শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৫

নাটক: দাদুর স্মৃতি

                                            (কবর কবিতা অবলম্বনে)
                                    মূল: পল্লীকবি জসীমউদদীন
নাট্যরূপ: সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
নির্দেশনা: আ জ ম কামাল ও সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

চরিত্র:
১. দাদা: যুবক
২. দাদা: মধ্যবয়সী
৩. দাদা: বৃদ্ধ
৪. নাতি: ৬ বছর বয়সের
৫. নাতি: ১০ বছর বয়সের
৫. দাদী: ১২ বছর বয়সের
৬. ছেলে: ৩৫ বছর বয়সের
৭. পুত্রবধূ: ২৫ বছর বয়সের
৮. নাতনী: ১১ বছর বয়সের
৯. মেয়ে: ৭ বছর বয়সের

‘(সুয়াচান পাখি, আমি দাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি......।’ গান বেজে উঠবে। আশি বছরের বৃদ্ধের এক হাতে লাঠি। অন্যহাতে নাতির কাধ ধরে মঞ্চে আগমন। গুটি গুটি পায়ে একটি কবরের সামনে দাঁড়াবে।)
বৃদ্ধ: এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে। এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ, সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা! সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরিএমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে, ছোট-খাট তার হাসি ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।
নাতি: আর ওই কবরগুলো কার কার, দাদা?
বৃদ্ধ: তোর বা, মা, ফুফু আর বোনের কবরএকে একে সবাই চইলা গেল।
নাতি: কি হইছিলো তাগো?
বৃদ্ধ: তহন মানুষ এত কিছু বুঝত না। অশিক্ষিত, মূর্খ মানুষই ছিল বেশি। না আছিল ভাল ডাক্তার, না আছিল হাসপাতাল। অল্প বয়সে বিয়া অইত। যৌতুক, নির্যাতন, কুসংস্কার ছিল পান্তাভাতের মত। তাইলে শোন, কইতাছি......  
(আলো নিভে যাবে)
সকালের আলো জ্বলে উঠবে। মঞ্চে ২০ বছর বয়সের দাদার আগমন।
দাদা: কইগো, কই গেলা? কও দেহি। কেমন লাগে? ছোট মানুষ ইয়া আছি মহা ঝামেলায়। ( আড়ালে কান্নার শব্দ) কানতাছে কেডা? (এদিক-ওদিক খুঁজে কাছে গিয়ে) কিরে বউ, কি অইছে তর। কিরে বউ? কানতাছো ক্যান? আমারে ক’। কেউ মারছে?
দাদি: অরা আমার পুতুলের বিয়া ভাইঙ্গা দিছে। অ্যা.......।
দাদা: থাউক, কান্দিস না। আমি অগো বকা দিমুনে। তু আবার পুতুলের বিয়া দিবিচল বাড়ি চল (উভয়ের প্রস্থান)
(চোখ মুছতে মুছতে দাদির আগমন। কোণায় একটা পিঁড়িতে বসবে। কাধে লাঙল নিয়ে দাদার আগমন)
দাদাঃ বউরে আমি ক্ষেতে গেলাম। আহারে আমার সোনা মুখ। কানলে কি ভাল লাগে? দেখত সারা বাড়ি যেন সোনায় ভইরা গ্যাছে। (এদিক-ওদিক তাকিয়ে) ভাবিসাব কই?  যাইগা, ভাবিসাব দ্যাখলে আবার তামাশা করবো।
দাদি: যা অইছে, তাড়াতাড়ি আইয়েনআমি কিন্তু বাপের বাড়ি যাইমু।
দাদা: আইচ্ছা, কাইল সকালে যাই
দাদি: আইচ্ছা, ঠিক আছে। এইবার সপ্তাখানি থাকমু।
দাদাঃ থাকিস। আমি গেলাম রে বউ। খেতে ভাত দিয়া জাইছ।
(দাদার প্রস্থান। দাদিও পেছন পেছন যায়দাদা ঘুরে ঘুরে বারবার তাকায়।)

‘কে যাসরে ভাটির গাং বাইয়া, আমার ভাইধন রে কইয়ো নায়র নিত বইলা...’ গানের সাথে সাথে সকালের আলো জ্বলে উঠবে একটা পোটলা হাতে নিয়ে দাদির আগমন। পোটলা গুছগাছ করে। এমন সময় দাদার আগমন।
দাদা: সব ঠিকঠাক ইছো তো।
দাদি: হ, লইছি। বেশিদিন থাহুম না। মাত্র এক সপ্তাহ।
দাদা: আইচ্ছা, তাড়াতাড়ি আহিছ কাউরে দিয়া জাইতে কইছ। আমার অনেক কাম হাতে। একদিন ক্ষেতে না গেলে ফসল মাইর খাইয়া যাইব।
দাদি: (পা ধরে) আমারে দেখতে যাইয়েন উজানতলীর গা।
দাদা: দেহ দেহ করে কি? আমি না যাইয়া পারিশনিবার দিন শাপলার হাটে তরমুজ বেইচা তোর লাইগ্যা একছড়া পুতির মালা লইয়া যামুনে। চল তোরে একটু আগায়া দিয়া আহি। ছলেমান রে কইছি, তরে বাড়ি পর্যন্ত দিয়া আইতে। পথে যাইতে যাইতে চ্যাংড়ামি করবিনা।
দাদি: অইছে, করুম না। , যাই।

সন্ধ্যার সময়। দাদার শ্বশুর বাড়ি। কাশি দিয়ে প্রবেশ। ছুটে আসে দাদি। দাদা কোমরের গাট থেকে পুতির মালা, তামাক আর মাজন বের করে দেয়।
দাদি: (নথ নেড়ে) এতদিন পরে আইলেন?থের দিকে চাইয়া চাইয়া আমি কাইন্দা মরি আখি জলে।
(আরো নিভে যাবে। দুজনার হাসির আওয়াজ আসবে।)
(আলো জ্বলে উঠবে। বৃদ্ধ ও নাতির আগমন।)
বৃদ্ধ: আমারে ছাইরা এত ব্যথা যার কেমন কইরা হায়, কবর দেশেতে ঘুমাইয়া রছে নিঝঝুম নিরালায়। দাদু, হাত জোর কইরা দোয়া কর, আয় খোদা দয়াময়! আমার দাদির লাইগা যেন ভেস্ত নসিব হয়।
নাতি: আয় খোদা দয়াময়! আমার দাদির তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।
দাদা: (মোনাজাত শেষে) তারপর এই শূন্য জীবনে যত কাটাইছি, যেখানে যারে জড়ায়ে ধছি সেই ছাইরা ইলা গেছে। শত কাফনের, শত কবররের ঙ্ক হৃদয়ে আকি, গণিয়া গণিযা ভুল করে গুণি সারাদিন রাত জাগি এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে, গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে। মাটিরে আমি যে বড় ভালোবাসি, মাটিতে মিশায়ে বুক, আয়-আয় দাদু, গলাগলি রি কেঁদে যদি হয় সুখ।
(গলাগলি ধরে কান্না শেষে)
নাতি: আইচ্ছা দাদু, ওই কবর দুইটা কার কার?
বৃদ্ধ: খাড়া, কইতাছি। এই খানে তোর বা ঘুমায়, এইখানে তোর মা। কাঁন্দস তুই?
নাতি: কি করুম দাদু, পরাণ যে মানে না।
বৃদ্ধ: তাইলে শোন দাদু।
(আলো নিভে যাবে।)
(আলো জ্বলে উঠবে)
(বৃদ্ধের ছেলের আগমন। হাটতে কষ্ট হয়। অনেক কষ্টে একটু এগিয়ে দপ করে বসে পড়বে। বাবাকে ডাকবে। )
পুত্র: বাজান, আমার শরীলডা ক্যামন জানি করতাছে।
(বাবা ছুটে এসে)
দাদা: কি অইছে বাজান?
পুত্র: ক্যামন জানি দম বন্ধ অইয়া আইতাছে।
দাদা: (মাটিতে বিছানা পেতে দিয়ে) বাছা, এইখানে শোও। ভালো লাগবো। ও বউ কই গেলা? তাড়াতাড়ি এই দিকে আহো। তোরা কে কই আছোস জলদি আয়।
পুত্র: বাজান, এই শোয়াই মনে অয় আমার শেষ শোয়া। বাজান কবর সাজাও, কাফন সাজাও। আমারে কাধে করে নিয়ে যাও গোরে।
(বউ, মেয়ে, ছেলে, বোনের আগমন)
দাদা: কী সব আবোল-তাবোল কইতাছো বাজান। কিচ্ছু অইবো না তোমার।
পুত্র: না বাজান, আমার সময় শেষ।
বউ: কি কন আপনে। কবিরাজরে খবর দেই।
পুত্র: নারে বউ, খবর দিয়া মনে অয় লাভ অইবো না......।
দাদা: না, কস কি বাজান? (কপালে হাত রেখে) কথা কঅ বাজান। কিরে বাজান? কথা কস না ক্যান? বাজানরে.....। ও বউ পোলায় আমার কথা কয় না ক্যান?
(সমস্বরে কান্না)
(আলো নিভে যাবে। আবার জ্বলে উঠবে।)
বৃদ্ধ: তোর বাজানরে যহন কবর দিতে নিয়া যাইতাছি। তুই তহন কইলি, মোর বাজানরে কই লইয়া যাও দাদু? সেই দিন তোর কথার কোন জওয়াব দিতে পারি নাই।
নাতি: তারপর কি অইলো দাদু?
বৃদ্ধ: তোর বাপের মৃত্যুর পর তোর মাও জানি ক্যামন অইয়া গ্যালো। তোর বাপের লাঙল-জোয়াল দুই হাতে জড়ায়া ধইরা সারাদিন-রাত তোর মা কানতে লাগলো। তার কান্দনে গাছের পাতারা ঝইরা পড়তো। গায়ের পথিকরা তার কান্দন শুইনা চোখ মুছতে মুছতে যাইতো। আথালের দুইটা জোয়ান বলদ সারাক্ষণ হাম্বা-হাম্বা কইরা ডাকতো। তাগো গলা ধইরা তোর মায়ও কানতো।
নাতি: (চোখ মুছতে মুছতে) তারপর?
বৃদ্ধ: কানতে কানতে তোমার মারও অসুখ করলো। একদিন.......
(আলো নিভে যাবে। আবার জ্বলে উঠবে।)
(পুত্রবধূ একটা মাদুর পেতে শুয়ে আছে। পাশে একটা কলস আর গ্লাস। এমন সময় দাদা ও নাতির আগমন।)
পুত্রবধূ: বাছারে, একটু আমার ধারে আয়আহারে, পোলাডা আমার ক্যামন হুগায়া যাইতাছে। মার অসুখ বইলা ঠিকমতো খায়ও না। বাজান, আমি বোধ অয় আর বাঁচুমনা।
দাদা: কও কি বউ মা। আজেবাজে কথা কইও না। আমার নাতিনডা রইলো অর শ্বশুর বাড়ি। খাড়াও আমি খবর পাডাইতাছি।
পুত্রবধূ: না বাজান, খবর পাডায়া লাভ অইবো না। আইয়া আমারে আর পাইবোনা মনে অয়। বড় দু:খ অয়, আমার মাইয়াডা সংসারে শান্তি পাইলো না। তহনই কইছিলাম, অতো ছোডো মাইয়া বিয়া দিম না। আপনেরা আমার কথা হোনলেন না।
দাদা: তহন কি জানতাম, অরা এতো কসাই-চামার। জামাইর বাপ-মা সুবিধা না। সব কপালের ফ্যার।
পুত্রবধূ: বাবা, আমার মাইয়াডার দিকে একটু খেয়াল রাইখেন। অর যাতে কষ্ট না অয়। আমি মনে অয় মইরাও শান্তি পাইমু না।
দাদা: তুমি চিন্তা কইরো না বউ মা। আমি অর খোঁজ নেই মাঝে মাঝে।
পুত্রবধূ: (ছেলেকে) াছারে আমি চইলা যাইতাছি। বড় দু:খ রইলো। দুনিয়াতে তোর মা বলতে কেউ রইলো না। দুলাল আমার, যাদুরে আমার, লক্ষ্মী আমার। অনেক কষ্ট অইতাছে তোরে ছাইড়া যাইতে। (শ্বশুরকে উদ্দেশ্য করে) বাবা, স্বামীর মাথার মাথাল খানি আমার কবরের বাম দিকে ঝুলাইয়া দিয়েন।
(কান্নার শব্দ)
(আলো নিভে যাবে। আবার জ্বলে উঠবে।)
(বৃদ্ধ ও নাতির আগমন।)
বৃদ্ধ: সেই মাথাল গইলা-পইচা মাটির সাথে মিইশা গেছে। কিন্তু পরাণের ব্যতা কমেনা। ক্ষণে ক্ষণে তা জাইগা ওঠে। জোড়মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু­ছায়, গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়। জোনকি ­মেয়েরা সারারাত জাগি জ্বালায়া দেয় আলো, ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নূপুর কত যেন বেসে ভালো। হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, রহমান খোদা! আয়; ভেস্ত নসিব করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়!
(দাদা ও নাতি হাত তুলে মোনাজাত করে। মোনাজাত শেষ করে।)
নাতিঃ আইচ্ছা দাদু, অই কবরটা কার?
বৃদ্ধঃ ওইটা তোমার বুজির কবর পরীর মতন আছিল দেখতে বিয়া দিছিলাম কাজিদের বাড়ি বনিয়াদি ঘর পেয়ে। এত আদরের বুজিরে তারা মোটেও ভালবাসত না, হাতে যদিও মারত না তারে, ঠোঁটে মারত শতবার খবরের পর খবর পাঠাইত, দাদু যেন কাল আইসা দুই দিনের লাইগা মোরে বাপের বাড়ির নিয়া যায় তার শ্বশুর কসাই-চামার, সহজে দিতে চায়না। অনেক কইয়া সেইবার তারে এক শীতে বাড়ি আনছিলাম

(আলো নিভে যাবে)
(মঞ্চে নাতনির আগমন। মুখ মলিন দু’টি চোখে অশ্রু বাবা- মায়ের কবরে বসে কাঁদে। এমন সময় দাদার আগমন।)
দাদুঃ (মাথায় হাত রেখে) এমন মন মরা অইয়া থাকলেতো তোমারও অসুখ করব। হারাদিন কান্নাকাটি করলে মরণ­ রোগ তোমারেও খাইব।
নাতনিঃ বাইচা থাইকা কি করুম দাদু? বাপ-মা নাই। শ্বশুর- শাশুরি উঠতে - বসতে গালমন্দ করে।
দাদাঃ (চমকে উঠে) হায় হায় রে, জ্বরে তোমার গা দি পুইরা যাইতাছে। তাড়াতাড়ি ঘরে লও।
নাতনি: দাদা, আমার ফুপু কই? ছোড ভাইডা কই গ্যালো?
দাদা: অরা মনে অয় পাশের বাড়িতে টোহাপাতি খেলে। তুমি ঘরে লও। অরা একটু পরই আইয়া পড়বো।
নাতনি: চলেন যাই। গায়ে তো জোর পাইতাছি না।
দাদা: হুজুরের পানি পড়া খাইলে ঠিক অইয়া যাইবো। কবিরাজের তোন বড়ি আনছি। খাইলে দ্যাখবা শরীরে জোর পাইবা।
(উভয়ের প্রস্থান)
(বৃদ্ধ ও নাতির আগমন।)
নাতি: তারপর আমার বুজির কী অইছিলো?
বৃদ্ধ: কী জানি পচানো জ্বরে ধরল আর সাইরা উঠল না, এই খানে তারে কবর দিছি দেখে যা দাদু (একটু থেমে) ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেউ ভালো কবরে তার জড়ায়ে আছে বুনো ঘাসগুলি কালো। বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন পাতায়-পাতায় কেঁপে উঠে যেন তারি বেদনার বীণ। হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, আয় খোদা! দয়াময়। আমার বু­জীর তরেতে যেন গো বেস্ত নসিব হয়।
(বৃদ্ধ ও নাতির মোনাজাত। মোনাজাত শেষে।)
নাতিঃ অই কবরডা কি আমার ছোট ফুফুর?
বৃদ্ধঃ হ, ওই খানে ঘুমায় তোর ছোট ফুপু সাত বছরের মেয়ে রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে। ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কী জানি ভাবিত সদা অতটুকু বুকে লুকাইয়া আছিল কে জানিত কত ব্যথা! ফুলের মতন মুখখানি তার দেখতাম যবে চেয়ে তোমার দাদির ছবিখানি মোর হদয়ে উঠিত ছেয়ে। বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।
নাতিঃ দাদা, কি হয়েছিল ফুফুর?
বৃদ্ধ: একদিন গজনার হাটে গেলাম। আইসা দেহি মা আমার পথের মধ্যে গড়াগড়ি খায়.......।
(আলো নিভে যাবে। আবার জ্বলে উঠবে।)
(রাস্তায় পরে আছে মেয়ে। ধুলার মধ্যে গড়াগড়ি খায়। দাদু সে পথ দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ দেখতে পায়। এগিয়ে যায়।
দাদু: কিরে মা, কি হইছে তোর?
মেয়েঃ বাজান, ওই ঝোপের মধ্যে থেইক্যা কিতে জানি মোরে কামড় দিছে।
দাদা: কিতে কামড় দিছে? তুমি দেহো নাই।
মেয়ে: না, মনে অইলো খোঁচা খাইছি। আস্তে আস্তে দেহি শরীল জ্বালা-পোড়া করে।
দাদা: কস কি মা?
মেয়ে: হ বাজান, আমার জানি কেমন লাগতাছে। আমারে বাঁচাও বাজান, আমারে বাঁচাও।
দাদুঃ (কোলে নিয়ে) কিচ্ছু অইব না মা, তোর কিচ্ছু অইব না। আমি তোরে ওজার ধারে লইয়া যাইতাছি। বিষ নামাইলে তুই ভালো অইয়া যাইবা। (দ্রুত প্রস্থান)
(আলো নিভে যাবে আবার জ্বলে উঠবে।)
(ওজার বাড়ি প্রবেশ। উঠানে রেখে।)
দাদুঃ কবিরাজ, তাড়াতাড়ি বাইরে আস। আমার মাইয়াডারে বাঁচাও।
(ওজা বেরিয়ে আসে।)
কবিরাজঃ কি অইছে?
দাদুঃ আমার মাইয়ারে সাপে কাটছে। তাড়াতাড়ি বিষ নামানোর ব্যাবস্থা কর।
(বিষ নামানোর আয়োজন করে। আঙুলে ডোর পেচিয়ে বিষ নামানেরা চেষ্টা করে। মেয়ে বাবার কোলে ঢলে পড়ে।)
দাদুঃ কিরে মা কথা কস না ক্যান? ও কবিরাজ, মাইয়া তো ঢইলা পড়ছে?
কবিরাজঃ (পরীক্ষা করে) নারে ভাই, বাঁচাইতে পারলাম না। অনেক দেরি অইয়া গেছে।
দাদা: ক্যামন ওজা অইছো তুমি? আমার শেষ সম্বলডাও বাঁচাইতে পারলা না। কোন ক্ষমতা নাই তোমার হাতে।
কবিরাজ: বাঁচা-মরার মালিক আল্লাহ। আমিতো উছিলা মাত্র। কি আর করবা? যাও, আল্লার মাল আল্লায় নিয়া গ্যাছে। তোমার আমার এতে কোন হাত নাই।
(কাঁদতে কাঁদতে মেয়েকে নিয়ে প্রস্থান।)
(আলো নিভে যাবে আবার জ্বলে উঠবে। বৃদ্ধ ও নাতির আগমন।)
বৃদ্ধ: সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে। কী জানি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গেছে। আপন হস্তে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি দাদু! ধর­ধর­ বুক ফেটে যায় আর বুঝি নাহি পারি। এইখানে এই কবরের পাশে আরও কাছে আয় দাদু, কথা কস নাকো জাগিয়া উঠিবে ঘুম­ভোলা মোর যাদু।
নাতিঃ লও দাদু, বাড়ি যাইগা। সন্ধ্যা হইয়া গেছে।
বৃদ্ধ: ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিছে ঘন আবিরের রাগে অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে। মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সুকরুণ সুর, মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দূর। জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা! রহমান। ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যু­ব্যথিত প্রাণ।
(দুজন মোনাজাত করে। মোনাজাত শেষে বেজে উঠবে-একদিন মাটির ভেতরে হবে ঘর রে মন আমার, কেন বান্ধ দালান-ঘর।
(আলো নিভে যাবে।)
সমাপ্ত
বি:দ্র: পরিবেশনার স্বার্থে কিছু কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। মহড়া শেষে পূর্ণাঙ্গ নাট্যরূপ ফুটে উঠবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন