বুধবার, ৩০ মে, ২০১২

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

আফিয়া মুন:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ৩০ মে সন্ধ্যা ৭ টায় কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহরিয়াজের সভাপতিত্বে  লিটু চট্টোপাধ্যায়ের সঞ্চালনে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যক্ষ মোঃ খালেকুজ্জামান, অধ্যাপিকা তাহমিনা সিদ্দিকী ও সাকিলুর রহমান সোহাগ। আলোচনা করেন অধ্যাপক কাজী কামরুজ্জামান, অধ্যাপক দেদারুল আলম মুরাদ ও কবি দুলাল সরকার। সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  এতে কালকিনি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, কালকিনি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কালকিনি
সৈয়দ আবুল হোসেন একাডেমী, প্রথম আলো বন্ধুসভা ও উদীচী,কালকিনি শাখার শিল্পীরা রবীন্দ্র সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করেন।

সীমান্ত হত্যায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
দিনদিন বেড়েই চলছে সীমান্ত হত্যা। ফলে শিথিল হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক। লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। বহুবার দু'দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর কোন হত্যাকান্ড নয়; আর কোন গুলি নয়। এ সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশ সম্মান করলেও ভারত বারবার অপমান করেছে। এ কেমন বন্ধুত্বের নমুনা। অথচ ভারত জোর গলায় বলছে, বাংলাদেশ তার  অকৃত্রিম বন্ধু। কিন্তু সীমান্ত হত্যার কারণে যে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে।  তা উত্তোরণের পথ কোথায়?
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত একযুগে বিএসএফের হাতে ১০০৬ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। আর গত এক বছরে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ২১ জন। ভারতের পুলিশের হাতে নিহত হয়েছেন ১ জন। ভারতীয় নাগরিকদের হাতে নিহত হয়েছেন ১০ জন। সীমান্তের ওপারে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির হাতে নিহত হয়েছেন ৩ জন। সব মিলিয়ে গত এক বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), ভারতীয় পুলিশ, ভারতীয় নাগরিকের হাতে ৩৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশি একজন সন্ত্রাসীর হাতেও ভারতীয় একজন নাগরিক নিহত হওয়ার কোন নজির নেই। এছাড়া মহাজোট সরকারের গত তিন বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দীর্ঘ হয়েছে লাশের মিছিল। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ৩বছরে সীমান্ত এলাকায় ২০০৯ সালে ৯৮ জন, ২০১০ সালে ৭৪ জন, ২০১১ সালে ৩১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিএসএফের হাতে অপহৃত হয়েছেন ৯০ বাংলাদেশি। তাই মনে হয় আমাদের বন্ধুত্ব এখন একতরফা হয়ে যাচ্ছে। ভারত আমাদের বুকে টেনে পিঠে ছুড়ি বসিয়ে দিচ্ছে।
গত ২৩ মে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি সীমান্তের আমড়া বিওপির সোনাপাড়া, রসুলপুর সীমান্তের ছোট সইচান্দা গ্রামের মো. নাদের আলী বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারালেন। এঘটনা আজ নতুন নয়। প্রতি সপ্তাহেই সীমান্তে নিহত হচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিক। কিশোরী ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় লাশ ঝুলিয়ে রাখা, দিনাজপুরের বিরামপুরের সাইফুল ইসলামকে হত্যা কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুবক হাবিবুর রহমানকে দিগম্বর করে হাত-পা বেধে নির্দয়ভাবে নির্যাতনের পর গোপনাঙ্গে পেট্রল ঢেলে উল্লাসের  দৃশ্য ভিডিও চিত্রে দেখে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। সেদিন ভারত বলেছিল-এমন ঘটনা আর ঘটবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং নির্দেশ দিয়েছিলেন-যাতে এধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে ব্যাপারে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার। হাবিবুর রহমানের অত্যাচারের সাথে জড়িত ৮ জন বিএসএফ সদস্যকে বহিস্কার করা হয়েছে। কিন্তু অত্যাচারতো বন্ধ হয়নি। সে ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ২৬ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী সীমান্তে বাংলাদেশি আব্দুল লতিফ লেবুর লাশ ফেরত দিয়েছিল ভারত। আর যখন ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সাথে ‘কারপাস’ চালুর ব্যাপারে আলাপ করছেন, তখন যশোরের ধান্যখোলা সীমান্তেরাশেদুজ্জামান নামে এক বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। সাংবাদিকরা এব্যাপারে জানতে চাইলে বিরক্তিমিশ্রিত সুরে প্রণব মুখার্জি বলেন,‘এতে দুই দেশের সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে আমি মনে করি।’



তবে কি এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া? ভারতের সাথে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে আমাদের অকাতরে প্রাণ দিতে হবে? বাংলাদেশের প্রতি ভারেতের তথাকথিত এই অকৃত্রিম বন্ধুত্ব কি দিনদিন বাড়তেই থাকবে? ভারত আমাদের গুলি করে মারবে আর সান্ত্বনা দেবে। এভাবে গরু মেরে জুতা দানের সংস্কৃতি আর কতকাল চলবে? তাহলে কী আমরা ব্যর্থ। সরকার কেন এর প্রতিবাদ করতে পারছে না। অথচ বাংলাদেশ সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন- সীমান্তে যা কিছু ঘটছে, তা নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়। এসব অতীতে ঘটেছে ,এখনো ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে। এগুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে সরকার মনে করে না।
সীমান্ত হত্যাকান্ড নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন। মানবাধিকার সংস্থার চাপে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে ‘দোষ’ স্বীকার করেন। কিন্তু নির্যাতন বন্ধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুমের’ সেক্রেটারি জেনারেল কিরিটি রায় বলেছেন,‘বিএসএফ একের পর এক নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এটা শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘনই নয়; বরং ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী। এ কারণে তারা যা ইচ্ছা, তা করে পার পেয়ে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত নিয়ে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এ নিয়ে একাধিক বার বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু নির্যাতনের হার না কমায় প্রতিনিয়ত আমাদের উদ্বেগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। ওদিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান ইউ কে বানশাল গত ৭ ফেব্র“য়ারি বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন,‘ সীমান্তে গুলি চালানো বন্ধ করা পুরোপুরি সম্ভব নয়।’ বিভিন্ন কারণ দর্শিয়ে তিনি বললেন,‘সীমান্তে গুলি চলবে।’ ঠিক সে মুহূর্তে বাংলাদেশ-ভারত কর্তৃপক্ষ ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি, ফেনী নদীর ওপর সড়ক নির্মাণসহ ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার ও বাংলাদেশ-ভারত সরাসরি রেলপথ নির্মাণে সিদ্ধান্তের কাছকাছি পৌঁছেছেন।
সীমান্তে হত্যার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে, ভারত থেকে বাংলাদেশে নির্বিঘেœ ফেনসিডিল আনার ক্ষেত্রে কোন বাধা আসলেই তখন হত্যার শিকার হন কিছু নিরীহ বাংলাদেশি। আসলে ফেনসিডিল চোরাচালান নিরাপদ করতেই বিএসএফ বেছে নেয় বর্বর হত্যাকান্ডের পথ। শোনা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বোতল ফেনসিডিল প্রবেশ করতে বিএসএফকে দিতে হয় পাঁচ টাকা। যেটা বিএসএফের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা। কারণ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গড়ে উঠেছে ১ হাজার ২ শ’র মতো ফেনসিডিল কারখানা। যখন বাংলাদেশের র‌্যাব ও বিডিআর ফেনসিডিল ঠেকাতে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেছে তখন প্রতিদিন লাখ লাখ ফেনসিডিল বাংলাদেশে আসা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশে ফেনসিডিল পাঠাতে ব্যর্থ হয়ে বিএসএফ প্রতিশোধ নিতে মেতে উঠেছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে। আর এ কর্মকান্ডের মদদ দিচ্ছেন বিএসএফ প্রধান।
এর প্রতিকার কী? সীমান্তে লাশের মিছিল আর কত দীর্ঘ হবে? কবে জেগে উঠবে জাতি ভারতীয আগ্রাসনের বিরুদ্ধে? এ মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড চিরতরে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

রবিবার, ২৭ মে, ২০১২

সংস্কৃতি: কাজী নজরুল ইসলামের ১১৩ তম জন্মবার্ষিকী

নুরুদ্দিন আহমেদ:
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৩ তম জন্মবার্ষিকী ও বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে গত ২৬ মে সন্ধ্যা ৭ টায় স্বাধীনতা অঙ্গনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি নুর-উর-রহমানের সভাপতিত্বে আবৃত্তি প্রশিক্ষক ইমরান সাগরের সঞ্চালনে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোঃ নজরুল হোসেন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খান, পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ ও সরকারি নাজিমুদ্দিন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মিয়া আব্দুল হালিম। সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।


শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১২

মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমী ভবনের স্থান নির্ধারণ

মারজিয়া নিশি:
সংস্কৃতি কর্মীদের জন্য আনন্দের সংবাদ হলো যে, মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমী ভবনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ভবনের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শণ করেন।
মাদারীপুর শকুনি লেকের দক্ষিণ পাড় থেকে স্থানান্তরিত করে মাদারীপুর- শরীয়তপুর সড়কের লালুনা চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে নতুন ভবনের স্থান নির্ধারণ করা হয়। গত শুক্রবার সকালে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান স্থান পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, আরডিসি সৈয়দ ফারুক আহমেদ, সাবেক পৌর মেয়র নুরে আলম বাবু চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাজাহান হাওলাদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল বাশার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সেলিম, শিল্পকলা একাডেমীর কার্যকরি সদস্য ডাঃ রেজাউল আমিন, নাট্য প্রশিক্ষক আ জ ম কামাল, সংগীত প্রশিক্ষক সিমা সাহা, আবৃত্তি প্রশিক্ষক ইমরান সাগর, নৃত্য প্রশিক্ষক আজিজুল ইসলাম স্বপন, দহন সম্পাদক নাট্যকর্মী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, বি এ কে মামুন ও একাডেমীর ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। নৌমন্ত্রী এসময় আগামী ১৯ জুন ঢাকায় জাতীয় নাট্যোৎসবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী মঞ্চে মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমীর নাটক বিভাগের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘একটাই চাওয়া’ নাটক মঞ্চস্থ করতে যাতায়াতের জন্য গাড়ি ও অভিনেতাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।   

শুভ জন্মদিন

‘‘বিদায়, হে মোর বাতায়ন- পাশে নিশীথ জাগার সাথী!
ওগো বন্ধুরা, পান্ডুর হয়ে এল বিদায়ের রাতি!’’

বাংলাদেশের জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের
১১৩ তম জন্মদিনে রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি....।
শ্রদ্ধাবনত,
আফিয়া মুন,
সহযোগি সম্পাদক,
দহন ( সাহিত্যপত্র)।

না

জাহিদ হাসান

পকেটে থাকলে টাকা,
প্রেম বলে তুমি পাকা।
মানিব্যাগ হলে ফাঁকা,
প্রেম বলে পালা।
এ রকম টাকার প্রেমকে না...।
প্রথম প্রথম ভালো লাগা-
পরক্ষণেই শুরু ফোনালাপ.
নিমিষেই অন্তরঙ্গ মুহূর্ত-
পরিপুর্ণতার পূর্বেই প্রেম চম্পট।
এ রকম সস্তা প্রেমকে না...।
যেসব বন্ধু নেশা করতে বলে,
সে সব বন্ধুদের না...।
প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে হতাশায় ডুবে থাকা,
হতাশাকে না....।
যে সব পার্টিতে থাকে মদ,
বিয়ারের মহা উৎসব।
সে সব পার্টিকে না...।
যে সব বর্ষপূর্তিতে
সবাই মেতে ওঠে নেমার উন্মাদনায়,
সে সব বর্ষপূর্তিকে না...।
সমাজ থেকে মাদককে সমস্বরে
না .. না ..  না  .. না  ..।

সোমবার, ২১ মে, ২০১২

দু:স্বপ্নের সান্ত্বনা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

আমি রাত জেগে অন্ধকার দেখি-
দু'চোখে নেচে ওঠে দু:স্বপ্নের বিভিষিকা।
তুমি সুখের পৃথিবীতে ঘুমের ঘোরে
দেখ সাজানো গোছানো রঙ্গিন স্বপ্ন।

আঁচলে তোমার বর্ষা ভেজা ফুল,
অন্ধকারে জ্বলে ওঠে তারার মতন।
ঘাসের বুকে জমে থাকা জলে সিক্ত
তোমার পা দু’খানি রাঙা হয় আরো।

আমি অন্ধকারের বিভিষীকাময় দু:স্বপ্নে
তোমার শাড়ীর কোমল আঁচল ছুঁই।
নিজের অজান্তেই হাতের মুঠোয়
তুলে আনি যুগল সাপের সঙ্গমের বীজ।

দুধ-কলা দিয়ে পোষা দু:স্বপ্নের সাপ
চোখ ফুটলেই প্রতিনিয়ত দংশন করে।
তবু অন্ধকারের দু:স্বপ্নের সান্ত্বনা ভেবে
তাকে আগলে রাখি বিশ্বাসের চুড়ায়।



বুধবার, ১৬ মে, ২০১২

প্রসঙ্গ : রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান

(বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে)
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ :
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুসলমানদের জন্য কী করেছেন ? এমন প্রশ্ন বহুকাল ধরেই বাঙলা সাহিত্যের মুসলমান পাঠক ও রবীন্দ্র সংগীতের মুসলমান শ্রোতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে। এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর আছে কি না আমার জানা নেই। অভিযোগগুলো এ রকম : রবীন্দ্র সাহিত্য তথা উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, নাটক কিংবা গানে কোথাও কোন মুসলমান চরিত্রকে বড় করে দেখান হয়নি। কেন দেখান হয়নি? এ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। সাহিত্যিক আনোয়ারুল কাদীর বলেছিলেন : আকাশের সূর্য মুসলমানদের জন্য বিশেষ কি করেছে?
এ প্রসঙ্গে কাজী আব্দুল ওদুদ তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান-সমাজ’ প্রবন্ধে বলেছেন,‘‘ কবি আকাশের সুর্যের মতোই একজন সহজ মানব বন্ধু। অবশ্য যেহেতু কবি একজন মানুষ, এক বিশেষ পরিবেষ্টনের সৃষ্টি, সেজন্যে অত্যন্ত কাছ থেকে খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে আলোকের উৎস সূর্যেও ধরা পড়ে কারো দাগ। যে গোলাপ সৌষ্ঠব আর গন্ধে অতুলনীয় তার স্পর্শ লোভাতুর লাভ করে হাতে কাঁটার আঘাত। কিন্তু কালোদাগ সত্ত্বেও সূর্য সূর্যই। কাঁটা সত্ত্বেও গোলাপ গোলাপই। এক বিশেষ পরিবেষ্টনে জন্ম সত্ত্বেও কবি চিরন্তন মানব-তাঁর পরিবেষ্টনের সমস্ত সীমারেখা অবলীলাক্রমের অতিক্রম করে তাঁতে উৎসারিত হয় মানুষের চিরন্তন সুখ, চিরন্তন দু:খ, চিরন্তন প্রেম, চিরন্তন অভয়। যেহেতু রবীন্দ্রনাথ কবি, এবং যেহেতু মুসলমান মানুষ, সে জন্যে মুসলমান তাঁর আজকার বিশেষ ঐতিহাসিক বিবর্তণের প্রভাবে বুঝুক আর নাই বুঝুক, রবীন্দ্রনাথ বাস্তবিকই তার পরম বন্ধু ব্যতীত আর কিছু নন।”
একথা সত্য যে, এমন প্রশ্নের উদ্ভব হওয়া মুলত অবান্তর নয়। কিন্তু রবীন্দ্রানুরাগীরা এমন প্রশ্ন শুনেই চটে যান। কেই কেউ আবার বলেন : রবীন্দ্রনাথ হিন্দুও না, মুসলমানও না- তিনি একজন মানুষ। রবীন্দ্রনাথ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতি তার প্রকৃতিগত বিরূপভাব না থাকলেও এমনকি অল্প-বিস্তর অনুরাগ ছিল। তবুও তিনি সে সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে প্রায় মৌন ছিলেন। তাঁর সুদীর্ঘ সাহিত্যিক জীবনে মুসলমান প্রসঙ্গ খুব বেশি এড়িয়ে গেছেন। তবে হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় যখন বাংলাদেশ ফাটো ফাটো, টান টান উত্তেজনা তখন রবীন্দ্রনাথ তার ‘কালান্তর’ প্রবন্ধে ভারতবর্ষের ইতিহাসে পালাবদলের প্রশ্নে মুসলমান বিজয়ের কথা উল্লেখ করেছেন।
মূলত হিন্দু-মুসলমানের সংঘাত নিয়ে রবীন্দ্রনাথ গভীরভাবে চিন্তাও করেছেন। তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিয়ে উবয়ের সমস্যা সমাদানের কারণগুলো ঘেঁটে দেখেছেন এবং দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর মতে সমস্যা সমাধানে মনের পরিবর্তন, সত্যের সাধনা ও মনুষ্যত্বের বিকাশের প্রয়োজন। সমালোচকরা বলেছেন, শিল্পী ছবি আঁকেন তাঁর বিশেষ পরিচিত জনের মুখ অবলম্বন করে। তাঁর প্রতিদিনের দেখা মুখগুলোও তুলিতে ধরা পড়ে না। অথচ ক্ষণিকের দেখা এক-আধ পরিচিত মুখ তাঁর মনে গেঁথে থাকে দীর্ঘদিন ও দীর্ঘরাত। শিল্পীর এমন পক্ষপাতের আসল রহস্য আমাদের বোধগম্য নয়।
সে কথা না হয় বাদই দিলাম। রবীন্দ্রনাথতো কেবল একজন শিল্পী নন, একজন জীবন সমালোচকও বটে। সে হিসাবে তাঁর দেশবাসী মুসলমান সম্পর্কে তাঁর মৌনভাব কি অদ্ভুত নয়? এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, মুসলমান সম্পর্কে তিনি যে কম আলোচনা করেছেন তা নয়, তিনি যে আলোচনা করেছেন তা গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমান ধর্মের প্রতি অথবা অন্য ধর্মের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ব্যক্ত হয়েছে তাঁর ‘সতী’ নাটিকায়। ভারতের মুসলমানদের দোষ ও গুণ দুই-ই-তাঁর আলোচ্য বিষয় ছিল।
‘রবীন্দ্রনাথ মুসলমানদের নিয়ে কোন গান রচনা করেছেন কি না?’ - এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর কেমন হবে ঠিক বলা যাচ্ছে না। আর শ্রোতাদের নিবৃত্তও করা যাবে কি না আমাদের জানা নেই। বাস্তবিক অর্থে এ ধরণের প্রশ্ন অবান্তর না হলেও অট্টহাসির জন্ম দেয়। এমন প্রশ্ন থেকে সৃষ্টি হয় এক শ্রেণির দু:খী মুসলমানের। সাহিত্য থাকুক সাহিত্যের মতোই। হিন্দু কি মুসলমান- কে কার জন্য কি করেছে? এমন প্রসঙ্গ টেনে মনের মাঝে দীনতা সৃষ্টির প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। রবীন্দ্রনাথ আমাদের , রবীন্দ্রনাথ সত্য ও সুন্দরের। মানুষ সত্য ও সুন্দরের পূজারী, সুতরাং রবীন্দ্রনাথ মানুষের।

কালকিনি প্রবাহ

- আকন মোশাররফ হোসেন :
(পূর্ব প্রকাশের পর)
কালকিনি উপজেলার আদিবাসী কারা, কোথা থেকে তাদের আগমন ঘটেছিল আর কোথায় চলে গেছেন তা- বলা কঠিন। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, কালকিনি উপজেলার মুসলমান বনেদী পরিবারগুলো বহিরাগত। সৈয়দ, খন্দকার, চৌধুরী, হাওলাদার, ভূইয়া, তালুকদার এদের অন্তর্ভূক্ত। অন্যদিকে ব্রাক্ষ্মণ সম্প্রদায়ের বসবাস এখানে অনেক আগে থেকে তাছাড়া কায়স্থ, সাহা, মালো ইত্যাদি হিন্দু সম্প্রদায় তখনও ছিল এখনও আছে। তবে নিু বর্ণের হিন্দু নম সম্প্রদায়ের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি ছিল। বাঁশগাড়ী, আলীনগর, কাজী বাকাই, মাইজপাড়া, ঘোষেরহাট, নবগ্রাম, শশিকর এলাকার জলাভূমিতে ও বিল অঞ্চলের এরা প্রধান অধিবাসী। হিন্দু জমিদার ও উচ্চ বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের অত্যাচার ও শোষণের কারণে এরা নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছিল। ভৌগোলিক  দৃষ্টিতে দেখা যায় নদী প্রবাহিত এলাকা আলীনগর, এনায়েতনগর, বাঁশগাড়ী, শিকারমঙ্গল, চর দৌলত খান, সাহেবরামপুর, কয়ারিয়া ও রমজানপুর ইউনিয়নের নদীর তীর বা চরাঞ্চলের মুসলমানদের আবাসন। যদিও নদীর ভাঙ্গা-গড়ার খেলা কৌতুহলের বিষয়। এ এলাকার নম শুদ্র সম্প্রদায়ের নারীরা এবং গরীব মুসলমান নারীদের অনেককে পুরুষের মতো ধুমপান করতে দেখা গিয়েছে আদীকাল থেকেই।
প্রাচীন অনেক নিদর্শন কালকিনি থানাতে রয়েছে। এই উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের আমড়াতলা ও খাতিয়াল গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে আড়াই হাজার একর জমিতে সেনাপতির দিঘি রয়েছে। শীত মৌসুমে নানা প্রকার হাজার হাজার অতিথি পাখি ঐ দিঘিতে শীত অবকাশ যাপন করে। জনশ্র“তিতে জানা যায়, মুগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে সুবাদার ইসলাম খার নেতৃত্বে বিশাল একদল সৈন্য ঢাকা যাওয়ার পথে এখানে কিছুদিন অতিবাহিত করেন। পানীয় জলের অভাব মেটাতে সেনাবাহিনী দ্বারা এই দিঘি খনন করা হয়। এ কারণেই এই দিঘির নামকরণ করা হয় সেনাপতির দিঘি।
কালকিনি উপজেলায় ইসলাম ধর্মের আগমন ও বিকাশের পূর্বে হিন্দু ধর্ম ছিল প্রধান। এখানকার প্রাচীন জনগোষ্ঠী ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। দশম শতাব্দীতে এ এলাকায় কিছু কিছু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর বসবাসের প্রাচীন ইতিহাস পাওয়া যায়। ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার লক্ষে এ এলাকায় পীর-দরবেশ- আউলিয়ার আগমন ঘটেছে। সেই সুবাদে এই এলাকার একটি মৌজার নাম আউলিয়ার চর।
হযরত পীরজাদা শাহ সুফি এনায়েতপুরী (র) সাহেবের বর্জার (ইঞ্জিনবিহীন বড় নৌকা) নোঙর করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন যেকারনে এই মৌজার নাম এনায়েতনগর হয়েছে। এবং সেই থেকে এই মৌজা ও ইউনিয়নের নাম এনায়েতনগর।
(চলবে)   

মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১২

বর্ষা আসে বিরহ নিয়ে

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
আমার জীবনে বর্ষা আসে বিরহ নিয়ে। তাই আমার কাছে মনে হয় বর্ষা মানে ক্ষণে ক্ষণে বিরহের গান। বলা নেই - কওয়া নেই অমনি শুরু হয়ে গেল অশ্র“র বর্ষণ। কখনো কখনো মনে হয় চোখ ভরা অভিমান নিয়ে ধেয়ে আসা কিশোরীর পায়ের নূপুরের রিনি ঝিনি আওয়াজ।
এখনো বর্ষা আমাকে কাঁদায়। তাই আমার কাছে বর্ষা মানে গর্জে ওঠা নদী। দু’কুল ছাপিয়ে তলিয়ে দেওয়া গ্রামের পর গ্রাম। সুখ-দু:খে একাকার হয়ে ভেসে বেড়ানো পাল তোলা নৌকা। বিরহী সুর জেগে ওঠা মাঝির ভাটিয়ালি গান। কলা গাছের ভেলায় ভেসে যাওয়া ক্ষুদ্র জীবন। ব্যাঙের একটানা ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাকে দূর থেকে ভেসে আসা রাগ-রাগিণী। পানকৌড়ির ডুবসাঁতারের খেলার মতো প্রিয়তমার লুকোচুরি।
তবুও অসহায় আমি নি:সঙ্গ হয়ে আজ চার দেয়ালের বন্দী জীবন থেকে বের হয়ে বারবার ফিরে যেতে চাই বর্ষাস্নাত গাঁয়ের বুকে। যান্ত্রিক সভ্যতার নাগপাশ ছিড়ে দু’হাতের আজলা ভরে কুড়িয়ে নিতে চাই প্রকৃতির নির্মল বাতাস। ইচ্ছে হয় কাদা জলে হোচট খেতে, ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে। সাঁঝ পোহানো কোন রাতে জোছনা বিলাসের আয়োজন করতে। গভীর রাতে বিলের জলে নৌকা ছেড়ে দিয়ে সুখের বাঁশরী বাজাতে।
সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখি বৃষ্টির তোড়ে থরথর কওে কাঁপে জানালার শার্শি। ঝড়ো হাওয়ার রাতে বিরহের গান গেয়ে যায় বাতাস। এক পশলা বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেয় শরীর। কী এক স্বপ্নীল শিহরণ জেগে ওঠে মনে। মনে পড়ে এক বর্ষারাতে হাতে হাত রেখে বলেছিল সোনাবউ- ‘ আজ জোছনার আলোয় বৃষ্টির জলে ভিজবো দু’জন’।
এখনো আগের মতোই বর্ষা আসে ; আবার চলেও যায়। শুধু আমার সোনাবউ অন্য কোথাও। বৃষ্টির শব্দে তার কান্নার ধ্বনি ভেসে আসে। দু'চোখের তারায় ভেসে ওঠে বৃষ্টিভেজা একটি গ্রাম। মাঝখানে আমি আর সোনাবউ।
দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়াই খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা তার চোখের অশ্র“ হয়ে জমা হয় আমার অসহায় হাতের তারায়.....।

কিশোর কবি সুকান্ত স্মরণে

মারজিয়া নিশি :
“বন্ধু, আজকে বিদায়! দেখেছ উঠল যে হাওয়া ঝড়ো, ঠিকানা রইল, এবার মুক্ত স্বদেশেই দেখা করো ॥”-এ আহ্বান জানিয়ে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য ১৯৪৭ সালের ১৩ই মে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য ১৯২৬ সালরে ১৬ই আগষ্ট কোলকাতার ৪২ মহীম হালদার স্ট্রিটের মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নবারুন ভট্টাচার্য্য। মাতার নাম সুনীতি দেবী। কবির পুর্ব পুরুষরা এদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বসবাস করতেন। কবির জন্মের পূর্বেই তাঁর পূর্ব পূরুষরা এ দেশ থেকে ভারতে চলে যান। দীর্ঘদিন ধরে কবির পৈতৃক ভিটায় কোন প্রকার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তার জন্ম ও মৃর্ত্যুবার্ষিকী পালিত হতো। গত বছর থেকে সুকান্ত স্মৃতি সংসদ, উদীচী ও সুকান্ত সেবা সংঘের পক্ষ থেকে ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে।
কবির পূর্ব পুরুষরা এদেশ থেকে চলে যাবার পর তার পৈত্রিক ভিটা ভূমিদস্যুরা দখল করে নেয়। দীর্ঘদিন দখল থাকার পর ২০০৫ সালে কবির পৈত্রিক ভিটাটি দখলমুক্ত করা হয়। কবির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তার পৈত্রিক ভিটায় সরকারিভাবে একটি অডিটোরিয়াম এবং একটি লাইব্রেরী গড়ে তোলা হয়।
বাংলা বিশ দশকের সূচনাতে ঔপনিবেশিক বৃিটশ শাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ শুরু হয়। এই গণজাগরণের উত্তাপ ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে থেকে কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন সুকান্ত ভট্টাচার্য্য। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, হিন্দু-মুসলমান বিরোধ, রুশ বিপ্লব সুকান্তের চেতনাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। ঘুম নেই, ছাড়পত্র, পূর্বাভাস কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।


বন্ধু কী খবর বল

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে অগণিত বন্ধু আমার। তাদের ছবি দেখি। অনলাইনে কথাও হয়। হাই- হ্যালো ! কেমন আছ? কি করছ...? ইত্যাদি। কেবল জানার জন্যই জানা। অন্তর থেকে কোন টান অনুভূত হয়না। অনেকটা যন্ত্রমানবের মতো। সভ্যতার উৎকর্ষতার সাথে সাথে আজকাল আমিও হয়ে উঠেছি যান্ত্রিক।
বন্ধুদের প্রসঙ্গ এলে কাজী নজরুল ইসলামের একটা চিঠির কয়েকটি কথা মনে পড়ে-‘ বন্ধু আমি পেয়েছি- যার সংখ্যা আমি নিজেই করতে পারব না। এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, গানের বন্ধু। ফুলের সওদার খরিদ্দার এরা। এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়েছে, প্রিয় হয়ে ওঠেনি কেউ।’
যান্ত্রিক বন্ধুদের কথা বলছিলাম। যার সংখ্যা অগণিত। বন্ধু হয়েছে ঠিকই ; কিন্তু প্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি কেউ। ফেসবুকের ফাইন্ড ফ্রেন্ড্সে গিয়ে আজও হারিয়ে যাওয়া পুরনো দিনের বন্ধুদের খুঁজি। কোন কোন নিস্তব্ধ রাতে যাদেরকে প্রিয়ার মতো জড়িয়ে ধরে শুয়েছিলাম। মনের অব্যক্ত কথাগুলো বলতে বলতে রাত ভোর করে দিয়েছি।
যান্ত্রিক বন্ধুদের সব কথা বলা হয় না। সব ব্যথার অংশীদারও করা হয় না। তাই সত্যিকারের বন্ধুদের আজও খুঁজি শেষ বিকেলের কোন চায়ের আড্ডায়। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্য অস্ত যাবার দৃশ্য দেখতে দেখতে। খুঁজি ব্যস্ততম জনপদে।
আজ থেকে আট বছর আগের কথা। ঢাকার শাহজাহান পুরে থাকতে ভালোবেসে ফেলি খন্দকার মাহমুদুল হক মিলনকে। দু’জনার মনের অনেক কথা ভাগাভাগি করেছি আমরা। জীবনের ব্যর্থতা-হতাশার গল্প বলে কাটিয়ে দিয়েছি রাত। একসাথে অনেক ঘুরেছি। শাহজাহান পুর থেকে হাটতে হাটতে চলে গেছি টি এস সি। শহীদ দিবসে গিয়েছি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। কত স্মৃতি আজ মনে পড়ে। কিন্তু সেই প্রিয় মানুষটি আজ কোথায় জানি না। তার বাড়ি ছিল রাজশাহী। তখন আমার ফোন ছিলনা। তবুও তার একটা নম্বর আমার ডায়রিতে লিখে রেখেছিলাম। কিন্তু সে নম্বরও এখন বন্ধ। তার বাসার ঠিকানাও ছিল। চিঠি দিয়েছি- তার কোন উত্তর পাইনি। আজো মনে পড়ে তাকে। এখন ফোনে- ফেইস বুকে কিংবা কর্মস্থলে এতো বন্ধু আমার। অথচ আজো তার শূন্যতা আমাকে গ্রাস করে। 
সুমনের একটা গানের কথা ঘুরে-ফিরে মনে আসে-`হঠাৎ রাস্তায় আপিস অঞ্চলে, হারিয়ে যাওয়া মুখ চমকে দিয়ে বলে - বন্ধু কী খবর বল? কতদিন দেখা হয়না।’ এমন একটা মুহূর্তের জন্য আমি আজও প্রতীক্ষায় থাকি। গলির মোড়ে কিংবা পার্কে হঠাৎ কেউ পিঠ চাপড়ে চমকে দিক। তাকিয়ে দেখবো শৈশবের কোন বন্ধু সহাস্যবদনে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে বুকে টেনে নেওয়ার জন্য। কেবল ঘুরে-ফিরে দু:সময়ের বন্ধুদের কথাই মনে পড়ে। কারণ দু:সময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। তাই অসংখ্য বন্ধুর ভিড়ে আজও মনে পড়ে পুরনো দিনের সেই চেনা মুখগুলো। যে মুখ থেকে একদিন উচ্চারিত হবেÑ বন্ধু কী খবর বল...?

সোমবার, ১৪ মে, ২০১২

‘দহন’ সম্পাদকের সুনীল সাহিত্য পুরস্কার লাভ


মেহেদী হাসান :
`দহন’র ( সাহিত্যপত্র) সম্পাদক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ ছোটগল্পের জন্য ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার-২০১১’ লাভ করায় আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। আমরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। এর আগে তিনি ২০০৬ ও ২০১০ সালেও উক্ত পুরস্কার লাভ করেন। সুনীল সাহিত্য পুরস্কার ট্রাস্ট, মাদারীপুর এ পুরস্কারের প্রবর্তণ করেন।


প্রেম নয় অমৃত

আদনীন ইভা সুমি

তিমিরাচ্ছন্ন রাতের বুক থেকে তুলে আনো স্নিগ্ধ প্রভাত,
বিকশিত প্রতিভায় যেন ফুটে ওঠে পুষ্প পারিজাত।
দেখতে চাই তোমার লেখনীর তেজদীপ্ত রশ্মি,
সেখান থেকে শুষে নেব জ্ঞানের অমৃত সুধা।
পুষ্পের মধুচোষা মধুকর নয়- জ্ঞান সাধকের মতো।

আমি কৃষ্ণ হয়েছি তোমার এক টুকরো কাব্য অমৃতের আশায়।
প্রতীক্ষার বিষাক্ত দাওয়ায় বসে আছি, প্রয়োজন নেই,
কোন প্রয়োজনের জন্য ছুটবো না কৃষ্ণ হয়ে রাধার পিছু।
কারণ দু’জনেই আজ ভিন্ন পথের পথিক।

উপমহাদেশের প্রথম মহিলা চিকিৎসক জোহরা বেগম কাজী

আফিয়া মুন :
৭ নভেম্বর উপমহাদেশের প্রথম মহিলা চিকিৎসক জোহরা বেগম কাজীর মৃত্যুবার্ষিকী। তার স্মৃতির উদ্দ্যেশ্যে আমাদের এই শ্রদ্ধাঞ্জলি । জীবদ্দশায় যিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন নিঃস্বার্থভাবে। অধ্যাপক ডাঃ জোহরা বেগম কাজী স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যায় নতুন এক ইতিহাস তৈরি করেছেন। তিনিই প্রথম ধাত্রীবিদ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করে নারী সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসেন। নারী সমাজের উন্নত চিকিৎসার সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। কুসংস্কার ও ধর্মীয় বাধা অতিক্রম করে নারী সমাজের মুক্তিদাতা হিসাবে আবির্ভূত হন।
জন্মঃ
এই মহিয়সী নারী ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের মধ্যপ্রদেশের রাজনানগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর পৈত্রিক নিবাস মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। পিতার নাম কাজী আব্দুস সাত্তার এবং মাতার নাম আঞ্জুমান নেছা।
শিক্ষা জীবনঃ
রাজানানগাঁওয়ে রাণী সূর্যমুখী পুত্রিমানেতে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু।  প্রাথমিক শিক্ষা শেষে একে একে তিনি কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক ও আইএসসি পাস করেন। পরে ১৯২৯ সালে দিল্লীর লেডি হাডিং গার্লস মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এটি উপমহাদেশের প্রথম মহিলা মেডিকেল কলেজ। আর এ কলেজে তিনিই প্রথম মুসলিম বাঙালি ছাত্রী। এখান থেকে ১৯৩৫ সালে এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। তখন তাকে সম্মানজনক ভাইসরয় ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
কর্মজীবনঃ
মহাত্মা গান্ধীর পরিবারের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তখন নাগপুরে সেবাগ্রামে একটি গান্ধী আশ্রম ছিল। তিনি সেখানে অবৈতনিক চিকিৎসা সেবা দিতেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশবিভাগের পর তিনি বড়ভাই কাজী আশরাফ মাহমুদ ও ছোটবোন শিরিন কাজীর সাথে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে গাইনি বিভাগের প্রধান হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের অনারারি কর্ণেল পদে এবং হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে কনসালটেন্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
পদকঃ
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘তখমা-ই পাকিস্তান’ খেতাবে ভূষিত করেন। ২০০২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘রোকেয়া পদক’ প্রদান করে। তিনি ‘ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল অব ঢাকা’ নামে পরিচিত ছিলেন।
শেষ কথাঃ
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩২ বছর বয়সে তৎকালীন আইনজীবি ও এমপি রাজু উদ্দিন ভূইয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আজীবন মানব সেবায় নিয়োজিত জোহরা বেগম কাজী ২০০৭ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিবছর তাঁর জন্ম ও মৃত্যুদিনে কালকিনিসহ সারাদেশের মানুষ তাঁর স্মরণে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করেন।

সম্পাদনা: সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

নানামতঃ কালকিনির গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষিত হয়নি

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ :
১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ফাসিয়াতলা বাজারের হাটের দিন । সরগরম প্রায় দোকানপাট। সন্ধ্যার ঠিক আগে হঠ্যাৎ দু'জন অপরিচিত মানুষ ঢোল পিটিয়ে ঘোষনা করলো মুক্তিবাহিনী আসছে মিটিং করবে আপনারা কেউ বাজার ছেড়ে যাবেন না। মিনিট ১৫ না পেরোতেই হাটটি ঘেরাও করে রাজাকার, আল-বদর বাহিনী। ১০ মিনিট পরই নদীতে গানবোটে চড়ে আসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। ততক্ষণে রাজাকাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিকামী মানুষের ওপর।  একদিকে হানাদারদের গুলি অপরদিকে স্থানীয় রাজাকার, আল-বদরদের নির্মম হানায় হত্যা করা হয় অন্তত দেড় শত মুক্তিকামী মানুষকে। অনেককে ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে।  লুটপাট শেষে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় হাটের দোকানপাট। যাওয়ার সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ১৮ জনকে। এরমধ্যে ১০ জন আজও ফিরে আসেনি। এরপর কেটে গেছে ৪০ টি বছর। তবে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। ফলে নতুন প্রজন্ম মহান এই স্মৃতিকে ভুলে যাচ্ছে।
স্বাধীনতার পর ২০০৮ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা গেট সংলগ্ন সুরভী সিনেমা হলের পাশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন। কিন্তু তারপর কেটে গেছে তিনুটি বছর। তবুও কাজ শুরু হয়নি স্মৃতিসৌধের। ঠিক তেমনিভাবে অবজ্ঞা-অবহেলায় পড়ে আছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়। অর্থাভাবে সংস্কার বা পুণঃনির্মাণ কোনটাই সম্ভব হচ্ছেনা।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এসকান্দার আলী বলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছে চল্লিশ বছর আগে। অথচ দেশের জন্য যারা জীবন দিল, পঙ্গু হল, সর্বস্ব হারালো তাদের স্মৃতি সংরক্ষণের কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিন বছর আগে স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও কাজ শুরু হয়নি। ফাসিয়াতলার গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়টিও অর্থাভাবে অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে। এরকম হলে আগামী প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস ভুলে যাবে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা আকন মোশাররফ হোসেনের উদ্যোগে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের খাসেরহাট বন্দরে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ২০১০ সালের ১৮ ডিসেম্বর উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের খাসের হাট বন্দরে মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপিত হয়। ২০১১ সালের ৯ এপ্রিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ ও মিউজিয়ামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। মিউজিয়ামের সংস্কার কাজ চললেও স্মৃতিসৌধের কাজ শুরু হয়নি। অর্থাভাবে ঢিমেতালে চলছে মিউজিয়ামের কাজ। কাজ শেষ না হওয়ায় দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এখানে সংরক্ষিত আছে শহীদ বীর বিক্রম নুরুল ইসলাম শিকদারসহ ২৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছবি, মুজিব নগর সরকারের গার্ড অব অনারের ছবি, নিয়াজীর আত্মসমর্পণের দলিল ও ছবি, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত হেলমেট ও বিভিন্ন জিনিসপত্র।
মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা আকন মোশাররফ হোসেন জানান, দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি। শহীদ বীর বিক্রম নুরুল ইসলাম এ এলাকার সন্তান। তার জন্য কিছু করতে পারিনি। কেবল একটি স্মৃতিসৌধ ও মিউজিয়াম করার উদ্যোগ নিয়েছি। মিউজিয়ামের সংস্কার কাজ এখনো শেষ হয়নি। এখনো স্মৃতিসৌধের কাজ শুরু করতে পারিনি। অর্থাভাবে করতে পারছিনা। মন্ত্রী মহোদয় আশ্বাস দিয়েছিলেন। সরকারী বা বেসরকারী সাহায্য পেলেই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের বিনিময়ে শত্র“মুক্ত হয়েছে এদেশ। স্বাধীনতার জন্য বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। ইজ্জত হারিয়েছে মা-বোন। পঙ্গু হয়েছে অগণিত মানুষ। অথচ স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ফাসিয়াতলা গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষিত হয়নি। এমনকি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে গড়ে ওঠেনি কোন স্মৃতিস্তম্ভ। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়টিও সংস্কারের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবীর মুখে উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের খাসের হাট বন্দরে মুক্তিযোদ্ধা মিউজিয়াম স্থাপিত হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে প্রস্তাবিত স্মৃতিসৌধের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি এখন আপামর জনসাধারণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আর কালক্ষেপণ না করে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণে কার্যকরি পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে কালকিনিবাসী।

দর্পণ থিয়েটার : একদিন জ্বলে উঠেছিল

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ :
২০০৪- ২০০৫ সালের কথা। কালকিনিতে দর্পণ থিয়েটারের নাম সবার মুখে মুখে। মাত্র তিনটি নাটক মঞ্চস্থ করতে পেরেছিল। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। মৌলবাদ, নোংড়া রাজনীতি আর প্রশাসনের যাতাকলে নিষ্পেষিত হতে হয়েছিল তাদের।
কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের তৎকালীন প্রভাষক মুজিবুল হায়দারের উদ্যোগে সম্ভবত ২০০৩ সালে দর্পণ থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। মুজিবুল হায়দারকে আহ্বায়ক করে কালকিনি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে চলতে থাকে এর কার্যক্রম। কিছুদিন পরে কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবুল কালাম আজাদকে সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাজহারুল আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে এগিয়ে যেতে থাকে থিয়েটারের কার্যক্রম। জহিরুল আলম সিদ্দিকী ডালিম, কাজী নিয়ামুল ইসলাম ও শাহ মাহমুদ শাওনসহ এক ঝাঁক তরুণ নাট্যকর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমে সমৃদ্ধ হতে থাকে দর্পণ থিয়েটার।
আবুল কালাম আজাদের রচনা ও পরিচালনায় ‘সাধু বাবার পাঠশালা’ নাটক দিয়ে মঞ্চায়ন শুরু। এরপর আবুল কালাম আজাদের রচনা ও পরিচালনায় ‘পিশাচ’ ও হেমায়েত হোসেনের রচনায় আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় ‘ বিয়ে পাগলা বুড়া’ নাটক মঞ্চস্থ হয়।
এরপরই শুরু হতে থাকে মৌলবাদীদের নখরাঘাত। থিয়েটারটি বড় ধরণের হোচট খায়। তার সাথে যুক্ত হয় প্রশাসনের অসহযোগিতা। খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেও থমকে দাঁড়িয়েছিল দর্পণ থিয়েটার। আর এগুতে পারেনি। কালের সাক্ষী হয়ে আজীবন দাঁড়িয়ে থাকবে হয়তো।
‘প্রদীপ নিভিয়া যাইবার আগে একবার ধপ করিয়া জ্বলিয়া ওঠা’র মতোই দর্পণ থিয়েটার নিভে যাওয়ার আগে জ্বলে উঠেছিল। তাইতো একবুক ব্যথা নিয়ে থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আলম জানান,‘ আমরা ভালোভাবেই শুরু করেছিলাম। মাত্র তিনটা শো'তেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলাম। নাট্যকর্মীর সংখ্যা বাড়তে থাকলো। কিন্তু কোন এক স্বার্থান্বেষী মহল পিছু নিল আমাদের। মৌলবাদীরা ক্ষেপে উঠল। তকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শোয়েবুল আলম বিমাতাসুলভ আচরণ করলেন। আমরা হেরে গেলাম। আমাদের পথচলা থেমে গেল। আর এক পা ও এগুতে পারিনি।’

ভালোবাসার প্রতিস্থাপন

- মাইনুল ইসলাম

শুনেছ, সবাই কি বলে, কি বলে?
তুমি নাকি হারিয়ে গেছ গহীন অরণ্যে
আমার জীবন থেকে।
তারা জানে না,
তুমি মিশে আছো আমার শিরা- উপশিরায়,
রক্তের হিমোগ্লোবিনে
আমার কলা-টিস্যুতেও যে শুধুই তুমি।
তা কি তারা বুঝবে বল, তুমিই বল?
তাদের কথা শুনে আমি নিশ্চুপ
কি কারনে থাকি?
কেন থাকবো না?
আমার শিরা-উপশিরা, কলা-টিস্যু
তাদের কথার জবাব দেয়।
তারা যখন জবাব শুনে ক্ষিপ্ত হয়
তখন হিমোগ্লোবিন ওদের ক্ষিপ্ততাকে
সুপ্ততায় পরিণত করে।

তুমি নাকি গহীন অরণ্যে নতুন সঙ্গী নিয়ে আছ।
তারা জানে না, আমি আছি তোমার শিরা-উপশিরায়,
আমারা ভালোবেসে কলা-টিস্যু স্থাপন করেছি।
তারা জানে না,
ভালোবাসার যোজন-বিয়োজন
তারা জানে না,
ভালোবাসা মানেই যোজন
তারা জানে না,
ভালোবাসার প্রতিস্থাপন।
আমাদের প্রতিস্থাপিত ভালোবাসা থাকবে আজীবন।

রবিবার, ১৩ মে, ২০১২

অধিকার চাই

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ :

প্রথম দৃশ্য :
মঞ্চের পেছনে চিৎকার চেঁচামেচি। দৌঁড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে ইভা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে। এমন সময রাজুর প্রবেশ।
রাজু : কিরে ইভা, তুই রাস্তায় দাড়ায়া কান্তাছোস ক্যান?
ইভা : বাড়ির মালিক মাইরা বাইর কইরা দিছে।
রাজু : ক্যান? কি অন্যায় করছোস?
ইভা : হাতের তোন পইরা একটা প্লেট ভাইঙ্গা গ্যাছে। আমি কী ইচ্ছা কইরা ভাঙছি?
রাজু : কস কি? তারা বুঝি তোরে খুব মারে?
ইভা : হ, ওঠতে-বইতে সব সময়ই মারে।
রাজু : কস কি? এরা কি মানুষ না? তা এহন কি করবি? কই যাবি?
ইভা : কই যামু , কি করমু কিছুই জানিনা।
রাজু : চল, তোরে আমাগো বাাড়ি নিয়া যাই। আমাগো বাড়ি তেমন কাজ-কর্ম নাই। আমার তো কোন বোন নাই। তুই খালি মার লগে থাকবি। চিন্তা করিস না, আমার লগে স্কুলে যাবি। আমার বোনের মতো থাকবি। যাবি তুই?
ইভা : কি কস, তোর বাপ-মা কি আমারে রাখবো?
রাজু: হ, রাখবো। হেদিন হুনি মায় আব্বারে কইয়- যদি একটা মাইয়া পাইতাম তয় ভালো অইতো। কাম-কাইজ করা লাগবো না। খালি আমার লগে লগে থাকলেই     অইবো।
ইভা: (একটু ভেবে) হ, আমি যামু তোর লগে। খাড়া, জামা-কাপড় কয়ডা লইয়া আহি।
রাজু : ল, আমিও তোর লগে যামু। তাগো কইয়াই তোরে নিয়া যামু। ( উভয়ের প্রস্থান)

দ্বিতীয় দৃশ্য :
কারখানায় কাজ করতে করতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে অপু। দৌঁড়ে আসে জয় ও আকাশ। তুলে বসায়। পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরায়। কপালে হাত দিয়ে-
জয় : ইসরে, জ্বরে তোর গাও দি পুইরা যাইতাছে। কামে আইছোস ক্যান?
অপু : কামে না আইলে যে সবাই না খায়া থাকবো।
আকাশ : অষুধ খাইছোস?
অপু : না, টাহা আছিল না। মালিকরে কইছিলাম, কয় এহোন টাহা পাবি না। মাস গেলে একবারে দিমু। কইলাম, জ্বর আইছে। হে কয়, ইস্ ব্যাঙের আবার সর্দি।
জয়: হ, মালিকডা কেমন জানি চামার। মজুরীর টাহাই ঠিক মত দেয় না। আবার অষুধ কেনার টাহা দিব।
আকাশ: চল, তোরে গাড়িতে উডায়া দেই, বাড়ি যা গা।
অপু : না, হ্যালে একদিনের মজুরি কাইট্যা দিব। বাড়ি যামুনা। কষ্ট অইলেও কাম করতে অইবো। ঘরে একটা চাউলও নাই।
আকাশ : তাইলে এক কাম করি। আমার ধারে ২০ টাহা আছে। ( জয়কে লক্ষ করে) জয় তোর পকেটে কয় টাহা আছে?
জয় : আমার ধারে মাত্র ১০ টাহা আছে।
আকাশ: দে, আমরা টাহা দিয়া অর লেইগ্যা অষুধ কিইনা আনি। আমরা না হয় আইজ যাওয়ার সময় হাইটা যামু।
জয়: ( টাকা বের করে) নে, পারলে অপুর লেইগ্যা একটা কলা আর একটা রুটি আনিছ।ওতো দুপুরের খাওনও আনে নাই।
আকাশ : মালিক আহনের সময় অইয়া গেছে। আমি গেলাম , তুই অরে পিছনের গোডাউনে একটু শোয়ায়া মাথায় পানি দে।
অপু : না মালিক দেখলে বকাবকি করবো।
জয় : মালিক আইতে আইতে তোর জ্বর কইমা যাইবো। চল।
অপু : তয় চল। মালিক আইলে আমারে ইশারা দিস। ( উভয়ের প্রস্থান)

তৃতীয় দৃশ্য :
সাথী রাস্তায় কাগজ, বোতল ইত্যাদি কুড়ায়। এমন সময় রাজু ও ইভার প্রবেশ।
রাজু : কিরে সাথী, তুই দি এহন আর স্কুলে যাসনা । লেহা-পড়া বন্ধ করলি ক্যান?
সাথী: মোরা গরিব মানুষ। স্কুলে যামু ক্যামনে? বাপ নাই। মার অসুখ। অষুধ কেনার টাহা নাই। কাগজ-কলম কিনমু কেমনে?
ইভা : কাগজ-বোতল টোকায়া আর কত পাওয়া যায়?
সাথী : যা পাই। ল্যাহা-পড়া কি আমাগো লেইগ্যা? তুই না মাইনষের বাড়ি কাম করছ? তোরে স্কুলে যাইতে দেয়?
ইভা : তুই জানোস না, আমি এখন রাজু গো ঘরে থাকি। তারা আমারে মাইয়ার মত জানে।ভালো জায়গায় থাকি, ভালো কাপড় পড়ি, ভালো খাই, লেহা-পড়া করায়, অসুখ-বিসুখ অইলে অসুধ কিন্যা দেয়। মনে অয় নিজের বাড়ি।
সাথী : ইসসি রে, সবাই যদি এমন অইতো? তাইলে আমাগো মত অসহায় শিশুগো কোন কষ্টই থাকতো না।
রাজু : আচ্ছা, তুই কি জানোস না, ওয়ার্ল্ড ভিশন অসহায় শিশুগো সাহায্য করে?
সাথী : না, মুই তো এর আগে হুনি নাই।
ইভা: হ, বই-খাতা থেইকা শুরু কইরা অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়।
সাথী : আমারে দিবো নি?
রাজু : দিবো না ক্যান? অবশ্যই দিবো। চল তোরে ওয়ার্ল্ড ভিশনের শিশু ফোরামের সদস্য বানায়া দেই।
ইভা: হ চল, বাড়ি যাওয়ার আগে তোরে অপিসে নিয়া যামু।
সাথী : কোন অপিসে?
রাজু : আমাগো শিশু ফোরামের অপিসে। যেইডা আমাগো ভরসা। অসহায়, অবহেলিত, অধিকার বঞ্চিত শিশুদের একমাত্র আশ্রয়।
সাথী : হ, আমারও তো মানুষ। আমরাও বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। আমরাও আমাগো অধিকার চাই।
ইভা : চল তাইলে। ( উভয়ের প্রস্থান)। পেছনে ‘আমরা করব জয়.....’ গানটি বেজে উঠবে। সবাই ফ্রিজ।

চাইছি তোমার বন্ধুতা...

অনন্ত সালু:
কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ এক বালিকা এসে সামনে দাঁড়ালো। বয়স তের কি চৌদ্দ। সাথে ওর বয়সী একটি ছেলে। মোটামুটি পরিচিত। তবে তেমন কোন ঘনিষ্টতা ছিল না আগে। মেয়েটি বলল,‘তুমি কি আমার বন্ধু হবে?’ কিছুটা অবাক হলাম। এইটুকুন মেয়ে বলে কি? তবুও বললাম,‘আচ্ছা ঠিক আছে।’ ও বলল,‘তোমাকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।’ হঠাৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কি আর করা- হাতে ছিল ছোট্ট একটা বাতাবি লেবু। ওর হাতে দিয়ে বললাম,‘ছোট্ট বন্ধুকে এই ছোট্ট লেবুর শুভেচ্ছা।’ ও তাতেই মহা খুশি। ওরা হাসতে হাসতে চলে গেল।
পরদিন ওর সাথে থাকা ছেলেটার কাছে জানলাম, আমাকে নিয়ে ওদের মধ্যে বাজি হয়েছিল। ওদের ধারণা, আমি খুব গম্ভীর প্রকৃতির লোক। কেউ যদি আমাকে বন্ধু বানাতে পারে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। মেয়েটি বাজিতে জিতে গেল।
দু’দিন পর আবার দেখা। মেয়েটার হাতে একটা জবা ফুল। অনেক আশা নিয়ে ফুলটা চাইলাম। ও বলল, ‘এটা দেওয়া যাবে না। সবার হাতে ফুল মানায় না।’ আমি অপমান ও কষ্টে একবুক অভিমান নিয়ে চলে গেলাম। তারপর অনেক দিন কোন দেখা নেই।
হঠাৎ একদিন পাশে এসে দাঁড়িয়ে চমকে দিয়ে বলল,‘বন্ধু কী খবর?’ আমি অভিমানে মুখ ফিরিয়ে বললাম,‘আমার কোন বন্ধু নেই। তাছাড়া সবার সাথে বন্ধুত্ব মানায় না।’ মেয়েটা আমার কথায় কষ্ট পেল। ওর চাঁদের মতো মুখটা মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল। কিছুক্ষণ কারো মুখে কোন কথা নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েটা নি:শব্দে চলে গেল। ওর পথপানে তাকিয়ে কেমন যেন বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। একটা অপরাধবোধ যেন গ্রাস করছে আমাকে। এ কেমন খেলায় মেতে উঠেছি আমরা।
পরদিন মেয়েটা এক বন্ধুর সাথে তার বাসায় যাচ্ছিল। পথ আগলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বললাম,‘গতকালের আচরণের জন্য আমি দু:খিত!’ ওর চোখ ভরে উঠলো জলে। কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,‘দু:খিত আমার কোন বন্ধু নেই। আমি আপনাকে চিনিনা।’ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। 
হতে পারে সে বাজি ধরেছিল। আসলেই কি আমি গম্ভীর প্রকৃতির? আমি কি কারো বন্ধু হতে পারি না। তাছাড়া বন্ধুর সাথে অভিমান হতেই পারে। তাই বলে কি একটা সম্পর্ক অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে? তবে কি আমি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছি? কী এমন রহস্য লুকিয়েছিল ঐ ফুলে? ফুল দিতে না পারুক, তাই বলে কি কাঁটা দিয়ে তার প্রতিদান দিবে? আর কত বড় হবে অনুতপ্তের পাহাড়? এর শেষ কোথায়?
এক বছর গত হতে চলল। আর কোন কথা হয়নি সেই বালিকা বন্ধুর সাথে। হয়তো সে এখন বালিকা থেকে কিশোরী। একদিন কিশোরী থেকে যুবতী হবে। শেষে যুবতী থেকে বৃদ্ধা। তবুও তাকে বলবো, চাইছি তোমার বন্ধুতা...।

কালকিনি শিল্পকলা একাডেমি চলছে পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর মতো

- সালাহ উদ্দিন মাহমুদ :

মানুষ স্বভাবতই বিনোদন প্রিয়। শত ব্যস্ততার মাঝেও তারা একটু বিনোদন খোঁজে। দুঃখের সাগরে ডুব দিয়েও সুখের মনি-মুক্তা আহরণ করতে চায়। এটা মানুষের চিরন্তন ধারা। আপামর মানুষের বিনোদন আকাঙ্খা নিবারণ করতে একদল মানুষ ‘নিজের খেয়ে বনের মেষ তাড়ানো’র মতো বিনোদন দিতে দিনরাত খেটে মরে। স্বার্থকতা এইÑ মনের ক্ষুধা মেটে।
মানুষের ক্ষুধা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। এক. পেটের ক্ষুধা দুই. দেহের ক্ষুধা তিন. মনের ক্ষুধা। পেটের ক্ষুধার জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম, দেহের ক্ষুধার জন্য প্রয়োজন সঙ্গম আর মনের ক্ষুধার জন্য প্রয়োজন বিনোদন।
বিনোদনের জন্যই গড়ে তুলতে হয় শিল্পকলা। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডই আবহমান বাঙলার বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। এই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে প্রস্ফুটিত করতে তৎকালীন কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ খালেকুজ্জামানসহ অনেকেই। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠল একটি প্রতিষ্ঠান।
যখন স্থানাভাব দেখা দিল- সর্বসম্মতিক্রমে সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের লাইব্রেরি ভবনের মিলায়তন হলো এর অস্থায়ী কার্যালয়। সেখানে থাকতে হলো না বেশি দিন। স্থানান্তর করা হলো উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ৫ টি বিভাগ নিয়ে চলতে থাকে এর কার্যক্রম।
দেখতে দেখতে দাতা সদস্য ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, কালকিনি এডিপি’র আর্থিক সহায়তায় উপজেলার কাঁঠাল তলায় তোলা হলো নতুন ভবন। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিনের তৎপরতায় ভাল একটি অবস্থানে চলে এলো কালকিনি শিল্পকলা একাডেমি ।
কিন্তু ‘অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’ হওয়ার মতো হঠাৎ করেই স্থবির হয়ে পড়লো একাডেমির কার্যক্রম। পরিচালনা পরিষদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, অর্থনৈতিক সংকটসহ নানাবিধ কারনে দিনদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর মত চলছে প্রতিষ্ঠানটি। হতাশ হয়ে পড়লো বিনোদন প্রিয় মানুষগুলো।
একাডেমির বর্তমান অবস্থা বড়ই নাজুক। নৃত্য, সংগীত, চিত্রকলা, আবৃত্তি ও নাট্যকলা বিভাগ থাকলেও নৃত্য, সংগীত, চিত্রকলা চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। আবৃত্তি ও নাট্যকলা রয়েছে নিষ্ক্রিয়। যে তিনটি বিভাগ চালু আছে তাতে আবার দক্ষ প্রশিক্ষক না থাকায় আগ্রহ হারাতে বসেছে  শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে স্বজনপ্রীতির অভিযোগেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অনেকে। একাডেমির বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫০ জনের মতো। সবাই শিশু; যেন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশ নিষেধ। অনেকটা শিশু একাডেমির মতো। মাঝে মাঝে বিভ্রম হয় যে, এটা কি শিল্পকলা একাডেমি না শিশু একাডমি। সে যাই হোক, এখানে প্রশিক্ষক রয়েছেন তিন জন। সংগীতে সীমা সাহা ও মিলন বড়াল আর চিত্রকলায় আনোয়ার হোসেন। এদের সম্মানী ভাতা কম হওয়ায় কাজের প্রতি দরদও কম। এখানে কেয়ারটেকার ও প্রশিক্ষকের ভাতা সমান বলে অনেকের আত্মমর্যাদায় আঘাত হানে। এছাড়া প্রশিক্ষকদের চার - পাঁচ মাসের ভাতাও বকেয়া রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তারা।
এখন কথা হচ্ছে- সবকিছুর মূলে অর্থনৈতিক দৈন্যদশা। সাদামাঠাভাবে ‘ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে’ বলে চালাতে  হচ্ছে অনুষ্ঠান। দিনদিন শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ হারাতে বসেছে সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মানুষ বিনোদনবিমুখ হয়ে পড়বে। আস্থা হারাবে শিল্প- সংস্কৃতির ওপর। এখনই সময় ঘুরে দাঁড়াবার। হারিয়ে যাওয়া যৌবন ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন মানসিক শক্তি। সঠিক পরিচর্যাই দূর করতে পারে পক্ষাঘাত সমস্যা।
একটু আন্তরিকতা, উদার মানসিকতা ও পরিষ‹ার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে কালকিনি শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান চেহারা। মুখ ফেড়ানো মানুগুলোকে টেনে আনতে পারে বটতলা, হাটখোলা ও নবান্ন উৎসবে কিংবা বর্ষবরণে। ‘এসো মিলি সৃষ্টির মোহনায়, গড়ে তুলি সুন্দর আগামী’-এই হোক আমাদের দীপ্ত শপথ।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ,
লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী

অন্ধকার

- বিমূর্ত প্রত্যয়

আমি কোথাও কোন আলো দেখিনি-
দেখেছি-
দুর্গন্ধময় ড্রেনে জারজ শিশুর কান্না।
দেখেছি -
মানুষ রূপী নরপিশাচের শিকারী
দুর্বল নারীর অসহায়ত্ব।
দেখেছি -
রাস্তার পাশে বস্ত্রহীন এক পাগলীকে।
দেখেছি -
স্বার্থান্বেষী সমাজের অবিচার।
দেখেছি -
নিঃস্ব জীবনের দিশেহারা চিত্র।
দেখিনি -
কোথাও কোন মনুষ্যত্বের আলো।
অন্ধকার....অন্ধকার...অন্ধকার দেখেছি।

শনিবার, ১২ মে, ২০১২

বৃষ্টির সাথে সন্ধি

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি ঝরে
টিনের চালে ঐ,
মেঘ ডাকে গারুম-গুরুম
ডাঙায় ওঠে কৈ।
   
খাল-বিল জলে থৈ থৈ
নদী ডাকে বান,
তাই দেখে খোকা-খুকুর
নেচে ওঠে প্রাণ।

রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি ঝরে
বর্ষা এলো ঐ,
বিলে ফোঁটে শাপলা-শালুক
খোকা-খুকু কই?

খোকা-খুকু বদ্ধ ঘরে
করছে বসে ফন্দি,
বাবা-মা আড়াল হলে
হয়ে যাবে সন্ধি।

কালকিনি প্রবাহ

- আকন মোশাররফ হোসেন
(পূর্ব প্রকাশের পর)
বিলুপ্ত হয়ে গেছে এখানকার খরস্রোতা নদী-নালা। টেংরা নদী, রাজমনী নদী ও গজারিয়া নদী এখনো নদী নামের স্মারক বহন করে আছে। তবে ডাকের চর নদী ও গজারিয়া নদী শত বছর পর্যন্ত নামের স্বার্থকতা বহন করে এখন শুধু গজারিয়া ও ডাকের চর খাল ক্ষীণাবস্থায় বয়ে চলেছে। এই দুটি খালই বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে রয়েছে।
রাজমনী নদী পালরদী নদীর ঠাকুর বাড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে শিকারমঙ্গল ও এনায়েত নগর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে আঁকা-বাঁকা বয়ে গেছে ভবানীপুর ও মৃধা কান্দির নিকট আড়িয়াল খা নদীতে পতিত হয়েছে। এই নদী এখন শুধুই ঠাকুর বাড়ি, সমিতির হাট, মিয়ার হাট খাল।
কথিত আছে যে, জমিদার রাজ মহন দাসের বাড়ির নিকট দিয়ে প্রবাহিত বলে রাজমনি নদীর নাম পত্তন ঘটেছিল। অপর একটি বেশি দৈর্ঘ খাল যেখানে বর্ষায় দুর্গাপুজা উৎসবে নৌকা বাইচের জন্য বিখ্যাত ছিল। এই খালটি মাদারীপুর সদর থানার ঘটকচর - মস্তফাপুর কুমার নদী থেকে ডাসার, কাজী বাকাই, গোপালপুর ও বর্তমান কালকিনি পৌরসভার দক্ষিণ-পশ্চিম খাঞ্জাপুর সীমানা দিয়ে ঝুরগাও বাজারের পশ্চিমপাড়ে মাইড্যাল খেয়াঘাটের নিকট পালরদী নদীতে উপনিত হয়েছে। এই খালটির নাম আমানতগঞ্জ খাল। কাল প্রবাহে এখন খাল নামেই পরিচিত। তবে এই খাল সমুহের যৌবনে পালরদী ও কুমার নদীর মতোই খরস্রোত ছিল।
অপর একটি খাল শরীয়তপুর জেলার পট্টি বাজারের পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে নাগের পাড়া, খাসের হাট, কাচারী বাজার, আকাল বরিশ হয়ে আড়িয়াল খাঁ নদীতে মিলিত হয়েছে। এই খালটি যৌবনে টেংরা নদী নামে পরিচিত ছিল। এই টেংরা নদী দিয়ে এক সময় নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, চাঁদপুর থেকে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী জাহাজ ও স্টিমার আড়িয়াল খা নদী ও কুমার নদী হয়ে কোলকাতা যেত এবং আসতো। ইংরেজ আমলে ১৮০০ সালের শেষ দিকে টেংরা নদীর ভাঙণে নদীর দুই পাড়ের লোকজন গৃহহীন হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে দেখা দেয় চরম দুর্ভিক্ষ।
তখন ইংরেজ শাসক নদীর দুই পাড়ের অসহায় মানুষের জন্য আশ্রয় শিবির তৈরি করে তাদের পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করে। এই শিবিরের খাদ্যসামগ্রী টেংরা নদী দিয়ে কোলকাতা থেকে জাহাজ-স্টীমার যোগে আসতো। এই নদী পাড়ের আশ্রয় শিবিরের লোকদের আকালী বলা হতো। সেই থেকে নদীর দুই পাড়ের মৌজার নাম আকাল বরিশ নামে পরিচিত। পরবর্তী কালে ভূমি জরিপে উত্তর ও দক্ষিণ আকাল বরিশ রাখা হয়।

(চলবে)   

মাদারীপুরের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা অবলম্বনে ‘একটাই চাওয়া’

আ জ ম কামাল :
‘স্বাধীনতার ৪০ বছর ও শিল্পের আলোয় মহান মুক্তিযুদ্ধ’- স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর এ মহতী আয়োজনের জন্য শিল্পকলা একাডেমীর মহা পরিচালক লিয়াকত আলী লাকীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সাথে সাথে জেলা শিল্পকলা একাডেমী, মাদারীপুরের যথাযথ ব্যবস্থাপনার জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি ও সদস্য সচিবসহ সবার প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। এছাড়া নাটকের প্রাণ মাদারীপুর সরকারি নাজিমুদ্দিন কলেজ ও কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে কলেজ পর্যায়ের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক ‘একটাই চাওয়া’ মঞ্চস্থ করতে পেরে আমি আনন্দিত ।
গত ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় মাদারীপুরের স্বাধীনতা অঙ্গনের মুক্তমঞ্চে ও গত ৫ মে ফরিদপুর শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে ‘একটাই চাওয়া’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। নাটকে আমীরন চরিত্রে মাহমুদা খান লিটা ও ঝুমা, রফিক চরিত্রে সাজ্জাদ হোসেন, সাজু চরিত্রে লুবনা জাহান নিপা, বয়াতি চরিত্রে আমি আজিজুল ইসলাাম স্বপন, বাদল চরিত্রে সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, মানিক চরিত্রে বি এ কে মামুন ও আশিষ রায়, রফিকের মা চরিত্রে শাকিলা আক্তার, ওয়াজেদ আলী চরিত্রে নাহিদুল ইসলাম মুকুল, কেতর আলী চরিত্রে সঞ্জীব তালুকদার, মেজর চরিত্রে শান্ত কুমার, মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রে মৃণাল কান্তি বালা , বাচ্চুর বাবা চরিত্রে নির্মল মন্ডল নিলয়, পাক হানাদার চরিত্রে মাইনুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলামের অভিনয় দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে।
মাদারীপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে সুতীক্ষè মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ‘একটাই চাওয়া’ নাটকটি রচনা করেন আজিজুল ইসলাম স্বপন। তার রচনার ক্ষেত্রে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নাটক বিভাগের ছাত্র সালাহ উদ্দিন মাহমুদ অনেক পরিশ্রম করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সংলাপ সংশোধনের মাধ্যমে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে নাটকটিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাদের সমন্বয়ে আমি নাট্য প্রশিক্ষক আ জ ম কামাল নির্দেশনার দায়িত্ব নিয়ে নাটকটিকে প্রাণবন্ত করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া বিভিন্নভাবে যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুর জেলায় ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনা ফুটে উঠেছে ‘ একটাই চাওয়া’ নাটকে। সোলেমান বয়াতির সংসারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যেতে থাকে নাটকের কাহিনী। সোলেমান বয়াতীর স্ত্রী আমিরনের সম্ভ্রম হারানো। পাক হানাদারের নির্যাতনে সাজুর মৃত্যু। যুদ্ধে গিয়ে শেষ অবধি রফিকের ফিরে না আসা। কিশোর বাচ্চুর যুদ্ধে অংশগ্রহণ। রাজাকার ওয়াজেদ আলী ও কেতর আলীর কুদৃষ্টি একাত্তরের পৈশাচিক দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে। সুফিয়া, বেনু, পান্না ও নুরুল ইসলামের আত্মত্যাগ দর্শকদের আবেগাপ্লুত করে তোলে। সবশেষে বাচ্চুর বাবা, বয়াতী, বাদল ও মানিকের কন্ঠে দৃঢ়তার সাথে উচ্চারিত হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি। অভিনেতাদের সাথে সাথে দর্শকরাও গর্জে ওঠে।

আ জ ম কামাল
নির্দেশক,
একটাই চাওয়া,
জেলা শিল্পকলা একাডেমী, মাদারীপুর।

সুখ-দুঃখ

-কৃষ্ণকলি

ছোট ছোট কষ্ট বড় কষ্টে পরিণত হয়,
যখন সে বলে মুক্তি দেব তোমায়।
বিন্দু বিন্দু জল মিলে ঝর্ণা হয়,
যখন সে বলে ভালোবাসিনা তোমায়।
একটু একটু হাসি অনেক আনন্দে পরিণত হয়,
যখন সে বলে বকবোনা তোমায়।
ছোট ছোট সুখ বড় সুখে পরিনত হয়,
যখন সে বলে ঠকাবো না তোমায়।
-‘ভয় পেও না আমি আছি না!’
-‘ তুমি আছ বলেই ভয় হয়।’

নিজেকে অচেনা লাগে

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

আমি আয়নায় নিজের মুখ দেখি-
নিজেকে নিজের কাছে অচেনা লাগে,
আঁৎকে উঠি ভয়াবহতা দেখে।

চোখ দু’টি মনে হয় আমার নয়,
ও চোখে কার যেন ছাঁয়া পড়েছে।
কপালে কার যেন দুঃখের তিলক,
তাকিয়ে থাকি অপলক।

ও মুখ বড়ই বিকৃত- অসুন্দর,
হিংস্রতা আর কামের খিস্তি-খেউর।
জিহ্বা সর্বদাই থাকে লালায়িত।

নিজেকে নিজের কাছে অচেনা লাগে,
সক্রেতিসকে প্রশ্ন করি বারে বারে
নিজেকে চিনবো কী প্রকারে?
সদুত্তর মেলে না কস্মিনকালে....।
কালকিনি, মাদারীপুর।

আমরা তোমাকে ভুলবো না

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ:
যাদের আত্মত্যাগে আমাদের প্রিয় স্বদেশ আজ স্বাধীন। আমরা তাদের কতটুকু সম্মান করতে পেরেছি। এ প্রশ্ন সবার কাছে। কেননা স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরও শহীদ এম নুরুল ইসলামের কোন স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠেনি তাঁর পৈত্রিক বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশগাড়ী( পরিপত্তর) গ্রামে। বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে তাঁর নাম। স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা সড়কের নামকরণ করা হয়নি তাঁর নামে। এমনকি ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু দিনেও স্মরণ করতে পারিনি তাঁকে। তবেকি আমরা তাঁকে ভুলতে বসেছি?
উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে পরিপত্তর গ্রামে গিয়ে কথা হয় শহীদ বীর বিক্রমের ভাই মুক্তিযোদ্ধা আঃ কুদ্দুস শিকদারের সাথে। ভাইয়ের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে জানান অনেক অজানা কথা। তাঁরা চার ভাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এক ভাই শহীদ হয়েছেন। তাদের বাবার নাম লাল মিয়া শিকদার। মা জহুরা বেগম।
শহীদ বীর বিক্রম এম নুরুল ইসলাম বিবাহিত ছিলেন। স্ত্রীর নাম ফাতেমা বেগম। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। শহীদ এম নুরুল ইসলাম চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পিলখানা ইপিআর হাসপাতালে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াবহ কালোরাতে পিলখানা ইপিআর হাসপাতালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বোরোচিত হামলার একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী। পাকিস্তানী হাবিলদার শফি তাকে আক্রমন করে। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে কৌশলে পাকিস্তানী হাবিলদারকে আটক করে রাইফেলটি কেড়ে নেন। হাবিলদার শফিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হামাগুড়ি দিয়ে ময়লার ড্রেনে ডুকে পড়েন। হানাদার বাহিনী টের পেয়ে ড্রেনের মুখে গুলি চালায়। নুরুল ইসলাম ড্রেনের ভেতর দিয়ে পিলখানার এক নম্বর গেটের কাছে এসে পাহাড়ারত পাকিস্তানি সৈনিকদের মুভমেন্ট লক্ষ্য করে ড্রেন থেকে বের হয়ে বাঙ্গালী ডাঃ মেজর এমএ রশিদের বাসায় পৌঁছান। এমএ রশিদের পরামর্শে আত্মরক্ষার্থে পাক হাবিলদার শফিকে ছেড়ে দেন।
নুরুল ইসলামের অপর সহদর পাকিস্তান সেনা সদস্য সিরাজুল হক শিকদার । তিনি করাচি যাওয়ার জন্য ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে তাকে কৌশলে বের করে আনেন। এবং অপর সহদর এসএম আবু তাহেরকে হাজারিবাগ থেকে এনে নারায়ণগঞ্জ টার্মিনালে পৌঁছান। সেখানে কয়েকশত নির্যাতিত ও আশ্রয়হীন মানুষকে সাথে নিয়ে নাটকীয়ভাবে একটি স্টিমার দখল করে মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। চালকের অভাবে নিজেই স্টিমার চালানোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু জ্বালানির অভাবে শরীয়তপুর জেলার গোসাইর হাট উপজেলার পট্টি ঘাটে স্টিমার থামান। বাঙালীদের স্টিমার দেখে সেখানে লোক জড়ো হতে থাকলে তিনি সবার উদ্দেশ্যে ঢাকার গণহত্যার বিবরণ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আহ্বানে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ডাক দেন।
পরে নিজের এলাকায় এসে মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান কর্ণেল শওকত আলীর সহায়তায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সীমান্ত এলাকায় চলে যান। সেখানে এ্যাডভোকেট মতিউর রহমানের সহায়তায় যুদ্ধ চালিয়ে চান। এসময় তিনি ৯নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিল, ফ্লাইট সার্জেন্ট মোঃ ফজলুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ, মেজর এম শাজাহান ওমর বীর উত্তম ও মেজর জেনারেল এএসএম নাসিম বীর বিক্রমের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। কিছুদিন পর সীমান্ত এলাকা ছেড়ে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ ঘাট এলাকায় এসে পাক সেনাদের সাথে যুদ্ধ করে গানবোট ডুবিয়ে দেন। এপ্রিল মাসে বরিশালের শিকারপুর এলাকায় নয় নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিলের পরামর্শে বিশেষ অপারেশনে প্রায় পঞ্চাশ জন পাকসেনাকে হত্যা করেন। এবং সেখানে কিছুদিন অসুস্থ্য মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা প্রদান করেন। ৩০ জুলাই সংগীয় ফোর্স নিয়ে শ্রীপুর বিওপি দখল করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর অপারেশন চালিয়ে খুলনার পারুলিয়া ব্রীজ ধবংস করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরের সিএনবি এলাকায় পাক আর্মি অ্যাম্বুশ করলে তার পরিচালনায় বিশ জন রাজাকার, তিন জন পাক আর্মি হত্যা করেন। এ সময় আট জন রাজাকার আটক, সাতটি রাইফেল ও কয়েক বাক্স গুলি উদ্ধার করেন।
সবশেষে ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা- বরিশাল সড়কে পাকবাহিনীর যাতায়াতে বিঘœ ঘটানোর জন্য কালকিনির গোপালপুর ব্রীজে মাইন বিস্ফোরণ শেষে ফেরার পথে রাজাকার ও পাক আর্মির আক্রমণে বুলেট বিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। কিন্তু তার লাশ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শণের জন্য শহীদ এম নুরুল ইসলামকে মরণোত্তর বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে সরকারি গেজেট অনুযায়ি তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ১০৪। এসব এখন কেবলি ইতিহাস। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও তাঁকে স্মরণ করে রাখার মত কোন স্তম্ভ বা স্থাপনা তৈরি হয়নি। নিজ একালায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন স্থাপনার নামকরণও করা হয়নি তাঁর নামে। শুধু গত ৯ এপ্রিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন খাসের হাট-পরিপত্তর সড়কটি তাঁর নামে নামকরণ করেন। এলাকাবাসীর দাবি প্রস্তাবিত আড়িয়াল খাঁ সেতুর নামকরণ তার নামে করা হোক।
শহীদ এম নুরুল ইসলামের ছেলে কাওছার আহমেদ বলেন,‘দেশের স্বাধীনতার জন্য আমার বাবা জীবন উৎসর্গ করেছেন। এজন্য আমি গর্বিত। আমার বাবা শহীদ হওয়ার পর আমাকে ও আমার বোনকে আমার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক শিকদারই লালন পালন করেছেন। আমাদের পুরো পরিবার মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আমার চাচারাও বীর মুক্তিযোদ্ধা। এটা আমার জন্য বড় ধরণের প্রাপ্তি।’

শুক্রবার, ১১ মে, ২০১২

কালকিনি প্রবাহ

-আকন মোশাররফ হোসেন
( পূর্ব প্রকাশের পর)
জালালপুর বা ইদিলপুর পরগোনার মুল মৌজার নাম লক্ষ্মীপুর। ‘দামুসা মেলা’র প্রায় এক বর্গমাইল আয়তনের জায়গা ছিল। বর্তমানে জনবসতিপূর্ণ ও চাষাবাদের ফলে ‘দামুসা মেলা’র জায়গা ক্ষীণ হয়ে আছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ঐ এলাকার আর.এস এবং এস.এ কোন জরিপেই জরিপ হয় নাই।
জমিদার ভগোলা সুন্দরীর নামে এখনও তপসিল ভুক্ত আছে। বর্তমান বি.আর.এস জরিপে ‘দামুসা মেলা’র জমিটি পতিত আছে। আর বাকি জমি দখলদার এলাকাবাসীর নামে জরিপ করা হয়েছে।
কালকিনি থানা একটি পরিবর্তিত নাম। মাদারীপুর মহকুমার উজানে পদ্মা নদী আর দক্ষিণে মেঘনা নদীর মধ্যস্থল ভাগের সংযোগ রক্ষাকারী আড়িয়াল খাঁ নদী। কালকিনি থানার ভৌগোলিক অবস্থানে এ অঞ্চলের ভূ-গঠনে প্রবাহিত নদীগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কালকিনি থানার ভূ-ভাগের মধ্য দিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদী, পালরদী নদী, গজারিয়া নদী, কাচিকাঁটা-তুলাতলা নদী, øানঘাটা নদী ( ছোট গাঙ) এবং টেংরা নদীর সিকস্তি ও চরাঞ্চল এলাকায় বেলে মাটির আধিক্য অত্যন্ত বেশি।
তবে এ উপজেলার আবাসযোগ্য জমির জনবসতি খুব প্রাচীন নয়। হাজার বছরের ভূ-গঠন প্রক্রিয়ায় চলছে প্রকৃতির বিচিত্র লীলায় লীলায়িত ভাঙ্গা-গড়ার বিচিত্র অভিজ্ঞতায় বিকশিত এক বিস্ময়কর ঐতিহ্যের স্মারক। ভূ-প্রকৃতি নিয়ত: ভাঙ্গা-গড়ায় এ এলাকার পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলে জনজীবনে সুগভীর প্রভাব বিস্তার করে আছে। এখানকার মানুষ সিংহশার্দুল, সংগ্রামী। কখনও শান্ত- সৌম্য- সংযমী। কঠোরতা-কোমলতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণে পল্লবিত এখানকার গণমানুষ কালকিনি থানা বা উপজেলার পশ্চিম-উত্তর অঞ্চলের স্থলভাগ ও জনবসতি অনেকটা একেবারেই স্থিতিশীল। এবং প্রাচীনত্বের দাবিদার।
তবে পূর্বাঞ্চলের লক্ষ্মীপুর, বাঁশগাড়ী, চর দৌলত খান, চর সাহেবরাম পুর, রমজান পুর, শিকার মঙ্গল ও এনায়েত নগরসহ পালরদী নদীর পশ্চিম পাড় এলাকা এক সময়ে গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। বাঘ, ভালুক, চিতাবাঘ, মহিষ, বানর ও শুকরের আস্তানা ছিল এই কালকিনির অঞ্চলে। ১৭৯২ সালে বাঘ শিকারের জন্য সরকারিভাবে পুরস্কৃত করা হতো। বিষয়টি এখনো কথিত আছে। ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত শীত মৌসুমে ঘোসের হাট, শেওলাপট্টি এবং পূর্বাঞ্চলের গজারিয়া ও টেংরা নদীর উভয় অঞ্চলের বনভূমিতে মহিষের সমাগম ছিল। সে সময়ে শখ করে মানুষ ঘোড়া লালন-পালন করত। নিজের বাহন হিসাবে ব্যবহার করতো। একটু সৌখিন মেজাজের মানুষেরা ঘোড়ায় চড়ে যাতায়াত করতো। ১৯২৬ সালে øানঘাটা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর মুলাদীর ছফিপুরের মাওলানা আঃ মাজেদ নিয়মিত ঘোড়ায় চড়ে মাদ্রাসায় আসতেন। এছাড়া ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পুর্বে ও  পরেও ১৯৭৩/৭৪ সাল পর্যন্ত পাঙ্গাশিয়া ও শেওলাপট্টির জঙ্গলে শুকর ও বানর- হনুমান দেখা যেত। বর্তমানে এ প্রজাতিগুলো এখন বিলুপ্ত। (চলবে)

প্রবন্ধ: উন্নত জাতি গঠনে ভিক্ষাবৃত্তি একটি সামাজিক ব্যাধি

জাহিদ হাসান
 বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। অধিকাংশ লোক দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। জনসংখ্যা অনুযায়ী দিন দিন বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে চলছে জ্যামিতিক হারে যা জাতির উন্নয়নের পথে বড় ধরনের বাধা হিসেবে কাজ করে। তাই মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য নানা ধরনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে অনেক নীতি গর্হিত কর্মকান্ড, ধনী শ্রেণীর নিপীড়ন যেমন রয়েছে তেমন রয়েছে দরিদ্র মানুষের নিত্য দিনের আহাজারি। হতদরিদ্র নিঃস্ব মানুষগুলো বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নেয়। অন্যদিকে সুস্থ সবল মানুষ ছদ্মবেশে ভিক্ষা করে বড় অংকের টাকা সঞ্চয় করে রাতারাতির বাড়ি গাড়ীর মালিক হয়ে যাচ্ছেন।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ঢাকার শহরে ভিক্ষা করে বাড়ি করেছেন এমন ঘটনা বাস্তবে রয়েছে। প্রথমে শখের বশে বা সুকৌশলে জীবিকার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করলেও পরে ভালো আয় হওয়াতে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। বাংলাদেশে মোট জনসখ্যা ১৬ কোটি তাই যারা ভিক্ষা করেন তারা হিসেব করে ১ লক্ষ লোক ১ টাকা করে দিলে কত দিন লাগে টাকার মালিক হতে। অন্ধ, খোড়া, বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী অল্প বয়সী বা বয়স্ক মানুষদের অপহরণ করে বা অল্প অর্থে ক্রয় করে দালালরা বিভিন্ন যায়গায় বসিয়ে দেয়। দালালদের কথা মতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, মসজিদের সামনে, লোকালয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি স্থানে জীর্ণ, শীর্ণ সাজসজ্জা এবং ভিক্ষা চাওয়ার বাচন ভঙ্গি শিখিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে দালাল বা ভিক্ষাবৃত্তির মস্তান চক্র খুবই অমানবিক আচরণ করে থাকে।
বাংলাদেশে এমনও ভিক্ষুক নেতা বা সর্দার আছেন তার অধীনে ১০/২০ জন ভিক্ষুক একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ভিক্ষা করেন। সারা দিন ভিক্ষা করে যা পান তার সিংহ ভাগ নিয়ে যায় নেতারা আর যথা সামান্য পায় ভিক্ষুকরা। এতে করেন খুব সহজে মোটা অংকের টাকা উর্পাজন করছে বিনা পরিশ্রমে। আমাদের দেশের রন্দ্রে রন্দ্রে দূর্নীতি গ্রাস করার ফলে এবং সবর্ত্র স্বজন প্রীতির কারনে ধনীরা আরো ধনী আর গরীব মানুষেরা দিন দিন দারিদ্র থেকে দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাচ্ছে। যার ফলে অসহায় মানুষ নিরুপায় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তির মতো আপত্তিকর পেশা বেছে নিচ্ছে। অভাবের কারনে, মসজিদ বা মাদ্রাসা নির্মাণের কথা বলে, শখের বশে বা ছদ্মবেশে ভিক্ষা করা বা দল নেতা হওয়া সবই ভিক্ষাবৃত্তির মধ্যে পড়ে। মানুষের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে মসজিদের পাশে (জুমার দিনে) , ঈদের জামাতের পাশে, মাজার সংলগ্ন এলাকায়, হাসপাতাল, ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশে পাশে ভিক্ষা করার প্রবনতা বেশী দেখা যায়। বাংলাদেশে যতগুলো সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান তার মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তি অন্যতম। সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা যদি এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন না করেন তাহলে সময়ের পালাক্রমে এ সমস্যা সমাজে প্রকট আকার ধারন করবে যা সভ্য জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরী করবে। একটি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে হলে সবাইকে কর্মঠ হতে হবে। আমরা অহরহ ধর্মের দোহাই দিয়ে থাকি কিন্তু আমাদের ইসলাম ধর্ম কত কঠোরভাবে ভিক্ষাবৃত্তি নিষেধ করেছেন তা মেনে চলি না। ১৬০১ সালে ইংল্যান্ডে ভিক্ষাবৃত্তি চরম আকার ধারণ করেছিল তখন রানী এলিজাবেধ শক্ত হাতে সেদিন ভিক্ষাবৃত্তি নির্মুল করার কারনে আজকে যুক্তরাজ্য উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড়াতে পেরেছে। ভিক্ষাবৃত্তি যে কোন জাতির কাছে একটি লজ্জাজনক বিষয়। আমাদের দেশে ভিক্ষাবৃত্তি একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে রুপ লাভ করেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থার উন্নয়ন করা দরকার। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এই বিশ্বায়নের যুগে কোনো ভাবেই ভিক্ষাবৃত্তি কাম্য নয়। ভিক্ষাবৃত্তির ফলে জাতি দিন দিন অলস হয়ে যাচ্ছে যার ফলে আমাদের জনশক্তি কাজে লাগছে না। জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের বুকে অনেক পিছনে পড়ে আছি। সুতরাং ভিক্ষাবৃত্তি জাতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনছে। একটি উন্নত জাতি গঠনের ক্ষেত্রে ভিক্ষাবৃত্তি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। তাই এখনই সমাজ থেকেই ভিক্ষাবৃত্তির মূলৎপাটন করতে হবে।
লেখক- নির্বাহী সম্পাদক,সাপ্তাহিক কালকিনি।

কবি

রোহিনী কান্ত রায়

কল্পপ্রিয় একটি প্রাণী কবি,
ঘরে বসে বসে কি অবলিলায় দুনিয়া চষে বেড়ায়
তুমুল সাওয়ারী হয়ে আলোকিত সব শব্দ ডানায়
সীমার প্রাচীর দেখেনি কোনদিন তার অবারিত পদরেখায়।

কল্পাশ্রয়ী জীব কবি
যতটুকু না দেখেছে নিজে
তারি সহস্রগুণ বেশি দেখিয়েছে পরম বিশ্বস্ততায়
চেতনার অনুভবে তার মুগ্ধ ভক্তকে।
দেখ, দেখ কি সহজে যুক্তিতর্কের জাল কেটে, কার্যকারণ
সম্পর্ককে ভীষণ ডিঙিয়ে এখনো ( বিজ্ঞানমনস্ক যুগ) বিশ্বসের
বীজ বুনে চলে মানুষের পাথর মনে- ইনিয়ে বিনিয়ে বলা কথায়
নিজে যা কোনদিন দেখেনি তাই  লেখে
অথবা লিখেও নিজেই বোঝেনি কোনদিন তার মানে-
তবুও কৌতুহল বাড়ে মানুষের তার প্রতি
তবুও কংক্রিট ভেঙে বিশ্বাসের ঢল নামে অতি, তার প্রতি
কি অদ্ভুত ঈশ্বর অনুমোদিত এক জীব
‘‘ কবি যা রচে তাই সত্য
ঘটে যা তার সব সত্য নয়।”

কবির মুখে স্বীয় স্তুতি শোনার জন্য স্বর্গের দেবতা সব
উন্মুখ হয়ে আছে, দেবতা জানে তার মানে
অমৃত পান করে দেবতা যে টুকু অমরত্ব পেয়েছে
তারি চেয়ে বেশি অমরত্ব লভেছে মর্তের
কোন কোন মানুষ কবির স্তুতি গানে।

জলঢাকা, নীলফামারী।

কালকিনির নাট্যাঙ্গনে আলোচিত নাম প্রথমা রঙ্গমঞ্চ

কাজী নিয়ামুল ইসলাম:
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর গড়ে ওঠে ‘প্রথমা রঙ্গমঞ্চ’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এক ডজনেরও বেশি নাটক মঞ্চস্থ করে দলটি। সাংস্কৃতিক কর্মী সালাহ উদ্দিন মাহমুদের প্রচেষ্টায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও বেশ সুনাম অর্জন করে প্রথমা রঙ্গমঞ্চ।
প্রথমে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের লেখা হাস্যরসাত্মক নাটক দিয়ে শুরু। মহড়া চলে পৌর মার্কেটের ছাদে। নারী নাট্যকর্মী না থাকায় কোন নারী চরিত্র ছিলনা। ২০০৮ সালে কালকিনি শিল্পকলা একাডেমীর বৈশাখী মেলা মঞ্চে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনা ও পরিচালনায় ‘মুকুট বাবার মাজার’ নাটক প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এরপর সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনায় কাজী নিয়ামূল ইসলাম, এইচ এম মিলন, জাহিদ হাসান, বি এ কে মামুন, মেহেদী হাসান, মাইনুল ইসলাম ও নাফিজ সিদ্দিকী তপুর পরিচালনায় আ.জ.ম কামালের নির্দেশনায় ‘ঘৃণা নয় ভালোবাসা চাই’, ‘আলোর পথে’,‘ ডিসকো ফকির’,‘ কালচারাল ফ্যামিলি’,‘বোকার হদ্দ’,‘ঘাতক’,‘যুদ্ধাপরাধী’,‘কাপুরুষ’ ও ‘মুক্তি’সহ বেশ কয়েকটি নাটক মঞ্চস্থ হয়।
এছাড়া লিয়াকত আলী লাকীর ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’,সেলিম আল দীনের ‘বাসন’,মমতাজ জামানের ‘মুক্তির জননী’,এস.এম সোলায়মানের‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাচাল’,মান্নান হীরার‘ফেরারী নিশান’ ও মলিয়েঁরের ‘পেজগী’ মঞ্চস্থ হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পটুয়াখালীর ভান্ডারিয়ায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের আমন্ত্রণে‘ঘাতক’মঞ্চস্থ হয়। একই বছর মার্চ মাসে যশোরে ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ‘মুক্তি’ নাটক মঞ্চস্থ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। কিন্তু অভাব দেখা দেয় স্থান ও অর্থের। এগিয়ে আসে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ-কালকিনি এডিপি, প্রেসক্লাব,শিল্পকলা একাডেমি,সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ, মো: খালেকুজ্জামান,মো: মনিরুজ্জামান, মসিউর রহমান সবুজ, শহীদ খান ও খায়রুল আলমসহ অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে যেতে থাকে প্রথমা রঙ্গমঞ্চ। উপজেলার যেকোন অনুষ্ঠানে নাটক পরিবেশনের জন্য ডাক পরে দলটির।
প্রথমা রঙ্গমঞ্চের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এর পরিচালক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ জানান,‘শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। আজ একটা অবস্থানে পৌঁছতে পেরেছি। কালকিনির নাট্যাঙ্গণ তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কিন্তু এখানে কোন অডিটোরিয়াম নেই। আশা করি সে স্বপ্ন একদিন পূরণ হবে। আমরা থেমে থাকবো না।’

বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১২

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

মাইনুল ইসলাম:
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার একটি আলোচিত নাম। সাংবাদিকতা, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিনি। কালকিনির বিনোদন জগতে যার অবদান অপরিসীম। ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র নেশায় যিনি ছুটে যান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ঘুণে ধরা সমাজের জন্য কিছু করার ব্রত নিয়ে যিনি এগিয়ে যেতে চান বহুদূর। আজ তাকে নিয়ে আমাদের আয়োজন।
জন্ম :
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ ১৯৮৮ সালের ১ ফেব্র“য়ারি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর উড়ার চর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জেড এম এ মাজেদ। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। মাতা হাসনে আরা। একজন আদর্শ গৃহিনী। ৬ ভাই ১ বোনের মধ্যে বাবা-মার তৃতীয় সন্তান।
শিক্ষা জীবন:
øানঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পার্শ্ববর্তী øানঘাটা ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ২০০২ সালে দাখিল পাশ করেন। ২০০৪ সালে ঢাকার নয়াটোলা এ ইউ এন কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করেন। মাদ্রাসা-ই- আলিয়ায় ফাজিল শ্রেণিতে ভর্তি হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিজ এলাকার কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিএ ( সম্মান) শ্রেণির বাঙলা বিভাগে ভর্তি হন। ২০০৮ সালে সম্মান শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে এমএ ( বাংলা) শ্রেণিতে অধ্যয়নরত রয়েছেন।
কর্মজীবন:
ছাত্রাবস্থায়ই ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, কালকিনি এডিপি’র স্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রকল্পের পিয়ার এডুকেটর হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তিতে ওয়েস্টার্ন কোচিং সেন্টারে বাংলা, অক্সফোর্ড কোচিং সেন্টারের ধর্মীয় ও শিশুকানন কিন্ডার গার্টেনের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসাবে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি ২০০৭ সাল থেকে দৈনিক দেশবাংলা পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন।
সাহিত্য চর্চা:
তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালীন ছোটগল্প লেখার মাধ্যমে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। ২০০৩ সালে মাদারীপুর থেকে প্রকাশিত ‘জাবাল ই নুর’ পত্রিকায় ‘জিজ্ঞাসা’ নামে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে দৈনিক প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, সমকাল, সকালের খবর, যায়যায়দিন, দেশবাংলা, জনতা, স্থানীয় বিশ্লেষণ, সুবর্ণগ্রাম, আনন্দবাংলা, সাপ্তাহিক কালকিনি, কালকিনি ডটকম, খুলনা থেকে প্রকাশিত‘ কবি ও কবিতা’, ‘পানসী’, নীলফামারী থেকে ‘রাঙা শিমুল’,গোপালগঞ্জ থেকে ‘গাঙচিল কন্ঠ’, মাসিক কবিতাপত্র ‘বোধিবৃক্ষ’, ‘মিছিল’ ও লিটল ম্যাগাজিন ‘বুনন’সহ একাধিক পত্রিকায় কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ছোট গল্পের জন্য ২০০৬, ২০১০ ও ২০১১ সালে ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন।
সাংগঠনিক কার্যক্রম :
সাংবাদিক খায়রুল আলমের হাত ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার আগমন ঘটে। বন্ধুসভার প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাংবাদিক ইয়াকুব খান শিশিরের অনুপ্রেরণায় উদীচীর সাথে যুক্ত হন। সালাহ উদ্দিন মাহমুদ বর্তমানে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কালকিনি শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক।  উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদের সাবেক কার্র্যনির্বাহী সদস্য, প্রথম আলো কালকিনি বন্ধুসভার সভাপতি,  জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম কালকিনির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক, প্রথমা রঙ্গমঞ্চ কালকিনির পরিচালক, কালকিনি শিল্পকলা একাডেমির আবৃত্তি বিভাগের সাবেক সদস্য, মাদারীপুর শিল্পকলা একাডেমির নাটক বিভাগ ছাত্র,  মাদারীপুরের উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠনের  সদস্য, দহন সাহিত্য সংসদের সভাপতি ও কালকিনি প্রেসক্লাব’র সহ সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
আবৃত্তি চর্চা :
কলেজ জীবনে এসে বিভিন্ন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। একাধারে লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন আয়োজিত মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিযোগিতায় আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করে বহুবার প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এছাড়া টি আই বি, উদীচী, মাত্রা আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সুনাম অক্ষুণœ রাখেন। বর্তমানে আবৃত্তি সংগঠন উদ্ভাস-এর সাথে নিয়মিত কাজ করেন।
নাট্য চর্চা:
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর গড়ে তোলেন ‘প্রথমা রঙ্গমঞ্চ’ নামে একটি নাট্যগোষ্ঠী। ২০০৮ সালে কালকিনি শিল্পকলা একাডেমীর বৈশাখী মেলা মঞ্চে সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনা ও পরিচালনায় ‘মুকুট বাবার মাজার’ নাটক প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এরপর সালাহ উদ্দিন মাহমুদের রচনায় কাজী নিয়ামূল ইসলাম, জাহিদ হাসান, এইচ এম মিলন, মেহেদী হাসান, বি এ কে মামুন, মাইনুল ইসলাম ও নাফিজ সিদ্দিকী তপু’র পরিচালনায় আ.জ.ম কামালের নির্দেশনায় ‘ঘৃণা নয় ভালোবাসা চাই’, ‘আলোর পথে’,‘ ডিসকো ফকির’,‘ কালচারাল ফ্যামিলি’,‘বোকার হদ্দ’,‘ঘাতক’,‘যুদ্ধাপরাধী’,‘কাপুরুষ’ ও ‘মুক্তি’সহ বেশ কয়েকটি নাটক মঞ্চস্থ হয়।
এছাড়া সালাহ উদ্দিন মাহমুদের পরিচালনায় লিয়াকত আলী লাকীর ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’,সেলিম আল দীনের ‘বাসন’,মমতাজ জামানের ‘মুক্তির জননী’,এস.এম সোলায়মানের‘ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাচাল’,মান্নান হীরার‘ফেরারী নিশান’ ও মলিয়েঁরের ‘পেজগী’ মঞ্চস্থ হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পটুয়াখালীর ভান্ডারিয়ায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের আমন্ত্রণে‘ঘাতক’মঞ্চস্থ হয়। একই বছর মার্চ মাসে যশোরে ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ‘মুক্তি’ নাটক মঞ্চস্থ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নাটক বিভাগের ছাত্র হিসাবে মাদারীপুরে ক্ষুদিরামের দেশে, গ্রাস, ফেরারী নিশান ও একটাই চাওয়া নাটকে অভিনয় করেন। তাছাড়া বিভাগীয় নাট্য উৎসবে ২০১২ সালের ৫ মে ফরিদপুরে শিল্পকলা একাডেমী মঞ্চে ‘একটাই চাওয়া’ নাটকে অভিনয় করেন। ছাত্র জীবনে লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন আয়োজিত মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিযোগিতায় একক অভিনয়ে অংশগ্রহণ করে বহুবার প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বর্তমানে লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন মাদারীপুরের নাট্যদলের সাথে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর অঞ্চলে ‘গ্রামের আদালত’ ও ‘সুবিচার চাই’ নাটকে নিয়মিত অভিনয় করেন।
সম্পাদনা:
কলেজ জীবন থেকে বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশ করে আসছেন। কলেজের বাঙলা বিভাগের উদ্যোগে ‘রক্তিম ফালগুন’ নামে দেয়াল পত্রিকা দিয়ে সম্পাদনা শুরু করেন। কালকিনি বন্ধুসভা থেকে ‘বন্ধন’ ও ‘বৈশাখী’ নামে দেয়াল পত্রিকা, ‘আলোর পথে’ নামে সাহিত্য পত্রিকা ও ‘দহন’ নামে মাসিক কবিতাপত্র সম্পাদনা করেন। এছাড়া লিটল ম্যাগাজিন ‘বুনন’র সহ সম্পাদক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন।
সাংবাদিকতা:
তৎকালীন ‘আজকের কাগজ’র সাংবাদিক জাকির হোসেনের কাছে তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ২০০৭ সালে দৈনিক দেশবাংলা’র কালকিনি প্রতিনিধি হিসাবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে দৈনিক বিশ্লেষণ’র বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক প্রান্ত’র কালকিনি প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ ডটকম’র নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা’র কারকিনি প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক একুশ দর্পণের কালকিনি প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন। বর্তমানে দৈনিক সকালের খবর’র কালকিনি সংবাদদাতা, দৈনিক সুবর্ণগ্রাম’র কালকিনি প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক আনন্দবাংলার কালকিনি অফিসে কর্মরত। এবং সাপ্তাহিক কালকিনির বার্তা বিভাগে ও কালকিনি ডটকমের সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে কর্মরত আছেন।
শেষ কথা :
গতাণুগতিকতার বাইরে থেকে কাজ করাই যার স্বভাব। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা, চাকুরী ও সমাজ ব্যবস্থার বিরোধী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিহিংসা তাকে আহত করে। জীবিকা নির্বাহের কথা কখনোই ভাবেন না। অর্থ-বিত্তের প্রতিও আকর্ষণ নেই বললেই চলে। তার মতে-‘ খ্যাতি ও বিত্ত এক সাথে আসে না। যার খ্যাতি আছে তার বিত্তের তেমন প্রয়োজন হয় না। বিত্তের লোভ মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপার্জনেই সন্তুষ্ট তিনি। আশা করি তিনি তার কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। নিরন্তর শুভকামনা তার জন্য।

চৈতীর রোজনামচা

 সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
(সুনীল সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ছোটগল্প)

সারারাত দু'চোখের পাতা এক করতে পারেনি চৈতী। ফজরের আজানের পর সারারাতের ক্লান্তিতে অবশ শরীরে একটু চোখ বন্ধ করেছিল। তাও আবার মায়ের চেঁচামেচিতে ভেঙ্গে গেল। ঘরের দেয়াল ঘড়িটা ঢং ঢং শব্দে জানান দিলো- সকাল নয় টা।

বিছানা ছেড়ে উঠে বসল চৈতী। সারারাতের দু:শ্চিন্তাগুলো মাথার মধ্যে পোকার মতো কিলবিল করছে। প্রচন্ড মাথাব্যথা। কিছুই আর ভাবতে পারছেনা। দু’হাত দিয়ে মাথাটা চেঁপে ধরলো। জানালা খুলে ভোরের আলো দেখতে ইচ্ছে করছেনা। জীবনের আলো যার ফুরিয়ে এসেছে। জগতের আলোতে তার কী হবে? আলোকিত অতীত আর অন্ধকারাচ্ছন্ন বর্তমান তাকে দোদুল্যমান করে তুলেছে।
‘এ্যাই চৈতী, এ্যাতো ব্যালা পর্যন্ত ঘুমাস, কলেজে যাওয়া লাগবো না।’-মায়ের চিৎকারে সম্বিৎ ফিরে পায় সে।

কলেজ! হ্যা, সেতো কলেজেই পড়ে। একাদশ শ্রেণীতে। কলেজের প্রিয় মুখগুলো ভেসে ওঠে মনের ক্যানভাসে। ভেসে ওঠে জমজ বোন চাঁদনীর মুখ। হঠাৎ আঁৎক ওঠে। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। না, যেভাবে হোক চাঁদনীকে তার রক্ষা করতেই হবে।

স্মৃতির পথ ধরে চৈতী চলে যায় চিরচেনা এক  জগতে। তখন সে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। জমজ বলে চৈতী ও চাঁদনী একই ক্লাসে পড়ে। তখনকার আনন্দের মুহূর্তগুলো এখন কেবল বেদনা বাড়ায়। চৈতীকে চাঁদনী, চাঁদনীকে চৈতী বলে অনেকেই ভুল করতেন। এমন কি শিক্ষকরাও।

মধুময় স্মৃতির প্রসবণ তাকে ভাসিয়ে নিয়ে আসে কণ্টকাকীর্ণ মোহনায়। আসতে বাধ্য হয়। একরকম সুখেই কাটছিল ওদের দিনগুলো। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে রোজ একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কোন কথা নেই। শুধু অপলকে তাকিয়ে থাকা।

একদিন একটা গোলাপ ফুল হাতে চৈতী-চাঁদনীর পথ আগলে দাঁড়ায় ছেলেটা। চৈতীরা ভীত-সন্ত্রস্ত। এদিক-সেদিক তাকায়। নির্জন রাস্তা। দৌঁড়ে পালাবার সাহসও হয়না। চিৎকার করার মনোবৃত্তি জাগেনা মান-সম্মানের ভয়ে। নিথর হয়ে নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকে দু’জন। ছেলেটার মুখে স্মীত হাসি।
‘আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। চৈতীর জন্য আমার এ ক্ষুদ্র উপহার।’-বলেই ফুলটা চাঁদনীর হাতে জোর করে গুঁজে দিয়ে কম্পমান পায়ে দাঁড়ায়। চাঁদনী হেসে ওঠে।
‘ফুলটা কার? চৈতী না চাঁদনীর ?’-ছেলেটা হতবাক।
থতমত খেয়ে বলে-‘চৈতীর জন্য।’
আবার হাসে চাঁদনী। ‘আমি চাঁদনী, এটা নিশ্চয়ই আমার নয়?’
ছেলেটা এবার ভীষণ লজ্জিত হয়Ñ‘সরি, আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। যারটা তাকেই দিয়ে দাও।’-বলে দ্রুত চলে যায়। একবারও পিছন ফিরে তাকায়নি।

চৈতী ও চাঁদনী খুব মজা পায়। হাসতে হাসতে পা বাড়ায় স্কুলের দিকে।

সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে , না পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। বিষয়টি নিয়ে স্যার খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছেন। কিন্তু কোন কথাই  চৈতীর মাথায় ডোকে না। কারণ চৈতীর পৃথিবীই এখন বিরামহীন ঘুরছে।
চৈতীকে লক্ষ্য করে স্যার বললেন,‘ চাঁদনী তোমার কী হয়েছে?’
চৈতী এবার হেসে উঠলোÑ‘ স্যার আমি চাঁদনী নই-চৈতী।’
‘এই হলো আর কী, কি হয়েছে তোমার?’-স্যার জানতে চাইলেন।
‘না স্যার কিছু হয়নি তো।’-বাধ্যগত ছাত্রের মতো কথাটা বলল চৈতী।
‘ ঠিক আছে পড়ায় মনোযোগ দাও।’ -বলেই স্যার পুনরায় আলোচনা শুরু করলেন।

একটা উদাসীনতা ক্রমেই গ্রাস করতে থাকে চৈতীকে। ঘুরে-ফিরে একটা লাল গোলাপ আর গোবেচারা ধরণের একটা চেহারা ভেসে ওঠে মনের ক্যানভাসে। ছেলেটার প্রতি কেন যেন একটা মায়া জন্ম হয় তার। ভালো লাগতে শুরু করে।

এই ভালোলাগাই ভালোবাসার মহিরূহ আকার ধারণ করে। মধুময় হয়ে ওঠে জীবন ও যৌবন। বাবা-মার অগোচরে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে ভাবতে কতই না ভালো লাগে।

আর ভাবতে পারেনা। শরীরটা গুলিয়ে ওঠে। বমি বমি ভাব হয়। নিজের শরীরের দিকে তাকায়। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিজেকে নিজের কাছে কেমন অচেনা লাগে। শরীরটাকে আর নিজের বলে মনে হয়  না। রাতের কথা মনে পড়ে। খাবারের টেবিলে কী বিশ্রীভাবে বকলেন বাবা। বাবাতো বকবেনই। নিজের চোখে কে তার মেয়ের অধ:পতন সহ্য করবে? কিন্তু কূল-মানের আশা ছেড়ে চৈতী যার জন্য আজ পথের ভিখিরি। সেই বা কোথায়? এ পথের শেষই বা কোথায়? কেনই বা এমন হলো?

সাগরের পরিবার মেনে নেয়নি ওদের ভালোবাসা। তাই জোর করে সাগরকে বিয়ে করালো অন্য জায়গায়। চৈতীর মাথায় বাজ পড়লো। বিয়ের দেড় বছর পর ঘর আলো করে এল সন্তান। ঘর আলো করলেও সাগরের মন আলোকিত করতে পারেনি। পুরনো ভালোবাসা নাকি শরীরী টানে কাঙালের মতো ছুটে এসেছে চৈতীর কাছে।

এ কেমন খেলা? কোন আশায় বাঁধবে তারা খেলাঘর? এ কেমন পরীক্ষা? কী করবে এখন চৈতী? একটা দোদুল্যমানতা আঁকড়ে ধরে তাকে। কিন্তু মন যে মানে না। সেও কাছে পেতে চায় সাগরকে। ফিরে পেতে চায় হারানো ধন। একটি ঘর ভাঙ্গার আয়োজন চলে প্রতিনিয়ত। ভালোবাসার উন্মাদনায় মেতে ওঠে দু’টি প্রাণ। মনের টানে শরীরে শরীর ঘষে পেতে চায় মধুর উত্তাপ। দগ্ধ হতে চায় দু’জন। সে উত্তাপের আগুনেই তিলে তিলে দগ্ধ হয় চৈতী। পরকীয়ার অপবাদ নিয়ে গৃহবন্দীর মতো সময় কাটে। তিলে তিলে বিপর্যস্ত নাবিকের মতো ছেড়া পালে ভাঙ্গা নায়ে হাল ধরে বসে থাকে।

কথাটা বাবার কান অব্দি পৌঁছে যায়। তাই যাচ্ছে-তাই বলে বকলেন রাতে। দরজাটা খুলতে আর প্রবৃত্তি হয় না। এ মুখ সে কাকে দেখাবে, কীভাবে দেখাবে?

চাঁদনী কলেজে চলে গেছে। চৈতীর ওপর ঝড়ের বিধ্বস্ততা দেখে কলেজে যাওয়ার সময় ডাকতে ইচ্ছে হয়নি। বাবা রীতিমতো ফার্মেসীতে। মা গৃহস্থালির টুকিটাকি নিয়ে ব্যস্ত। ক্ষণে ক্ষণে চেঁচিয়ে যায়-‘চৈতী ওঠ, বের হ।’
ঝড়ের পূর্বাভাস সবাই টের পায়। আকাশে মেঘ দেখে সবাই বলে দেয় কীরকম ঝড় হতে পারে। ক্ষুব্ধ নদীতে মাঝি শক্ত হাতে হাল ধরে। উত্তাল সমুদ্রে নাবিক খোঁজে কূল। অকূল পাথারে পড়ে চৈতীও সাঁতরায়। খড়-কুটা ধরে বাঁচতে চায়।

টলতে টলতে গিয়ে বসে পড়ার টেবিলে। বইয়ের সাথে সাজানো ডায়রিটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টায়। কলমদানী থেকে একটা কলম নিয়ে পরাজীত জীবনের কিছু কথা লিখে রেখে যায় কালো অক্ষরে। ভুল আর মিথ্যা সম্পর্কের জাল ছিন্ন করতে না পারার ব্যর্থতা তাকে আর কতদূর নিয়ে যেতে পারে?

বাইরের কাজ শেষে ঘরে  এসে দরজা বন্ধ দেখে থমকে দাঁড়ায় চৈতীর মা। মেয়েটার হলো কী? বেলা বয়ে যায় তবু ওঠার নাম নেই। বাবা না হয় একটু বকেছে। ভুল করলে বাবাতো বকবেই। এখনতো ভুলেরই বয়স। বাবা-মাতো শাসন করবেই। তাই বলে এতো অভিমান? এতই যদি ঘৃণা হয়- তবে কেন একটা বিবাহিত ছেলের সাথে প্রেম। কেন অন্যের সাজানো সংসার তছনছ করার অভিপ্রায়। একবার হারানোর পরও কেন মিথ্যে প্রণয়ে আবদ্ধ হওয়া।

দরজায় কড়া নাড়ে বারকয়েক। কোন সাড়া শব্দ নেই। এমন অঘোরে কেউ ঘুমায়? হঠাৎ বুকের মধ্যে একটা হোচট খায়। দু:শ্চিন্তার রেখা অঙ্কিত হয় মুখে। জোরে জোরে ডাকে বারকয়েক। প্রতিবেশিরা কী ভাববে? মহল্লায় এমনিতেই কানাকানি। ঘরের কথা পরের মুখে বাতাসের আগে দৌঁড়ায়। তিলকে তাল বানানোর ভয়। কণ্ঠ কিছুটা ক্ষীণ হয়ে আসে। এবার সে হতাশ হয়ে পড়ে।

দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে যায় চৈতীর মা। নির্বাক চোখে অশ্র“ গড়িয়ে পড়ে দু’গন্ড বেয়ে। সম্মুখে ঝুলন্ত চৈতীর শরীর। নিথর সে দেহ। চৈতীর চোখে মুখে ক্ষোভের বিচ্ছুরণ। জিহ্বাটা বের হয়ে দু’মাড়ির দাতের সাথে আটকে আছে। এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় একটি টিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন চৈতীর মা। চিৎকার আর পতনের শব্দে ছুটে আসেন পাশের বাড়ির একজন। ক্রমান্বয়ে বাড়ি ভর্তি লোকজন। আত্মীয়-স্বজন, শত্র“-মিত্র, থানা-পুলিশ, সাংবাদিক, হিতাকাক্সিক্ষ-পরশ্রীকাতর সহ সর্বস্তরের মানুষ।

চৈতী এখন একটা লাশ। সবাই ভুলে যাচ্ছে তার নাম। সবার মুখে মুখে চৈতী শব্দের পরিবর্তে লাশ শব্দটাই ব্যবহার হচ্ছে। সুরতহাল প্রতিবেদন, আলামত সংগ্রহ ও ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর আয়োজন চলছে। পুলিশের হাতে একটি রোজনামচা। আলামত সংগ্রহ করতে গিয়ে যেটা পাওয়া গেছে চৈতীর টেবিলে। সাংবাদিকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তার উপর।

পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে এক জায়গায় এসে সবার চোখ আটকে যায়। কোন সম্বোধন ছাড়াই শুরু হয়েছে লেখাটি
         ‘ লম্পট সাগর আমাকে বাঁচতে দিল না। ভালোবাসার অভিনয় করে মিথ্যা আশ্বাসে আমাকে নষ্ট করেছে। এখন আমার ছোট বোনকেও নষ্ট করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। একথাগুলো কাউকেই বলতে পারলামনা। আমার বাবা খুব রাগী। তাকে খুব সম্মান করি। তাই তার কাছেও বলার সাহস হয়নি।

একটা মেয়ে কখন তার জীবনের মায়া ত্যাগ করে? কিন্তু আমি যে বাঁচবো, তার কোন কূল-কিনারা বা পথ খুঁজে পাই না। বাধ্য হয়ে আমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম।

আব্বু-আম্মু, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। দাদু,কাকা,চাঁদনী,আন্না,মুন্না ও স্বর্ণা তোমরা কেউ আমার জন্য কেঁদ না।

যারা আমার চিঠি পড়বেন, তাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ- আমার মতো আর কারো জীবন যেন নষ্ট না হয়। এই সব লম্পট বখাটে ছেলের শিকার যেন আর কাউকে না হতে হয়।
 ইতি, চৈতী।’

স্বপ্ন

প্রিয়া চক্রবর্তী

এক সময়ে স্বপ্ন ছিল
চড়বো কবে গাড়ি,
কবে হবে এ শহরে
তিনতলা এক বাড়ি।
সোনারগাঁয়ে নাস্তা খাব
শেরাটনে ডিনার,
লং ড্রাইভে আড্ডা মেরে
গড়বো স্মৃতির মিনার।
মুঠোফোনে কথা বলে
দিন বানাবো রাত,
রুই কাতলা রাঘব বোয়াল
অমনি কুপোকাত।
এখন আমার সব হয়েছে
হইনি আমি মানুষ,
সুখ শান্তির বাইরে থাকা
রঙ করা এক ফাণুস।

স্বাধীন বাংলাদেশ

আমির হোসেন

স্বাধীনতা তুমি চির মুক্ত আকাশ,
মুক্ত কেতন ওড়ার শো শো আওয়াজ।
স্বাধীনতা তুমি মায়ের কোলে দোলনার দোল,
বোনের গালে মাখা রাঙা আবীর।
স্বাধীনতা তুমি রক্তে মাখা বিজয় নিশান,
লক্ষ কোটি জনতার উল্লাস।
স্বাধীনতা তুমি বাবার মুখে শেখা প্রথম বুলি,
আমার চির মুক্ত স্বদেশ তুমি।

একাদশ শ্রেণী
কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ।






প্রিয় স্বদেশ

আলী ইদরিস

শিশিরের ঘুম ভাঙেনি এখনও
অবগুন্ঠন খোলেনি শীতের প্রকৃতি,
কুয়াশায় ঘেরা অস্পষ্ট শস্য ক্ষেত আর
শিশির ভেজা পথে হেটেছি দিগি¦জয়ী বীরের বেশে,
কত শিশিরের মুখে দেখেছি প্রথম সূর্যের হাসি
বিকেলের ম্লান রোদেও তুমি এত সুন্দর!
এই প্রথম আবিষ্কার করি সরষে ফুলে তোমার ছবি।

তুমি রাগলেও যে এত ভাল লাগে
কালো মেঘের পাশে উড়ন্ত বলাকা দেখেছ?
কত সুন্দর ! ও তোমার রাগান্বিত চোখের উপমা।
আমি স্বপ্নিল বলাকার মত আত্মবিশ্বাসে
পাখা মারি তোমার আকাশে বাতাসে
আমার বিশ্বাস তোমার বুকেই আমার নিশ্চিত আশ্রয়।
অঝোর বর্ষার জলে ভাসিয়ে দিবে না তো!
বলো কার কাছে গেলে পাবো এত ভালোবাসা,
কার এমন সুন্দর মুখ প্রাণে জাগাবে নতুন আশা?

মেঘমুক্ত সুনীল আকাশসম হৃদয়ে তোমার
আমি জারুল, কৃষ্ণচূড়া হয়ে ফুটবো,
গহীণ অরণ্যে বুনো ঝোপের আড়ালে
নামহীন ফুলের মত সুবাস বিলাব
তোমার উড়ন্ত উৎসবে।

তুমি যে আমার প্রিয় স্বদেশ।

কামনা ও প্রেমের রহস্য

আলী ইদরীস

যত কাছে আসি প্রেম হয় তত বাসি
কামনা ফিরে পায় প্রাণ,
রসনাতৃিপ্ত শেষে ভাবি ভোগের চেয়ে
ঢের ভালো ছিল বস্তুর ঘ্রাণ।
দূরে থেকেও স্বস্তি পাইনা
যেতে চাই খুব কাছাকাছি,
নিষিদ্ধ গন্ধমের মত টান
জানি এ প্রেম কেবল মিছামিছি।
যেন কিশোরের হস্তমৈথুন শেষে
রতি ক্ষয়ের অনুশোচনা,
তোমার প্রতি উদাসীন হয়ে
কামগন্ধহীন হাটি ছদ্মবেশে...।

একটি ঘুমহীন রাত

রিয়া বল

আমার একটা ঘুমহীন রাত যদি তোমায় দিতে পারতাম,
হয়তো তুমি বুঝতে, সে রাত  কতোটা গভীর হতে পারে।
অমাবস্যার রাতে একা একা বড় ভয় হয়,
মনে হয় আলো যদি এ জীবনে আর না আসে।
আর যদি খুঁজে না পাই-
অবুঝ মনটাকে বোঝাতে না পারি,
ইচ্ছা হয় ছুটে যাই তোমার কাছে।
তোমাকে জাগিয়ে তুলে সারাটা জীবন জড়িয়ে রাখি বুকে।
বিশ্বাস করো কিছুতেই হারাতে চাইনা তোমায়,
বলতে পারো কতোটা ভালোবাসলে এমনটা হয়।
কতোটা ভালোবাসা জন্মালে হৃদয়ে হারাবার ভয় জাগে,
জানি আমি অক্ষম। কোন কিছুই দিতে পারবোনা তোমায়;
কিন্তু বিশ্বাস করো পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিতে সক্ষম।
জানি তোমায় কখনো পাবোনা, পারবোনা নিজের করে নিতে।
তবুও বলছি - জীবনের শেষপ্রান্তে গিয়েও যদি অনুভব করো,
তখনো দেখবে আমি দাঁড়িয়ে শুধু তোমারী অপেক্ষায়।


নানামতঃ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি মেলেনি শহীদ পান্নার

নাফিজ সিদ্দিকী তপু ঃ
১৯৭১ সালে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রাজদী গ্রামের এমএ কাদের সিদ্দিকীর ছেলে শহীদ নুরুল আলম পান্না টগবগে তরুণ। বরিশালের গৌরনদী সরকারী কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছাত্র জীবনে তিনি জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে। তিনি ছিলেন কলেজের গরীব ছাত্র-ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। প্রয়োজনে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে হলেও গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা করতেন। চলা-ফেরায়, কথা-বার্তায় ছিল নিজস্ব স্বকীয়তা। দেশপ্রেমিক, পরোপকারী, আত্মপ্রত্যয়ী, স্বাধীনচেতা ও উদ্যমী এক যুবক।
দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। চলে আসেন নিজগ্রামে। ১৯৭১ এর মে মাসে যোগ দেন ৩০৩ নম্বর রাইফেলে। মেজর মনজুর নেতৃত্বে ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে কালকিনি অঞ্চলে নুরু কবিরাজের কাছে প্রশিক্ষণ নেন। যুদ্ধকালীন তাঁর কাজ ছিল পাকবাহিনীর গোপন সংবাদ সংগ্রহ করা। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে একাত্তরের ১০ অক্টোবর উপজেলার ফাসিয়াতলা বাজারে যান। সেখানে রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী তাকে আটক করে মাদারীপুর এ.আর হাওলাদার জুট মিলের মিলিটারি ক্যাম্পে নিয়ে যান। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। হত্যার পর নিশ্চিহ্ণ কওে দেওয়া হয় মৃতদেহ।
আজ স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর তাঁর আত্মীয়-স্বজনের কাছে খোঁজ নিয়ে শুনতে হয় লজ্জাজনক ইতিহাস। তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়নি। শহীদ পান্নার স্মরণে এলাকাবাসীর উদ্যোগে নিজ গ্রামে ১৯৭৩ সালে শহীদ পান্না স্মৃতি সংঘ স্থাপিত হয়। যার নিবন্ধন নম্বর ফÑ০০৬৬। সেটাও আজ বিলুপ্তির পথে। অর্থাভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ঘরটি। ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রণীত তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত ছিল। কেন কী কারণে চুড়ান্ত তালিকায় তাঁর নাম নেই সে ইতিহাস সবার অজানা। অথচ ১৯৯৫ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন জমাদার রচিত ‘মাদারীপুর মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতিকথা’র পঁচিশ পৃষ্ঠায় তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও শহীদ হওয়ার ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে। ১৯৯৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘মুক্তি বার্তা’র দ্বিতীয় বর্ষের দশম সংখ্যায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত আছে। যার মুক্তি বার্তা নম্বর- ০১১০০২০৩৭০।
শহীদ পান্নার ভাই জহিরুল আলম ডালিম ২০০৯ সালের ৩ মার্চ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বরাবর একটি আবেদন করেন। তার আবেদনের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা প্রশাসক শশী কুমার সিংহ বরাবর একটি আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনের ২ বছর পরও শহীদ পান্নার নাম তালিকাভূক্ত হয়নি। এরপর ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর উপজেলা পরিষদের সভায় কালকিনি-ভূরঘাটা সড়কের কাঠেরপোল থেকে বড়বাড়ি পর্যন্ত সড়কের নাম ‘শহীদ পান্না সড়ক’ নামে করার প্রস্তাব গৃহিত হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের ২ ফেব্র“য়ারি শহীদ পান্নার নাম তালিকাভূক্ত করার জন্য পুণরায় আবেদন করা হয়। তাই শহীদ পান্নার পরিবার এখনো তাঁর নাম তালিকাভূক্ত হওয়ার প্রত্যাশায় দিন গুণছে। সরকারি চুড়ান্ত তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত হয়নি কেন? এ প্রশ্নের জবাব শুধু সরকারই দিতে পারে।