর কি ভালো জমে নাই?
বয়াতীঃ তুমি মনে হয় ভূল দ্যাখতাছো। সূর্যতো তোমাগো বাড়ীর পিছন দিয়া উঠছে।
আমিরনঃ সংসার চালানোর মুরদ নাই, আবার মুখে মুখে তর্ক, ভালো হইবোনা কইয়া দিতাছি।
বয়াতীঃ কেউ তর্ক করতে চাইলে কি মুখ বন্ধ কইরা থাকুম। তর্ক করলে কি করবা তুমি? কিছুই করতে পারবানা  আমার। আমি বিজয়ের ডাক শুনতে পাইতাছি(উদাস ভঙ্গি)পরাধীনতার শিকল ছেড়ার আওয়াজ শুনতাছি।
আমিরনঃ কথা ঘুরাইবানা কইতাছি, ইসস.. রে আমার জুয়ান মরদ, কথা হুইন্না মনে অইতাছে দ্যাশটারে একেবারে স্বাধীন কইরা আইছো
বয়াতীঃ বউরে একলা যদিও পারুম না, তবে চেষ্টা করতে দোষ কি? আহারে, খুব মনে চায় দেশটা যদি স্বাধীন করতে পারতাম(দীর্ঘশ্বাষ)। হের লাইগ্যাইতো মুখে বানছি দেশের গান, হাতে নিছি দোতারা
আমিরনঃ কতায় আছে না, গুজায় চায় চিৎ অইয়া হুইতে বয়াতীর অইছে হেই দশা।
বয়াতীঃ তুমি কিন্তু আমারে অপমান করতাছো। তুমি জানো, প্রয়োজনে আমি দোতারা ছাইরা হাতে রাইফেলও নিতে পারি।
আমিরনঃ হ......... যার মানই নাই তার আবার অপমান, ভাত পায় না আবার চা খায়, হাটতে পারে না বন্দুক ঝুলায়
বয়াতীঃ এই, মান নাই মানে? তুই কি কইতে চাস।
আমীরনঃ কি কইতে চাই বোঝ না? একজন জোয়ান মরদের বউ মাইয়া মাইনষের বাড়ীতে কাম কইরা প্যারে খুদা মিডায়। হেইয় মনে থাকে না
বয়াতীঃ তাও তো তোর বাপের বাড়ী থিকা ভালো আছোস।
আমীরনঃ তোমার ভালোর খ্যাতা পুরি। সারাদিন রাইত পইড়া থাকে দোতারা লইয়া, আর বাড়ী আইয়া করে ঝগড়া, আগে জানলে এমন পোড়া কপাইল্যার সংসারেই আমি আইতাম না।
বয়াতীঃ অহন তো জানছোস, তয় যা গিয়া, আমার লগে আমার মাইয়া আছে, আর আছে দোতারা, তোর মতন অমন বান্দরনীরে আমার লাগবোনা, তোর তোন আমার দোতারা অনেক বেশি সুন্দর। আহারে কি সুন্দর সুর দেয়, এই দোতারা আমারে দ্যাশের মাটিতে মিশাইয়া দেয়, যার তারে বাইজা উঠে দ্যাশের গান। (একটি দেশের গান)
আমীরনঃ কি কইলা আমার তোনে তোমার দোতারা সুন্দর, তোমার দোতারা আমি ভাইঙ্গাই ছাড়–ম, (এমন সময় ঘর থেকে মেয়ের প্রবেশ,মেয়ে বলে উঠে)
সাজুঃ ওমা তোমরা এ কি শুরু করলা, কাম কাইজ বাদ দিয়া শুধু ঝগড়া করো
আমীরনঃ থাক তুমি তোমার দোতারা লইয়া, আমি ও দ্যাখতে চাই তোমার প্যাডের যোগান কেডা দেয়, তোমার দোতারা  না আমি।
সাজুঃ মা,থাম তো, বাজান তুমিও থামো
বয়াতীঃ আয় মা, আমার কাছে আয় , দ্যাখ তোর মায় সকাল বেলা আমার মেজাজটা বিগরাইয়া দিছে। (আমীরন নিজের কাজে মন দেয়)
সাজুঃ বাজান, হুনছো-দ্যাশে না-কি আগুন লাগছে, পাকিস্তানি মেলেটারিরা নাকি খালি বাঙ্গালিগো ধইর‌্যা ধইর‌্যা মারতাছে।
বয়াতীঃ তোর কাছে কেডা কইল?
সাজুঃ শহরের মানুষ লাইন ধইরা গেরামে আইতাছে, শহরে নাকি মেলা গন্ডগোল অইতাছে।
বয়াতীঃ আমি ও একটু একটু হুনছি। তয় এহনতো মনে অইতাছে ঘটনা আসলেই হাছা।(আমীরন ভয় পেয়ে এসে বলে)
আমীরণঃ এই সব কতা হুইন্যা আমার খুব ডর করতাছে। হোনেন আমনে আর গান গাইতে দুরে দুরে যাইয়েন না, মাইডা বড়ো অইছে, কহন কি অইয়া যায় আমার কিন্তু আসলেই ডর করতাছে।
বয়াতীঃ ডরের কিছু নাই,(আনমনে ......... ভয় কি মরনে গান ধরে)
আমীরনঃ রাখেন আমনের গান, আমনে সব কিছুতেই খালি হেলামী করেন
বয়াতীঃ আইচ্ছা, আমি দুরে চইল¬া গ্যালেইতো তুমি খুশি অইবা, ঠিক না?
আমীরনঃ (অভিমান নিয়ে), আমনে খালি আমার বাহিরডাই দ্যাখলেন, ভিতরডা দ্যাখলেন না, ভিতরে ভিতরে যে আমার মনডা আমনের লাইগ্যা পুইড়া ছারখার হয়,হেইডা কোনদিন বুজলেন না।
বয়াতীঃ হেইডাতো তুমি ও বুজলানা।
আমীরনঃ হোনেন, আসল কতা কইতেই ভুইল্যা গেছি,  কাইল সন্ধ্যাকালে মানিক ভাই আইছিলো, আমনেরে দ্যাহা করতে কইছে।
বয়াতীঃ কও কি?এই কতা আরও আগে কইবা না, আমি অহোনি যাইতাছি....(দ্রুত প্রস্থান)
আমীরনঃ কিছু মুখে দিয়া যান....... হায়রে মানুষ( সবার প্রস্থান)
২য় দৃশ্য:
*( কোন এক গোপন স্থানে কয়েকজন মুক্তিকামি যুবক বসে আলোচনা করছে, এমন সময় বয়াতীর আগমন)
বয়াতীঃ মানিক ভাই তুমি আমারে আইতে কইছো?
মানিকঃ শোন বয়াতীভাই দ্যাশের অবস্থা ভালো না, গত ২৫ শে মার্চ রাইতে পাক আর্মিরা ইয়াহিয়া খানে নির্দেশে নিরীহ বাঙ্গালীর উপর ঝাপাইয়া পড়ছে, জাগায় জাগায় আগুন ধরাইয়া দিছে।
বাদলঃ হ বয়াতী ভাই, হুনলাম বাশগাড়ীর নুরুল ইসলাম শিকদার তখন ইপিআরে আছিলো, সে পিলখানা থেকে পালইয়া আইছে, যুদ্ধ শুরু অইয়া গ্যাছে, এহন আর সময় নাই, আমরা দ্যাহাইয়া দিমু আমাগো ভারী অস্ত্র নাথাকলেও মনোবল আছে, আছে দ্যাশের প্রতি ভালোবাসা, মাটির প্রতি আছে গভীর টান, আর থাকবোইবা না ক্যান? বঙ্গবন্ধু কইছে না যার যা কিছু আছে তাই শত্র“র বিরুদ্ধে ঝাপাইয়া পড়ো, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।
বয়াতীঃ হ, ঠিকই কইছো, আমরা ও দেখাইয়া দিমু এখনোই আমাগো উপযুক্ত সময়। কিন্তু কীভাবে কি করবা? ঠিক করছো কিছু?
বাদলঃ শোন, আগে আমাদের মনোবল বাড়াতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ঘর থিকা বাহির হইয়া আসতে হবে, আমাগো যুদ্ধের প্রস্তুুতি নিতে হইবো, আমাগো এহন ট্রেনিং দরকার, লিডারদের সাথে যোগাযোগ অইতাছে। তারা সবাই আসমত আলী খান সাহেবের বাসায় আছে, ইলিয়াস চৌধুরী, শওকত ছ্যার, স্টুয়ার্ড মুজিব ও ফনি বাবু ও আছে।
মানিকঃ বাদল ভাই তুমি না কইলা, শওকত ছ্যার আর স্টুয়ার্ড মুজিব নাকি আমাগো দ্যাখা করতে কইছে।
বাদলঃ হ, হাতে সময় খুব কম, তোমরা যার যার বাড়ী থিকা বিদায় নিয়া আসবা। আগামীকাল সকালে আমরা নাজিমুদ্দিন কলেজে হইমু, জাগো জাগো বাছাই করবো তারা আমরা ট্রেনিং এ যামু।
বয়াতীঃ এহন তয়লে উডি, কাইল সকাল সাতটার মধ্যে কলেজ মাডে থাকুম।
মানিকঃ হ, স্টুয়ার্ড মুজিবের নেতৃত্বে একটা টিম ইন্ডিয়ায় ট্রেনিং এর জন্যে পাঠানো অইবো, শোন, যারা ট্রেনিং এ যাইতে চায় তাগো আসতে কইবা
বয়াতীঃ বুজছি, আমি তাইলে পোটলা পাটিলি লইয়া হাজির অইয়া যামু, তয় সবাই খুব সাবধান, আমাগো সলা পরামর্শ য্যান কেউ জানতে না পারে, হুনছি আমাগো এলাকার কয়েকজন বেঈমান নাকি গোপানে পাকিস্তানিগো সাহায্যে করে, খোজ-খবর দেয়,
বাদলঃ ঠিক আছে, আমরা এহন তাইলে, সবাই যার যার বাড়ী যাই (সকলের প্রস্থান)
৩য় দৃশ্য:
স্থানঃ বয়াতীর বাড়ী
সময়ঃ ভোরবেলা
(বয়াতী পোটলা পাটলি বাধছে, আমীরনের প্রবেশ)
আমীরনঃ আমনে পোটলা পাটলি বান্ধেন ক্যান, কই যাইবেন, দ্যাহো দেহি, মুখখান ক্যামোন হুগাইয়া আমসীর মতো অইয়া গ্যাছে। কতা কন না ক্যান?
বয়াতীঃ (সম্বিৎ ফিরে পেয়ে) আমারে কিছু কও?
আমীরনঃ হ, কই, সাত সকালে আমনে কই যান? সারাদিন কিছু খান নাই, রাইতে খান নাই, এহনো না খাইয়া পোটলা পাটলি বাইন্ধা আমনে কই যান।  কাইলকের রাগ বুঝি এহনো আছে? ইচ্ছা কইর‌্যা কি আমনের লগে অমন করি,
বয়াতীঃ নারে, সাজুর মা তুই যা ভাবতাছোস, আসলে তা না, আমি তোর লগে রাগ যাইতাছি না। হুনছোস পাকিস্থানীরা আমাগো উপর অত্যাচার করতাছে, অগো আমার ঘেন্যা ধইরা গ্যাছে। অগো খতম কইরা আমি বাড়ী ফিরুম।
আমীরনঃ আমনে কই যাইবেন, আমনে গ্যালে আমাগো কেডা দ্যাখবো?
বয়াতীঃ তোগো আল¬ায় দ্যাখবো, তোগা লাইগ্যা আমি কিছুই করতে পারি নাই। তয় এইবার মনে অয় কিছু করতে পারুম, খালি তোগো লাইগ্যা না দ্যাশের লাইগ্যাও কিছু করতে পারুম। বউরে যদি বাইচ্যা আহি তো আইলাম, না আইলে তুই গর্ব কইরা কবি তোর স্বামী দ্যাশের লাইগ্যা যুদ্ধ কইরা শহীদ অইছে।
আমীরনঃ সাজু তো ঘুমাই রইছে, অর লগে কতা কইয়া যাইবেন না, আমি অরে ডাইক্যা দেই।
বয়াতীঃ না, অরে ডাকোনের কাম নাই, হাতে সময় কম, অয় ওটলে অরে কইবা, তোর বাজানে যুদ্ধে গ্যাছে। আমি অহোন যাই (আমীরন পিছু পিছু কাদতে কাদতে যায়, পিছন থেকে মেয়ে সাজু ডাকে)
সাজুঃ মা তুমি কান্দ কেন? বাজান কই?
আমীরনঃ তোর বাজানে গ্যাছে গা।
সাজুঃ মা বাজানে কই গ্যাছে?
আমীরণঃ তোর বাজানে যুদ্ধে গ্যাছে।
সাজুঃ মা-রফিকের মা চাচি কইলো। রফিক ভাই নাকি যুদ্ধে যাইবে, চাচি পাগোলের মত কানতাছে।
আমীরনঃ কছকি? তুই তইলে ঘরের কাম কর। আমি একটু ঐ বাড়ি যাই।
সাজুঃ আইচ্ছা যাও। তাড়াতাড়ি আই ও। (আমীরনের প্রস্থান। রফিকের প্রবেশ)
রফিকঃ চাচী, চাচী ও চাচী বাড়িতে আছেন?
সাজুঃ ক্যাডা?  (বের হয়ে) ও আপনে? মায় তো এই মাত্র আপনা গো বাড়ী গেল। বাজানে যুদ্ধ গ্যাছে। আপনিও নাকি            যাইবেন।
রফিকঃ হ, যাইতাছি। তয যাওয়ার আগে তোমারে একটা কতা বলার আছিল।
সাজুঃ কি কতা কইবেন। আমনে আমার দিকে ওমনে চাইয়া রইছেন ক্যান।
রফিকঃ চাইয়া রইছি ক্যান তুমি বুঝ না।
সাজুঃ  না বুঝি না। বুঝলে কি জিগাইতাম।
রফিকঃ আমি তোমারে খুব পছন্দ করি। কইতে পার ভালোও বাসি।
সাজুঃ আপনার কি সরমলজ্জা নাই। আসারে এইসব কইতাছেন।
রফিকঃ তোমার কাছে আমার শরম কীসের। জানিনা সাজু জান লইয়া ফিরতে পারুম কিনা যদি ফিরি তাইলে তোমারে আমার জীবন(সঙ্গী/সাথী) করুম।
সাজুঃ ঠিক আছে আগে দ্যাশটারে রক্ষা করেন। দেশের এই বড় বিপদে আমাগো সকলেরই উচিৎ দ্যাশের কথা চিন্তা করা। যদি ঠিকমতো দ্যাশ স্বাধীন হয় আর আমরা সবাই বাইচ্চা থাকি তয় অবশ্যই আমি আমনের হমু।
রফিকঃ সাজু তোমার উৎসাহ আমার শক্তি আরও বাড়াইয়া দিছে। তুমি দোয়া কইরো আমি যেন তোমার লাইগা স্বাধীন দ্যাশের পতাকা লইয়া ফিরতে পারি। (আবেগ জরিত কন্ঠে রফিকের বিদায়) আমি তাইলে এইবার া আসি সাজু।

৪র্থ দৃশ্য:
(চারদিকে গোলাগুলির শব্দ। চিৎকার ধ্বনি।)

মানিকঃ (ফিস ফিস গলায়) বাদল ভাই, আমরা যারা ট্রেনিং নিয়া আইছি। তারা এহন কী করুম। একটা কিছু ভাবা দরকার।
বাদলঃ হ, তা-ই ভাবতাছি। দুইডা ব্রীজ ধংসের পরে আমাগো হাতে এহন তেমন কোন অস্ত্র নাই। তাই প্রথমে কৌশলে পোষ্ট অফিস পাটের গুদাম, তফসিল অফিস, টেলিফোনের লাইন এগুলা ধ্বংস করতে হবে। অস্ত্র হাতে পাওয়ার পর যামু অন্য কোন অপারেশনে।
বয়াতীঃ হ-তয় খুব সাবধান। জুটমিল, কুলপদ্দি বাজারসহ কয়েকটা জায়গায় আর্মিরা ক্যাম্প বসাইছে। আর তগো সাহায্য করতাছে আমাগো দ্যাশের কিছু বেঈমান কুত্তারা।
মানিকঃ জানেন বাদল ভাই আমার পিচ্চি ভাইর ব্যাটা বাচ্চু আছেনা? ও আমাগো লগে লগে থাকতে চায়। হেদিন আমারে কয় চাচা আমারে একটা অস্ত্র দ্যাও। আমি দ্যাশের শত্রুগুলা শ্যাষ কইরা দেই।
বয়াতীঃ শোন মানিক, বয়াতী ঠিকই কইছে। আরে কবি-কাগজে-কাগজে স্লোগান লেইখ্যা পোষ্টার বানাইয়া গোপনে সবখানে লাগাইয়া দিতে।
রফিকের প্রবেশ।
বয়াতীঃ আচ্ছা বাদল ভাই সমাদ্দারে ব্রীজটা উড়াইয়া দিলে ক্যামন হয়। নুরুল ইসলামরা নাকি কালকিনির গোপালপুর ব্রীজ উরাইয়া দিছে। তয় নুরুল ইসলাম হানাদারগো গাত থেইক্কা বাঁচতে পারে নাই। ব্রীজ উরাইয়া যাওয়ার সময় আর্মিগো গুলিতে শহীদ হইছে।
বাদলঃ হ- নুরুর লেইগ্যা খুব খারাপ লাগতাছে। তয় জীবনের ঝুকি নিয়া হইলেও সমাদ্দারের ব্রীজ উড়াইতে হইবো। তাইলে আর্মি আর মাদারীপুর এর ভিতরে ঢুকতে পারবোনা।
রফিক ঃ হ-হেইডাই ভালো হয়। চোকদার ব্রীজ, আমগ্রাম ব্রীজতো ধ্বংস করা হইছেই। তয় সমাদ্দারের ব্রীজটাই হইলো আসল।
বাদল ঃ শোন, আজকে আমাগো দুই দলে ভাগ হইয়া যাইতে অইব। একদল চরমুগরীয়ার জেডিসি পাটের গুদাম ধ্বংস করব। আর একদল এ আর হাওলাদার জুট মিল ধ্বংস করবো। শোন, আইজ ১৪ই আগষ্ট। পাকিস্তান দিবস। আমাগো প্রান থাকতে বাংলার মাটিতে পাকিস্তান দিবস পালন করতে দিমু না।
বয়াতীঃ তয় সাবধান। আমাগো খলিল বাহীনির সবার চোখ কান খোলা রাখতে হইবো। শুনলাম কুলপদ্দিতে দুই জন মুক্তিযোদ্ধারে কারা য্যান ধারাইয়া দিছে।
মানিকঃ রাজৈর, শিবচর, কালকিনির খবরাখবর ও একটু লইও কোখায় সকি অবস্থা। বাদল ভাই এহন তইলে আমরা উডি। মূল অপারেশনের দিকে যাই। আর বাচ্চুরে পাঠাইয়া দেই কুলপদ্দিতে আটক দুইজনের নাম জাইন্না আসতে।
বয়াতীঃ চলো সবাই। জয় বাংলা। (সকলের প্রস্থানঃ গোলাগুলির শব্দ)

৫ম দৃশ্য:
*সোলেমান বয়াতীর দাওয়ায় বসে আমীরন তার মেয়ে সাজুর মাথায় বিলি কাটছে। এমন সময় রফিকের মার প্রবেশ।)
রফিকের মাঃ মায়ে ঝিয়ে ক্যামন আছো?
আমীরনঃ হ-গো-বু আমাগো আর থাকা। দ্যাশের যা অবস্থা প্রত্যেকটা রাইত কাটে দুঃচিন্তায়, আর রাজাকারগো ভয়ে।
রফিকের মাঃ তুমি ঠিকই কইছো। মা সাজু ঘরে কি পান টান কিছু আছে? (সাজু ঘরে যায়)
রফিকের মাঃ বইনরে বুকটার মইধ্যে খালি ধক্্ ধক্্ করে। আমার রফিক ক্যামন আছে, খোদা মাবুদই জানে। সাজুর বাপের কোন খোজ খবর পাওনি বোইন।
আমীরনঃ নারে বু-কোন খোজ খবর পাই নাই। দোয়া করেন বু দোয়া করেন। আমাগো আপনজন যাতে দেশ স্বাধীন কইরা আমাগো বুকে ফিইরা আহে। মাইয়াডা আমার মনমরা অইয়া গ্যাছে।
রফিকের মাঃ বু- সাবধনে থাকিস। ওয়াজেদ আলী আর কেতর আলী পাকবাহীনিরে সাহায্যে করতাছে। বাড়ি বাড়ি ঘুইরা মুক্তিযোদ্ধাগো আর জুয়ান মাইয়া মানুষ ধইরা নিয়া মেলেটারীগো হাতে তুইল্লা দেয়।
আমীরনঃ আমি ও হুনছি। হের লেইগ্যাইতো ডর। ঘরে আমার ডাঙ্গর মাইয়া। (পান হাতে সাজুর প্রবেশ)
সাজুঃ নেন চাচী আমনের পান। পানও ক্যামন শুকাইয়া গ্যাছে। হাড়ে-ঘাড়ে কেন্ডা যাই কন? তিন বেলার খাওন এক বেলায় খাই।
রফিকের মাঃ হরে- মা। তোর মুখখান ক্যামন শুকাইয়া গ্যাছে। কী সুন্দর বউ আমার ক্যামন হইয়া গ্যাছে। (সাজু লজ্জা পায়) থাউক, আর কয়ডা দিন মা, পোলা আমার দ্যাশ স¦াধীন কইরা ফিরলেই তোরে লাল শাড়ী ফিন্দাইয়া আমার ঘরে নিমু।
আমীরনঃ দোয়া করো বু। দোয়া করো সব উপর আলার মর্জি।
রফিকের মাঃ আইজ যাইরে বইন। একটু সাবধানে থাকিস।
আমীরনঃ চলেন আপনেরে একটু আগায় দিয়া আহি। চল মা সাজু। (সকলের প্রস্থান)
ষষ্ঠ দৃশ্য:
স্থানঃ আর্মি ক্যাম্প
সময়ঃ বিকাল
*( পাক বাহীনির ক্যাম্পে মেজরের সাথে রাজাকার ওয়াজেদ আলী ও কেতর আলীর কথোপকথোন)
ওয়াজেদ আলীঃ মেজর সাব, মুক্তি বাহীনিরা যা শুরু করছে তাতে তো বেশি সুবিধার মনে হইতাছে না।
মেজরঃ (ভয় পেয়ে) তুম কিয়া বাত বোলা, মুক্তি কোনছে............ মুক্তি মিলেগা।
ওয়াজেদঃ না হুজুর এ ধারমে নেহী মিলেগা। তবে যেভাবে ক্ষ্যাপছে তাতে এ ধারমে আইতে কতক্ষন।
মেজরঃ (অট্রহাসি) মুক্তি এ ধারমে নেহি আয়েগা কাভি নেহি। তুম ঝুট বলতাহু। হামছে ডরমে লাগা থা। যা শালা মেজাজ মে বিগড়ে দিলে তো।
ওয়াজেদঃ হুজুর, খোশ আমদেদ হো এওগা ভি খুশির বাত বোলতাহু। মেজাজ ভি ঠান্ডা হোতা হায়।
কেতরঃ কিচু মনে না করলে একটা কথা কই। সুন্দরী জোয়ান মাইয়া আছে। আপনার মেজাজ এক্কেবারে ঠান্ডা হইয়া যাইবো।
মেজরঃ মাইয়া? মাইয়া কিয়া হ্যায় ?
কেতরঃ মাইয়া মানে হইলো মানে ....................... (আটকে যায়)
ওয়াজেদঃ মাইয়া মানে বহুত খুব সুরত লাড়কী।
মেজরঃ ও ঠিক হ্যায়, ঠিক হ্যায়। যাও ওকে লিয়ে  আসতা হ্যায়।
ওয়াজেদঃ হুজুর, জেলার সাহেবকা কিয়া বাদ হে।
মেজরঃ জেলার সাবকা লাড়কীকা বাদ মে সব খতম করতা হায়।
ওয়াজেদঃ হুজুর, জেলারের মেয়ে বাদে সব খতম?
কেতরঃ মানে ঐ সুন্দরী সুফিয়া?
মেজরঃ হা- হা- হা- হা ওকে হাম ধীরে ধীরে খতম করতাহু। ও হামার ক্যাম্পে ভি রাখতাহু।
ওয়াজেদঃ আমরা তাইলে এখন আসি হুজুর।
মেজরঃ ঙশ তুম যাও  মেজরের প্রস্থান)
ওয়াজেদঃ শোন কেতর আলী। বয়াতীর বাড়ীর দিকে নজর রহিস শুনলাম ও নাকি যুদ্ধে গ্যাছে। সালার কত্তবড় সাহস সালায় ভাত পায় না চা খায়।
কেতরঃ হুজুর দোতারা লইয়া যুদ্ধে যায়। হুজুর ঘরে কিন্তু সুন্দরী বউ আর মাইয়া আছে।
ওয়াজেদঃ কেতর আলী চল গায়েনের বাড়ীর দিকে যাই ওর যুদ্ধে যাওনের সাধ মিটাইয়া দিমু চল।
কেতরঃ চলেন তাইলে। (উভয়ের প্রস্থান)
সপ্তম দৃশ্য:
(স্থানঃ মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আস্তানা)
বাদলঃ কিরে মানিক চারিদিকের খবর কী?
মানিকঃ ভাই আমগ্রাম আর পাথুরিয়াপাড় ব্রীজ ধ্বংস কইরা দিছি। মিলিটারিরা এহন আর সহজে ঢুকতে পারবো না। তয় সমাদ্দারের ব্রীজ ভাঙ্গতে পারলেই আমরা সফল।
বয়াতীঃ শোন গোপনে একটা খবর পাইলাম।
সবাইঃ কী খবর?
বয়াতীঃ রফিক, কাশেম আর সাইদুলরা মিল্লা ঘটকচর স্কুলে কয়েকজন রাজাকারগো আটক করছে। আমাগো এহন সে দিকে যাওয়া দরকার।
মানিকঃ তাইলে চল, আমরা এহনই যাই। শালাগো জনমের তরে বেঈমানীর সাধ মিটাইয়া দেই।
বয়াতীঃ সাবধানে যাইস, তোরা আইলে আমরা এ আর হাওলাদার জুট মিলে হামলা করুম। হুনলাম, কালকিনির ফাসিয়াতলা হাটে পাকবাহীনিরা আইজ গণহত্যা চালাইছে। ঘরে ঘরে আগুন ধরাইয়া দিছে। শত শত মানুষরে মিথ্যা কতা কইয়া বাজারে আইন্না গুলি কইরা মারছে। আমাগো গোপন সংবাদ দাতা নুরে আলম পান্নারে ধইরা লইয়া গ্যাছে।
মানিকঃ হ- গ্রামের অনেক নারী-পুরুষ ধইরা আনছে জুট মিলে। তাগোরে মুক্ত করতে না পারলে হারামীর বাচ্চারা তাগো মাইরা জুট মিলের মধ্যেই গণকবর দিব। বেশি দেরি করন ঠিক অইবোনা।
বয়াতীঃ বাদল, মানিক আমার মনডা জানি ক্যামন করতাছে বউ মাইয়াডারে খুব দ্যাখতে মন চায়। না জানি ওরা ক্যামন আছে।
বাদলঃ বয়াতী তুমি এই অবস্থার মইধ্যে বাড়ীর কথা ভাবো?
বয়াতীঃ হ-ভাবি, তোমরা কি বুঝবা। তোমাগোতো আমার মতোন সংসার নাই, বউ নাই, শিয়ানা মাইয়া নাই। জানি না ওরা কোন বিপদে আছে।
মানিকঃ সব ঠিক অইয়া যাইব। দেইখেন আমাগোরই জয় অইবো। আপনে কোন চিন্তা কইরেন না। ওরা ভালোই আছে।
বাদলঃ না বয়াতী, তোমার বাড়ি যাওনের কাম নাই। আমার এখন উডি( সকলের প্রস্থান)

অষ্টম দৃশ্য:
(ঝি ঝি পোকার শব্দ)
* (সলেমান বয়াতীর বাড়ি। খন্দকার ও কেতর আলী আসে)
ওয়াজেদঃ বয়াতী ও সলেমান বয়াতী, বাড়ী আছ নাকি?
আমীরনঃ ক্যাডা, ক্যাডা জিগায়?
ওয়াজেদঃ আমি ঐ পাড়ার খন্দকার ওয়াজেদ আলী
আমীরনঃ তারে  কি দরকার? হে তো বাড়িতে নাই।
ওয়াজেদঃ না মানে,ওতো আমাগো গৌরব। মুক্তিযোদ্ধা- জয় বাংলার সৈনিক। মনে বড় আশা ছিল যুদ্ধে যামু। এই দ্যাহো আমি ট্রেনিং কইরাও যাইতে পারলাম না।
কেতরঃ হে- হে- হে। হুজুর আপনার আর কী আশা ছিল।
আমীরনঃ আমনেরা এহোন যান। হে আইলে আমি আমনের কতা কমু হানে।
ওয়াজেদঃ আহা........ । লক্ষী পায়ে ঠ্যালতে নাই। তারে দিয়া আমি কি করুম। দরকারতো তোমারে। ঘরে মেজবান আইলে একটু খাতির যতœ করতে হয় না?
আমীরনঃ সুন্নতী লেবাস পইরা  এইসব কি কতা কন? শয়তান বদমাইশ, এই দিকে আর একটু ও আগাই বিনা কইতাছি।।
ওয়াজেদঃ (অট্রহাসি দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে) কেতর আলী শালিরে আমি নিতাছি তুই মাইয়াডারে নিয়া চল মেজর সাব পাইলে খুশি হইবো।
আমিরনঃ ছাড় কুত্তার বাচ্চা। তগো মা বোন নাই। তগো উপর আল্লার গজব পরবো। তোরা শান্তিতে থাকতে পারবি না।
মেয়েঃ ছাড় শয়তান ছাড়, তোরা আমাগো ছাড় কইতাছি।
*একদিক দিয়া ওয়াজেদ আলী, গায়েনের বউ ও মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে যাবে, অপর দিক দিয়ে আবার ওয়াজেদ কেতর আমীরন ও মেয়েকে নিয়ে ঢুকবে মেজর সাবে ক্যাম্পে।
ওয়াজেদঃ হুজুর, এই যে, আপনার সুন্দরী লাড়কী
মেজরঃ আও লারকী আও। হাম তুমকো সাদি করতাম। হাম তুমকো বিবি বানাইতাম। আও মেরা দিলের রানী। তুম বহুত সুরাত হে।
আমীরনঃ না- না- না। আমার গায় হাত দিবি না কইলাম, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বরের দোহাই দিয়া কইতাছি আমারে ছাইড়া দে।
মেয়েঃ বেঈমান, রাজাকার, আমাগো ছাইড়া দে। অবলা  মাইয়া মানুষ লইয়া টানাটানি করছ ক্যান। পারলে মুক্তিযোদ্ধার সামনে গিয়া খাড়া। আমার বাজানে হুনলে তোগো কাইট্টা কুত্তা দিয়া খাওয়াইব।
মেজরঃ গায়েনের বউকে অত্যাচার করতে উদ্যত হয় তখন সাজু কেতরের হাত থেকে ছুটে গিয়ে মেজরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বলে আমার মায়রে ছাইড়া দে কইতাছি। মেজর তখন রাগ হয়ে গলায় ফাস দিয়ে সাজু কে মেরে ফেলে।
(আমীরনকে টেনে নিয়ে ভিতরে নিয়ে যায় এবং সকলের প্রস্থান)
নবম দৃশ্য:
বাদলঃ হুনছনি তোমরা কালকিনি, রাজৈর ও শিবচর হানাদারমুক্ত অইয়া গ্যাছে। চিন্তুা কইরো না আমরাও শীঘ্রই মুক্ত অইয়া যাইমু। আমাগো দ্যাশ ও স্বাধীন অইয়া যাইব।
মানিকঃ ভাই, রফিকের তো কোন খোজ পাইলাম না।
বাদলঃ রফিকের ঐ দুঃসম্পর্কের বোন কি জানি অর নাম বেনু না কি জানি? অয়তো গোপনে গোপনে মুক্তিযোদ্ধাগো অনেক সাহায্যে তরছে। অর খবর কী?
মানিকঃ হ- ভাই বোইনডা আমার দ্যাশের লাইগ্যা নিজের ইজ্জত পর্যন্ত হারাইছে। তয় হুনছি হানাদারগো খতম না কইরা বেনু  ও থামবো না।
বাদলঃ হ-বেনু পারবো। অর বুকের মধ্যে জেদ ধইরা গ্যাছে। ও এহোন জীবনের পরোয়া করে না। কি নিয়াই ও বাচবো মাইয়াডা।
মানিকঃ বয়াতী ভাই কি হইছে- তুমি এত অস্থির ক্যান?
বয়াতীঃ সাইদুলের কাছে হুনলাম ওয়াজেদ আলী নাকি আমার বউ আর মাইয়ারে ধইরা নিয়া গ্যাছে। বাদলরে আমার সব শ্যাষ হইয়া গ্যালো রে ভাই সব শ্যাষ হইয়া গ্যালো।
বাদলঃ আইজ এতগুলা দুঃসংবাদ আমারে দিলা। বয়াতী কান্দ ক্যান। কাইন্দা কোন লাভ নাই, এই ধরো অস্ত্র, এইডারে চাইপ্পা ধরো। মনটারে শক্ত করো, বাঁচতে অইলে লড়তে অইবো। সব কিছুর বিনিময়ে অইলেও দ্যাশ স্বাধীন কইরা ছাড়–ম। চলো তোমরা, আইজই সমাদ্দারের দিকে, ঐখানে আর্মিগো গাড়ি আইসা জড়ো হইছে। অগো খতম করতেই হইবো।
বয়াতীঃ বাদলরে না আমি আর কান্দুম না, আমি এইবার পাকিস্থানি ক্ত্তুার বাচ্চাগো কইলজা টাইন্না বাইর কইরা কুত্তা দিয়া খাওয়ামু।
মানিকঃ চল সবাই (একদিকে দিয়ে বের হয়ে অন্য দিক দিয়ে ঢুকবে এবয় আর্মিদের সাথে যুদ্ধ করবে।
এক জন : আমাদের গোপন সংবাদ দাতা জানিয়েছে মাদারীপুর থেকে আর্মিরা সব কিছু নিয়ে যে কোন সময় পালিয়ে যাবে।
বাদল : ঘটকচর থেকে প্রতিরোধ শুরু করতে হবে। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে।
যুদ্ধের সময়
বাদলঃ বাচ্চু তুই গ্রেনেড সাবধানে মার। ওরা কিন্তু রাস্তার ওপারে বন্দুক তাক করে আছে।
মানিকঃ তুই যা বাচ্চু আমি তোরে কাভার দিতাছি।
 আর্মিঃ মুক্তির উপর গুলি ছোর দে। (বাচ্চুর মারা যাওয়ার শব্দ)
মানিকঃ বাদল ভাই বাচ্চু মনে হয়,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
বাদল : মেজর খটক, তুমি আতœসমর্পন কর। মুক্তি যোদ্ধারা তোমাদের চারিদিক ঘিরে ফেলেছে।
 *যুদ্ধের ময়দানে মানুষ মরে পড়ে থাকবে ঐ দিকে বাদলের কাছে মেজর সাব সাদা রুমাল দেখিয়ে আত্মসমর্পন করবে।
(থমথমে পরিবেশ থাকবে)
শেষ দৃশ্য:
(যুদ্ধ শেষ। জয় বাংলার মিছিলে। বয়াতী ছুটে আসে তার বাড়ী অন্যদিকে জয়বাংলার মিছিলের  শব্দ শুনে রফিকের মাও ছুটে আসে বয়াতীর বাড়ী)
বয়াতীঃ আমীরন, সাজু তোমরা কই? এই দ্যাগো আমি আইছি। দ্যাশ স্বাধীন করে আইছি।
(বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)
রফিকের মাঃ সোলেমান ভাই তুমি আইছ? তয় বড় দেরি কইরা হালাইছো। তোমার মাইয়াডা আর ফিরতে পারে নাই, বউডা সব হারাইয়া পাগল হইয়া গ্যাছে। হয়তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাছে........। (হাঠাৎ রফিকের কথা মনে হয়ে ব্যাকুল হয়ে গায়েনকে প্রশ্ন করবে)
রফিকের মাঃ গায়েন ভাই তুমি একলা আইছ ক্যান? আমার রফিক আহে নাই। আমার রফিক কই। গায়েন ভাই তুমি কথা কওনা ক্যান?(গায়েন শোকে বিহ্বল হয়ে কান্নাজরিত কন্ঠে বলে)
বয়াতীঃ ভাবীসাব তোমার রফিকের কোন খোজ পাই নাই(রফিকের মার চিৎকার কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে আসবে) না........... আমার রফিক..............................
রফিকের মাঃ আমার বাজান, আয় বাব, তুই ফিরা আয় যুদ্ধ তো শ্যাষ তুই এহোনো কি করছ? সবাইতো ঘরে ফিইরা আইছে, তুই কবে আবি বাজান কবে? আয়.............বাবা আয়( বলে কানতে কানতে বেরিয়ে যাবে, গায়েন রফিকের মার পিছন পিছন গিয়ে আবার ফিরতে যাবে এমন সময় আমীরন পাগল বেশে প্রবেশ করবে এবং গায়েন দেখে আশ্চর্য হয়ে যাবে। বউকে ধরতে যায় সে ছিটকে দুরে সরে যায়)
আমীরনঃ না আমারে ছুইবিনা ছুবিনা কইতাছি, পর পুরুষ আমার সব কাইরা নিছে। তুই আবার কোন পুরুষ? তুই আবার কি চাষ(কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)
বয়াতীঃ আমীর আমার আমীরন। আমি তোমার গায়েন আমীর। আমার সাজু মইরা গিয়া বাইচ্চা গ্যাছে। দ্যাশের জন্য শহীদ হইছে। এই দৃশ্য দেখার আগে আমি ক্যান শহীদ হইলাম না? আমু...... আমুরে কতা কও আমীর কতা কও। (বলে জোরে ঝাকুনী দেয়)
আমীরনঃ (স্মৃতি ফিরে পেয়ে) আমি মরি নাই? আমি বাইচ্চা আছি ক্যান? গায়েন কতা কও ক্যান আমি বাইচ্চা আছি? কি আছে আমার? তুমিতো দ্যাশ স্বাধীন করছো। কত মানুষের মুখে হাসি ফুটাইছো। হ্যারা কি পারবো আমাগো ইজ্জত ফিরাইয়া দিতে। জানো ওরা আমার আর সাজুর ইজ্জত একলগে নিছে। (আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে গায়েনের বুকে।)
বয়াতীঃ চুপ করো, আমীরন চুপ করো, আর কইওয়ানা তুমি চুপ করো। (গায়েনের কোলে আমীর মারা যায়) আমির কতা কও, কতা কওনা ক্যান? চোখ খোল আমীরন চোখ খোল।( কান্নারত অবস্থায় আমীর কতা কও বলে জোরে চিৎকার করে)
বয়াতীঃ আমার আমীরন কতা কয়না। তোমরা কতা কওনা ক্যান? তোমরা চুপ কইরা রইছো ক্যান? দ্যাহো তোমরা, দ্যাশের লাইগ্যা আমি আমার সব হারাইলাম। তোমরা আমারে ফিরাইয়া দিতে পারবা? পারবানা। তোমাগো কাছে কিছু চাই না আমি, খালি আমার নিষ্পাপ মাইয়া আর বউরে যারা নষ্ট কইরা মারছে,যারা আমাগো মাছুম বাচ্চুরে মারছে, যারা এই দ্যাশের লগে বেঈমানী করছে যাগো হিং¯্র থাবায় দ্যাশ আর দ্যাশের মানুষ ধ্বংস হইয়া গ্যাছে, আমি হেইসব ওয়াজেদ আলী আর কেতরগো বিচার চাই। পারবানা তাগো বিচার করতে? আমি মরার আগে আমার “একটাই চাওয়া” একটা জিনিস দেইখ্যা যাইতে চাই আর কিছু চাই না (বলতে বলতে কান্নারত অবস্থায় পতাকা দিয়ে  বউকে ঢেকে কোলে নিয়ে এগিয়ে যায়)
* নেপথ্যে গান বাজবে-একসাগর রক্তের বিনিময় বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা)
:সবাই ফ্রীজ:

বুধবার, ১৩ জুন, ২০১২

মহাত্মা গুরুনাথ স্মরণে বসন্ত উৎসব

সালাহ উদ্দিন মাহমুদঃ
সত্যধর্মের প্রচারক কবিরতœ মহাত্মা গুরুনাথ সেন গুপ্ত স্মরণে সত্যধর্ম মহামন্ডল বাংলাদেশের উদ্যোগে মাদারীপুরের কালকিনি অঞ্চলের নিভৃত পল্লী ঝুরগাঁও গ্রামে তিনদিনব্যাপী বসন্ত উৎসব পালিত হয়। প্রতিবছর ২৮ জানুয়ারি সকাল থেকে ৩০ জানুয়ারি গভীর রাত পর্যন্ত ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে  একেক বছর একেক স্থানে এ উৎসব পালিত হয়।
সন্ধ্যা নাগাদ উৎসবস্থলে পৌঁছে আমি হতবাক। সহস্র লোকের আনাগোনা। ভক্তরা মন্ডপের সামনে তাবুতে বসে আরাধনা করছেন। মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। এরই ফাঁকে কথা হয় কয়েকজন ভক্তের সাথে। তারা সত্য ধর্মাবলম্বী। যুগ যুগ সাধনা করে মহাত্মা গুরুনাথ সত্য ধর্মকে আবিস্কার করেছিলেন। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর এ দিনে পালিত হয় এ উৎসব। আয়োজন করেন সত্যধর্ম মহামন্ডল বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটি। একেক বছর একেক স্থানে পালিত হয়। এ বছর স্থান নির্ধারণ করা হয় কালকিনি। এ উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-‘সৃষ্টিস্থীতিলয় কর্তা সর্ব শক্তিমান মঙ্গলময় জগদীশ্বরের উপাসনা।’
উৎসবের তিনদিন স্রষ্টার গুণকীর্তণ, মহাত্মা গুরুনাথ রচিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও আলোচনা, সকল দেহত্যাগী আত্মার জন্য প্রার্থনা করা। সবশেষে সমাপনী রাতে কবিরতœ মহাত্মা গুরুনাথের পাদপদ্মে অর্চনার মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তী ঘোষণা করা হয়। উৎসবে বিভিন্ন জেলা থেকে মহাত্মা গুরুনাথের অগণিত ভক্ত অংশগ্রহণ করেন।
এ বছর সত্যধর্ম মহামন্ডল বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে উৎসবকে অলংকৃত করতে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সত্যধর্ম মহামন্ডল বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক হারান চন্দ্র দাস, হবিগঞ্জ জেলার সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মলয় চৌধুরী, নেপালে কর্মরত চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ নীহার রঞ্জন বিশ্বাস ও গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তন্ময় কুমার সরকার।
উৎসবে মোট ৮টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন তিন ঘন্টা সময় নিয়ে তিনটি করে অধিবেশন হয়। পরিবেশিত হয় ধর্মীয় সংগীত। সংগীতের মূর্ছনায় কলুষিত অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। সত্যধর্মের জয় কামনা করে বিদায় নিতে হয় আগত ভক্তদের। তখন সৃষ্টি হয় একটি ভ্রাতৃত্বময় পরিবেশের। যে দৃশ্য আজীবন প্রত্যাশা করেন সবাই।

নারীর প্রতি কেন এত সহিংসতা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদঃ
‘বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ কথা আমরা কখনোই অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু কাজের বেলায় তার উল্টো। আমরা মুখে এ কথা বললেও তা অন্তরে লালন করি না। এ আমাদের মত পুরুষের দীনতা। আমাদের পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থা এ জন্য বহুলাংশে দায়ি। আমরা কেবল নারীকে আমাদের ভোগের সামগ্রী হিসাবে পেতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করি।
আমাদের সমাজের নারী কারো মা কারো সন্তান কারো বোন কারো স্ত্রী। কিন্তু সে আমরাই আমাদেও লোলুপ দৃষ্টির কারণে তাদের আলাদা করে দেখি। পরিবর্তিত হয়ে যায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষমাত্রই এখন নারীর কাছে আজরাইল। আমাদের সমাজ এখন নারীর কাছে অনেকটা অভিশাপের মতন।
কবি বলেছেন-‘নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি প্রাণ,/ যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।’ অথচ আমরা যখন বিরহে কাতর হই; তখন নারীর বুকে মাথা রেখে একটু উষ্ণতা খুঁজি। কামাতুর হয়ে নারীকে ভোগ করি। শেষে নিক্ষেপ করি আস্তাকুড়ে। মিলনে ব্যর্থ হলে ঝলসে দেই নারীর শরীর। উন্মত্ততায় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করি না। প্রেমের ফাঁদে ফেলে লালসা মিটিয়ে ছাব্বিশ টুকরো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেই নারীর শরীর।
তাইতো মেয়ে যত বড় হয় পরিবারের দুঃশ্চিন্তা ততই বাড়ে। ফলে তার স্বাভাবিক বিকাশ তখন বাধাগ্রস্ত হয়। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই নারীর প্রতি সহিংসতার নানাবিধ সংবাদ চোখে পড়ে। কারো চোখে জল, কারো মুখে বীভৎস হাসি।
ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, হত্যা ও নারী নির্যাতন এখন সমাজের জন্য বিভীষিকা হয়ে দেখা দিয়েছে। এর থেকে মুক্তি পেতে আমাদের কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক আচরণগত ধারণাই এর সমাধান হতে পারে। 

কালকিনির গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষিত হয়নি

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ফাসিয়াতলা বাজারের হাটের দিন । সরগরম প্রায় দোকানপাট। সন্ধ্যার ঠিক আগে হঠ্যাৎ দু'জন অপরিচিত মানুষ ঢোল পিটিয়ে ঘোষনা করলো মুক্তিবাহিনী আসছে মিটিং করবে আপনারা কেউ বাজার ছেড়ে যাবেন না। মিনিট ১৫ না পেরোতেই হাটটি ঘেরাও করে রাজাকার, আল-বদর বাহিনী। ১০ মিনিট পরই নদীতে গানবোটে চড়ে আসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। ততক্ষণে রাজাকাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিকামী মানুষের ওপর।  একদিকে হানাদারদের গুলি অপরদিকে স্থানীয় রাজাকার, আল-বদরদের নির্মম হানায় হত্যা করা হয় অন্তত দেড় শত মুক্তিকামী মানুষকে। অনেককে ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে।  লুটপাট শেষে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় হাটের দোকানপাট। যাওয়ার সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ১৮ জনকে। এরমধ্যে ১০ জন আজও ফিরে আসেনি। এরপর কেটে গেছে ৪০ টি বছর। তবে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। ফলে নতুন প্রজন্ম মহান এই স্মৃতিকে ভুলে যাচ্ছে।
স্বাধীনতার পর ২০০৮ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা গেট সংলগ্ন সুরভী সিনেমা হলের পাশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন। কিন্তু তারপর কেটে গেছে তিনুটি বছর। তবুও কাজ শুরু হয়নি স্মৃতিসৌধের। ঠিক তেমনিভাবে অবজ্ঞা-অবহেলায় পড়ে আছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়। অর্থাভাবে সংস্কার বা পুণঃনির্মাণ কোনটাই সম্ভব হচ্ছেনা।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এসকান্দার আলী বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে চল্লিশ বছর আগে। অথচ দেশের জন্য যারা জীবন দিল, পঙ্গু হল, সর্বস্ব হারালো তাদের স্মৃতি সংরক্ষণের কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিন বছর আগে স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও কাজ শুরু হয়নি। ফাসিয়াতলার গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়টিও অর্থাভাবে অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে। এরকম হলে আগামী প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস ভুলে যাবে।

অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা আকন মোশাররফ হোসেনের উদ্যোগে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের খাসেরহাট বন্দরে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ২০১০ সালের ১৮ ডিসেম্বর উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের খাসের হাট বন্দরে মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপিত হয়। ২০১১ সালের ৯ এপ্রিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ ও মিউজিয়ামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। মিউজিয়ামের সংস্কার কাজ চললেও স্মৃতিসৌধের কাজ শুরু হয়নি। অর্থাভাবে ঢিমেতালে চলছে মিউজিয়ামের কাজ। কাজ শেষ না হওয়ায় দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এখানে সংরক্ষিত আছে শহীদ বীর বিক্রম নুরুল ইসলাম শিকদারসহ ২৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছবি, মুজিব নগর সরকারের গার্ড অব অনারের ছবি, নিয়াজীর আত্মসমর্পণের দলিল ও ছবি, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত হেলমেট ও বিভিন্ন জিনিসপত্র।
মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা আকন মোশাররফ হোসেন জানান, দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি। শহীদ বীর বিক্রম নুরুল ইসলাম এ এলাকার সন্তান। তার জন্য কিছু করতে পারিনি। কেবল একটি স্মৃতিসৌধ ও মিউজিয়াম করার উদ্যোগ নিয়েছি। মিউজিয়ামের সংস্কার কাজ এখনো শেষ হয়নি। এখনো স্মৃতিসৌধের কাজ শুরু করতে পারিনি। অর্থাভাবে করতে পারছিনা। মন্ত্রী মহোদয় আশ্বাস দিয়েছিলেন। সরকারী বা বেসরকারী সাহায্য পেলেই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের বিনিময়ে শত্র“মুক্ত হয়েছে এদেশ। স্বাধীনতার জন্য বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। ইজ্জত হারিয়েছে মা-বোন। পঙ্গু হয়েছে অগণিত মানুষ। অথচ স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ফাসিয়াতলা গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষিত হয়নি। এমনকি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে গড়ে ওঠেনি কোন স্মৃতিস্তম্ভ। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়টিও সংস্কারের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবীর মুখে উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের খাসের হাট বন্দরে মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপিত হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে প্রস্তাবিত স্মৃতিসৌধের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি এখন আপামর জনসাধারণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আর কালক্ষেপণ না করে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণে কার্যকরি পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে কালকিনিবাসী।


সোমবার, ১১ জুন, ২০১২

অনুভূতির কথা

লাবনী আনোয়ার

তোমাকে তখন এক চিমটি সিঁদুর দিতে পারি নি।
আজ আমার বুকে সিঁদুরের নদী বইছে-
কিন্তু এতটুকু সময় নেই যে তোমার সিঁথিকে রাঙাবো।

তোমার সিঁথি আজ রঙিন অন্য কারো স্বপ্নে,
এ বুকে আজ রক্তিম সিঁদুর বইছে নিরবধি।
বুকের পাঁজরগুলো ভেঙে ভেঙে ঢেউগুলি আছড়ে পড়ছে-
কিন্তু দেখার মতো কেউ নেই।
তোমাকে তখন এক চিমটি সিঁদুর দিতে পারি নি
বলে ব্যাকুল ছিল মন।
ভেবেছিলাম একদিন তোমাকে ভাসিয়ে দেব সিঁদুর গঙ্গায়।
সেই দিনটি বুঝি আজ এল।

আমার কাছ থেকে তুমি চলে গেছ
অগ্নিকে সাক্ষী রেখে।
সেই অগ্নি দেখ আজ আমার চোখে ঝরে।
মেহেদীর রঙে রাঙাইনি বলে ব্যাকুল ছিল মন,
আজ বুকের রক্তে রাঙাব তোমার চরণ।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা।

কবিতার সংলাপ

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

-অন্ধকারে কী দেখছ অমন করে?
-কী?
-হয়তো আকাশের তারা
 নয়তো প্রিয়জনের মুখ।
-কবিতা?
-কবিতার মুখ বড়ই ফ্যাকাশে।
-এতো কঠিন কথা আমি বুঝিনা,
 আমিতো তোমার মতো কবি নই।
-কঠিনকে সহজ করে নিতে হয়।
  সবাইতো আর কবি হয না।
-কঠিনকে সহজ করার ক্ষমতা আমার নেই।
-এইতো হয়ে গেল একটি চরণ
  মানুষ যা বলে তা-ই কি কবিতা নয়?
-এত সহজ কবিতা?
-হা, কবিতা সহজ-
  আমরা না বুঝে তাকে কঠিন বলি।
 11.06.2012

অসময়ের কিছু অভিব্যক্তি

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

আমি এখন অসময়ে সময়ের প্রতিধ্বনি শুনি
হতাশার কাফনে মোড়ানো  জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখি
ব্যর্থতার মোড়কে আগামীর ছায়া দেখি
জেগে থেকে অলীক স্বপ্ন স্বপ্নের জাল বুনি।

সময়কে এখন অসময়ের পথে হাটতে দেখি
হতাশাকে আশার আলোয় জ্বলতে দেখি
ব্যর্থতাকে সার্থকতার বাজারে চড়াদামে বিক্রি করি
দু:স্বপ্নকে রাতের আড়ালে লুকিয়ে রাখি।
১১.০৬.২০১২

চাই ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন পুলিশ’ ও নগরে ‘নগর পুলিশ’

ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, ড. এ.কে.এম. রিয়াজুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন মুসা

এক. সরকারের গণতান্ত্রিক কিংবা অগণতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে শাসন বিভাগের মাধ্যমে। শাসন বিভাগের অধীনে ও নিয়ন্ত্রণে থেকে পুলিশ বাহিনী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া সহ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই বলা হয়, একটি দেশের পুলিশের আচার-আচরণ দেখে সরকারের চরিত্র বোঝা যায়। গত ২৬মে ঢাকা আগারগাঁও মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রীদের আন্দোলনের ছবি তুলতে গিয়ে ফটো সাংবাদিকরা পুলিশের হাতে নির্মম প্রহারের শিকার  হন। একইভাবে গত ২৯ মে ঢাকা সিএমএম আদালত চত্বরে পুলিশ কর্তৃক একজন তরুণীর লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ করলে সেখানেও দুজন সাংবাদিক পুলিশের হাতে প্রহৃত হন। পুলিশের হাতে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও অনুরূপ নির্যাতনের বহু ঘটনা রয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের আমলে এই নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

দুই. সকলের জানা রয়েছে, বৃটিশ সরকার ১৮৬১ সালে পুলিশ আইন তৈরি করে তাদের শাসনকার্য পরিচালনার স্বার্থে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশ দু’দুবার স্বাধীনতা লাভ করলেও পুলিশ এখনও জনগণের বন্ধু হতে পারেনি। তবে বৃটিশ আমলে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অধীনে পুলিশকে কাজ করতে হতো। ফলে কিছুটা হলেও জবাবদিহিতার মধ্যে থেকে তাদেরকে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর কেন্দ্রীভূত সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার স্বার্থে গোটা পুলিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করা হয়। ফলে থানায় একজন জুনিয়র অফিসারের অন্যায় আচরণ দেখলে মানুষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে দায়ী করে। আমরা জানি, যাবতীয় অপরাধ ও বিশৃঙ্খলার সিংহভাগ ঘটে স্থানীয় পর্যায়ে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রকৃত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশ বাহিনী স্থানীয় সরকারকে কোনো গুরুত্ব প্রদান করে না। যদিও ইংল্যান্ডসহ উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বে পুলিশ বাহিনীকে স্থানীয় সরকারের অধীনে শুরু থেকেই ন্যস্ত করা আছে। সিডিএলজি দীর্ঘদিন আগে থেকে বলে আসছে বাংলাদেশে দু’প্রকারের সরকার ব্যবস্থা, তথা কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করে স্থানীয় সরকারের জন্য পৃথক পুলিশ বাহিনী গঠন করা অত্যাবশ্যক।

তিন. পূর্বে আমাদের দেশটি পুরোপুরি গ্রামকেন্দ্রিক ছিল। বৃটিশরা গ্রামের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে চৌকিদার নিয়োগ করে। তৎকালীন বৃটিশ সরকার গ্রাম চৌকিদারী আইন পাশ করে স্থানীয় শাসনকে আইনের কাঠামো প্রদান করে। পরবর্তীকালে ইউনিয়ন কমিটি, ইউনিয়ন বোর্ড, ইউনিয়ন কাউন্সিল ইত্যাদির হাত ধরে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ নামে গ্রামীণ ইউনিটটি পরিচিতি লাভ করেছে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর মাধ্যমে গ্রাম পুলিশের ক্ষমতা ও কার্যাবলী নির্দিষ্ট করা হয়। উক্ত আইনে ২১ প্রকার অপরাধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা গ্রাম পুলিশদের হাতে দেয়া হয়। তার মধ্যে ১৮নং ক্রমিকে বলা হয়েছে, গ্রাম পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ও ওয়ারেন্ট বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই কতিপয় অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে পারবে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম পুলিশদের নিয়ন্ত্রণের একক কর্তৃপক্ষ না হওয়ায় কার্যত তারা থানা পুলিশের এজেন্ট হয়ে কাজ করতে বাধ্য থাকে। ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত নামে বিচার ও শালিসী বোর্ড রয়েছে। সেখানে ক্ষমতার পৃথকীকরণ তত্ত্বের প্রয়োগ না থাকায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিচারিক কাজ করে থাকেন। তার ফলে বিচারে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে এবং মাঝে মধ্যে সংশ্লিষ্টদের আইন নিজ হাতে তুলে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। তারপরেও সেখানকার শালিসী বোর্ড এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে একই ব্যক্তি গ্রাম আদালতে ভুল স্বীকার করে, অথচ উচ্চ আদালতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। সেজন্য বিদ্যমান আদালতের সাক্ষী-সাবুদ ব্যবস্থাকে অনেকে আর্টিফিশিয়্যাল বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। কেউ কেউ মনে করেন ছাগল হারিয়ে কোর্টের কাছে বিচার চাওয়া মানে গরু হারানোর ব্যবস্থা করা। সেজন্য ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন আদালত’ গঠন করা এখন সময়ের দাবী।

চার. বর্তমান সরকার পৌর এলাকায় ‘পৌর পুলিশ’ নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে যেসব পৌরসভা পৌর পুলিশদের বেতন-ভাতা প্রদান করতে সক্ষম হবে সেখানেই প্রথমে পৌর পুলিশ নিয়োগ দেয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হলো, কেন্দ্রীভূত সরকার ব্যবস্থা বহাল রেখে সরকারের কোন উদ্যোগই কাজে আসবে না। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিদ্যমান ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন আর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলোতে জনগণের একেকটি অংশ বসবাস করে। এই চারটি ইউনিটের মধ্যে ইউনিয়ন হলো গ্রামীণ এবং পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন/ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হলো নগরীয় স্থানীয় ইউনিট। প্রথমে উক্ত দুই প্রকারের স্থানীয় সরকারকে ভিত্তিমূল ধরে স্থানীয় সরকারের উচ্চতম ও মধ্যবর্তী ইউনিটগুলো নির্দিষ্ট  করে তাদের কাজ নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে সর্বপ্রথম ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন সরকার’ ও নগরে ‘নগর সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। ইউনিয়ন সরকারের অধীনে ‘ইউনিয়ন পুলিশ’ (গ্রাম পুলিশ) এবং নগর সরকারের অধীনে ‘নগর পুলিশ’ দায়িত্ব পালন করবে। এখানে সংক্ষেপে নগর পুলিশের কার্যক্রম তুলে ধরা যেতে পারে। নগর প্রশাসন, নগর সংসদ ও নগর আদালত মিলে ‘নগর সরকার’ গঠিত হবে। নগর প্রশাসনের প্রধান হবেন ‘মেয়র’। কাউন্সিলররা নগর সংসদের সদস্য হবেন। আর পৃথকভাবে মনোনীত কিংবা নির্বাচিত ব্যক্তিরা ‘নগর আদালতে বিচারিক দায়িত্ব পালন করবেন। নগর পুলিশরা মেয়রের অধীনে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। নগর পুলিশ নগরকেন্দ্রিক যাবতীয় অপরাধের তদন্ত করবেন এবং অপরাধীকে বিচারের জন্য নগর আদালতে সোপর্দ করবে। নগর পুলিশ জাতীয় পর্যায়ে সংঘটিত কিংবা বড় ধরনের অপরাধ দমনে কেন্দ্রীয় সরকারের পুলিশকে সহযোগিতা দিবে। নগর পুলিশ নগরে বসবাসরত নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানসহ আবাসিক হোটেলগুলোর বোর্ডারদেরও নিরাপত্তা প্রদান করবে।

পাঁচ. বলা বাহুল্য, এই বাহিনী ফুটপাত, খাল, সরকারি জায়গা, পার্ক ইত্যাদি সহ নাগরিকদের স্বার্থে ব্যবহৃত সরকারি জায়গাগুলো অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত রাখবে। নগর সংসদে উন্নয়ন, প্রশাসন, শিক্ষা, যানজট, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, আইন-শৃঙ্খলা, সবুজায়ন, বৃক্ষায়ন সহ যাবতীয় বিষয় আলোচনা করা হবে। আর সংসদে পাশকৃত প্রস্তাবাবলী নগর প্রশাসন বাস্তবায়ন করবে। অর্থাৎ নগর সরকারে ক্ষমতার পৃথকীকরণ তত্ত্বের পুরোপুরি প্রয়োগ ঘটবে। এই ব্যবস্থা গৃহীত হলে নগরে অপরাধ দমনে পুলিশ ব্যর্থ হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়ী না করে মানুষ মেয়রকে প্রথমে দায়ী করবে। সেইসঙ্গে কমিউনিটি পুলিশিং এর শ্লোগান ‘আমি পুলিশ, আমিই জনগণ’ শুধু কথার কথা হয়ে থাকবে না, নিজেদের চর্চার মধ্য দিয়ে প্রতিটি মানুষ সেটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।

লেখকবৃন্দ: প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, চেয়ারম্যান, জানিপপ; প্রফেসর ড. এ.কে.এম. রিয়াজুল হাসান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বিসিএস শিক্ষা; এবং মোশাররফ হোসেন মুসা, সদস্য, সিডিএলজি।

বৃহস্পতিবার, ৭ জুন, ২০১২

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার

ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, ড. এ.কে.এম. রিয়াজুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন মুসা:
গণতান্ত্রিক ¯া’ নীয় সরকার কি ও কেন এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থানীয়করণ
এক কথায় বলা যায়, স্থানীয় মানুষের সেবা ও উনড়বয়নের জন্য দেশের প্রতিটি স্থানীয় প্রশাসনিক ইউনিটে গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে যে
স্বাবলম্বি ও স্বশাসিত সরকার ব্যবস্থা থাকে তাকেই গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বলে। স্থানীয় সরকার নিজস্ব আয় দ্বারা প্র মে শতভাগ
সিস্টেম কস্ট তথা দাপ্তরিক খরচ, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও অনির্বাচিত কর্মকর্তা-কর্মীদের বেতন-ভাতা, বিদ্যুৎ বিল, টেলিফোন বিল,
ইন্টারনেট বিল, আপ্যায়ন ব্যয় ইত্যাদি নির্বাহ করে থাকে, এবং একই সঙ্গে নিজস্ব উদ্বৃত্ত আয়ে ও প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের
আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে নিজস্ব এলাকায় সেবামূলক ও উনড়বয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত করে থাকে। তাই বলা যায়, স্থানীয়
সরকার স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া মানেই গোটা দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া, এবং স্থানীয় সেবা ও উনড়বয়ন মানেই সমগ্র দেশের সমষ্টিগত সেবা ও
উনড়বয়ন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এসব বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে কোনও স্বাবলম্বী ও
স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নেই। তাই, ২০২০ সাল ও ২০৫০ সাল নাগাদ নগরায়নসহ অন্যান্য পরিবর্তনশীল বিষয়গুলো
বিবেচনায় নিয়ে গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে স্বাবলম্বি, স্বশাসিত ও গতিশীল স্থানীয় সরকাব স্থাপন করতে ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের
রূপরেখা’টি একটি সমন্বিত ডিজাইন হিসেবে প্রণীত হয়েছে, এবং তা আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯৭ সালের ১৩ জানুয়ারী ঢাকায় জাতীয়
জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় সেমিনারে সকলের বিবেচনার জন্য উপস্থাপিত করা হয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি
যে, এই রূপরেখাটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল স্থানীয় স্তরে গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্থানীয়করণ অর্থাৎ
প্রতিটি স্থানীয় ইউনিটে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হতে পারে।
স্বশাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠাকরণ, কেন্দ্রীয় সরকার নামকরণ ও সরকারের প্রকারভেদকরণ
বাংলাদেশে বর্তমানে একটিই সরকার, তা হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। একটি মাত্র সরকার থাকায় ‘কেন্দ্রীয় সরকার’
প্রত্যয়টি ব্যবহৃত হওয়া সঠিক নয়, যদিও প্রায় সকলে তা উলেখ
করে থাকেন। বিদ্যমান ব্যবস্থায় ‘স্থানীয় সরকার’ নামে ইউনিয়ন
পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও নগর কর্পোরেশন বাংলাদেশ সরকারের নির্বাহী বিভাগের স্থানীয় এজেন্ট/শাখা হিসেবে কাজ
করছে; এসব স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গণতন্ত্রের ভিত হিসেবে স্বাবলম্বী ও স্বশাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নয় বলে তাদের পরিবর্তে সকল
স্থানীয় স্তরে গণতন্ত্রের ভিত, স্বাবলম্বী ও স্বশাসিত হিসেবে স্থানীয় সরকার গঠন করতে হবে এবং আইন, বিধি-বিধান ও বইপু
স্তকের যেসব জায়গায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বোঝাতে শুধু “সরকার” শব্দটি রয়েছে সেসব জায়গায় “কেন্দ্রীয় সরকার”
শব্দগুচ্ছ প্রতিস্থাপন করতে হবে। তা করা হলে বাংলাদেশে দুই প্রকারের সরকারের Ñ কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার Ñ অস্তিত্ব
আইনতঃ প্রতিষ্ঠিত হবে, এবং তা সকলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দৃশ্যমান হবে।
স্থানীয় ইউনিট ও স্থানীয় সরকারের প্রকারভেদকরণ
বাংলাদেশের স্থানীয় ইউনিটগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: (১) গ্রামীণ স্থানীয় ইউনিট, যেমন- ৪,৫০৩টি ইউনিয়ন এবং ১৭৪টি
উপজেলা, কারণ এসব ইউনিট আইনীমতে গ্রামীণ এলাকা নিয়ে গঠিত; (২) নগরীয় স্থানীয় ইউনিট, যেমন- ৩০৯টি পৌরসভা ও ৬টি
নগর কর্পোরেশন, কারণ এসব ইউনিট আইনীমতে শুধু নগরীয় এলাকা নিয়ে গঠিত; এবং (৩) গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় ইউনিট, যেমন-
৭টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা ও ৩০৮টি উপজেলা, কারণ এসব ইউনিট গ্রামীণ ও নগরীয় এলাকার সমন্বয়ে গঠিত। সাধারণত গ্রামীণ
স্থানীয় ইউনিটে গঠিত স্থানীয় সরকারকে বলা হয় গ্রামীণ স্থানীয় সরকার; নগরীয় স্থানীয় ইউনিটে গঠিত স্থানীয় সরকারকে বলা হয়
নগরীয় স্থানীয় সরকার; এবং গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় ইউনিটে গঠিত স্থানীয় সরকারকে বলা হয় গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় সরকার।
বাংলাদেশে তিন প্রকারের স্থানীয় ইউনিটে তিন প্রকারের স্থানীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে: এক. গ্রামীণ স্থানীয় সরকার; দুই.
নগরীয় স্থানীয় সরকার; এবং তিন. গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় সরকার। কিন্তু বাংলাদেশে স্থানীয় ইউনিটের প্রকারভেদকরণ যথার্থভাবে
করা যায়নি বলে স্থানীয় সরকারের প্রকারভেদকরণ যথার্থভাবে করা সম্ভব হয়নি এবং তার ফলে ক্ষমতা ও দায়িত্ব যথার্থভাবে নির্ধারিত
ও বণ্টিত হয়নি, হচ্ছেনা। তাই স্থানীয় ইউনিট ও স্থানীয় সরকারের প্রকারভেদকরণ যথার্থভাবে করতে হবে এবং সেসব ইউনিটে
গঠিত স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সেভাবে প্রদান করতে হবে।

গ্রামীণ-নগরীয়
স্থানীয় সরকার
গ্রামীণ স্থানীয় সরকার
নগরীয় স্থানীয় সরকার
স্থানীয় সরকারের একটি সমন্বিত ¯রÍ বিন্যাসকরণ: তত্ত্বগত ও ব্যবহারিক
স্থানীয় সরকার এক স্তরবিশিষ্ট হলে স্তরবিন্যাসকরণের বিষয়টি কখনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হত না। এটি বহু স্তরবিশিষ্ট হবার কারণে
সমন্বিত স্তরবিন্যাসকরণের কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটিকে
একটি তত্ত্বগত ফর্মূলায় বা¯বÍ অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে প্রণয়ন
করতে হবে, যা মোঘল-পূর্ব, মোঘল, বৃটিশ, পাকিস্তান ও
বাংলাদেশ আমল মিলে আজ অবধি করা সম্ভব হয়নি। তত্ত্বগতভাবে
প্রদর্শিত রেখাচিত্র অনুযায়ী গ্রামীণ- নগরীয় স্থানীয় সরকার হবে স্থানীয়
সরকারের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। তারপর একদিকে থাকবে গ্রামীণ
স্থানীয় সরকার এবং অপরদিকে থাকবে নগরীয় স্থানীয় সরকার।
ব্যবহারিক ক্ষেত্রে গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় সরকার হিসেবে বিভাগীয় সরকার হবে স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট। তারপর একদিকে
থাকবে গ্রামীণ স্থানীয় সরকার অর্থাৎ ইউনিয়ন সরকার, উপজেলা সরকার ও জেলা সরকার, এবং অন্যদিকে থাকবে নগরীয় স্থানীয়
সরকার অর্থাৎ নগর সরকার। এক্ষেত্রে শুধু ইউনিয়ন নয়, উপজেলা ও জেলার এলাকার মধ্যেও কোনো নগরীয় এলাকা (পৌরসভা ও
নগর কর্পোরেশন) থাকবে না; তাতে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সম্পূর্ণভাবে গ্রামীণ ইউনিটে পরিণত হবে। পৌরসভা ও নগর
কর্পোরেশনগুলো শুধু নগর হিসেবে আখ্যায়িত হবে এবং সেখানে এক ধরনের নগরীয় স্থানীয় সরকার থাকবে, তা করতে গিয়ে
বর্তমানকার দুই ধরনের নাম, দুই ধরনের আইন ও দুই ধরনের ব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয় বলে বিলুপ্ত হবে। এখানে লক্ষণীয় যে, নগরের
আয়তন, সংখ্যা ও জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ ইউনিটগুলোর আয়তন, সংখ্যা ও জনসংখ্যা কমতে থাকবে। গোটা বাংলাদেশ
নগরে পরিণত হয়ে যাবার ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রামীণ ইউনিটগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে; ফলে বাংলাদেশ অনেকগুলো নগরীয়
ইউনিটে বিভক্ত হয়ে পড়বে; তখন স্থানীয় সরকার দুই স্তরবিশিষ্ট Ñ বিভাগীয় সরকার ও নগর সরকার Ñ হয়ে যাবে; এবং
বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা তিন স্তরবিশিষ্ট Ñ কেন্দ্রীয় সরকার, বিভাগীয় সরকার ও নগর সরকার Ñ হবার মাধ্যমে সরকারের
আকার-আয়তন ছোট হয়ে পড়বে। তাই, প্রস্তাবিত স্তরবিন্যাসটি খুবই গতিশীল ও সুদূরপ্রসারী। এটি গ্রহণ করে দ্রুত বাস্তবায়ন
প্রμিয়া শুরু করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম বলে প্রতীয়মান হয়।
স্থানীয় সরকারের সর্বনিমড়ব ইউনিট: ইউনিয়ন সরকার ও নগর সরকার
স্থানীয় সরকারের সর্বনিমড়ব ইউনিট যথার্থভাবে নির্ধারিত না হওয়ায় এক ধরনের মারাত্বক ধারণাগত বিভ্রান্তি বিরাজমান রয়েছে।
ইউনিয়নকে কিংবা ইউনিয়নের নীচে অন্য কোনও ইউনিটকে স্থানীয় সরকারের সর্বনিমড়ব ইউনিট মনে করা হত, হয়। কিন্তু স্থানীয়
সরকারের সর্বনিমড়ব ইউনিট একটি নয়; বস্তুত, সর্বনিমড়ব ইউনিট হতে হবে দু’টি Ñ ইউনিয়ন ও নগর Ñ অর্থাৎ ইউনিয়ন সরকার ও নগর
সরকার। নগর বলতে দেশের ৩০৯টি পৌরসভা ও ৬টি নগর কর্পোরেশনকে বোঝানো হয়েছে। তৃণমূলে ইউনিয়ন ও নগর পাশাপাশি
অবস্থিত দুইটি স্থানীয় ইউনিট, এবং ভৌগোলিকভাবে পৃক ও ভিনড়ব ধরনের দুইটি স্থানীয় প্রশাসনিক ইউনিট। তাই স্থানীয় সরকারের
সর্বনিমড়ব ইউনিট হিসেবে একদিকে গ্রামীণ এলাকায় থাকবে ইউনিয়ন সরকার এবং অপরদিকে নগরীয় এলাকায় থাকবে নগর সরকার।
গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় উপস্থাপিত ইউনিয়ন সরকারের রূপরেখা ও নগর সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী স্থানীয়
সরকারের সর্বনিমড়ব ইউনিটদ্বয় অবশ্যই গঠন করতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় ইউনিয়নের নিচে আর কোনও প্রশাসনিক ইউনিটের
প্রয়োজনীয়তা না থাকা সত্ত্বেও অতীতে স্বনির্ভর গ্রাম সরকার, পলী
পরিষদ, গ্রাম সভা, গ্রাম পরিষদ, গ্রাম সরকার ইত্যাদি নামে
আরেকটি স্থানীয় সরকার ইউনিট স্থাপন করা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে দেশের কোটি কোটি টাকা ও মূল্যবান সময় অপচয়
করা হয়েছে, এবং তা করতে গিয়ে ইউনিয়নকে দূর্বল থেকে দূর্বলতর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে, এবং স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ
ইউনিট Ñ বিভাগ অথবা জেলা Ñ গঠন ও কার্যকর করার ওপর জোর না দিয়ে মধ্যবর্তী ইউনিট হিসেবে উপজেলার ওপর অতিমাত্রায়
জোর দিতে গিয়েও ইউনিয়নকে অবহেলিত ও দূর্বলতম প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। অনুরূপ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বর্তমানে
‘ওয়ার্ড সভা’ নামে আরেকটি অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের স্বার্থে এসব
অপ্রয়োজনীয় তৎপরতা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে হয়। তাই আমাদেরকে ‘ইউনিয়নে ইউনিয়নে গণতন্ত্রায়ন, ইউনিয়নের
জনগণের ক্ষমতায়ন’ এবং ‘নগরে নগরে গণতন্ত্রায়ন, নগরের জনগণের ক্ষমতায়ন’ ¯োগানদ্বে
য়র ভিতরগত তাৎপর্য উপলব্ধি করে
অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হতে হবে।

স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট: বিভাগীয় সরকার অথবা জেলা সরকার
স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত ও কার্যকরী না করায় মারাত্বক বিভ্রান্তি ও অসঙ্গতির মধ্যে স্থানীয় সরকারের
ক্ষমতা, দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারিত ও প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়টি খুবই দোলায়মান রয়েছে। বিভাগকে মাঠ পর্যায়ের সর্বোচ্চ ইউনিট
বলা হলেও তাতে যথেষ্ট ক্ষমতা ও কার্যাবলী অর্পণ এবং নির্বাচিত প্রতিনিধির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ‘সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক
সরকার চাই’ এই তাৎপর্যপূর্ণ শ্লোগানের বাস্তবায়ন প্রμিয়ায় বিভাগকে গ্রামীণ-নগরীয় স্থানীয় ইউনিট হিসেবে স্থানীয় সরকারের
সর্বোচ্চ ইউনিট করতে হবে এবং তাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায়
উপস্থাপিত বিভাগীয় সরকারের রূপরেখায় ব্যবস্থামতে বিভাগীয় সরকার স্থাপন করতে হবে। যদি সর্বোচ্চ ইউনিট হিসেবে বিভাগ
অপ্রয়োজনীয় বিবেচিত হয় তদস্থলে জেলাকে সর্বোচ্চ ইউনিট করা যেতে পারে, এবং সেক্ষেত্রে বিভাগকে অবশ্যই বিলুপ্ত করতে হবে
এবং গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় উপস্থাপিত জেলা সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী প্রত্যেক জেলায় জেলা সরকার স্থাপন
করতে হবে। জেলা অথবা বিভাগ নিজস্ব কিছু সুনির্দিষ্ট কাজ করার পাশাপাশি একদিকে ইউনিয়ন ও উপজেলা এবং অন্যদিকে নগরকে
(অর্থাৎ ৩০৯টি পৌরসভা ও ৬টি নগর কর্পোরেশনকে) তদারকি ও সহযোগিতা করবে।
ক্ষমতার পৃকীকরণ তত্ত্বের প্রয়োগ করতে হবে: স্থানীয় প্রশাসন, যেমন- ইউনিয়ন প্রশাসন ও নগর
প্রশাসন; স্থানীয় সংসদ, যেমন- ইউনিয়ন সংসদ ও নগর সংসদ; এবং স্থানীয় আদালত, যেমন-
ইউনিয়ন আদালত ও নগর আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে
সরকার কী, সরকার কিভাবে গঠিত হয়, সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে কোন বিভাগের কি ক্ষমতা ও দায়িত্ব, সরকারের রাজস্ব
আয়ের উৎস কি কি, বিধানিক, প্রশাসনিক ও বিচারিক বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, ক্ষমতার পৃকীকরণ ইত্যাদি বিষয়
তৃণমূলের ইউনিটে দৃশ্যমান না থাকায় মানুষের কাছে ‘সরকার’ একটি অস্পষ্ট ও দূরবর্তী বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। সেজন্য এবং
স্থানীয় প্রয়োজনেই কেন্দ্রীয় সরকারের মতো স্থানীয় ইউনিটগুলোতেও স্থানীয় সরকারের স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ ও স্থানীয়
আদালত সম্বলিত সরকার ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে; অর্থাৎ ক্ষমতার পৃকীকরণ তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনগুলো
হবে: বিভাগীয় প্রশাসন, নগর প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন প্রশাসন। স্থানীয় সংসদগুলো হবে: বিভাগীয়
সংসদ, নগর সংসদ, জেলা সংসদ, উপজেলা সংসদ ও ইউনিয়ন সংসদ। অনুরূপভাবে ইউনিয়ন আদালত, নগর আদালত ইত্যাদি
গঠন করতে হবে। এসব স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় ব্যবস্থামতে গঠন করতে হবে।
গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন: নরনারীর ১০০/১০০ প্রতিনিধিত ¡ নিশ্চিত করতে এমপো অর্থাৎ মিলেনিয়াম
প্রোপোজাল পার্ট ওয়ান অনুযায়ী প্রণীত ১১ দফা সুপারিশ বা¯বÍ ায়ন করতে হবে
বর্তমানে এটি প্রমাণিত সত্য, প্রকৃতিগতভাবে মেধাগত বিবেচনায় পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। সেজন্য ‘মিলেনিয়াম
প্রোপোজাল পার্ট ওয়ান-এমপো’ অনুযায়ী সরকারের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানে (সকল বিধানিক প্রতিষ্ঠানে ও যথাসম্ভব অন্যান্য ক্ষেত্রে)
১০০/১০০ প্রতিনিধিত্বে নরনারীর গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন করা খুবই জরুরি প্রয়োজন। সেরকম ব্যবস্থা গৃহীত হলে নারীরা কোথায়,
কিভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তা তারাই নিরসনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন। সেজন্য জাতীয় সংসদে এবং স্থানীয়
সরকারের বিধানিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে তাতে নারীদের ১০০/১০০ প্রতিনিধিত্বে গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করতে হবে; সেই
লক্ষ্য পূরণ করতে ইত্যেমধ্যে সিডিএলজি’র পক্ষ থেকে এমপো অনুযায়ী প্রণীত ১১ দফা সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে
এবং এমপো বাস্তবায়ন ফোরাম বাংলাদেশ এর নেতৃত্বে ২৫টি সংগঠন এমপো ও ১১ দফা নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন পরিচালিত
করছে। ১১ দফায় ব্যবস্থামতে জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রে একজন মহিলা ডেপুটি স্পিকার ও একজন পুরুষ ডেপুটি স্পিকার এবং প্রতি
আসনে একজন মহিলা সদস্য ও একজন পুরুষ সদস্য নির্বাচিত হবেন। ইউনিয়নের ক্ষেত্রে একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও
একজন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান এবং প্রতি ওয়ার্ডে একজন মহিলা মেম্বার ও একজন পুরুষ মেম্বার নির্বাচিত হবেন। নগরের ক্ষেত্রে
একজন মহিলা ডেপুটি মেয়র ও একজন পুরুষ ডেপুটি মেয়র এবং প্রতি ওয়ার্ডে একজন মহিলা কাউন্সিলর ও একজন পুরুষ
কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। এছাড়া, এমপো অনুযায়ী উপজেলায় নির্বাচিত একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন পুরুষ ভাইস
চেয়ারম্যান এর ক্ষমতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে।
‘বটম-আপ’ পদ্ধতিতে ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রদান এবং স্বশাসন নিশ্চিত করতে হবে
ক্ষমতা ও দায়িত্ব ‘বটম-আপ’ পদ্ধতিতে অর্থাৎ নীচ থেকে উপরের দিকে বণ্টিত হওয়া উচিত। যেমন- ইউনিয়ন যে কাজগুলো করতে
পারবে না সেগুলো উপজেলা, উপজেলা যে কাজগুলো করতে পারবে না সেগুলো জেলা, এবং নগর ও জেলা যে কাজগুলো করতে

পারবে না সেগুলো বিভাগ সম্পাদন করবে। কেন্দ্রীয় সরকার মূলতঃ জাতীয় ও বৈশ্বিক কাজগুলো সম্পাদন করার পাশাপাশি স্থানীয়
সরকারের কাজে সহযোগিতামূলক ভূমিকায় থাকবে। স্থানীয় সরকারের ইউনিটগুলোতে স্ব-শাসন না থাকায় তাদের ওপর অর্পিত
দায়িত্বাবলী পালনে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভরশীলতা দেখা যায়। যেমন, পত্রিকায় জানা যায়, একটি হাটের জায়গা কতিপয়
ব্যক্তি দখল করে নিলে সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকার এসে হাটের জায়গা উদ্ধার করুক।’ এই বক্তব্যে
বুঝা যায়, তারা কোনও কাজকেই নিজের কাজ মনে করেন না, এবং নিজেদেরকে সরকারই মনে করেন না, অথচ স্থানীয় সরকারও
একটি সরকার। সেজন্য এজেন্ট হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অর্থ চাওয়া এবং অর্থ আদায় করাকেই তারা কৃতিত্ব ও সফলতা
মনে করে থাকেন; নিজেদের উদ্যেগে, নিজেদের আয়ে কিছু করার বিষয়টি মাথায় থাকেনা, থাকছেনা। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া
খুবই প্রয়োজন; তাই, প্রতিটি স্থানীয় ইউনিটে স্বশাসন প্রদান করে প্রতিটি ইউনিটকে স্বশাসিত হবার সুযোগ সৃষ্টি করা খুবই জরুরি
কর্তব্য বলে প্রতীয়মান হয়।
স্থানীয় নির্বাচনী বোর্ড গঠন
প্রতিটি স্থানীয় ইউনিটে সরকার কাঠামোর বাইরে একটি করে নির্বাচনী বোর্ড থাকবে, তথা ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন নির্বাচনী বোর্ড’,
উপজেলায় ‘উপজেলা নির্বাচনী বোর্ড’, জেলায় ‘জেলা নির্বাচনী বোর্ড’, বিভাগে ‘বিভাগীয় নির্বাচনী বোর্ড’ এবং নগরে (পৌরসভা ও
নগর কর্পোরেশন) ‘নগর নির্বাচনী বোর্ড’ গঠন করতে হবে। সেরকম ব্যবস্থা গৃহীত হলে প্রতিটি ইউনিট নিজস্ব দায়িত্বে, নিজস্ব অর্থে
সময়মত সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার ব্যবস্থা করবে। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হবে এবং স্থানীয় সরকারগুলো
অধিকতর দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে।
স্থানীয় ন্যায়পাল এর পদ সৃষ্টি
প্রতিটি ইউনিটে একজন করে ন্যায়পাল থাকবেন, তথা ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন ন্যায়পাল’, উপজেলায় ‘উপজেলা ন্যায়পাল’, জেলায়
‘জেলা ন্যায়পাল’, বিভাগে ‘বিভাগীয় ন্যায়পাল’ এবং শহরে (৩০৯টি পৌরসভা ও ৬টি নগর কর্পোরেশন) ‘নগর ন্যায়পাল’ থাকবেন।
স্থানীয় ন্যায়পালগণ প্রতিটি ইউনিটের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও অনির্বাচিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যাচাই-বাছাই
সাপেক্ষে মিমাংসা করবেন। এতে প্রতিটি ইউনিটে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং তাতে প্রতিনিয়ত গণ-অসন্তোষ নিরসন
করা সম্ভব হবে।
৩১৫টি নগর সরকার গঠন করতে হবে; কেবল ঢাকা শহর নয়, ৩১৫টি শহরকেই রক্ষা করতে হবে
পরিবেশের প্রতি চরম উদাসীনতা ও অপরিকল্পিত নগর ও নগরায়নের কারণে ঢাকা শহর আজকের মরণদশায় উপনীত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭ রিখটার মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে এবং তাতে তাৎক্ষণিকভাবে ১ লাখ লোকের
মৃত্যু ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। লক্ষণীয় যে, ঢাকা শহর কেন্দ্রীক একটি মাত্র সরকার ব্যবস্থা থাকার কারণে সমগ্র দেশের মানুষ ঢাকা
শহরমুখী। তবে বর্তমানে ঢাকা শহরের যে অবস্থা, সে অবস্থা আগামীতে অন্যান্য শহরেও প্রকটভাবে দেখা দেবে, যার আলামত
ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সেজন্য দেশের ৩১৫টি শহরে (৩০৯টি পৌরসভা আর ৬টি নগর কর্পোরেশন মিলে ৩১৫টি শহর)
৩১৫টি নগর সরকার গঠন করে তাদের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত ৩১৫টি নগর গড়তে হবে এবং তা সবসময় বজায় রাখতে
হবে। এতে একদিকে ঢাকা শহর কেন্দ্রীকতা রাতারাতি হ্রাস পাবে এবং অন্যদিকে ঢাকা শহরসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত
দেশের ৩১৫টি শহর কেন্দ্রীক উনড়বয়ন ভাবনা ও কর্মকান্ড পরিচালিত ও বিকশিত হবে।
সরকারের আকার-আয়তন ছোট করতে হবে; স্থানীয় সরকারের সংখ্যা ও স্তর কমাতে হবে এবং
মধ্যবর্তী ইউনিটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভাবতে হবে
ছোট্ট সরকার সাধারণত দক্ষ সরকার হয়ে থাকে; সিস্টেম কস্ট কমানো গেলে সেবা ও উনড়বয়ন ব্যয় বাড়ানো যায়। আমাদের দেশের
আয়তন, জনসংখ্যার ঘনত্ব, যোগাযোগ ব্যবস্থা, μমাগত দ্রুত নগরায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির বিপুল প্রসার ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা নিয়ে
বলা যায়, স্থানীয় ইউনিটের স্তর ও সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী বলে প্রতীয়মান হয়। প্রাথমিকভাবে ইউনিয়নের সংখ্যা
৪,৫০৩ থেকে কমিয়ে ৩,০০০ করা যেতে পারে; উপজেলার সংখ্যা ৪৮২ থেকে কমিয়ে ৪০০ করা যায়। স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ
ইউনিট Ñ জেলা অথবা বিভাগ Ñ এবং সর্বনিমড়ব ইউনিট Ñ ইউনিয়ন ও নগর Ñ ভালভাবে কার্যকর করার পাশাপাশি মধ্যবর্তী ইউনিটের
অস্তিত্ব প্রয়োজনের নিরিখে নির্ধারিত হওয়া খুবই প্রয়োজন বলে প্রতীয়মান হয়।

পার্বত্য বিভাগ বনাম পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরে সম্পাদিত শান্তি চুক্তির আওতায় গঠিত পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদকে সম্প্রতি মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ
অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছেন। এই রায়ে বলা হয়েছে, ‘এটা স্থানীয় সরকারের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এই
আঞ্চলিক পরিষদের মাধ্যমে একক রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো নষ্ট করা হয়েছে।’ অথচ ১৯৯৭ সালের ১৩ জানুয়ারী ঢাকা শহরে
জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক জাতীয় সেমিনারে ‘গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা’য় ৬টি বিভাগীয় সরকার এবং
পার্বত্য চট্রগ্রামের সংঘাতপূর্ণ সমস্যাটি নিরসনকল্পে একটি নতুন “পার্বত্য বিভাগ” গঠন করে তাতে পার্বত্য বিভাগীয় সরকার গঠন
করার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। তৎকালীন সরকার পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন না করে যদি পার্বত্য বিভাগ গঠন করে
তাতে ‘পার্বত্য বিভাগীয় সরকার’ গঠন করতেন তাহলে সরকারের এই মহৎ শান্তি উদ্যোগটি এভাবে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অবৈধ
বলে ঘোষিত হতো না। এখানে উল্লেখ্য যে, সংবিধান সংশোধন না করে সাধারণ আইনেই বিদ্যমান ৭টি বিভাগে ‘বিভাগীয় সরকার’
এবং প্রস্তাবিত পার্বত্য বিভাগে ‘পার্বত্য বিভাগীয় সরকার’ গঠন করা খুবই সম্ভব।
২০৫০ সাল: গোটা দেশের নগরায়ন
বর্তমানে বাংলাদেশের ৪ কোটি লোক নগরে বসবাস করে। ২০২০ সাল নাগাদ প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী এবং ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায়
গোটা জনগোষ্ঠী নগরবাসী হবেন। সেজন্য এখনই দেশের ৩১৫টি নগরকে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত নগরে পরিণত করতে হবে এবং
পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত নগর ও নগরায়ন বজায় রাখতে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। μমাগতভাবে দ্রুত নগরায়নের
ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রামভিত্তিক প্রশাসনিক ইউনিটের Ñ ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা Ñ বিলুপ্তি ঘটবে; ফলশ্রুতিতে সে সময়
নগরগুলো বিভাগের অধীনে পরিচালিত হবে। তখন গোটা সরকার ব্যবস্থা তিন স্তরবিশিষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ তখন কেন্দ্রীয় সরকার,
বিভাগীয় সরকার ও নগর সরকার অথবা কেন্দ্রীয় সরকার, জেলা সরকার ও নগর সরকার থাকবে। কেউ কেউ সরকারের আকার-
আয়তন, স্তরবিন্যাসকরণ, প্রকারভেদকরণ, নগরায়ন, বিদ্যুতায়ন, পেশাগত পরিবর্তন, শিক্ষার প্রসার, বহুতল ভবন, জনঘনত্ব,
যোগাযোগ ব্যবস্থা ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, সিস্টেম কস্ট, সেবা ও উনড়বয়ন কস্টের বিষয়গুলো বিবেচনায় না এনে নতুন নতুন ইউনিয়ন,
উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও প্রদেশ সৃষ্টির প্রস্তাব করছেন, যা খুবই অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন বলে প্রতীয়মান হয়। তাই, গণতান্ত্রিক
স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় উপস্থাপিত সমন্বিত স্তরবিন্যাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, গতিশীল ও সুদূরপ্রসারী বলে আমরা মনে করি।
বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপটে নগরীয় কৃষি ও নগর সরকার নিয়ে বিশেষ ভাবনা থাকতে হবে
বর্তমানে ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৪ কোটি মানুষ দেশের ৩১৫টি শহরে বসবাস করে। ২০২০ সাল নাগাদ অর্ধেক জনগোষ্ঠী এবং
২০৫০ সাল নাগাদ গোটা জনগোষ্ঠী নগরীয় এলাকায় বসবাস করবে বলে মনে করা হয়। ফলে গ্রামীণ কৃষি, গ্রামীণ জীবন, গ্রামীণ
সমাজ, গ্রামীণ সভ্যতা, গ্রামীণ সংস্কৃতি ও গ্রামীণ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাμমে নগরীয় কৃষি, নগরীয় জীবন, নগরীয়
সমাজ, নগরীয় সভ্যতা, নগরীয় সংস্কৃতি ও নগরীয় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠতে থাকবে। বর্তমানে বিপুল জনসংখ্যার জন্য
খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থার পাশাপাশি নগর সরকারের মাধ্যমে প্রতি নগরে নগরীয় কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার
ওপর সবিশেষ জোর দিতে হবে, এবং ভবিষ্যতের কৃষি হিসেবে নগরীয় কৃষির ওপর গুরুত্বারোপ তো অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে,
এবং ‘নগর মানে কৃষি নয়’ এই ক্ষতিকর ভাবনার বিপরীতে ‘কৃষিকে নিয়েই নগর’ এই উপকারী ভাবনা সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে
হবে। তাই, গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় ২০৫০ সাল নাগাদ একটি নগরীয় বাংলাদেশ এর কথা বিবেচনায় নিয়ে নগর
সরকারের রূপরেখা ও তার আলোকে প্রণীত ২১ দফা সুপারিশ উপস্থাপিত করা হয়েছে। সেজন্য এখন থেকেই ব্যাপক পরিকল্পনার
আওতায় গোটা সমাজকে এর জন্য মানসিক ও শিক্ষাগতভাবে প্রস্তুত করতে হবে; সেক্ষেত্রে নগর সরকার ও নগরীয় কৃষির
প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব খুবই অপরিসীম বলে প্রতীয়মান হয়।
২০২০ সালের মধ্যে বিদেশে ২ কোটি লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব
বর্তমানে প্রায় এক কোটি লোক বিদেশে কর্মরত রয়েছে বলে বেসরকারীভাবে মনে করা হয়। ২০২০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ২
কোটিতে উনড়বীত করা সম্ভব। ঢাকা শহরে অনুষ্ঠিত প্র ম এনআরবি সম্মেলনে উপস্থাপিত এই প্রস্তাবটি সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়।
সেটি পূরণে একাগ্র প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে এ বিষয়ে সফলতার সম্ভাবনা ১০০ ভাগ রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়, এবং প্রবাসীদের
অর্থ, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, আইডিয়া ইত্যাদি যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে এক বিপুল সেবা ও উনড়বয়ন ধারার সৃষ্টি হবে। সে
জন্য সর্বস্তরে অর্থাৎ কেন্দ্রে, বিভাগে, নগরে, জেলায়, উপজেলায় ও ইউনিয়নে গণতন্ত্রায়নের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করা
খুবই জরুরি। এটি মাথায় রেখে এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসবকে সামনে রেখেই গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায়

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি উনড়বত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের পরিকল্পনা Ñ গণস্বপড়ব ২০২০ Ñ উপস্থাপন করা হয়।
এই বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করতে হবে বলে আমরা মনে করি।
উনড়বত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ: গণস্বপড়ব ২০২০
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার Ñ অর্থাৎ উনড়বত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার Ñ বিষয়টি অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঝুলিয়ে না রেখে একটি
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পনড়বড়ব করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। গণস্বপড়ব ২০২০ হচ্ছে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২৫টি
ক্ষেত্রে স্বল্প টাকায় গণতন্ত্রায়ন সম্পনড়ব করে একটি উনড়বত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ প্রμিয়া সম্পনড়ব করার একটি বা¯বÍ ায়নযোগ্য
পরিকল্পনা। যদি এই কাজটি ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সফলতার সঙ্গে সম্পনড়ব করা যায়, তাহলে তার কয়েক মাস পরেই
অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে একে একটি বিশেষ অর্জন হিসেবে উলেখ
করা সম্ভব হবে।
অনুরূপভাবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসবকে সামনে রেখে অন্যান্য বা¯বÍ ায়নযোগ্য লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমাও ২০২০ সাল
কেন্দ্রীক করে এগিয়ে যাওয়া খুবই যৌক্তিক হবে বলে মনে হয়। এছাড়া, ২০২০ সাল গোটা বিশ্বজুড়েই নানা ধরনের বা¯বÍ ায়নযোগ্য
লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমার একটি ল্যান্ডমাকর্  হিসেবে খুবই সুপরিচিত সাল। সেই বিবেচনায়ও একে লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা ধরে
একটি জাতীয় কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হতে পারে বইকি। “গণস্বপড়ব ২০২০” নামটিও খুবই সার্থক ও যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়, কারণ এর
মাধ্যমে জাতীয় স্বপড়বকে সকল মানুষের স্বপড়ব এবং এর সঙ্গে সকল মানুষের সংযুক্ততা খুব ভালভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
শেষ কথা
বিভিনড়ব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত “সেন্টার ফর ডেমোμেটিক লোকাল গভার্ন্যান্স-সিডিএলজি” এর মাধ্যমে
স্থানীয় সরকার গবেষক ও সিডিএলজি’র নির্বাহী পরিচালক আবু তালেব প্রণীত “গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখা’ ভিত্তিক
একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্যাম্পেইন দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। প্রস্তাবিত গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখাটির কপি ও তার আলোকে
প্রণীত উপজেলার জন্য ২৫ দফা, নগরের জন্য ২১ দফা, ইউনিয়নের জন্য ১৭ দফা, এমপো অর্থাৎ মিলেনিয়াম প্রোপোজাল পার্ট
ওয়ান অনুযায়ী ১০০-১০০ প্রতিনিধিত্বে নারী-পুরুষের গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের জন্য ১১ দফা সুপারিশের কপি ও তার সারসংক্ষেপ
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, জাতীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, রাজনীতিক, গবেষক, লেখক,
সাংবাদিক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, এনজিও ব্যক্তিত্বসহ সংশিষ্ট
সকলের সদয় অবগতি ও বিবেচনার জন্য পেশ করা
হয়েছে; এর পাশাপাশি সভা, সেমিনার, মতবিনিময় সভা, দলগত সভা, একজন-একজন-করে মতবিনিময় সভা, টেলি সংলাপ,
প্রকাশনা, পত্রিকায় লেখালেখি, ই-মেইল সংবাদ প্রেরণ ইত্যাদি করা হয়েছে, হচ্ছে। এসবের মাধ্যমে সকলের মাঝে উক্ত রূপরেখা ও
সুপারিশের প্রতি একটি ইতিবাচক প্রত্যয় ও দৃঢ সমর্থন পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। তাই, বতর্ম ান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে প্রস্তাবিত
গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখাটি এবং তার আলোকে প্রণীত সুপারিশগুলো অবিলম্বে বা¯বÍ ায়নের লক্ষ্যে গণসমর্থন ও
সহযোগিতা আরো বিস্তৃত ও ব্যাপকতর করতে আমরা সকলের দৃঢ় সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করছি, এবং সরকারকে তা বিশেষ
গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।
লেখকবৃন্দ: প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, চেয়ারম্যান, জানিপপ; প্রফেসর ড. এ.কে.এম. রিয়াজুল হাসান, বিসিএস
শিক্ষা; এবং মোশাররফ হোসেন মুসা, সদস্য, সিডিএলজি। ই-মেইল- লধহরঢ়ড়ঢ়১৯৯৫@মসধরষ.পড়স

বুধবার, ৬ জুন, ২০১২

ভাষা আন্দোলনের ছয় দশকেও নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার!

সালাহ উদ্দিন মাহমুদঃ
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি’- গান গাইতে গাইতে বহুদূর পথ খালি পায়ে হেটে ছোট বেলায় শহীদ মিনাওে ফুল দিতে যেতাম। আমাদেও এলাকায় ঐ একটাই শহীদ মিনার হতো। তাও আবার কলা গাছ দিয়ে বানানো। এমন দৃম্য মুধু আমার এলাকাই নয়। পুরো উপজেলারও একই দৃম্য। যদিও স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাসহ মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ মাত্র ১৮টি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শহীদ মিনার। বাকী ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানেই নির্মাণ করা হয়নি। এমনকি শহীদ মিনার নেই এমন অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী এ মহান দিবসটি পালন থেকে বঞ্চিত হয়।
শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, কালকিনি উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৫টি, রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩২টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮টি, বালক উচ্চ বিদ্যালয় ৩৮টি, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৪টি, কলেজ ৬টি, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ৬১টি, দাখিল মাদ্রাসা ১৭টি, আলিম মাদ্রাসা ২টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৮টি, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ১৩টি, কওমি মাদ্রাসা ৪টি, কিন্ডার গার্টেন ৮টি ও স্বল্পব্যয়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭টিসহ মোট চারশ’ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যাপন না করে সাধারণ ছুটির দিনের ন্যায় দিনগুলো কাটিয়ে দেয়। ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর অতিবাহিত হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীরা শহীদ মিনারের অভাবে বীর শহীদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না।
অথচ ২০১০সালের ২৫আগষ্ট বিজ্ঞ আদালত মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষায় সরকারের প্রতি ৮টি নির্দেশনা প্রদান করেন। যার পঞ্চম নির্দেশনায় ছিল- ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।’ জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই রায় দিয়েছিল। আদালতের এই রায় অনুসারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে ঐ বছরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক’ করে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই নির্দেশ আজো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
শহীদ মিনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে না পারলে ভাষার ইতিহাস জানতে পারবে না। যে কোন মূল্যে আনুষ্ঠানিক উদ্যাপনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিটু চ্যাটার্জী বলছেন, শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন অন্য কথা। তিনি বলেন, আমরা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করি তাতে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য কোন নির্দেশনা থাকে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে নির্মাণ করতে হয়। আগামীতে বিভাগীয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
আগামী প্রজন্ম যেন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ভুলে না যায়। তার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এখনি। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে চির জাগরুক করে রাখতে শহীদ মিনারের বিকল্প নেই। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত শহীদ মিনার সামান্য কারণে অবহেলিত হতে পারেনা। খুব শীগ্রই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নির্মিত হোক স্মৃতির মিনার।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী
০১৭২৫৪৩০৭৬৩

কালকিনিতে সপ্তাহব্যাপী শিশু নাট্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত

জাহিদ হাসান :
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, কালকিনি এডিপি’র উদ্যোগে শিশু ফোরামের শিশুদের নিয়ে সপ্তাহব্যাপী নাট্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৯ মে থেকে শুরু করে ০৪ জুন পর্যন্ত কালকিনি এডিপি’র সম্মেলন কক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
এন্ড্রু রায়ের সভাপতিত্বে চার্চিল দাসের সঞ্চালনে কর্মশালার উদ্বোধন ও সমাপনী ঘোষণা করেন এডিপি ম্যানেজার আশীষ কুমার হালদার। কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসাবে ছিলেন মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমীর নাটক বিভাগের ছাত্র ও প্রথমা রঙ্গমঞ্চ,কালকিনির পরিচালক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। কর্মশালায় ১৩ শিশু অংশগ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ শেষে গত ৫ জুন বিকালে গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ‘বার্থ ডে বাউন্স ব্যাক’ অনুষ্ঠানে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনা ও পরিচালনায় শিশু অধিকার বিষয়ক মঞ্চনাটক‘ অধিকার চাই’ মঞ্চস্থ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী আব্দুর রউফ, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মীর নাসির উদ্দিন, আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন ও বাঁশগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ঢালী প্রমুখ।

শুক্রবার, ১ জুন, ২০১২

মুক্তকথা: আর কত নির্যাতিত হলে সংবাদকর্মীরা নিরাপত্তা পাবে

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। আর জাতির বিবেকদের দুর্দশা দেখে মানুষের বিবেক আজ প্রশ্নবিদ্ধ। একের পর এক নির্যাতিত হচ্ছে সাংবাদিক। তাও আবার দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ বাহিনীর হাতে। সাংবাদিকতার মতো এ মহান পেশা আজ হুমকীর সম্মুখীন। মফস্বলের সাংবাদিক নির্যাতনের ইতিহাস সেই পুরনো। কিন্তু খোদ রাজধানীতে এ কি অবস্থা? এর দায়ভার কার?
এ মুহূর্তে মনে পড়ে ঠিক দুই বছর আগে আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট সরকারের পুলিশ বাহিনী দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়েছিল। পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে পত্রিকার প্রেসে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছিল। তখন হয়তো একটি রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এমনটি করা হয়েছিল। কিন্তু পত্রিকাটি শত চড়াই-উৎরাই পেরিয়েও এখনো টিকে আছে। এবং টিকে থাকবে।
সম্প্রতি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির চাঞ্চল্যকর হত্যার ক্ষত না শুকাতেই পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি নজিরবিহীন ঘটনা জাতিকে করেছে হতবাক। জনমনে উদয় হয়েছে নানাবিধ প্রশ্ন। একটি ঘটনা হতে পারে অনাকাক্সিক্ষত। একই ঘটনার পূণরাবৃত্তি ঘটলে তাকে অনাকাক্সিক্ষত বলে চালানো যায় না। মিডিয়ার বদৌলতে জনগণও আজ অনেক সচেতন। ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই তা নিস্ফল হবে। পুলিশের এ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পিছনে কে বা কারা এ প্রশ্নের জবাব সরকারকেই দিতে হবে। জনগণ যদি ক্ষমতার উৎস হয় তবে সাংবাদিকরা জনগণেরই আত্মা। আত্মা ছাড়া দেহ যেমন মূল্যহীন; তেমন সাংবাদিক ছাড়া জনগণও মূল্যহীন। কারণ সাংবাদিকরাই জনগণের মনের কথা, দু:খ-দুর্দশা, সফলতা-ব্যর্থতা জাতির সমক্ষে তুলে আনেন। 
বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের এ এক নজিরবিহীন ইতিহাস। এর আগে কারো বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় প্রতিহিংসাবশত অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। তাতে তেমন দু:খ ছিলনা। কারণ এটা একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। সব জেনে-শুনেই মানুষ এ পেশাকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাংবাদিক নির্যাতনে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে সংবাদকর্মীরা। রক্ষক যদি ভক্ষক হয়-তবে আর আশ্রয় চাইবে কার কাছে? যেভাবে সংবাদপত্র ও বৈদ্যুতিক সংবাদ মাধ্যমের ওপর সরকারি আক্রমণ শুরু হয়েছে। এর শেষ কোথায়? পুলিশ বাহিনীই বা এতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কি কারণে? কোন অশুভ ইশারায় আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সংবাদকর্মীরা।
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নেমেছে। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় দি ইনডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার বিভাস চন্দ্র সাহা বাসের চাঁপায় নিহত হলে সহকর্মী সাংবাদিকরা তার লাশ আনতে গেলে পুলিশ তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে। এতে ১০-১২জন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই গত ২৬ মে শনিবার দুপুরে দায়িত্ব পালনের সময় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রথম আলোর তিন ফটোসাংবাদিক খালেদ সরকার, সাজিদ হোসেন ও জাহিদুল করিমকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে পুলিশ। ওদিকে বিডি নিউজ ২৪ ডটকম অফিসে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিযে আহত করেছে বেশ কয়েকজনকে। তাহলে পুলিশ আর সন্ত্রাসীদের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? সর্বশেষ আগারগাঁওয়ে হামলার তিন দিনের মাথায় ঢাকার আদালত পাড়ায় বিচারপ্রার্থী মহিলাকে পুলিশ ক্লাবের ভেতর নিয়ে পুলিশ শ্লীলতাহানী ঘটায়। এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে পুলিশের হামলার শিকার হন প্রথম আলোর আদালত প্রতিবেদক প্রশান্ত কর্মকারসহ কয়েকজন সাংবাদিক। গত ২৯ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রবেশ পথে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিনের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।
এ কেমন শত্র“তা? এ কেমন প্রতিশোধ? পুলিশের সাথে সাংবাদিকদের শত্র“তা কিসের? না কি পুলিশের যাবতীয় অপকর্ম সাংবাদিকরা তুলে ধরেন বলেই প্রতিশোধ নিতে এ হামলা। আবার কি না কাঁটা ঘায়ে লবন ছেটাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রি শামসুল হক টুকু। তিনি পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে বলেন। এ পরামর্শ যেমন হাস্যকর তেমনি উদ্বেগজনক। তার এ বক্তব্যের জন্য চারিদিকে নিন্দার ঝড় ওঠে। প্রতিবাদ জানান সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। এমনকি এ রকম বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংবিধান প্রণেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। পক্ষান্তরে এটাই প্রমাণিত হয়-সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ইচ্ছাকৃত। এবং ক্ষমতাসীনরা এর সাথে জড়িত। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন পুলিশের পক্ষে সাফাই গাইছেন। তিনি বললেন,‘পুলিশ এখন অনেক ভালো হয়েছে।’ এই যদি হয় ভালোর নমুনা। তাহলে জগতে মন্দ বলতে কী আছে? পুলিশের অধঃপতন প্রমাণ হয় তাদের মারমুখী ভুমিকা দেখে। পুলিশের অপকর্ম ধরা পড়ে গিয়েছিল বলেইতো তারা উপস্থিত আইনজীবি-সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়। সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে কী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা হতাশাজনক নয়? এরপরও কী মন্ত্রীদের মুখে ‘অবস্থা ভালো’ কথাটি শোভা পায়। বরং এমন অবস্থার দায় স্বীকার করে তাদের পদত্যাগ করা উচিৎ। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে-এমন মন্ত্রী রেখে লাভ কী?
এমন ঘটনার জন্য সরকার কি বিব্রত বা বিন্দুমাত্র বিচলিত নন? অবস্থা দেখে তো তাই মনে হয়। এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘটনার নেপথ্য শক্তি কারা? তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব কার? এ ন্যাক্কারজনক অবস্থার মধ্যেও জল ঘোলা করার জন্য ‘সচেতন সাংবাদিক সমাজ’র ব্যানারে ‘সাংবাদিক নির্মূলের আহ্বান’ জানান কারা? তাদের শেকড় কোথায়? তা কি উপরে ফেলা সম্ভব নয়? মৌচাকে ঢিল ছুড়লে অবস্থা কি হয় তা হয়তো ভুক্তভোগিরা নিশ্চয়ই অবগত আছেন। রাতের আঁধারের এ সচেতন সাংবাদিক সমাজ কারা? সাংবাদিক ও পুলিশের মাঝে দ্বন্দ্ব বাধিয়ে ফায়দা নেওয়ার ফন্দি আঁটেন কারা? তারা কি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে? তাই বলতে হয়-‘ভিক্ষা চাইনা কুত্তা সামলান!’
সাংবাদিকরা সরকার বা পুলিশের শত্র“ নয়। সরকার যদি জনগণের বন্ধু হয় তবে সাংবাদিকরা সে বন্ধুত্বের সোপান। সিঁড়ি ধ্বংস করে উপর তলায় ওঠার চেষ্টা করা বৃথা। তাই সাংবাদিক নির্যাতনের সাথে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা সরকারের দায়িত্ব। কারণ জাতির বিবেকরা যদি লাঞ্ছিত হয় তবে জাতিকেও লাঞ্ছিত করা হয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী
০১৭২৫৪৩০৭৬৩